অনিশ্চিত গন্তব্য
পানে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। গত কদিনের দেশজুড়ে উত্তেজনা আর উদ্বেগ শেষ
হতে না হতে আবার হরতালের ফাঁদে বাংলাদেশ। হেফাজতের লংমার্চ,
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও গণজাগরণ মঞ্চের হরতাল-অবরোধের মুখোমুখি
অবস্থান দেশজুড়ে যে উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছিল, হেফাজতের হরতাল
ডাকার মধ্য দিয়ে সেই উৎকণ্ঠা কিছুটা কেটেছিল। কিন্তু তা আর বজায় থাকল না।
হেফাজতের সোমবারের
হরতালের সঙ্গে যোগ হলো ১৮ দলের ডাকা মঙ্গল-বুধবারের টানা হরতাল। সোম, মঙ্গল, বুধবার মিলিয়ে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের ফাঁদে বাংলাদেশ। এতে দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা বাণিজ্যে ও বিনিয়োগে ধস নেমেছে। দেশ হারাচ্ছে রফতানি অর্ডার। আর দেশের সাধারণ মানুষের
জান-মালের ও কাজ-কর্মের নিরাপত্তা ভেঙ্গে পড়েছে। কষ্টে শেষ নেই খেটে খাওয়া মানুষের। কৃষক উৎপাদিত ফসল বাজারজাত
করতে না পেরে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। সব মিলিয়ে দেশের জনগণের
অবস্থা লাটে উঠেছে।
তিন দিনের পৃথক
এই কর্মসূচিতে রয়েছে হেফাজতে ইসলামের ডাকা আজ সোমবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। এরপর রাতে বিরতি দিয়ে মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে বুধবার সন্ধা ছয়টা পর্যন্ত ১৮-দলীয়
জোটের টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতাল।
গত মার্চ মাসটিও
ছিল হরতাল আর ছুটির ফাঁদে। সব মিলিয়ে মার্চ মাসে
২১ দিন কার্যত বন্ধ ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত। আর এই এপ্রিল শুরু হয়েছে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার হরতাল-অবরোধ দিয়ে। হেফাজতের লংমার্চ ঠেকাতে শুক্র-শনিবার ৩৬ ঘণ্টার হরতাল ডাকে সরকার সমর্থক বলে পরিচিত
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ ২৩টি সংগঠন; আর গণজাগরণ
মঞ্চ ২২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। তবে তাদের কর্মসূচি
তারও ১২ ঘণ্টা আগে শুরু হয়ে যায় লংমার্চ ঠেকাতে। তাই এই হরতাল-অবরোধ এক অর্থে ৪৮ ঘণ্টায় পর্যবসিত হয়।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক
জোট আর গণজাগরণ মঞ্চের অবরোধের রেশ শেষ না হতেই আসছে হেফাজতের ডাকা সোমবারের হরতাল। আর তার পরপর ১৮-দলীয় জোটের ৩৬ ঘণ্টার হরতাল। শুক্রবার থেকে বুধবার পর্যন্ত ছয় দিনে পাঁচ দিন হরতাল-অবরোধ। ঘণ্টার হিসেবে ১৪৪ ঘণ্টার মধ্যে ৯৬ ঘণ্টা হরতাল-অবরোধের ফাঁদে আটকালো দেশ।
হেফাজতের হরতালের
সঙ্গে লাগিয়ে ১৮ দল মঙ্গল-বুধবার হরতাল ডাকতে পারে এমন একটা আভাস ছিল। তবে এ নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন। কিন্তু ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় গতকাল রোববার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব
মির্জা ফখরুলসহ ১০ জন নেতার জামিন বাতিল হওয়ায় হরতাল কর্মসূচি ত্বরান্বিত হয়। গতকাল রোববার বিকেলে জামিন বাতিল করে আদালতের রায় ঘোষণার পরপর বিএনপির কেন্দ্রীয়
কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দলের যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে
বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় নেতাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে
পাঠানোর প্রতিবাদে এবং তাদের মুক্তির দাবিতে মঙ্গল-বুধবার হরতাল ডেকেছে ১৮-দলীয় জোট। এর আগে শনিবার হেফাজতে ইসলামের লংমার্চে সরকার বাধা দেয়ার প্রতিবাদে মহাসমাবেশ
থেকে সোমবার হরতাল ঘোষণা করা হয়। মঙ্গল-বুধবারের হরতাল
কর্মসূচির কারণে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে ১৮-দলীয় জোটের ঢাকায় পূর্বনির্ধারিত ১০ এপ্রিলের
সমাবেশ।
গতকাল রোববার
সকালে পৃথক সাত মামলায় মির্জা ফখরুলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম)
আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। এসব মামলায় তারা হাইকোর্ট
থেকে চার সপ্তাহের জামিনে ছিলেন। শনিবার সেই জামিনের
মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা গতকাল রোববার নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বিকেল
পৌনে পাঁচটায় জামিন আবেদন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে কেন্দ্রীয়
নেতাদের জামিন বাতিল এবং কারাগারে প্রেরণের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে
গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। কাকরাইল, রাজারবাগ, মতিঝিল ও বাসাবোসহ
রাজধানীতে মোট ৭টি গাড়ি ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়।
No comments:
Post a Comment