পরিত্যক্ত
পলিথিন তথা প্লাস্টিক থেকে ডিজেল ও পেট্রলের মতো জ্বালানি তেল পাওয়ার কৌশল উদ্ভাবন
করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ
মাহমুদুর রহমান। তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ৩০ গ্রাম প্লাস্টিক ব্যাগ থেকে ১৫ মিলিলিটার
জ্বালানি তেল উৎপাদন করেছেন। এ প্রক্রিয়ায় ১ কেজি প্লাস্টিক থেকে ০.৫ লিটার তেল
উৎপাদন সম্ভব। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত তেলের প্রতি লিটারের দাম পড়বে ৩০ টাকা। ওই তেল
সর্বপ্রকার যানবাহন, সেচ পাম্পসহ
জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত গ্যাস থেকে বিদ্যুতও
উৎপাদন করা যাবে। তবে এর আগে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জাতীয় বর্জ্য পদার্থ থেকে
জ্বালানি তেল উদ্ভাবন করেছে দিনাজপুরের স্কুল ছাত্র মকলেসুর রহমান ইমন।
পরিত্যক্ত
পলিথিন তথা প্লাস্টিক থেকে জ্বালানি তেল উদ্ভাবনের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি
যুগান্তকারী বিপ্লব সূচিত হবে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
উল্লেখ্য, তথাকথিত প্রগতিবাদীরা ও শিক্ষিতরা অনেকে মনে করে থাকে
বিজ্ঞানে মুসলমানদের তেমন কোনো অবদান নেই। অথচ গোটা বিজ্ঞান-ই মুসলমানদের অবদান।
শুধু মুসলমানদেরই অবদানেই বিজ্ঞান এ পর্যন্ত এসেছে। বিশেষভাবে গণিত, মহাকাশ বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং এদের শাখা পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞান এ ৫টা শাখার
উপর মুসলমানদের অবদানই সবচেয়ে বেশি। ত্রয়োদশ শতাব্দী পর্যন্ত বিজ্ঞানে মুসলমানগণ
ছাড়া অন্য কারো অবদানই ছিল না। এমনকি ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত মুসলমানরাই একচেটিয়া
বিজ্ঞানে অবদান রেখেছেন।
গণিতের
শতকরা ৯৯ ভাগই মুসলমানদের আবিষ্কার। বীজ গণিতের আবিষ্কারক হলেন মুসলিম গণিতবিদ
মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খাওয়ারেজমি। গণিতে শূন্য [০] উনার আবিষ্কার। ‘হিসাব আল জাবর ওয়াল মোকাবেলা’ বইটি উনার বিরাট অবদান। শুধু তাই নয়, তিনি মহাকাশ বিজ্ঞানীও ছিলেন। খলীফার অনুরোধে আকাশের মানচিত্রও তিনি এঁকেছিলেন
এবং একটি পঞ্জিকাও রচনা করেন।
চিকিৎসা
বিজ্ঞানে মুসলমানগণ এত উন্নতি লাভ করেছিলেন যে, এক সময় গোটা ইউরোপের কাছে এ শাস্ত্রের জন্য মুসলিম মনীষীদের লেখা বইগুলো
একমাত্র পাঠ্য বলে বিবেচিত হতো এবং এখনো হয়। চিকিৎসা, ভুগোল, মহাকাশ বিজ্ঞান, ইতিহাস প্রভৃতি জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইবনে সিনা, মূসা আল খাওয়ারেজমী, ইবনে নাফিস, আল রাজী, আবুল কাসেম জাহারাভী ইবনুল হাইছাম, জারকালী, আল-বিরুনি, আব্দুল্লাহ আল ইদ্রিসি, প্রমুখের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এসব বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার
ও রচনাবলী ইউরোপের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল পাঠ্য ছিল।
রসায়নের
ইতিহাসে যার নাম সর্বপ্রথমে আসে তিনি হচ্ছেন জাবীর ইবনে হাইয়ান। ইস্পাত তৈরি, ধাতুর শোধন, তরল বাষ্পীয় করণসহ যুগান্তকারী অনেক কিছু আবিষ্কার করে তিনি বিজ্ঞানে অমর হয়ে
আছেন। প্রস্তর নিক্ষেপ যন্ত্র, বারুদ, বন্দুক, কামান মুসলিমরা
করেছেন। যুদ্ধের উন্নত কৌশল আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে উনারাই প্রথম আরবী ভাষাতে বই
লিখেছিলেন বিশ্ববাসীর জন্য। সে বইটির নাম ‘আলফুরুসিয়া ওয়াল মানাসিব উল হারাবিয়া’।
প্রথম
ভূ-মানচিত্র এঁকেছিলেন যাঁরা তাঁরা সকলেই মুসলিম ছিলেন। ৬৯ জন মুসলিম ভূগোলবিদ
পৃথিবীর প্রথম যে মানচিত্র এঁকেছিলেন তা আজো এক পরম বিস্ময়! এই মানচিত্রের নাম- ‘সুরাতুল আরদ’; যার অর্থ হচ্ছে বিশ্ব আকৃতি।
বিজ্ঞানের
উপর যে বৈজ্ঞানিক ২৭৫টি বই লিখেছিলেন তিনিও মুসলিম বৈজ্ঞানিক আলকিন্দি। তাছাড়া ৮৬০
সালেই বিজ্ঞানের একশত রকমের যন্ত্র তৈরির নিয়ম ও ব্যবহার প্রণালী এবং তার প্রয়োজন
নিয়ে বই লিখে রেখে গেছেন মুসলিম বৈজ্ঞানিক হাসান, আহমদ,
মুহাম্মদ উনারা সম্মিলিতভাবে।
প্রসঙ্গত, শুধু অতীত ইতিহাস বা নিকট ইতিহাসেই নয়; বর্তমান যুগেও বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানের সব শাখায় মুসলমানদের
অবদান অভাবনীয়। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ কেন্দ্র ‘নাসা’সহ বিশ্বের খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অবদান রাখছেন
মুসলিম বিজ্ঞানীরা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত মুসলিম বিজ্ঞানীরাও পিছিয়ে নেই।
সূর্যের চেয়ে কয়েকশ’গুণ বড় ৫টি জোড়া
নক্ষত্র আবিষ্কার করে মহাকাশবিদ্যার জগৎ কাঁপিয়ে দিয়েছেন নাসায় কর্মরত বাংলাদেশী
মুসলিম জ্যোতির্বিদ ড. রুবাব খান। ‘কলেরার পূর্বাভাস পদ্ধতি’ আবিষ্কার করেছেন
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মুসলিম বিজ্ঞানী ড. শফিকুল ইসলাম। জীবিত প্রাণীর দেহে মৃত
ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানাতে সক্ষম ইলেকট্রনিক সেন্সর আবিষ্কার করেছেন
আরেক বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মুসলিম বিজ্ঞানী মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশী মুসলিম
বিজ্ঞানী ড. আতাউল করিম এমন একটি ট্রেনের নকশা করে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছেন, যা পুরোপুরি ভাসমান, ভূমি স্পর্শ না করেই চলতে সক্ষম এই ট্রেন। বাংলাদেশী মুসলিম পদার্থবিজ্ঞানী
জাহিদ হাসান আবিষ্কার করেছেন ভরহীন কণা-ভাইল ফার্মিয়ন। এর ফলে দ্রুতগতির ও অধিকতর
দক্ষ ইলেকট্রনিক্স যুগের সূচনা হবে বলে মন্তব্য আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীগুলোর।
এছাড়া প্রবাসী
বাংলাদেশী মুসলিম বিজ্ঞানী ড. রেজাউল করিম তার গবেষণার মাধ্যমে উন্মোচন করেছেন
হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) দীর্ঘমেয়াদি আক্রমণের মাধ্যমে নারীর
জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রক্রিয়া।
আরেক
বাংলাদেশী মুসলিম বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমেদ ফারজান কামাল এমন এক বিদ্যুৎ উৎপাদন
ব্যবস্থার উদ্ভাবন করেছেন যেখানে প্রয়োজন হয় না তেল, গ্যাস অথবা কয়লার মতো কোনো জ্বালানি শক্তির। এমনকি প্রয়োজন নেই পানি, বাতাস কিংবা সৌরশক্তির মতো প্রাকৃতিক শক্তিরও। চৌম্বক
ক্ষেত্রে সর্বব্যাপ্ত মহাজাগতিক তরঙ্গের পর্যায়ক্রমিক বিবর্তনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ
উৎপাদনের চমকপ্রদ এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন ড. আহমেদ ফারজান কামাল।
যুক্তরাজ্যের
কুইন্স ম্যারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী মুসলিম বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হাসান শহীদ
উদ্ভাবন করেছেন একটি অত্যাশ্চর্য হেলিকপ্টার। সূর্যের আলো থেকে প্রাপ্ত শক্তি দিয়ে
চলতে পারবে এ হেলিকপ্টার। সম্পূর্ণ সৌরশক্তি চালিত হেলিকপ্টার এটাই প্রথম।
উল্লেখ্য, পবিত্র দ্বীন ইসলাম জ্ঞান-বিজ্ঞানের ওপর অশেষ গুরুত্ব আরোপ
করায় এবং অতীতের মুসলিম খলীফা এবং সুলতানরা বিজ্ঞানীদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন বলে
মুসলিম মনীষী ও বিজ্ঞানীরা জ্ঞান-বিজ্ঞান সবচেয়ে বেশি অগ্রসর ছিলেন। ‘ইউরোপে যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই, পাঠাগারের কোনো অস্তিত্ব ছিল না, তখন মুসলিম দেশসমূহেই ছিল জ্ঞান-বিজ্ঞানের বই ও পাঠাগার।
শুধু বাগদাদের ‘বায়তুল হিকমাহ’য় ছিল ৪০ লক্ষ, কায়রোর সুলতানের পাঠাগারে ১০ লক্ষ, সিরিয়ার ত্রিপোলী পাঠাগারে ছিল ৩০ লক্ষ বই। কেবল স্পেনেই প্রতিবছর ৭০ থেকে ৮০
হাজার বই প্রকাশিত হতো। সব কালেই মুসলমানরাই জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিভূ ছিলেন এবং
এখনো মুসলমানরা দেশে দেশে বিজ্ঞানে অবদান রেখে যাচ্ছেন। এ ধারাবাহিকতা রক্ষায়
মুসলিম দেশসমূহ জ্ঞান-বিজ্ঞানে আরো ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করলে বিশ্বব্যাপী মুসলমানরা
জ্ঞান-বিজ্ঞানে উনাদের অবদান অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হবেন।
No comments:
Post a Comment