খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ
পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
قل
بفضل
الله
وبرحمته
فبذلك
فليفرحوا
هو
خير
مما
يجمعون.
অর্র্থ: “আয় আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সমগ্র কায়িনাতবাসীকে
জানিয়ে দিন, মহান আল্লাহ
পাক তিনি স্বীয় অনুগ্রহ ও রহমত মুবারক হিসেবে উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সে জন্য তারা যেন যথার্থভাবে তা’যীম (টাকা-পয়সা, মাল-জান কুরবানীর মাধ্যমে) সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ বা খুশি প্রকাশ করে
তথা সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ
পালন করে। আর এই সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদ বা খুশি প্রকাশ করাই হবে সবকিছু থেকে সর্বত্তোম, যা কিছু তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে থাকে। সুবহানাল্লাহ!
(পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ : আয়াত শরীফ ৫৮)
পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফই
হচ্ছেন- খুশি প্রকাশের রাত। সুবহানাল্লাহ!
رغائب (রগায়িব) শব্দটি رغيب এর বহুবচন। যার অর্থ কাঙ্খিত
বিষয়, প্রচুর দান। (মিছবাহুল লুগাত-২৯৮)
পারিভাষিক বা ব্যবহারিক অর্থে
যেই রাতে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
উনার আম্মা সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র ও মহা
সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ কুদরতীভাবে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন সেই মহান রাতকে ‘পবিত্র লাইলাতুর রাগায়িব’ বলা হয়।
হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা পবিত্র শাহরুল্লাহিল হারাম রজবুল আছাম্ম মাস উনার প্রথম
জুমুয়া উনার রাতটি গাফলতির সাথে অতিবাহিত করো না। কারণ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম
উনারা ওই রাতটিকে পবিত্র ‘লাইলাতুর
রগায়িব’ নামে আখ্যায়িত
করেছেন।”
আর ওই রাতটি যখন এক তৃতীয়াংশ
অতিবাহিত হয় তখন আসমান-যমীনে যত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আছেন সবাই পবিত্র
কা’বা শরীফ এবং উনার আশপাশে উপস্থিত
হন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি সম্বোধন করে বলেন, ‘হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! আপনাদের যা ইচ্ছা তা প্রার্থনা
করতে পারেন। আমি অবশ্যই কবুল করবো।’ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা তখন বলেন, ‘হে মহান আল্লাহ পাক! আমাদের প্রার্থনা এই যে, যারা পবিত্র শাহরুল্লাহিল হারাম রজবুল আছাম্ম মাস উনার মধ্যে
রোযা রাখবে তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিন।’ তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি তাদের
সবাইকে ক্ষমা করে দিলাম।’ সুবহানাল্লাহ!
(গুনিয়াতুত ত্বলিবীন ৩৩১)
হযরত মাওলানা শাহ কারামত আলী
জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব, “বারাহীনুল ক্বতইয়াহ ফী মাওলিদী খাইরিল বারীয়াহ” নামক কিতাবে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, এ মুবারক রাত্রির ফযীলত বা শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে হাম্বলী মাযহাবের
সম্মানিত ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি যখন ফতওয়া করলেন, ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব’ শরীফ উনার ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর ও লাইলাতুল বরাত অর্থাৎ
পবিত্র শবে ক্বদর, পবিত্র
শবে বরাতসহ অন্যান্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রি অপেক্ষা লক্ষ-কোটিগুণ বেশি। (সুবহানাল্লাহ!)
তখন সমসাময়িক ইমাম ও ফক্বীহগণ উনার নিকট জানতে চাইলেন, হে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি! লাইলাতুল
ক্বদর এবং লাইলাতুল বরাত উনাদের ফযীলত সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র
কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন। কিন্তু ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ উনার ফযীলত সম্পর্কে কোথাও বর্ণনা করা হয়নি। তাহলে আপনি কিসের
ভিত্তিতে ফতওয়া দিলেন যে, পবিত্র
‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ উনার ফযীলত উক্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রিগুলো অপেক্ষাও বেশি? হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জবাবে বলেন, পব্রিত লাইলাতুল ক্বদর ও পবিত্র লাইলাতুল বরাত উনাদের ফযীলত
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে সত্যিই; কিন্তু লাইলাতুল ক্বদর ও লাইলাতুল বরাতসহ অন্যান্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ
রাত্রির সৃষ্টি হয়েছে পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার উসীলায়। অর্থাৎ ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ না হলে ‘লাইলাতুল
ক্বদর, লাইলাতুল বরাতসহ’ ফযীলতপূর্ণ কোনো রাত্রির সৃষ্টিই হতো না। এ কারণেই উক্ত রাত
মুবারক উনার ফযীলত সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রির চেয়ে লক্ষ-কোটিগুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ!
হযরত মাওলানা শাহ কারামত আলী
জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘বারাহিনুল ক্বতইয়াহ ফী মাওলিদি খাইরিল বারিয়াহ’ উনার ৭৮ পৃষ্ঠায় আরো উল্লেখ করেছেন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে যে, এই রাতে মহান আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে ও হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস
সালাম উনাদের জগতে নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলেন যে, পবিত্রতম নূর মুবারক দ্বারা সারা কায়িনাত (জগৎ) আলোকিত করে দাও।
তাই আসমান-যমীনের সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা মহাখুশিতে বিভোর হয়ে গিয়েছিলেন।
সর্বোত্তম জান্নাত জান্নাতুল ফিরদাউস উনার মুবারক দরজা খুলে দেয়ার জন্য জান্নাতের
দ্বাররক্ষী হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সারা কায়িনাতকে
বিভিন্ন প্রকার খুশবু দ্বারা সুগন্ধিযুক্ত করার হুকুম ছিল। আকাশের সব স্তরে এবং পৃথিবীর
সব ঘরে ঘরে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে যে, “নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ মুবারক রাতে
উনার সম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম উনার মহা পবিত্র ও মহা সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ
তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করবেন। কারণ তিনি সবকিছুর মূল। অর্থাৎ উনাকে উপলক্ষ করে সারা কায়িনাতের
সবকিছুই সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তিনি সমস্ত নূর মুবারক ও গুপ্ত রহস্যাবলীসহ সমস্ত রহমত, বরকত, মাগফিরাত
সাকীনা, সম্মান, মর্যাদা-মর্তবা, হাক্বীক্বত, মা’রিফাত, মুহব্বতসহ সমস্ত কিছু জাহির বা প্রকাশিত হওয়ার মূল উৎস। গোটা
সৃষ্টি জগৎ উনার মুবারক অজুদ পাক বা মুবারক অস্তিত্ব হতে সৃষ্টি হয়েছে এবং যিনি সমস্ত
কিছুর মূল। তিনি অচিরেই দুনিয়াতে মুবারক তাশরীফ নিবেন। সারা কায়িনাতকে তিনি সম্মান-মর্যাদা
দ্বারা খুশি ও আনন্দিত করবেন।” সুবহানাল্লাহ!
(মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, ১/১৯, সীরাতে ইবনে হিশাম, ১/১৪৫)
হযরত মাওলানা শাহ কারামত আলী
জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত আছে যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি দুনিয়াতে তাশরীফ গ্রহণের দিন যেভাবে শয়তানগুলোকে আকাশে উঠার জন্য নিষেধাজ্ঞা
জারি করা হয়েছিল, অনুরূপ
পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ এবং ঊষাকালে সকল মূর্তি উপুড় হয়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছিল।
পবিত্র ‘লাইলাতুর রগায়িব’ শরীফ উনার মধ্যে অসংখ্য-অগণিত আশ্চর্যজনক ঘটনা সংঘটিত হয়েছিলো।-
(১) দুনিয়ার
এমন কোনো বাদশাহের সিংহাসন ছিলো না, যা ওই রাতে উল্টিয়ে পড়েনি।
(২) উক্ত
রাতে প্রতিটি ঘর আলোকময় হয়েছিল।
(৩) সেই
রাতে সমস্ত জীব-জন্তু কথা বলতে পেরেছিলো।
(৪) এমনকি
পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের পশু-পাখিরা পর্যন্ত খুশি ও সুসংবাদ বাণী পরস্পর বিনিময় করেছিলো।
(আল বারাহীনুল ক্বতইয়াই ফী মাওলিদি খাইরিল বারিয়াহ, ৭৯)
তিনি সেখানে আরো উল্লেখ করেন
যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আম্মা আলাইহাস সালাম উনার মহাপবিত্র
ও মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করার পূর্বে দুর্ভিক্ষের কারণে অনেকেই
অভাবে কষ্ট ভোগ করছিল। বৃষ্টির অভাবে গাছের পাতাগুলো শুকিয়ে গিয়েছিলো। আর সমস্ত জীব-জন্তু
এবং গৃহপালিত পশু-পাখিগুলো অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছিলো।
কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ
তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করার সাথে সাথে আমূল পরিবর্তন হয়ে গেল। মহান আল্লাহ পাক তিনি মুষলধারায়
বৃষ্টি বর্ষণ করলেন। রহমতের বৃষ্টি সকল গাছপালা, তৃণ লতাকে নতুনভাবে সবুজ ও তরুতাজা করে দিলো। সুবহানাল্লাহ!
(মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, ১/১৯, সীরাতে হালাবিয়া ১/৪৮, বারাহীনুল ক্বতইয়াহ ৮১, সীরাতে ইবনে হিশাম, ১/১৪৫)
হযরত মাওলানা শাহ কারামত আলী
জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘আল বারাহীনুল ক্বতইয়াই ফী মাওলিদি খাইরিল বারিয়াহ’ কিতাবে আরো উল্লেখ করেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার আম্মা সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস
সালাম তিনি বলেন, “আমি সে
সময় ঘুম ও জাগ্রতের মাঝামাঝি অবস্থায় ছিলাম। এমন সময় একজন লোক এসে আমাকে সুসংবাদ জানালেন-
সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত তথা রহমাতুল্লিল আলামীন আপনার মাঝে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন। উক্ত
ব্যক্তি আরো বললেন, আপনি মানব
জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব উনাকেই গ্রহণ ও ধারণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
অপর বর্ণনায় এসেছে, সমস্ত সৃষ্টির সর্বোত্তম ব্যক্তিত্ব অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক
উনার পরেই উনার স্থান উনাকেই আপনি গ্রহণ ও ধারণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! (আল বারাহিনুল
ক্বতইয়াহ, ৮৪)
হযরত আবূ নাঈম ইস্পাহানী রহমতুল্লাহি
আলাইহি তিনি হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি উনার মাতা আলাইহাস সালাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ
তাশরীফ মুবারক আনয়নের দিনের মুবারক নিদর্শন হচ্ছে এই যে, সেই রাত মুবারকে কুরাইশদের সমস্ত গৃহপালিত পশুগুলি একটি অন্যটির
নিকট বলাবলি করেছিল যে, পবিত্র
কা’বা শরীফ উনার রব উনার কসম!
তথা মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! এই রাত মুবারকে এমন একজন রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি উনার সম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত খিদমত
মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছেন; যিনি হচ্ছেন- সমস্ত কায়িনাতের ইমাম এবং দুনিয়াবাসী সকলের আলোর
দিশারী তথা পথ প্রদর্শক। সুবহানাল্লাহ! (আল বারাহীনুল ক্বাতইয়াহ ৮৩)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সংস্পর্শে যা কিছু এসেছেন সেটাও সবচেয়ে
সুমহান হয়ে গেছেন। যেমন- সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম
উনারা একমত হয়েছেন অর্থাৎ ইজমা করেছেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার পা মুবারক, শরীর মুবারক
বা যে কোনো অংশ মুবারক উনার যা কিছু স্পর্শ মুবারকে এসেছেন; উনার প্রত্যেকটি বিষয়, বস্তু বা প্রতিটি জিনেসের মর্যাদা-মর্তবা, ফাযায়িল-ফযীলত পবিত্র আরশে আযীম উনার চেয়েও লক্ষ-কোটিগুণ সীমাহীন
ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! প্রকৃতপক্ষে মাটি বা কোনো কিছুরই কোনো ক্বদর বা মূল্য ছিল না।
শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
স্পর্শ মুবারক উনার কারণে পবিত্র আরশে আযীম উনার চেয়ে মূল্যবান, ফযীলতপূর্ণ ও সম্মানিত হয়েছেন।
যদি বাহ্যিক দৃষ্টিতে কোনো
কিছু স্পর্শ মুবারকে আসার কারণে স্বয়ং পবিত্র আরশে আযীম উনার চেয়ে বেশি মর্যাদাবান
হয়ে যান; তাহলে পবিত্র
নূরানী অজুদ পাক উনার সাথে যে বিষয়গুলি মিশে আছেন সেই বিষয়গুলির ফাযায়িল-ফযীলত যে কত
বেশি তা সারা কায়িনাতের প্রত্যেক সৃষ্টিকুলের চিন্তা, ফিকিরের সীমাহীন ঊর্ধ্বে। তাইতো বলা হয়ে থাকে পবিত্র লাইলাতুর
রগায়িব মুবারক হচ্ছে- পবিত্র শবে ক্বদর, শবে বরাতসহ অন্যান্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাতের চেয়ে লক্ষ-কোটিগুণ
বেশি ফযীলতপূর্ণ। সুবহানাল্লাহ!
ঠিক একইভাবে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান নূরানী অজুদ পাক
মুবারক উনার সাথে ওৎপ্রোতভাবে সংশ্লিষ্ট আওলাদুর রসূল সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ
ক্বিবলা আলাহিস সালাম এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযুর্গী-সম্মানও বে-মিছাল সীমাহীন ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র
সূরা নিসা ৫৯নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
يَا
أَيُّهَا
الَّذِينَ
آمَنُوا
أَطِيعُوا
اللهَ
وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে এবং উলীল আমর উনাদের ইতায়াত করো।” অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনাকে ইতায়াত করাই মহান আল্লাহ পাক উনাকে ইতায়াত করা। আর যাঁরা নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পরিপূর্ণ ইতায়াত তথা অনুসরণ
করেছেন (সূক্ষ্মদর্শী ওলীআল্লাহ) উনাকে অনুসরণ করাই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইতায়াত করা। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক
নির্দেশ অনুযায়ী উলীল আমর তথা বর্তমান যামানার যিনি খাছ লক্ষ্যস্থল, আওলাদুর রসূল সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা আলাইহিস
সালাম উনাকে অনুসরণ করতে হবে। কারণ তিনিই একমাত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ-অনুকরণ করেন। তাই বিশুদ্ধ
আক্বীদায় উনাকে মুহব্বত করলে, উনার অনুসরণ
করলে, উনার খিদমত মুবারক করলেই নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করা হবে।
সুবহানাল্লাহ!
অতএব, আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্য হলো- সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ
ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ সম্পর্কে জেনে যথাযথভাবে খুশি
প্রকাশ করা। ২৭শে পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ রাত মুবারকে তিনি উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান
আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নূরানী খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করে উক্ত রাতকে
পূর্ণ নিয়ামত দান করেন। সুবহানাল্লাহ! উক্ত মুবারক রাতে তাসবীহ-তাহলীল, দোয়া-দুরূদ, ছলাত-সালাম, যিকির-আযকার, তওবা-ইস্তিগফার, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ, ছদকা-খইরাত, নামায-কালাম পাঠ করে বেমিছাল নিয়ামত মুবারক হাছিল করে উনার শুকরিয়া
আদায় করা সকল মুসলমান তথা কুল-কায়িনাতের জিন-ইনসানসহ সমস্ত মাখলুকাতের দায়িত্ব-কর্তব্য।
আর মুসলমান হিসেবে প্রত্যেক
মুসলমান সরকারের তো অবশ্যই এমনকি গায়ের মুসলমান (অমুসলিম) সরকারেরও উচিত- ইসলামী ঐতিহ্য
ও ফযীলতযুক্ত দিবসগুলোর মর্যাদা অনুধাবনে, নিয়ামত হাছিলে ও ফযীলত আহরণের সুবিধার্থে সেদিনগুলোতে সরকারিভাবে
ছুটির দিন ঘোষণা করা।
No comments:
Post a Comment