রাজনৈতিক সহিংসতায় আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের
আমবাগান মালিকরা চরম বিপাকে পড়েছেন। গত দুই মাসে রাজনৈতিক
অস্থিরতায় আমবাগান বিক্রি না হওয়ায় বাগান মালিকরা পড়েছেন প্রায় এক হাজার কোটি টাকার
ব্যবসায় ঝুঁকিতে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার আমবাগানগুলোতে প্রচুর
মুকুল এলেও মার্চের ঘনকুয়াশায় প্রায় বাগানের মুকুল নষ্ট হয়ে যায়। এরপরেও প্রতিটি আমবাগানে আমের সমারোহে ভরপুর। বিস্তীর্ণ বাগানগুলোতে শুধু আম আর আম।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক
আবুল কালাম আজাদ জানান, জেলার ৫টি উপজেলায়
প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে ১৮ লাখ আমগাছ রয়েছে। এর মধ্যে শিবগঞ্জের ১৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে ৯ লাখ ৮৩ হাজার ৪৮০, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ৪ হাজার ১শ ৫৫ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ১৯ হাজার
৯শ ৮০, গোমস্তাপুরে ২ হাজার ৯শ ১৫ হেক্টর জমিতে ২
লাখ ৩৪ হাজার ৮শ ২৫, ভোলাহাটে ২ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে এক লাখ
৫২ হাজার ৯শ ও নাচোলে এক হাজার ৬শ ৬০ হেক্টর জমিতে এক লাখ ৩২ হাজার ৮শ ১৫টি আমগাছ রয়েছে।
চলতি মৌসুমে জেলায় আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা
ধরা হয়েছে প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০১২ সালে ২৩ হাজার
২শ ৮০ হেক্টর জমিতে ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৯শ ৩০টি আম গাছে উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ
৬৮ হাজার মেট্রিক টন আম। ইদানীং বাগানগুলোতে
কুদরতীভাবে উৎপাদন বাড়ছে। কৃষি বিভাগ জানায়,
এক সপ্তাহের মধ্যে আগাম জাতের আম বাজারে বেচাকেনা শুরু হবে। আমচাষীরা দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে কাঙ্খিত বৃষ্টি পাওয়া, আমের বোটা শক্ত ও আম ঝরে পড়া বন্ধ এবং আমের আকার দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশা অনেকটা
কেটেছে। তবে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জামাত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির
রায় ঘোষণার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে পল্লীবিদ্যুৎ অফিস পোড়ানো,
পুলিশ-জামাত-আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ১০ জনের প্রাণহানি,
শতাধিক বাড়ি-ঘর, দোকানপাট ভাঙচুর,
লুটপাট, অগ্নিসংযোগ,
মামলা ও জামাতী সন্ত্রাসীদের গুপ্তহামলার আশঙ্কায় সাধারণ মানুষের
মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দফায় দফায় জাতীয় ও আঞ্চলিক হরতালে অস্থিতিশীলতা
বিরাজ করায় জেলার প্রায় আমবাগান কেনাবেচা বন্ধ হয়ে গেছে। আগামীতে রাজনৈতিক কর্মসূচি (হরতাল/অবরোধ) অব্যাহত থাকার আশঙ্কায় দেশের ঢাকা,
কুমিল্লা, ফেনী, চৌমুহনী, নারায়ণগঞ্জ,
চট্টগ্রামসহ স্থানীয় আমব্যবসায়ীরা বাগান কেনায় তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে
না। রেহাইচরের আম ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিবার এসময় তার চারটি বাগান কয়েকদফা কেনাবেচা
হলেও এবার ঘনঘন হরতাল ও রাজনৈতিক সহিসংতার কারণে তা হয়নি। আমের গুটি অবস্থায় বেচাকেনা করে শুরুতেই কয়েক লাখ টাকা লাভ করলেও এবার একেবারেই
বাগান বিক্রি নাই। দেশের আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ ভরা
মৌসুমে আমচাষী ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে আমকে পচনশীল হিসেবে বিবেচনা করে হরতাল/অবরোধের
আওতার বাইরে রাখার দাবি জানিয়েছেন জেলার সবচেয়ে বড় আমবাজার কানসাটের আড়তদার সমিতির
সভাপতি হাবিবুল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক কাজি এমদাদ।
কানসাটের আম ব্যবসায়ী আনসারুল জানান,
দীর্ঘ মেয়াদে বড় বড় ৫টি বাগান কেনা থাকলেও এ বছর হরতাল ও পরিবহন
সমস্যায় লোকসানের আশঙ্কায় বাইরে থেকে কোনো ব্যবসায়ী এবার বাগান কিনছেন না। ভোলাহাটের আম ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘রাজনৈতিক সঙ্কট
দূর না হলে ২০ হাজারের বেশি আমব্যবসায়ী চলতি মৌসুমে চরম ভোগান্তি ও লোকসানের মুখে পড়বে।’ কৃষি বিভাগ জানায়, আম মৌসুমে এখানকার
এক লাখ মানুষ ঝুড়ি করা, বাগান পাহারা ও পরিচর্যা,
আমপাড়া, টুকরি করা ও পরিবহন
(ভ্যান ও ট্রাক) কাজে জীবিকা নির্বাহ করে।
No comments:
Post a Comment