দেশবরেণ্য এবং প্রখ্যাত আইনজীবি, সুপ্রিমকোর্ট বার কাউন্সিলের সাবেক
সভাপতি,
বাংলাদেশ সরকারের
বর্তমান আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ। বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার, মৌলবাদ তথা কওমী ধর্বব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে
সোচ্চার কণ্ঠ। তিনি দেশের কওমী মাদরাসাগুলোকে সন্ত্রাসবাদের
প্রজননক্ষেত্র বলে চিহ্নিত করেছেন। যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার, মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে করে থাকেন সাহসী
উচ্চারণ। তাই উনাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে প্রতিপক্ষ
প্রায়ই উনার বিরুদ্ধে নাস্তিক্যবাদের অভিযোগ তুলে। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি বিদ্বেষের অভিযোগ তুলে।
এ বিষয়টি নিয়ে গত পরশু সচিবালয়ে উনার নিজ কার্যালয়ে কথা
হয় যামানার তাজদীদী মুখপত্র দৈনিক আল ইহসান শরীফ ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকাদ্বয়
উনাদের সম্পাদক আল্লামা মুহম্মদ মাহবুব আলম সাহেব উনার সাথে। বিষয়গুলো নিয়ে তিনি খোলামেলাভাবেই বক্তব্য দিয়েছেন।
দৈনিক আল ইহসান শরীফ ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পত্রিকাদ্বয়
উনাদের সম্পাদক সাহেবের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয়
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ বলেছেন, তিনি নিজেতো নাস্তিক ননই, এমনকি উনার পূর্বসূরীরাও কেউ নাস্তিক
ছিলেন না বরং আলিমে দ্বীন, পরহেযগার, মুত্তাকী ছিলেন। তাছাড়া পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সৌন্দর্যে তিনি আভিভূত। তিনি চান দেশের আলিম সমাজ পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ব্যবহারিক দিকগুলো সমাজে প্রতিফলন
ঘটাতে এ বিষয়ে যেন ওয়াজ-নছীহত করেন।
তিনি নিজেকে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার একজন অনুসারী হিসেবে
উল্লেখ করে সম্পাদক সাহেবকে বলেন, আমার পিতা মৌলভী তালেব ১৮৯০ সালের দিকে কলকাতা আলিয়া মাদরাসা
থেকে পাস করেন। পরবর্তীতে কুমিল্লা জিলা স্কুলে তিনি
ধর্মীয় শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া আমার দাদা মৌলভী জিয়াউদ্দিন
সাহেবও পরহেযগার, মুত্তাকী ছিলেন। ৯৫ বছর বয়সে ইন্তেকালের সময়ও তিনি পরহেযগারী
করে গেছেন।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ বলেন, আমার বাড়িতে মসজিদ রয়েছে। সেখানে আমি ইমাম সাহেবের টাকা নিয়মিত দেই। তারাবী নামাযের হাদিয়া নিয়মিত দেই। একই গ্রামে আরেকটি মসজিদ রয়েছে সেখানেও অনুদান দিয়ে সহযোগিতা
করে থাকি। বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ
করে থাকি। তাহলে আমি নাস্তিক হলাম কী করে? আমার বিশ্বাস আমার কাছে, মুখে তা প্রচার করার দরকার নেই।
তিনি সম্পাদক সাহেবকে বলেন, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার যে সৌন্দর্য
সেটা পৃথিবীর অন্য কোনো ধর্মের মধ্যে নেই। তিনি উদাহরণ দিয়ে মদীনা সনদের কথা উল্লেখ
করে বলেন,
“মদীনা সনদ পৃথিবীর
সবচাইতে সর্বাধুনিক আন্তর্জাতিক চুক্তি।” এরূপ চুক্তি কেউ কখনো করে দেখাতে পারেনি। তাছাড়া পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যেই বলা হয়েছে ‘মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে তালাক হচ্ছে
সবচেয়ে নিকৃষ্ট হালাল কাজ’। সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষায় এসব বাণী মুবারক
অন্য কোনো ধর্মে দেখা যায় না।
তিনি আরো বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন
শরীফ আরবীতে নাযিল করেছেন। আরবী ভাষায় নাযিলকৃত পবিত্র কুরআন শরীফ
যেভাবে মুখস্ত রাখা যায়, মনে রাখা যায় অন্য কোনো ভাষার বই-কিতাব কী সেভাবে মনে
রাখা যায়?
সেই ছোট বেলায় মুখস্ত
করা সূরা শরীফগুলো এখনো মনে আছে। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার সূরাগুলো হচ্ছে
পয়েটিক এন্ড ইজি। অন্য কোনো ধর্মগ্রন্থই এরূপ নয়।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দুটি দিক রয়েছে। একটি হচ্ছে ব্যবহারিক দিক, যেমন- সততা, ন্যায়পরায়ণতা, বিনম্রতা, পরোপকারিতা ইত্যাদি। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার এসব সৌন্দর্য আজ কথিত মাওলানা
সাহেবরা সমাজে তুলে ধরতে পারে না। আবার অন্যটি হচ্ছে- আমলের দিক যেমন
নামায,
রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট মাসয়ালা-মাসায়িল
শিক্ষা করা করা, আমল করা। মাওলানা সাহেবরা শুধু এ দিকটি নিয়ে
ব্যস্ত।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সৌন্দর্যের কথা উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী
ব্যারিস্টার শফিক আহমদ সম্পাদক সাহেবকে আরো বলেন, পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে বিশ্বাসী
বলেই এবং পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সৌন্দর্যে অভিভূত বলেই এ সৌন্দর্যকে আমি আমার কার্যক্ষেত্রে
প্রতিফলনের চেষ্টা করি।
যেমন, আমি সরকারের একজন পূর্ণ মন্ত্রী হওয়ার পরও আমি সরকার থেকে
কোনো সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করি না। আমি সরকারিভাবে বাড়ি পাওয়ার পরও আমি
তা নেইনি। নিজের বাড়িতে থাকি। এমনকি নিজ বাড়ির গ্যাসের বিলও সরকার থেকে নেই না। সরকার আমাকে ৭০ লাখ টাকা দামের একটি প্রাডো জিপ দিতে চেয়েছে, আমি তাও নেইনি। একটি সিম্পল কার নিয়ে চলাফেরা করি। এই গাড়িও আমি কখনো আমার পারিবারিক কাজে ব্যবহার করতে দেই
না।
তিনি বলেন, সরকারের মন্ত্রী হিসেবে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে আমি বিজনেস
ক্লাস টিকেট পাই। কিন্তু সরকারি ব্যয় কমাতে আমি সবসময়ই
ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণ করি।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সৌন্দর্য রক্ষার্থেই আমি আমার
মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। একমাত্র আমিই দুর্নীতির অভিযোগে এ পর্যন্ত ৩২ জন সাব রেজিস্টারসহ ৫০ জন দুর্নীতিবাজ
কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরি ডিসমিস করে দিয়েছি। যা নজিরবিহীন। এবং এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ আরো বলেন, সেই প্রকৃত মুসলমান যে ধর্মীয় অনুশাসন
মেনে চলে। যদিও আমি পূর্ণভাবে তা পালন করতে পারি
না। তবে আমি সে অনুযায়ী আমার দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করি।
তিনি বলেন, দেশের সব আলিম-উলামারা যদি এই ঘুষ-দূর্নীতির বিরুদ্ধে
মানুষকে ওয়াজ-নছীহত করতেন, তাহলে দেশের টাকা দিয়েই ২-৩টা পদ্মা সেতু নির্মাণ করা
সম্ভব হতো।
সবশেষে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ সম্পাদক সাহেবকে
ধন্যবাদ জানিয়ে এবং দেশের সব ইমাম সাহেবসহ আলিম-উলামাদেরকে উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, সিন্ডিকেট ইত্যাদির বিরুদ্ধে অবস্থান
নিন। দুর্নীতিকে না বলুন, মাদককে না বলুন, সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষায় এগিয়ে আসুন। আপনারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সৌন্দর্য তুলে ধরেন, প্রচার করেন, মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্য কথা বলেন এবং
সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
1 comment:
খুব সুন্দর পোষ্ট
Post a Comment