মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মুসলমান উনাদের সবচেয়ে বড় শত্রু প্রথমত ইহুদী অতঃপর মুশরিক” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৮২)
মহান আল্লাহ
পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “মুশরিকদের থেকে দূরে
থাকো।”
(পবিত্র সূরা আনআম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৬)
মহান আল্লাহ
পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “হে মু’মিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না,
তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু।”
অর্থাৎ প্রকৃতপক্ষে কাফিররা
কখনোই মুসলমানদের ভালো চাইতে পারে না। সব রসুনের যেমন গোড়া
এক, তেমনি সকল কাফির-মুশরিকরা তথা মুসলমান উনাদের বিরোধীরা ও শত্রুরাও
এক ও অভিন্ন তথা একজোট। এরা সম্মিলিতভাবে চক্রান্ত করেই মুসলমানদের
শত্রুতা করে থাকে, ক্ষতি করে থাকে, কষ্ট দিয়ে থাকে। ভারতের মুশরিকদের এরূপ চক্রান্তের কাহিনী
২০১১ সালে ফাঁস হয়েছে।
ভারতে হিন্দুত্ববাদী
সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর নানা সহিংস ও সাম্প্রদায়িক অপকর্মের কথা একটা একটা করে সামনে
আসছে। খোদ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোই এ বিষয়ে ভয়ঙ্কর তথ্য উদ্ঘাটন
করেছে।
আর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ছোট্ট একটা অংশ হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী
সংগঠনগুলোর নানা সহিংস ও সাম্প্রদায়িক অপকর্মের রহস্য উদ্ঘাটনে তৎপর হলেও অপরঅংশ চরম
সাম্প্রদায়িক। বিশেষ করে ভারতীয় আদালত কর্তৃক গঠিত ভারতের
কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ‘ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন
এজে›িস’ (নিয়া)-এর তদন্তে হিন্দুত্ববাদী
উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নানা সহিংস ও সাম্প্রদায়িক অপকর্মের চিত্র বেরিয়ে এসেছে। আর তাই জোরালো/তীর্যক প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগে কেন নির্দিষ্ট ওই ঘটনাগুলোর জন্য আসল অপরাধীদের
ধরার চেষ্টা করেনি? কেন এক তরফাভাবে শুধু মুসলমানদেরকে দোষারোপ
করা হতো এবং এখনো হচ্ছে? কেন ভারতীয় মিডিয়ার
একাংশ সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে শুধু মুসলমানদের বিরুদ্ধে একপেশে রিপোর্ট করতো
এবং এখনো করছে?
মিলিটারি ইনটেলিজেন্সের রিপোর্ট তথ্য উঠে এসেছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল শ্রীকান্ত পুরোহিত শুধু মালেগাঁও এবং অন্যান্য
বিস্ফোরণের ঘটনার সাথেই জড়িত ছিলো না, সে তার সহযোগী
কট্টরপন্থী হিন্দু সন্ত্রাসীদের নিয়ে আরএসএস’র নেতা ইন্দ্রেশ কুমারকে হত্যার পরিকল্পনাও করেছিলো; যার দায় চাপনো হতো মুসলমানদের উপর। লেফটেন্যান্ট কর্নেল
শ্রীকান্ত পুরোহিত এবং তাদের সংগঠন ‘অভিনব ভারত’-এর এ হত্যাকা- চালানোর মনগড়া যুক্তি হলো- ইন্দ্রেশ কুমার পাকিস্তানের
গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র এজেন্ট। এরূপ প্রপাগান্ডা করে তাদের সমগোত্রীয় নেতদের হত্যা করতেও তারা দ্বিধা করে না। আর কুচক্রী মিডিয়ার সহজ প্রাচারণা যে, এসব সন্ত্রাসী
কর্মকা- ঘটিয়েছে মুসলমানরা; সুতারাং মুসলমানদেরকে
নিধন করো!
উল্লেখ্য, ইন্দ্রেশ কুমার গোঁড়া
হিন্দুত্ববাদী উগ্র সংগঠন আরএসএস’র শীর্ষপর্যায়ের একজন
নেতা। চরম মুসলিমবিদ্বেষী গোঁড়া হিন্দু শ্রীকান্ত পুরোহিত এবং ‘অভিনব ভারত’-এর অন্য সদস্যদের প্রচারণা
ও প্রপাগান্ডা হলো, আইএসআই নিজেদের ‘চর’ হিসেবে ইন্দ্রেশ কুমারকে সংঘ পরিবারের মধ্যে
অনুপ্রবেশ করিয়েছে। এসব ভয়ঙ্কর তথ্যই প্রকাশ পেয়েছে ভারতের মিলিটারি
ইনটেলিজেন্সের রিপোর্টে। হেমন্ত কারকারের নেতৃত্বে
ভারতের মহারাষ্ট্র অঙ্গরাজ্যের ‘অ্যান্টি টেরোরিস্ট
স্কোয়াড’ (এটিএস) বাহিনী লেফটেন্যান্ট কর্নেল শ্রীকান্ত
পুরোহিতকে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার পর ভারতের মিলিটারি ইনটেলিজে›সও এ সম্পের্কে তদন্ত শুরু করে। আর তাদের রিপোর্টেই এসব তথ্য উঠে আসে।
চরম মুসলিমবিদ্বেষী
গোঁড়া হিন্দু (লেফটেন্যান্ট কর্নেল) শ্রীকান্ত পুরোহিত এবং ‘অভিনব ভারত’-এর সদস্যরা স্থির করেছিল,
আরএসএস নেতা ইন্দ্রেশ কুমারকে হত্যা করে তার দায় মুসলিম সংগঠনগুলোর
উপর চাপিয়ে দেয়া হবে।
সামরিক গোয়েন্দাদের
রিপোর্টে আরো বলা হয়, হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ‘অভিনব ভারত’ ছিল পুরোহিতের ‘ব্রেন চাইল্ড’ বা মস্তিষ্কপ্রসূত। আরএসএস’র ধনাঢ্য সমর্থকদের অর্থসাহায্যে এ সন্ত্রাসী
সংগঠনটি গড়ে তোলা হয়। জেরার মুখে পুরোহিত আরো প্রকাশ করে যে,
শঙ্করাচার্য দয়ানন্দ পান্ডে ইন্দ্রেশ কুমারকে হত্যা করার জন্য
তাকে অনুরোধ করেছিল।
অন্যদিকে আরেকজন
উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী নেতা শ্যাম আপ্তে মহারাষ্ট্রের এটিএস’কে জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানায়, শ্রীকান্ত পুরোহিত তাকে বলে যে, এসব তথ্য ভারতের
মিলিটারি ইনটেলিজে›সকে সে জানিয়েছে। কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তাই সে দেশ ও হিন্দু
ধর্মের স্বার্থে ইন্দ্রেশ কুমারকে হত্যা করতে চায়। দয়ানন্দ পা-ে, অসীমানন্দ, প্রজ্ঞা সিং ঠাকুর প্রমুখ উগ্রবাদী হিন্দু নেতাকেও শ্রীকান্ত পুরোহিত এক মঞ্চে
আনতে সমর্থ হয়।
ভারতীয় মিলিটারি
ইনটেলিজে›েসর রিপোর্টে আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ
পেয়েছে। আর তা হচ্ছে- লেফটেন্যান্ট কর্নেল শ্রীকান্ত পুরোহিত এবং তার
সন্ত্রাসী সংগঠন ‘অভিনব ভারত’ সংখ্যালঘু খ্রিস্টানদেরও নিশানা বানিয়েছিল। তারা খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে উড়িষ্যার কন্দমাল, উত্তর কর্নাটক, পুনে, জব্বলপুর এবং ভূপালে নানা ধরনের অপতৎপরতা চালায়। এবং এর দায় মুসলমানদের
উপর চাপায়।
এ ‘অভিনব ভারত’-এর বেশির ভাগ কর্মীকেই উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরএসএস’ ও ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’ থেকে আমদানি করা হয়। এছাড়া ‘রাম সেনা’, ‘হিন্দুস্তান রাষ্ট্রীয়
সেনা’ প্রভৃতি চরমপন্থী সংগঠনকেও শ্রীকান্ত পুরোহিত
এক মঞ্চে আনতে চেয়েছিলো।
এদিকে ২০০৪
সালে লস্কর-ই তৈয়্যবার সন্ত্রাসবাদী কর্মী আখ্যা দিয়ে ভারতের গুজরাট রাজ্যের পুলিশ
বাহিনী ইসরাত জাহান নামে একজন মুসলিম তরুণী এবং আরো তিন মুসলিম তরুণকে হত্যা করে। ভারতীয় পুলিশ গুজব ছড়ায় যে, তারা গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদিকে হত্যা করতে এসেছিল। এ স¤পর্কে ভারতীয় আদালত কর্তৃক গঠিত ¯েপশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা এসআইটি’র একজন শীর্ষ
পুলিশ অফিসার ২৮ জানুয়ারি ২০১১ ঈসায়ী, শুক্রবার বলে
যে, ২০১৪ সালের এই সংঘর্ষের ঘটনাটি ছিল সম্পূর্ণরূপে ভুয়া। গুজরাট পুলিশ ইসরাত জাহানকে ঠা-া মাথায় হত্যা করেছে। এসআইটি’র তিন সদস্যের অন্যতম পুলিশের জয়েন্ট কমিশনার
সতীশ ভার্মা গুজরাট হাইকোর্টে তার ৮০ পাতার হলফনামা পেশ করে বলে যে, এসআইটি’র অন্য দুই সদস্য কারনেল
সিং এবং মোহন ঝাঁ সব তথ্য-প্রমাণকে অগ্রাহ্য করে এ তদন্তকে বানচাল করার চেষ্টা করে। তদন্তে দেখা গেছে, সাজানো সংঘর্ষেই ইসরাত
জাহান এবং আরো তিনজন মুসলিম তরুণ জাভেদ শেখ ওরফে প্রণেশ পিল¬াই, আমজাদ আলী রানা এবং জিশান জোহরকে গুজরাট পুলিশ
হত্যা করে।
পরে তাদের হত্যা সম্পর্কে ব্যাপক প্রশ্ন উঠে। এ ঘটনার বিচারকাজে নিযুক্ত একজন ম্যাজিস্ট্র্রেট এসপি তামাংও মন্তব্য করে যে,
গুজরাট পুলিশ ঠা-া মাথায় ইসরাত জাহান ও তিন মুসলিম তরুণকে হত্যা
করে।
এসব তথ্য সামনে
আসার পর বোঝা যাচ্ছে- ভারতের মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসবাদীরা এক সুনিপুণ
পরিকল্পনা করে হত্যা ও বিস্ফোরণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। এছাড়া এই বিস্ফোরণগুলোর দায়ও চাপিয়ে দেয়া হয় নিরপরাধ মুসলিম তরুণদের উপর।
এখন প্রশ্ন
উঠেছে- প্রকৃত অপরাধীদের না ধরে ভারতীয় পুলিশ ও অন্য তদন্তকারী সংস্থাগুলো কেন শত শত
মুসলিম তরুণকে কারাগারের অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিল এবং এখনো ঠেলে দিচ্ছে? ভারতীয় মুসলিম নেতারা সন্দেহ করছেন বড় ধরনের এসব ষড়যন্ত্রে কিছু
ভারতীয় হিন্দু পুলিশ অফিসারও যুক্ত রয়েছে।
(http://bangla.se/index.php?option=com_content&view=article&id=1878:2011-01-30-21-57-40&catid=34:bangla-news&Itemid=50)
No comments:
Post a Comment