Wednesday, April 3, 2013

ফজলি আম নামকরনের ইতিহাস ও এই আমের কিছু বর্ননা তুলে ধরা হলো।

ইতিহাস:
০১. ব্রিটিশ ভারতে মালদহ জেলার কালেক্টর র‌্যাভেনশ এই আমকে ‘ফজলি’ নামে অভিহিত করে। হেরিটেজ রাজশাহী থেকে প্রকাশিত মাহবুব সিদ্দিকীর বই আম-এ বিস্তারিত তথ্য আছে এ বিষয়ে। ফজলি আম আগে ‘ফকিরভোগ’ বলে পরিচিত ছিল। কথিত আছে, ফজলি বিবি নামে এক বৃদ্ধার বাড়ি থেকে প্রথম
এই জাতটি সংগৃহীত হয়েছিল। তিনি বাস করতেন বাংলার স্বাধীন সুলতানদের ধ্বংসপ্রাপ্ত গৌড়ের একটি প্রাচীন কুঠিতে। তাঁর বাড়ির আঙিনায় ছিল একটি পুরোনো আমগাছ। তবে এটি কোন জাতের, সে বিষয়ে কোনো ধারণা ছিল না তাঁর। ফজলি বিবি গাছটির খুব যত্ন নিতেন। গাছটিতে প্রচুর আম ধরত। আমগুলো যেমন আকারে বড়, তেমনি সুস্বাদু। সেখানকার নির্জনবাসী ফকির-সন্ন্যাসীদের তিনি এই আম দিয়ে আপ্যায়ন করতেন। সে জন্য ফজলি বিবি এই আমের নাম দিয়েছিলেন ‘ফকিরভোগ’।
০২.  র‌্যাভেনশ  একবার অবকাশ যাপনের জন্য ফজলি বিবির কুঠির কাছে শিবির স্থাপন করেছিলো। সে আসার খবর পেয়ে ফজলি বিবি ফকিরভোগ আম নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে। র‌্যাভেনশ  আম খেয়ে অত্যন্ত মুগ্ধ হয়। ফজলি বিবির আতিথেয়তায় এতটাই খুশি হয়েছিলো যে, সে ওই আমের নামটিই রেখে দেয় ‘ফজলি’। তখন থেকে এই নাম মানুষের মুখে মুখে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্ননা:
আমের মধ্যে ফজলি জাতটি বড় আকারের। আমের ওজন ৫০০ থেকে ১২৫০ গ্রাম পর্যন্ত। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফজলি আম গড়ে লম্বায় ১৩ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার, পাশে ৯ দশমিক ৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন গড়ে ৬৫৪ দশমিক ৪ গ্রাম। আমটি দীর্ঘ এবং কিছু চ্যাপ্টা। পাকা আমের খোসা কিছুটা হলুদ হয়ে ওঠে। শাঁস হলুদ, আঁশবিহীন, রসালো, সুগন্ধযুক্ত, সুস্বাদু ও মিষ্টি। খোসা পাতলা। আঁটি লম্বা, চ্যাপ্টা ও পাতলা। ফজলি আমের গড় মিষ্টতা ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
ফজলি আম নাবি জাতের। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে পাকে। মুকুল আসা থেকে পাকা পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ মাস সময় নেয়। ফল পাড়ার পরে সাত-আট দিন পাকার জন্য সময় নেয়। ফলন প্রায় নিয়মিত। একটি পরিণত গাছে গড়ে প্রতিবছর ৫০০ থেকে ৬০০ আম ধরে।
ফজলির আরেকটি জাত হলো ‘সুরমা’। প্রচলিত নাম ‘সুরমা ফজলি’। এটি আকারে একটু ছোট। তবে স্বাদে উৎকৃষ্ট। চাপাঁইয়ের বিভিন্ন এলাকায় উন্নতমানের ফজলি আম ব্যাপকভাবে চাষ হয়ে আসছে।

No comments:

Post a Comment