Monday, October 13, 2014

যুন নূরাইন, যুল হিজরতাইন, খলীফায়ে ছালিছ, জামিউল কুরআন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আমিরুল মু’মিনীন, ক্বাতিবে ওহী হযরত উছমান ইবনে আফফান আলাইহিস সালাম

উনার মূল নাম মুবারক- ‘উছমান’ আলাইহিস সালাম। কুনিয়াত (ডাক নাম বা উপনাম) মুবারক’ আবু আমর, আবু আবদিল্লাহ, আবু লায়লা’ আলাইহিস সালাম এবং সর্বাধিক পরিচিত লকব মুবারক ‘যুন নূরাইন’ ও ‘গনি’ আলাইহিস সালাম। পিতা- আফফান, মাতা- আরওরা বিনতু কুরাইয। কুরাইশ বংশের উমাইয়্যা গোত্রের সন্তান। উনার পূর্বপুরুষ ‘আবদে মান্নাফে’ গিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নসব মুবারক উনার সাথে মিলিত হয়েছে।
তিনি হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের তৃতীয় খলীফা তথা খলীফায়ে ছালিছ। তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন হস্তী বছরের ৬ বছর পরে ৫৭৬ ঈসায়ী সনে। এ হিসাবে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তিনি ছয় বছর পরে দুনিয়াতে তাশরীফ মুবরক গ্রহণ করেন।

সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন মধ্যমাকৃতির সুঠাম দেহের অধিকারী। উনার ছিল ঘন দাড়ি মুবারক; গাত্র বর্ণ ছিল উজ্জ্বল ফর্সা; বুক ও কোমর মুবারক ছিল চওড়া; ছিল ঘন এবং কান পর্যন্ত ঝোলানো বাবরী চুল মুবারক; পায়ের নালা মুবারক ছিল মোটা; ছিল পশম ভরা লম্বা বাহু মুবারক এবং মুক্তাখচিত দাঁত মুবারক।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মান বর্ণনা রয়েছে। তন্মধ্যে এখানে সামান্য কিছু দেয়া হলো: তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খুব প্রিয় ছিলেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটতম ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম একজন। তিনি বারবার জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনার জান্নাতে সঙ্গী আছেন, আর আমার সঙ্গী হবেন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম।” তিনি ক্বাতিবে ওহী ছিলেন। তিনি পূর্ববর্তী দুইজন সম্মানিত খলীফা আলাইহিমাস সালাম উনাদের সম্মানিত উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি প্রতি বছর পবিত্র হজ্জ করতেন। তবে পবিত্র শাহাদত মুবারক গ্রহণ করার বছর তিনি পবিত্র হজ্জ করতে পারেননি। প্রায় সারা বছর রোযা রাখতেন এবং সারারাত ইবাদত-বন্দেগী করতেন। এক রাকাত নামাযে পবিত্র কুরআন শরীফ একবার খতম করতেন। তিনি কবরের পাশ দিয়ে গেলে প্রচুর কাঁদতেন এবং দাড়ি মুবারক ভিজে যেত। তিনি রাতের বেলা গোলামদের খিদমত নিতেন না।
তিনি ছিলেন অত্যন্ত লাজুক। আত্মীয়-সঙ্গীদের প্রতি ছিলেন পরম দয়ার্দ্র। তিনি সর্বপ্রথম তারাবীহ নামাযে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করার সন্নত বা পদ্ধতি চালু করেন। মিম্বর শরীফ উনার ২য় সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ১ম খুতবা এবং ১ম সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ২য় খুতবা প্রদানের সুন্নত মুবারক জারি করেন এবং ৩০ পারা পবিত্র কুরআন শরীফ নতুনভাবে সঙ্কলন করেন এবং বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নর উনাদের কাছে প্রেরণ করেন। যার জন্য উনাকে ’জামিউল কুরআন’ বলা হয়।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন কুরাইশ বংশের অন্যতম কুস্তিবিদ্যা বিশারদ। কুরাইশদের প্রাচীন ইতিহাসেও ছিল উনার গভীর ইলম মুবারক। উনার প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা, সৌজন্যতা, সদয়তা ইত্যাদি মহান গুণাবলীর জন্য সবসময় উনার পাশে মানুষের ভীড় জমে থাকতো এবং তিনি হাত খুলে তাদের উপকার করতেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে জাহিলী যুগের কোনো অপকর্ম স্পর্শ করতে পারেনি। লজ্জা ও প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ ছিলো উনার সুমহান চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। যুবক বয়স মুবারকে তিনি অন্যান্য অভিজাত কুরাইশদের মতো ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। সীমাহীন সততা ও বিশ্বস্ততার গুণে ব্যবসায় অসাধারণ সাফল্য লাভ করেন। পবিত্র মক্কা শরীফ শহরের একজন বিশিষ্ট ধনী ব্যবসায়ী হিসেবে ‘গনী’ লক্বব মুবারক-এ প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ‘আস-সাবেকুনাল আউওয়ালুন’ (প্রথম পর্বের ইসলাম গ্রহণকারী) এবং ‘আশারায়ে মুবাশশারা’ উনাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে গভীর সম্পর্ক ছিল এবং উনার দাওয়াতেই তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। ফলে উনার খালা উনাকে অভিনন্দন জানিয়ে ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করেন। এরপর আজীবন জান-মাল দ্বারা আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে নিয়োজিত ছিলেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার বোন হযরত আমিনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাসহ বৈপিত্রীয় ভাই-বোন হযরত ওয়ালিদ, হযরত খালিদ, হযরত আম্মারা, হযরত উম্মু কুলসুম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সকলেই মুসলমান হয়েছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার অন্য ভাই-বোন উনারা পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের সময় পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর কুরাইশদের একজন সম্মানিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও উনাকে কাফিরদর দ্বারা সীমাহীন কষ্ট পেতে হয়। উনার চাচা হাকাম ইবন আবিল আস সে উনাকে রশি দিয়ে বেঁধে বেদম প্রহার করে। সে বলতো, একটা নতুন ধর্ম গ্রহণ করে আপনি আমাদের বাপ-দাদার মুখে কালি দিয়েছেন। এ ধর্ম ত্যাগ না করা পর্যন্ত আপনাকে ছাড়া হবে না। এতে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ঈমানী দৃঢ়তা আরো শক্তভাবে প্রকাশ হয়। তিনি বলতেন: তোমাদের যা ইচ্ছে করো, তবুও এ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম আমি কখনো ছাড়তে পারবো না।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণের পর আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজ বানাত সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার সাথে শাদী মুবারক দেন। হিজরী দ্বিতীয় সনে পবিত্র মদীনা শরীফ শহরে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের পঞ্চম বছরে মুশরিকদের নির্মম অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে মুসলমগণ উনাদের প্রথম যে দলটি হাবশায় (ইথিওপিয়া) হিজরত মুবারক করেছিলেন উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার সম্মানিতা আহলিয়া সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনিও ছিলেন। অর্থাৎ হযরত লূত আলাইহিস সালাম উনার পর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় পরিবারসহ প্রথম হিজরতকারী। সুবহানাল্লাহ!
হাবশায় (আবিসিনিয়ায়) আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক হিজরতের ফলাফল সুদূরপ্রসারী। উনাদের হিজরতের দরুন আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশী উনাদের মুবারক ছোহবত লাভে ধন্য হন। উহার সুবাদেই তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। উনাদের মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় সেখানে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ব্যাপক প্রচার-প্রসার ঘটে।
হাবশায় অবস্থানকালে উনাদের আওলাদ সাইয়্যিদুনা হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন এবং এ আওলাদ উনার নাম অনুসারে তিনি কুনিয়াত ধারণ করেন ‘আবু আবদুল্লাহ’। হিজরী ৪র্থ সনে সাইয়্যিদুনা হযরত আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। উনাদের দাম্পত্য জীবন সুন্নতী এবং খুব সুখের ছিল। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বলাবলি করতেন- কেউ যদি সর্বোত্তম সংসার দেখতে চায়, সে যেন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম ও উনার আহলিয়া সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনাদেরকে দেখে নেয়। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি বেশ কিছু দিন হাবশায় অবস্থান করেন। অতঃপর পবিত্র মক্কা শরীফ ফিরে আসেন। পরবর্তীতে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ হতে পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত করার পর আবার তিনিও পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত করেন। এভাবে তিনি ‘যুল হিজরতাইন’ অর্থাৎ দুই হিজরতের অধিকারী হন।
একমাত্র পবিত্র বদর জিহাদ ছাড়া সমস্ত জিহাদে তিনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে অংশগ্রহণ করেছেন এবং জিহাদের সময় অঢেল ধন-সম্পত্তি দান করে দিতেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র বদর জিহাদে রওয়ানা হন, তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি অসুস্থতাকে গ্রহণ করেছিলেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নির্দেশে তিনি নিজ আহলিয়া হযরত আহলে বাইত শরীফ উনাদের অন্যতম ব্যক্তিত্ব সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার মুবারক খিদমতের জন্য পবিত্র মদীনা শরীফ শহরেই অবস্থান করেন। মূলত হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের খিদমত সমস্ত কিছু থেকে উত্তম এবং জিহাদও এর সমতুল্য নয়।
পবিত্র বদর জিহাদে বিজয়ের খবর যেদিন পবিত্র মদীনা শরীফ এসে পৌঁছলো সেদিনই সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জন্য পবিত্র বদর জিহাদে অংশগ্রহণকারীদের মতো সওয়াব ও গনীমতের অংশ ঘোষণা করেন। এ হিসাবে পরোক্ষভাবে তিনিও বদরী ছাহাবী।
মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশে তৃতীয় হিজরী সনে সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু কুলসুম আলাইহাস সালাম উনার সাথে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাদী মুবারক দেন। এ কারণে তিনি ‘যুন-নূরাইন’ অর্থাৎ ‘দুই নূর মুবারক উনার অধিকারী’ উপাধি লাভ করেন। কিন্তু নবম হিজরী সনে সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু কুলসুম আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি তাবুক জিহাদে এক তৃতীয়াংশ সৈন্যের যাবতীয় খরচ বহন করেন। তিনি একাই ৯০০টি উট এবং ৫০টি ঘোড়া হাদিয়া করেন। এছাড়া অন্যান্য জিহাদ, বিশেষ দিন (আখিরী চাহার শোম্বাহ, সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ ইত্যাদি), দুর্ভিক্ষের সময়সহ অন্য যেকোনো সময় মুক্তহস্তে দান করতেন। ‘বীরে রুমা’ নামক ইহুদীদের কূপটি তিনি ক্রয় করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অধিবাসীদেরকে হাদিয়া দিয়েছিলেনে। এরকম অসংখ্য জনকল্যাণমূলক কাজ করেছিলেন তিনি। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে মাল বোঝাই এক হাজার উটও দান করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি সবসময় নিখুঁতভাবে হিসাব রাখতেন। ঝুঁকিপূর্ণ হুদাইবিয়ার দূত হিসেবে তিনিই পবিত্র মক্কা শরীফ গমন করেন এবং উনাকে তিন দিন আটকে রাখা হয়। পরবর্তীতে সন্ধি হয়।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করা পর প্রথম খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে শুনামাত্রই বাইয়াত হন এবং উনার পরবর্তী খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে মনোনীত করে যে অঙ্গীকারনামাটি লেখা হয়, উহার লেখক ছিলেন স্বয়ং তিনি। দ্বিতীয় খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে তিনিই প্রথম বাইয়াত গ্রহণ করেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করার সময় তিনি বেশ কয়েকজনের নাম মুবারক প্রস্তাব করে গিয়েছিলেন এবং তিনদিন-তিনরাত্রি সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। এরমধ্যে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আলোকে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকেই সর্বাধিক সম্মানিত এবং উপযুক্ত হিসেবে পবিত্র মসজিদে নববী শরীফে সবার উপস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত এক ভাষণের পর আব্দুর রহমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি খলীফা হিসেবে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এবং সকলেই বাইয়াত গ্রহণ করেন। অতঃপর আমজনতা বাইয়াত গ্রহণ করেন। হিজরী ২৪ সনের পহেলা মুহররম সকালে তিনি খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি খিলাফতের দায়িত্ব খুব নিষ্ঠা এবং দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন। কোথাও কোনো সমস্যা ছিলো না। খিলাফত বিস্তার হয়েছিল কাবুল থেকে মরোক্ক পর্যন্ত। কিন্তু কিছু কুচক্রী ইহুদীদের সৃষ্ট ফিতনার কারণে মুনাফিক দ্বারা আক্রান্ত হয়ে তিনি রোযা রাখা অবস্থায় পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সময় পবিত্র শাহাদত মুবারক গ্রহণ করেন। এ ঘটনা সংঘটিত হয় হিজরী ৩৫ সনের ১৮ই যিলহজ্জ শরীফ। দিনটি ছিল জুমুয়াবার। তিনি কয়েক দিন কম ১২ বছর খিলাফতের মহান দায়িত্ব পালন করেন। পবিত্র জান্নাতুল বাক্বী শরীফ উনার ‘হাশসে কাউয়াব’ নামক স্থানে উনার পবিত্র রওযা শরীফ করা হয়। মাগরিব নামাযের পর দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। হযরত যুবাইর ইবনে মুতইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার জানাযা নামায পড়ান। তবে ইহুদী ও মুনাফিকদের বাধার কারণে লোকসংখ্যার উপস্থিতি কম ঘটে।

No comments:

Post a Comment