Saturday, August 3, 2013

‘বাংলাদেশের অর্থনীতির গলা চেপে ধরেছে হরতাল’



ধর্মঘট আর হরতাল নামক গণতান্ত্রিক দানবের ছোবলে বাংলাদেশের অর্থনীতির শ্বাস বন্ধ হওয়ার অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হরতাল বাংলাদেশের অর্থনীতির গলা চেপে ধরছে। ব্যবসা-বাণিজ্যকে ধ্বংসের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে হরতাল-ধর্মঘটের অপসংস্কৃতি চালু করে; যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো দলীয় স্বার্থে গণতন্ত্রের লেবাস চড়িয়ে ব্যবহার করছে। এমনকি বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একে বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলকে শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এই হরতাল কর্মসূচি আরো বাড়তে পারে। ফলে বাড়তে পারে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ। গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনেও হরতালের নেতিবাচক দিক নিয়ে কথা বলা হয়েছে।
গতকাল শনিবারওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’- প্রকাশিতকালচার অব মাস স্ট্রাইকস সাফোকেটস বাংলাদেশ ইকোনমিশীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য  দেয়া হয়েছে। প্যাট্রিক বার্তা সাঈদ জাইন আল-মাহমুদ প্রতিবেদনটি লিখেছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে হরতাল একটি সাধারণ বিষয়। এর প্রভাবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিরূপ ফল ভোগ করছে। ওয়াল স্ট্রিটের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ধর্মঘট-হরতালের কারণে দোকানীরা বাড়িতে বসে থাকায় ব্যবসায় মুনাফার মুখ দেখতে পাচ্ছে না। এমনকি আম বিক্রেতারাও ভুগছে, সহিংসতার আশঙ্কায় বাইরে থেকে ঢাকায় আসতে পারছে না আমের চালান। রানা প্লাজার বিপর্যয়ের পর পোশাক কোম্পানিগুলোর ভাবর্মযাদা ফেরাতে যখন বাংলাদেশ চেষ্টা চালাচ্ছে সহিংতার তাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
সংবাদ মাধ্যমটির অনলাইন সংস্করণের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের পুরোনো ক্ষতকে সামনে নিয়েছে এসেছে এবং এর কারণে সহিংসতার ঘটনা ঘটাচ্ছে অপরাধী চক্রের দল। গত মাসে যুদ্ধাপরাধের দায়ে আদালত মওদুদীবাদী জামাতের কয়েকজন নেতাকে - দেয়ার প্রতিবাদে সংগঠনটি বেশ কয়েকটি হরতাল ডাকে। আসন্ন নির্বাচনকে ক্ষ্য করে হরতাল বাড়ছে। ক্ষমতাসীন সরকার জানুয়ারি মাসের মধ্যেই নির্বাচন দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানায় ওয়াল স্ট্রিট।
বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, চলতি ২০১৩ সালে দেশজুড়ে ৩৬টি হরতাল হয়েছে, যা ২০১২ সালে ছিল ২৯। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত হরতাল হয়েছিল মাত্র ১৭টি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরের জানুয়ারির পর থেকে হরতাল সংশ্লিষ্ট সহিংসতায় ৮০ জনের বেশি লোক নিহত হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা শত শত বাস গাড়ি ভাঙচুর করে এবং আগুন লাগিয়ে দেয়। হরতালে সাধারণত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ থাকে। সহিংসতার শিকার হওয়ার ভয়ে জনগণ বাসা থেকে বের হয় না।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) হিসাব মতে, চলতি ২০১৩ সালে হরতাল-ধর্মঘটের কারণে দেশের লোকসান হয়েছে ৭শ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থ।
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘হরতালের সংস্কৃতি আমাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে।এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সর্বশেষ হরতালে দেশের প্রধান বন্দরনগর চট্টগ্রামগামী পোশাকবাহী তাদের একটি ট্রাকে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। ওই ট্রাকটিতে হাজার ৫০০ পিস পোশাক ছিল। হা-মীম গ্রুপ জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাপসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করে।
স্থানীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রিড কনসাল্টিংয়ের রডনি রিড বলেছে, ‘একটি কারখানাকে দেউলিয়া বানাতে এটি যথেষ্ট।হরতালের কারণে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করা নিয়েও শঙ্কায় থাকে। বাংলাদেশে আসার পর হরতালে পড়লে তাদের দিন কাটাতে হয় হোটেলে।
সর্বশেষ হরতালের সময় ঢাকায় এসে তিন দিন হোটেল থেকে বের হতে পারেনি পশ্চিমা এক ব্যবসায়ী। গণমাধ্যমে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে সে বলেছে, ‘তিন দিন ধরে আমি হোটেল থেকে বের হতে পারিনি।

No comments:

Post a Comment