Sunday, October 6, 2013

ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ আন্তঃনগর ট্রেনের দাবি উপেক্ষিত বহু বছর ধরে



চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের ঢাকা যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘবসহ ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের জন্য বহু বছর ধরে সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবি এখনও উপেক্ষিত। এনিয়ে ক্ষুব্ধ সংশ্লিষ্ট জেলার সংসদ সদস্য থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ। দাবিটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষের শীর্ষদাবি হিসেবে চিহ্নিত করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ নানা শ্রেণীপেশার মানুষ বহুবার বিক্ষোভ, সমাবেশ, মানববন্ধন করেছে। সাধারণ মানুষের জোরালো দাবির মুখে এবং রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা জোরদার করতে ১৫৬ কোটি টাকা রাজশাহী-রহনপুর বর্ডার এবং আমনুরা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ সেকশনগুলো পুনর্বাসন প্রকল্প নামের একটি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে, যা অনুমোদন হয় ২০০৭ সালে। মাঝখানে দীর্ঘ বছর প্রকল্পের নানামুখী দাফতরিক কর্মকর্তা শেষে ২০১১ সালে ঠিকাদার নিয়োগসহ অন্যান্য কাজ শুরু হলেও এর আর কোন অগ্রগতি নেই।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী থেকে রহনপুর এবং আমনুরা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত কিলোমিটার লুপ লাইনসহ মোট ৯২ কিলোমিটার রেলপথের সংস্কার করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের দীর্ঘ আন্দোলন জনপ্রতিনিধিদের তদবিরে পশ্চিম রেলের সম্প্রতি বৃহ প্রকল্পে রেলপথ সংস্কার লিংকিং কাজ হলেও স্থান পায়নি আমনুরা বাইপাস রেলপথ স্থাপন। মূল প্রকল্পে আমনুরা বাইপাস রেলপথ স্থান না পাওয়ায় প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর ব্যাপারে।
এদিকে মূল প্রকল্পে বাইপাস নির্মাণস্থল না পাওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ সোচ্চার হয়ে উঠলে ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠের এক জনসভায় সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পর মূল প্রকল্পের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ শেষের মাথায় ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী রুটে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় কমিউনিটি ট্রেন সার্ভিস। ৎকালীন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এর উদ্বোধন করে। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, উদ্বোধনের দিন থেকেই কমিউনিটি ট্রেনটি আন্তঃনগর ট্রেনের সংযোগ ট্রেন হিসেবে কাজ করছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে আন্তঃনগরের টিকিট কাটা যাত্রীরা এই ট্রেনে রাজশাহী গিয়ে আন্তঃনগর পদ্মা এক্সপ্রেসে করে ঢাকা যাচ্ছেন।
আন্তঃনগরের পরিবর্তে কমিউনিটি ট্রেন নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মানুষ সন্তুষ্ট থাকলেও যাত্রা শুরুর দুই-তিন মাসের মাথায় রেলের নতুন সিদ্ধান্ত বিপাকে ফেলে যাত্রীদের। ওই সিদ্ধান্তে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জন্য বরাদ্দ করা আসন অর্ধেক কমিয়ে দেয়া হয়। শুরুতে স্নিগ্ধা, এসি সোভন চেয়ার মিলিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৪৯টি টিকিট দেয়া হলেও হঠা করে তা কমিয়ে ২৫টি করা হয়। এখন ৩০টিতে উন্নীত করা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আন্তঃনগর ট্রেন চালু না হওয়ার পেছনে বড় অন্তরায় আমনুরা বাইপাসসহ একটি ওয়াসপিট নির্মাণ এবং বগির স্বল্পতা। ট্রেনের মেইনটেন্যান্স ধোয়ামোছার জন্য একটি ওয়াসপিট নির্মাণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ের জায়গা রয়েছে। শুধু প্রয়োজন সরকারি সদিচ্ছা।
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেলের যাত্রী সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আমনুরা বাইপাস নির্মাণের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের (পশ্চিমাঞ্চল) সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, এরই মধ্যে আমনুরা বাইপাসের ২১ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়, নকশা তৈরিসহ ডিপিপি প্রস্তুত করে রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। একনেকের অনুমোদনসহ অর্থ বরাদ্দ হলেই নির্মাণ করা সম্ভব হবে আমনুরা বাইপাস।
তবে এরকম বক্তব্যে সন্তুষ্ট নন চাঁপাইনবাবগঞ্জে সংসদ সদস্য  আবদুল অদুদ ভূইয়া। তিনি বলেন, আন্তঃনগর ট্রেন চালুর ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর প্রাণের দাবি দীর্ঘদিনের। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবিতে জেলার সবস্তরের মানুষ আন্দোলন করে এলেও নানামুখী জটিলতায় আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীর কাছে অধরাই থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু রেলওয়ের এই প্রকল্পটিই নয়; প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্পের মধ্যে আরও রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ১শশয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ এবং কার্ডিয়াক ইউনিট স্থাপন। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী আম সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণের প্রতিশ্রুতি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আইনজীবী ভবন সম্প্রসারণ করা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার খালঘাট থেকে নসীপুর পর্যন্ত মহানন্দা নদী পুন:খনন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার দরিয়াপুর হতে নির্মাণাধীন ৫৪৬ মিটার ২য় মহানন্দা সেতু হতে সুন্দরপুর ইউনিয়নের মরাপাগলা মোল্লাগ্রাম এবং পদ্মা বেড়িবাঁধ হয়ে শিবগঞ্জ দুর্লভপুর পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ঝুলে রয়েছে।
আবদুল অদুদ ভূইয়া বলেন, সারাদেশেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্প বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কতিপয় আমলার কারণে এসব প্রকল্পের এই দশা। এর দায়ভার যেমন সরকারকে বহন করতে হবে; তেমনি আমরা যারা সরকারদলীয় সংসদ সদস্য তাদের কাঁধেও এসে এর দায়ভার বর্তাবে। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্পের দশাই যদি এমন হয়; তাহলে অন্যান্য প্রকল্পগুলোর কি দুরবস্থা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি এসবের জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত এসব কাজ সম্পন্ন করার তাগিদ দেন। অন্যথায় আগামী নির্বাচনে এসব প্রকল্প বড় ধরনের ইস্যু হয়ে দাঁড়াবে বলে তিনি উল্লেখ করেন

No comments:

Post a Comment