Thursday, August 29, 2013

মাদকে বুঁদ বাংলাদেশ॥ কাফির নিয়ন্ত্রিত দেশগুলো থেকে অবাধে আসছে মাদক



সমাজের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে মাদক নেই পুলিশ ফেনসিডিল পান করছে কতিপয় ডাক্তার অপারেশনে যাওয়ার আগে ফেনসিডিল সেবন করে যায় ছেলে-মেয়ে, আত্মীয়-স্বজনের কেউ না কেউ গাঁজা-ফেনসিডিলের মতো মাদকে আসক্ত মাদক এখন মহামারি আকার ধারণ করেছে বলতে দ্বিধা নেই, মাদকদ্রব্যের বেশকিছু কারখানা শিল্প আছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়কথাগুলো বলেছিলেন ৎকালীন ঢাকা রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি মোখলেসুর রহমান ২০১০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ কার্যালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে ঈদোত্তর অপরাধ বিষয়ক সভায় তিনি এসব কথা বলেছিলেন সেদিন তিনি আরো বলেছিলেন, ‘সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে

সে দিনের সংবাদ সম্মেলনের পরই নানা বিদ্রুপের শিকার হন পুলিশ কর্মকর্তা গণমাধ্যমকর্মী, পুলিশ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তাকে পাগল বলতেও দ্বিধা করেনি কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে তার কথার সত্যতা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় তার কথায় উপহাসকারীরাও আজ বাস্তবতায় মিল দেখতে পাচ্ছে পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান এবং তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান মাদকাসক্ত মেয়ে ঐশীর হাতে খুন হওয়ায় হুঁশ ফিরেছে আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের ঐশীর এমন পরিণতির জন্য খোদ পুলিশই এখন মাদককেই দায়ী করছে
কিন্তু এরপরেও পুলিশ মাদকবিরোধী কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি অথচ গত ১৮ থেকে ২৫ আগস্ট (২০১৩ .) শুধু ্যাবের মাদকবিরোধী অভিযানে সারাদেশে ৩৬ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট হাজার ২০০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার হয়েছে প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাদকদ্রব্য উদ্ধার করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তবে মাদকদ্রব্য নির্মূলে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল মজিদ ভূঁইয়া বলেন, সারাদেশে মাদক মহামারি আকার ধারণ করেছে যদি এখনই মাদকের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করা না হয়, তাহলে আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে সামাজিক অবক্ষয় আরো ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরো অবনতি হবে, পারিবারিক কলহ, সন্তানের হাতে বাবা মায়ের খুন হওয়ার ঘটনা বৃদ্ধি পাবে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন আবদুল মজিদ ভূঁইয়া বলেন, এক সময় ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক সেবন উচ্চবিত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল কিন্তু হাতের নাগালে মাদক পাওয়ার কারণে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত যুবক-যুবতীদের মধ্যেও মাদকের বিস্তার ঘটছে
নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও ধরা হয়, ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে ইয়াবার আবির্ভাব ঘটে তবে ২০০৫ সাল থেকে জেলা থানা পর্যায়ের তরুণ-তরুণীর হাতে ইয়াবা ট্যাবলয়েট চলে যায় এর আগে ২০০০ সাল থেকে সীমান্তপথে থাইল্যান্ড মিয়ানমার থেকে চোরাচালান হয়ে তা দেশে অনুপ্রবেশ করতে থাকে
মাদক বিস্তারের প্রধান কারণ: মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্য অনুসারে, অবস্থানগত কারণেই বাংলাদেশকে পঞ্চাশের দশক থেকে অদ্যাবধি আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্র বাংলাদেশকে মাদকাসক্তি চোরাচালানের করিডোর হিসেবে ব্যবহার করে আসছে প্রধানত মাদকদ্রব্য ৎপাদনকারী অঞ্চল থাইল্যান্ড, লাওস, বার্মা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক, ভারত নেপাল সীমান্তের বাংলাদেশ নিকট প্রতিবেশী এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে দ্বিতীয়ত বাংলাদেশ মাদকদ্রব্য ৎপাদনে ব্যাপক ব্যবহারে দীর্ঘদিন ধরে মুক্ত ছিল ফলে আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্য প্রতিরোধ সংস্থার কার্যাবলী তাদের সন্দেহের বাইরে রয়েছে মাদক ব্যবসায়ী চোরাকারবারীরা সুযোগকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে ইতঃপূর্বে বাংলাদেশ হেরোইনের ব্যাপক চালান আসত বার্মা থাইল্যান্ড থেকে
মাদকদ্রব্যের চাহিদা: জানা গেছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ৯০ লাখ লোক মাদকাসক্ত সরকারি হিসাব মতে সংখ্যা ৫০ লাখ এদের মধ্যে ৭০ ভাগ হেরোইন বা এডিন সুগারে আসক্ত আর ৩০ ভাগ ফেন্সিডিলে আসক্ত আর বর্তমানে বহুল প্রচারিত চেতনা উত্তেজক মাদক ইয়াবা আসক্তের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই তবে দিন দিন এর চাগিদা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শুধু ঢাকাতেই ইয়াবার দৈনিক চাহিদা ১৪ লাখ চট্টগ্রামে ১০ লাখের মতো আর কক্সবাজারে এর সংখ্যা লাখ বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা কত সে নিয়ে- তেমন কোনো জরিপ হয়নি তবে বিভিন্ন পরিংখ্যানের তথ্য অনুসারে বর্তমানে ৯০ লাখের অধিক মানুষ মাদকাসক্ত যার মধ্যে আশি ভাগই যুবসমাজ মাদকের অর্থ যোগানে যুবকেরা বিভিন্ন অপরাধকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে দেশে বর্তমানে ৩০ ভাগ মাদকাসক্ত ব্যক্তি খুন-জখম, অপহরণ, ছিনতাই, চুরি, সম্ভ্রমহরণের মতো অপরাধে জড়িত রয়েছে
সীমান্ত দিয়ে মাদক চালান: ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ঢুকছে কোটি কোটি টাকার ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক শুধু বাংলাদেশে পাচারের টার্গেট নিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে দিনাজপুর অংশের সীমান্ত ঘেঁষে কমপক্ষে ২০টির মতো ভ্রাম্যমাণ মাদক কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে সীমান্তের অন্তত ২৮টি স্পট দিয়ে এসব কারখানায় ৎপাদিত কোটি কোটি টাকার ফেনসিডিলসহ মাদকদ্রব্য দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে বিশেষ করে হিলি, বাসুদেবপুর, ডাঙ্গাপাড়া, বিরামপুর, দাইনুর, দাউদপুর, কাটলা সীমান্ত এলাকা দিয়ে অধিক পরিমাণে মাদক আসছে এসব এলাকায় মাদক পাচারের সিন্ডিকেট সক্রিয় ঠাকুরগাঁও জেলার ৪টি উপজেলা সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলোতে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী রা এখন আস্তানা গেড়েছে সীমান্ত বতী ৪টি উপজেলার ৩৬টি গ্রামের বিভিন্ন সীমান্ত পার হয়ে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার মাদক আসছে ফেনসিডিল, গাঁজা, হিরোইন, আফিম বিভিন্ন ব্রান্ডের মাদকে ছেয়ে গেছে গোটা ঠাকুরগাঁও জেলা প্রসাশনের কোন নজরগারি কাজে আসছে না ঠাকুরগাঁওয়ের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে
সারাদেশে মাদকের মহামারি: ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যানুসারে, অবৈধ মাদকদ্রব্যের বিষাক্ত অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের জনসংখ্যার বিরাট একটা অংশ এমনকি বিষাক্ত মাদকদ্রব্য সেবন করে মৃত্যু কোলে ঢলে পড়ছে অসংখ্য মানুষ বর্তমানে শুধু রাজধানী শহর ঢাকার মাদকের প্রধান স্পট আছে ১০০০টির মতো খুচরা স্পটের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়
মাদকের মামলার জট: মাদকদ্রব্যের অবৈধ ব্যবহারজনিত সকল কর্মতৎপরতায় জড়িত লোকজন ধরা পড়ছে প্রতিনিয়ত এদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হয় মামলার সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্টি হচ্ছে মামলাজট বাধ্য হয়ে আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হয় এবং নিয়োগ করতে হয় অতিরিক্ত লোকবল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর থেকে দেয়া এক তথ্যে জানা যায়, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৬৬টি মামলা দায়ের করা হয় এবং সময়ে আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় মোট লাখ হাজার ৭৯৮ জন গত তিন বছরে ব্যাপক হারে মাদক ব্যবসায়ী সেবনকারী বৃদ্ধি পেয়েছে
সচেতন ব্যক্তিদের অভিমত: স্বল্প সময়ে মামলাগুলোর বিচার সম্পন্ন করতে হবে তাহলেই মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব মাদকবিরোধী আইনের শেষ নেই কিন্তু সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ হচ্ছে না বিধায় মাদকসেবী মাদক কারবারীরা পার পেয়ে যাচ্ছেযার ফলে দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পোঁছেছে (সংবাদ সূত্র- দৈনিক আল ইহসান: ২৯//২০১৩ .)

No comments:

Post a Comment