এই বছর নিজের ২৮ কাঠা জমিতে বোরো ধান
লাগিয়েছিলেন। আশা ছিল, এই ফসল দিয়ে চলে যাবে
বছর। কিন্তু এখন তার চোখে অন্ধকার।
এই কৃষক বললেন, “পানির অভাবে চারা শুকিয়ে মরছে। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া
তার কিছুই করার নাই।”
বলতে বলতে চোখে জল এসে যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের
শিবগঞ্জ উপজেলার গুপ্তমানিক গ্রামের হোসেন আলীর।
তার মতো অবস্থা এখন কয়েক হাজার কৃষকের। পানি
না পেয়ে চৈত্রের খরতাপে পুড়ছে হাজার হাজার বিঘা জমির বোরো ধান।
পানি না পাওয়ার এই কারণ বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকা, আর
বিদ্যুৎ না থাকার কারণ জামাতের তাণ্ডব।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি
যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর জামায়াতি তাণ্ডবের পুড়িয়ে
দেয়া হয় শিবগঞ্জের কানসাট পল্লী বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
যে স্থান থেকে যাওয়া বিদ্যুতে সচল ছিল ১৫০টি
গভীর নলকূপ, ১ হাজার ৪৯৯টি অগভীর নলকূপ এবং ১৫টি লো-লিফট
পাম্প (এলএলপি)।
কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসব
নলকূপের আওতায় থাকা ৭১০০ হেক্টর জমির চাষাবাদ সেচ না থাকায় হুমকির মুখে পড়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল
কালাম আজাদ জানান, শিবগঞ্জই শুধু নয়, এই
বিদ্যুৎকেন্দ্র পুড়ে যাওয়ায় সদর, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলার
কিছু অংশের বোরো ধানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তিনি জানান, শুধু গভীর নলকূপের
আওতাধীনই ১ হাজার ২৬৪ হেক্টর জমির বোরা ধান ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যেখানে
ধান উৎপাদন হতো প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
পানি কবে যাওয়া যাবে- সেই খোঁজ নিতে প্রতিদিনই
নলকূপ স্টেশনে খোঁজ নিতে আসেন কৃষকরা। কিন্তু তাদের কোনো উত্তর দিতে
পারেন না অপারেটররা।
গোরক্ষনাথপুর গভীর নলকূপের অপারেটর আমিনুল ইসলাম
বলেন, “কানসাট পল্লী বিদ্যুৎ
অফিসের সাবস্টেশনই শুধু পোড়েনি, পুড়েছে কয়েক হাজার কৃষকের কপাল।”
সেদিন লাগানে আগুনে সাব স্টেশনের পাশাপাশি পল্লী
বিদ্যুতের কার্যালয়, আবাসিক ভবন, রেস্ট
হাউস সবই ভস্মীভূত হয়।
এই তাণ্ডবের দায় নিতে নারাজ জামাতের স্থানীয়
নেতাদের দাবি, রাজাকার সাঈদীর রায়ের
প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ মানুষই এতে জড়িয়ে পড়েছিল।
তবে আওয়ামী লীগসহ
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, জামাত নেতাদের
প্রত্যক্ষ উস্কানিতে আগুন দেয়া হয় বিদ্যুৎকেন্দ্রে।
শিবগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা
যায়, সদ্য রোপণ করা বোরো ধান শুকিয়ে যাচ্ছে, ক্ষেতে
পানি নেই। চৈত্রের খরতাপে ফাটতে শুরু করেছে ওই সব জমি।
শিবগঞ্জের চককীর্তি ইউনিয়নের বারোমাসিয়া গ্রামের
জিয়াউর রহমান ধান রোপণ করেছেন ২০ বিঘা জমিতে।
এই ধানই তার আয়ের মূল উৎস। ধান থেকেই সংসারের খরচ
যোগান। ধান বাঁচাতে চার দিন আগে ডিজেলচালিত পাম্প বসিয়েছেন
তিনি, যদিও তাতে খরচ অনেক বেড়েছে।
রানীনগর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ হারুন মিয়া বলেন, মাঝারি
কৃষকরা দু-একটি ডিজেলচালিত পাম্প বসিয়ে হয়ত কিছু ধান রক্ষা করতে পারবে, কিন্তু
ছোট কৃষকরা পথে বসছে।
ছত্রাজিতপুর গ্রামের শাহজাহান আলী তার দেড় বিঘা
জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছেন।
“কমপক্ষে ৩০-৩৫ মণ ধান হত। এতে
শোধ হত ঋণের কিছু টাকা। এখন সবই অনিশ্চিত,” হতাশার সুর শাহজাহানের।
তার মতোই অবস্থা ঋণগ্রস্ত গোরক্ষনাথপুর এলাকার
বর্গা চাষী সাইফুদ্দীন, রবিউল, ভোদু
মণ্ডলের।
পোকাপড়ি মাঠের গভীর নলকূপের অপারেটর শাহ আলম
বলেন, কৃষকদের অনুরোধে তিনি প্রতিদিনই কানসাট পল্লী
বিদ্যুত কার্যালয়ে খোঁজ নিতে যান। কিন্তু কবে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে, সেই
উত্তর পাননি এখনো।
ক্ষতিগ্রস্ত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনে করেছেন বিদ্যুৎ
প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক।
সাবস্টেশনটি দ্রুত মেরামত করা হবে বলে তিনি
জানালেও কবে নাগাদ তা চালু হবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু
বলতে পারেননি তিনি।
No comments:
Post a Comment