Sunday, April 30, 2017

শিবনারায়ণ দাস ছিল স্রেফ আঁকিয়ে, তাকে খোদ জাতীয় পতাকার ডিজাইনার বানিয়ে দেয়াটা মূর্খতা বৈ কিছুই নয়।


শিবনারায়ণ দাস ছিল স্রেফ আঁকিয়ে, তাকে খোদ জাতীয় পতাকার ডিজাইনার বানিয়ে দেয়াটা মূর্খতা বৈ কিছুই নয়।
সম্প্রতি জয়ধ্বনি সাংস্কৃতির সংগঠন নামক একটি অখ্যাত সংগঠন দাবি করেছে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ডিজাইনার হলো শিবনারায়ণ দাস, যাকে নাকি তার প্রাপ্য ‘কৃতিত্ব’ দেয়া হচ্ছে না। সম্প্রতি ঢাবি’র কলা ভবনের সামনে আয়োজিত চতুর্থ জাতীয় পতাকা উৎসবে এই অযৌক্তিক দাবি করে উক্ত অখ্যাত সংগঠন, যা বিভিন্ন দালাল মিডিয়ায় ‘সংখ্যালঘু’ সম্পর্কিত উস্কানী দিতে ব্যাপক প্রচার করা হয়েছে।
অথচ জাতীয় পতাকার তৈরির ইতিহাসে শিবনারায়ণ দাসের অন্তর্ভুক্তি নেহাতই কাকতালীয়। কারণ পতাকা তৈরির মূল সংশ্লিষ্টরা তাকে হাতের কাছে পেয়ে তাদের নির্দেশ অনুযায়ী পতাকা আঁকার দায়িত্ব দিয়েছিল মাত্র।
১৯৭০ সালের ৬ই জুন তৎকালীন ইকবাল হলে শিবনারায়ণ দাসের উপস্থিতি ঘটনা চক্রে। ঐ দিনই সে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছে এবং সেই রাতে ইকবাল হলে অবস্থান করছিল ছাত্রলীগ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমান বুয়েট) শাখার সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনুর সাথে। ঐ দিন যদি সে ইকবাল হলে উপস্থিত না থাকতো তাও পতাকাটা বানানো হতোই। তাছাড়া ডিজাইনার কাকে বলা যেতে পারে? যারা রঙ, নকশা বা থিম করেছেন তাদেরকে, নাকি যে ফরমায়েশ অনুযায়ী এঁকে দিয়েছে তাকে?
১৯৭০ সালের ০৭ জুন ছয় দফা দিবসে ছাত্রলীগ পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এই কুচকাওয়াজ ও গার্ড অব অনার অনুষ্ঠানের দায়িত্ব অর্পিত হয় ‘জয় বাংলা বাহিনী’র উপর। এই বাহিনীর অধিনায়কের দায়িত্ব দেয়া হয় আ.স.ম. আব্দুর রবকে। সব কিছু চূড়ান্ত হওয়ার পরে জয় বাংলা বাহিনীর ব্যাটেলিযন ফ্ল্যাগ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয। জয় বাংলা বাহিনীর এই ব্যাটালিয়ন ফ্ল্যাগই পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পতাকার সম্মান লাভ করে।
বুয়েটের ইকবাল হলের ১১৬ নম্বর রুমে শুরু হলো পতাকা বানানোর প্রক্রিয়া। আ.স.ম. আব্দুর রব ও মনিরুল ইসলাম মণি (মার্শাল মনি) বললেন, পতাকার জমিনটা হবে ব্যাটল গ্রিন। শাহজাহান সিরাজ বললেন, রক্ত লাল একটা কিছু যেন থাকে পতাকায়। কাজী আরেফ বললেন, পতাকার মাঝখানে রক্ত লাল প্রভাত সূর্যের মাঝে সোনালি রঙে বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা থাকবে। পতাকায় বাংলাদেশের মানচিত্র সুনির্দিষ্টভাবে থাকলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা সম্ভব হবে না পাকিস্তানী সরকারের পক্ষে। তাতে সকলে একমত হলেন। ঠিক হয়ে গেলো ব্যাটেলিয়ন ফ্ল্যাগের রঙ, নকশা এবং থিম। তখন প্রয়োজন পড়লো একজন অংকন শিল্পীর। সমস্যার সমাধানও হয়ে যায় সাথে সাথেই। কারণ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা কুমিল্লার শিবনারায়ণ দাস ঐ দিনই ঢাকায় এসেছে এসএম হল ছাত্রলীগের সম্মেলন উপলক্ষে ব্যানার ফেস্টুন লেখার জন্য এবং সেই রাতে ইকবাল হলেই অবস্থান করছিল ইঞ্জিনিযারিং কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিপ্লবী পরিষদের সদস্য হাসানুল হক ইনুর সাথে। সবাই জানতো শিবনারায়ণ দাসের আঁকাআঁকির হাত খুব ভালো। ফলে শিবনারায়ণকে সেই রাতে ১১৬ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে উক্ত ছাত্রনেতারা তাদের নির্দেশ অনুযায়ী পতাকাটি আঁকিয়ে নেয়।
সুতরাং পতাকা তৈরির মূল কারিগর আ.স.ম. আবদুর রব, মার্শাল মণি বা সংশ্লিষ্টদের মতো যারা সারাদেশে পরিচিত ছাত্রনেতা ছিল, তাদেরকে বাদ দিয়ে অখ্যাত শিবনারায়ণ দাসকে জাতীয় পতাকার ডিজাইনার দাবি করাটা উক্ত সাংস্কৃতির সংগঠনের মূর্খতা এবং অতিরিক্ত হিন্দুপ্রীতির পরিচায়ক। বিষয়টি অনেকটি বঙ্গবন্ধুকে পাশ কাটিয়ে জিয়াকে স্বাধীনতার হর্তাকর্তা বানিয়ে দেয়ার মতোই, যেখানে তৎকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধু ছিলেন সারাদেশের মানুষের নিকট অবিসংবাদিত নেতা আর বিপরীতে জিয়াকে তখন কেউ চিনতোই না! জাতীয় পতাকা উৎসবের মতো একটি উৎসবে এধরনের মূর্খতাসূচক দাবি জনমানুষে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে। তাছাড়া ‘হিন্দু হিসেবে কৃতিত্ব থেকে বঞ্চিত করার’ এধরনের ভিত্তিহীন দাবি সাম্প্রদায়িক উস্কানীমূলকও বটে। (সংগৃহীত)

No comments:

Post a Comment