Wednesday, October 22, 2014

আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র কারামত শরীফ


(১)
          ইয়া সারিয়া! আল-জাবাল। ইয়া সারিয়া! আল জাবাল। পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ উনার জুমুয়ার খুতবা মুবারক পাঠ করা অবস্থায় আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি হঠাৎ করে এরূপ অপ্রাসঙ্গিক বাক্য মুবারক উচ্চারণ করায় উপস্থিত সবাই অবাক বিস্মিত। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যথারীতি উনার পবিত্র খুতবা মুবারক পাঠ করতে থাকেন।

          পবিত্র খুতবা উনার মাঝে হঠাৎ আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার অপ্রাসঙ্গিক বাক্য উচ্চারণ কেন, কারো সাহস হচ্ছে না উনাকে জিজ্ঞাসা করতে। পবিত্র খুতবা ও নামায শেষে মসজিদে উপস্থিত অনেকের মধ্যে বিষয়টি গুঞ্জন করতে থাকে। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার। তিনি অসংকোচে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আজ আপনি পবিত্র খুতবা উনার মধ্যে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ইয়া সারিয়া! আল জাবাল (দুই কিংবা তিনবার) উচ্চারণ করলেন- কেন? জবাবে আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একটি সৈন্য বাহিনীর কথা উল্লেখ করলেন। যারা নাহাওয়ান্দে পবিত্র জিহাদে লিপ্ত, এ বাহিনীর সেনাপতি হযরত সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি বলেন, আমি দেখেছি সারিয়া একটি পর্বতের পাশে লড়ছেন। অথচ তিনি জানেন না যে, সম্মুখ এবং পেছন থেকে অগ্রসর হয়ে শত্রু বাহিনী তাকে ঘিরে ফেলার উপক্রম করেছে। এ শোচনীয় অবস্থা দেখে আমি বিচলিত হয়ে পড়ি, আমি স্থির থাকতে না পেরে আওয়াজ দিতে থাকি হে সারিয়া পর্বতের সাথে মিলে যাও। হে সারিয়া পর্বতের সাথে মিলে যাও।
          নাহাওয়ান্দের রণক্ষেত্র থেকে বেশ কিছুদিন পর হযরত কাসেদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে আগমন করেন এবং পবিত্র জিহাদ উনার বিবরণ দিতে থাকেন এবং পূর্ণ ঘটনা ব্যক্ত করেন। হযরত কাসেদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জানান, আমরা যখন পবিত্র জিহাদে লিপ্ত তখন হঠাৎ একটি অদৃশ্য কণ্ঠ শোনা গেল, ইয়া সারিয়া! আল জাবাল। আওয়াজটি শ্রবণ করা মাত্র আমরা পর্বতের সাথে মিলে যাই এবং আমাদের বিজয় সূচিত হয়। সুবহানাল্লাহ!  (তারিখুল খোলাফা- ইমাম জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ)
(২)
          একদা দুর্ভিক্ষের সময় সর্বত্র খরা কবলিত মানুষের মধ্যে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। কোথাও বৃষ্টির নামগন্ধ নেই। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র খিলাফতকাল। তিনি দুর্ভিক্ষ ও খরা কবলিত দেশের এ চরম সঙ্কট অবস্থা দেখে পানির জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে দোয়া করলেন এবং বৃষ্টি হলো, মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হতে লাগলো।
          কিছুদিন পর কতিপয় আরব বেদুইন লোক বাহির থেকে আসে এবং তারা আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে জানায় যে, তারা অমুক দিন অমুক জঙ্গলে ছিলো। হঠাৎ আকাশে মেঘ দেখতে পায় এবং মেঘ হতে একটি আওয়াজ ভেসে আসে এবং আমরা শুনতে পাই ‘ইন্নাকাল গাওসু আবা হাফছিন’ অর্থাৎ হে আবু হাফছ! (হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কুনিয়াত ডাকনাম মুবারক) আপনার জন্য বৃষ্টি নামছে। সুবহানাল্লাহ!
(৩)
          একদা একটি পর্বতের গর্ত হতে অগ্নি নির্গত হতো এবং এ আগুন যতটুকু বিস্তার লাভ করতো সব কিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিতো। বহুকাল এ আগুনের ধ্বংসলীলা চলে আসছিলো এবং আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার আমলেও তা অব্যাহত ছিলো। তিনি খবর পেয়ে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আবু মুসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অথবা হযরত তামীম দারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে নির্দেশ মুবারক দিলেন সেখানে গিয়ে আগুনকে তার গর্তের ভিতরে ঢুকিয়ে দিয়ে আসতে। নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী উনারা সেখানে গমন করেন এবং আগুনকে উনাদের চাদর দ্বারা হাকাতে শুরু করেন এবং কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন গর্তের অভ্যন্তরে চলে যায় এবং আর কখনো প্রকাশ পায়নি। এটি ছিল আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নির্দেশ মুবারক উনার প্রভাব।
(৪)
একদা এক আজমী অনারব ব্যক্তি পবিত্র মদীনা শরীফ আসে এবং আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার খোঁজ খবর নিতে থাকে। কেউ বলে দেয় যে, তিনি হয়তো কোথাও শুয়ে আছেন। আগত লোকটি কিছুদূর গিয়ে দেখতে পায় আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এক গাছের ছায়ায় তলোয়ারটি মস্তকের নিচে দিয়ে মাটিতে শুয়ে আছেন। সে মনে মনে ভাবতে থাকে, এই লোকটির জন্য সারা দুনিয়ায় ফিতনা হচ্ছে- উনাকে শহীদ করাটা সহজ একথা ভেবে সে তরবারী বের করে। হঠাৎ দেখতে পায় দুটি সিংহ তার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আজমী চিৎকার করতে থাকে। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি জাগ্রত হয়ে যান এবং আজমী পুরো ঘটনা বর্ণনা করে এবং সে সেখানেই মুসলমান হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
(৫)
          আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র খিলাফত আমলে একবার ভূমিকম্প হয় এবং পুনঃ পুনঃ প্রকম্পিত হতে থাকে। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হামদ শরীফ ও পবিত্র ছানা শরীফ পাঠ করার পর যমীনে দোররা মারেন এবং বলেন স্থিত হয়ে যাও। আমি কি তোমার প্রতি ইনসাফ করিনি? একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ভূমিকম্প বন্ধ হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
(৬)
          মিসরবাসীগণ হযরত আমর ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট আবেদন জানান যে, আমাদের দেশ কৃষিনির্ভর এবংওই কৃষিকর্ম নীলনদের উপর নির্ভরশীল। আর নীল নদের একটি স্বভাব হচ্ছে প্রতি বছর তার মধ্যে একটি অতি সুন্দরী কুমারী কন্যা নিক্ষেপ করতে হয়। এরূপ না হলে নীলনদ প্রবাহিত হয় না। পানি বাড়ে না, ফলে কৃষিক্ষেতে সেচ দিতে না পায় ফসল উৎপাদন হয় না এবং দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। হযরত আমর ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ঘটনাটি আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে অবহিত করেন। তিনি জবাবে বলেন, পবিত্র দ্বীন ইসলাম এরূপ বর্বর নৃশংস কুফরী প্রথাসমূহের অনুমতি দেয় না এবং তিনি একখানা পত্র নীলনদের নামে প্রেরণ করলেন। পত্রখানা এই-

بسم الله الرحمن الرحيم
" من عبد الله عمر أمير المؤمنين إلى نيل أهل مصر، أما بعد، فإن كنت إنما تجري من قبلك ومن أمرك فلا تجر فلا حاجة لنا فيك، وإن كنت إنما تجري بأمر الله الواحد القهار، وهو الذي يجريك فنسأل الله تعالى أن يجريك "
قال: فألقى البطاقة في النيل فأصبحوا يوم السبت وقد أجرى الله النيل ستة عشر ذراعا في ليلة واحدة وقطع الله تلك السنة عن أهل مصر إلى اليوم

চিঠিখানার মর্ম হচ্ছে এই-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
“এই চিঠি মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা হযরত উমর ইবনে খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার পক্ষ হতে মিসরের নীলনদের নামে। হে নীলনদ! তুমি যদি নিজের ইচ্ছায় প্রবাহিত হয়ে থাকো, তাহলে তোমার পানি আমাদের কোনো দরকার নেই। আর যদি তুমি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারকে প্রবাহিত হয়ে থাকো, তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজু করছি তিনি যেনো তোমাকে প্রবাহিত করান।”
          বর্ণনাকারী বলেন, চিঠিখানা ইয়াওমুস সাবত সকাল বেলা নীলনদে নিক্ষেপ করা মাত্র পানি বাড়তে থাকে, পূর্ববর্তী বছরগুলো অপেক্ষা পানি ১৬ হাত বেড়ে যায় এবং সেদিন থেকে নীলনদে কুমারী নিক্ষেপ বা উৎসর্গ করার জাহিলী যুগের কুফরী প্রথা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।” সুবহানাল্লাহ!
চিঠিখানার মর্ম হচ্ছে এই-

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
“এই চিঠি মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দা হযরত উমর ইবনে খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার পক্ষ হতে মিসরের নীলনদের নামে। হে নীলনদ! তুমি যদি নিজের ইচ্ছায় প্রবাহিত হয়ে থাকো, তাহলে তোমার পানি আমাদের কোনো দরকার নেই। আর যদি তুমি মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারকে প্রবাহিত হয়ে থাকো, তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আরজু করছি তিনি যেনো তোমাকে প্রবাহিত করান।”
          বলা হয়, চিঠিখানা নীলনদে নিক্ষেপ করা মাত্র পানি বাড়তে থাকে, পূর্ববর্তী বছরগুলো অপেক্ষা পানি ১৬ হাত বেড়ে যায় এবং সেদিন থেকে নীলনদে কুমারী নিক্ষেপ বা উৎসর্গ করার জাহিলী যুগের কুফরী প্রথা চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
(৭)

          আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি যেদিন পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন, সেদিন গায়েবী থেকে দুটি কবিতা শরীফ শ্রুত হয়। কিন্তু কবিতা শরীফ আবৃত্তিকারীকে দেখা যায়নি। কবিতা শরীফ দুটির মর্ম হচ্ছে এই, “পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার উপর কেউ ক্রন্দন করতে চাইলে সে ক্রন্দন করুক, বেশি সময় অতিবাহিত হয়নি লোকেরা ধ্বংসের পানে উপনীত হয়েছে। দুনিয়া হতে কল্যাণ দূরে সরে গিয়েছে এবং ভালো লোকেরা দুনিয়ায় দুঃখ-দুর্দশায় পতিত হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে কাছীর, আল-বিদায়া)

No comments:

Post a Comment