ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারদের বিরুদ্ধে কঠোরহস্ত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন,
‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো কোনো কথা যদি লেখায় থাকে,
অবশ্যই আমাদের তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা খুব স্বাভাবিক। আমি একজন মুসলমান। এখন নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে কেউ যদি আজে-বাজে কথা
লেখে, আমরা তো চুপ করে বসে থাকতে পারি না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
রোববার ‘বিবিসি বাংলা বিভাগ’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী
এসব কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছে বিবিসি’র কাদির কল্লোল।
ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারদের শাস্তির জন্য ব্লাসফেমি
আইনের আদলে নতুন কোনো আইন প্রণয়নে ধর্মব্যবসায়ী দল কথিত ‘হেফাজত ইসলাম’-এর অযৌক্তিক দাবি নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ প্রচলিত অনেক আইনেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগের ব্যাপারে
ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
সাক্ষাৎকারে বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের অন্যায্য দাবিও নাকচ করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমান সেনাবাহিনী রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করবে না।
এদিকে ধর্মব্যবসায়ী দল ‘হেফাজতে ইসলাম’ নতুন আইন করাসহ
১৩ দফা দাবিতে শনিবার লংমার্চের পর গতকাল ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা সোমবার দেশব্যাপী
সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করেছে ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,
নতুন আইন না করলেও ‘হেফাজতে ইসলাম’-এর দাবিগুলো নিয়ে তার সরকার আলোচনা-পর্যালোচনা করে দেখবে। তিনি বলেছেন, হেফাজতে ইসলামের দাবিগুলোর মধ্যে কিছু গ্রহণযোগ্য
হলে, তা গ্রহণ করব। আর যেগুলো গ্রহণযোগ্য
হবে না, সেগুলো গ্রহণ করব না।
রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ
প্রসঙ্গে সম্প্রতি খালেদার বক্তব্য এবং তদপ্রেক্ষিতে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা মহলে
আলোচনা-পর্যালোচনা-সমালোচনা চলছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘উনি যদি আশা করে থাকেন যে কিছু মানুষ খুন করলেই, একেবারে আর্মি ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর উনাকে ক্ষমতায় নেবে। বর্তমান আর্মি তা করবে না।’
মুসলমানদের ঈমানী অনুভূতিতে আঘাত হানার দায়ে
ধর্মদ্রোহী ব্লগারদের গ্রেপ্তার করাসহ ১৩ দফা দাবিতে গত ৬ এপ্রিল শনিবার ধর্মব্যবসায়ী
দল ‘হেফাজতে ইসলাম’ যুদ্ধাপরাধী
জামাতের আনুকূল্যে সারাদেশ থেকে ঢাকায় ‘লংমার্চ’
করেছিল। একটি ধর্মাশ্রায়ী ভূইফোঁড়
সংগঠনের ব্যানারে এই ‘লংমার্চ’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনেও উত্তেজনা ছড়িয়েছিল।
সেই লংমার্চের আগে ইসলামদ্রোহী চারজন নাস্তিক
ব্লগারকে গ্রেপ্তার করে তাদের রিমান্ডে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। অনেকে গুজব ছড়িয়েছিল ধর্মাশ্রায়ী ভূইফোঁড় সংগঠন হেফাজতের ‘লংমার্চ’কে কেন্দ্র করে গ্রেফতারের
ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাস্তিক
ব্লগারদের গ্রেপ্তারের এ গুজবকে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, এর সঙ্গে লংমার্চের কোনো সম্পর্ক ছিল না। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন, ব্লগ এবং ফেসবুকসহ
বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্কে কে কি লিখছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে
আঘাত হানার বিষয়ে কিছু আছে কিনা, সেসব খতিয়ে দেখতে সরকার
আগেই একটি তদন্ত কমিটি করেছিল। সেই প্রক্রিয়াতেই ওই
গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো কোনো কথা যদি লেখায় থাকে,
অবশ্যই আমাদের তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা খুব স্বাভাবিক। আমি একজন মুসলমান। এখন নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কেউ যদি আজে-বাজে কথা লেখে,
আমরা তো চুপ করে বসে থাকতে পারি না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ হয়তো ধর্ম না মানতে
পারে, তার মানে এই না যে তারা (অপরের) ধর্মীয় অনুভূতিতে
আঘাত দিয়ে কথা বলবে। নোংরা কথা লিখবে।’
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে সব ধর্মের সমান অধিকার আছে। কোনো ধর্মের মানুষের
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অধিকার কারো নেই।
কিন্তু ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারদের গ্রেপ্তারের
ঘটনায় একটি চিহ্নিত মহল থেকে সমালোচনা উঠেছে। এমনকি ক্ষমতাসীন জোটের নাস্তিক্যবাদী বামপন্থী শরিকদের মধ্যে অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের খোঁড়া অভিযোগ, ‘সরকার একদিকে ধর্মনিরপেক্ষতার
কথা বলছে। অন্যদিকে ইসলামপন্থীরা যখন দাবি তুলছে, তখন সরকার নমনীয় অবস্থান দেখাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের জবাবে শক্তভাবে
বলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হচ্ছে, সমান অধিকার এবং প্রত্যেক
ধর্মের মর্যাদা রক্ষা করা। কেউ একটা ধর্ম সম্পর্কে
যা খুশি লিখবে, এটা ধর্ম নিরপেক্ষতা নয়। সমালোচকরা সঠিক কাজ করছেন না বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
শেখ হাসিনা জোর দিয়ে বলেন, ‘নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কেউ যদি আজে-বাজে
কথা লেখে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আমি অন্যের কথা
শুনলাম, মোটেই না। আমি নিজেও ধর্মে বিশ্বাস করি। কাজেই আমার নিজেরও
অনুভূতিতে আঘাত লাগে। কেউ যদি বাজে কথা লেখে।’
তবে ধর্মব্যবসায়ী ‘হেফাজতে ইসলাম’-এর প্রধানতম দাবি হচ্ছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগের শাস্তি মৃত্যুদ- করে ব্লাসফেমির
আদলে নতুন আইন করা। তাদের এ অযৌক্তিক দাবি নাকচ করে প্রধানমন্ত্রী
বলেছেন, দেশে আইনের অভাব নেই। তথ্য-প্রযুক্তি আইন, বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং
ফৌজদারি বিধিতেও বিষয়টাতে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। কাজেই নতুন আইনের প্রয়োজন হবে না।
তিনি বলেন, ‘প্রচলিত আইনে গ্রেপ্তার করেছি, সেই আইনেই বিচার করা
যাবে। তবে এখন সবাই সবার মৃত্যুদ- চায়। মৃত্যুদ- দেয়ার মালিকতো আর আমি না। দেশে কোর্ট-কাচারী
রয়েছে। (আদালত আছে)। তারই ঠিক করবে,
কার মৃত্যুদ- হবে বা কার হবে না। সেটা আমরা করব কিভাবে। এটা সরকার করবে না,
সরকারের দায়িত্ব নয়। (করবে আদালত)।’
হেফাজতে ইসলামের লংমার্চ কর্মসূচি নিয়ে সরকারের
দিক থেকে এর আগে জামাত এবং ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে নানান আশঙ্কার কথা তুলে ধরা হয়েছিল। সে প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ইতিমধ্যেই দেখেছেন,
১৮ দলের পক্ষ থেকে মঞ্চে গিয়ে সমর্থন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ আশঙ্কা অমূলক ছিল না। তবে আমি ধন্যবাদ জানাব
যে, হেফাজতে ইসলাম কিছু কর্মসূচি নিলেও তারা যথারীতি তাদের সমাবেশ
শেষে ফিরে গেছে। জামাতের ফাঁদে পা দেয়নি।’
পবিত্র ইসলাম ধর্ম এবং ধর্মনিরপেক্ষতা- এই
দুইভাগে দেশের মানুষ বিভক্ত নয় বলেও তিনি মনে করেন। তিনি উল্লেখ করেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের
পক্ষ-বিপক্ষ, এই দুটি ভাগ বা ধারা কাজ করছে।
বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে
দাবিতে আন্দোলন করছে, সে ব্যাপারে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নে
তিনি পুরনো অবস্থানই তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন,
বিরোধী দল সংসদে এসে দাবি তুলে ধরতে পারে। একই সঙ্গে ওই দাবি নাকচ করে দিয়ে তিনি বিরোধী দলের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন করেছেন,
‘বিরোধীদলীয় নেত্রী দেশকে সেই ২০০৭ সালের পরিবেশে কেন নিতে চাইছেন?
রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ
প্রসঙ্গে সম্প্রতি খালেদার বক্তব্য এবং তদপ্রেক্ষিতে এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা মহলে
আলোচনা-পর্যালোচনা-সমালোচনা চলছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘উনি যদি আশা করে থাকেন যে কিছু মানুষ খুন করলেই একেবারে আর্মি ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর উনাকে ক্ষমতায় নেবে। বর্তমান আর্মি তা করবে
না।’
সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অনেক
মানুষ হতাহতের যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে বিরোধী দল সরকারের
বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে। এমন অমূলক অভিযোগ নাকচ
করে তিনি বিরোধী দলের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন।
No comments:
Post a Comment