মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মাঝে নাযিলকৃত
পবিত্র আয়াতে কারীমা দ্বারা সুস্পষ্টরূপে প্রকাশিত ও প্রতিভাত হয় যে, ‘ইসলাম কখনই পরাজিত
হবে না।’ যেমন ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “বিজয় কেবল পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় মহান আল্লাহ পাক
উনার তরফ থেকেই এসে থাকে।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১২৬)
আরো
ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “মু’মিন-মুসলমানগণকে সাহায্য করাই মহান আল্লাহ পাক উনার হক্ব।”
(পবিত্র সূরা রূম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৭)
বর্তমান
ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অনেকেই আপেক্ষিক বলার চেষ্টা করবেন। তবে মহাপবিত্র
কুরআন শরীফ উনার এই কথা যে এক কঠিন বাস্তব তার প্রমাণই হচ্ছে ওই বদর প্রান্তরের পবিত্র
জিহাদ। এক হাজার সুসজ্জিত কাফির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মাত্র ৩১৩/৩১৫ জন হযরত ছাহাবায়ে
কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা লড়াই করেন।
জিহাদের সরঞ্জামের মধ্যে মাত্র
৩টি ঘোড়া, অপর্যাপ্ত তলোয়ার, ৬টি বর্ম এবং সামান্য কয়েকজন তীরন্দাজ, বাকি সকলের জন্য
অস্ত্র হিসেবে লাঠিই ছিল একমাত্র সম্বল। তবে এই অসম শক্তির দুই পক্ষের মধ্যে জিহাদ
করিয়ে মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়াবাসীকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, মহাসম্মানিত দ্বীন ইসলাম
কখনোই পরাজিত হবে না। নিজের নফসকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করে ঈমানী বলে বলীয়ান হয়ে এক
একজন ছাহাবী জিহাদে অবতীর্ণ হয়েছেন প্রমাণ দিতে মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত
শরীফ উনার মাঝে। জয় পরাজয় লক্ষ্য ছিল না, ছিল মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি মুবারক কামনা। উনারা সে সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন
করতে পেরেছিলেন এবং বিজয় উনাদের করতলগত হয়েছিল।
শুধু
৩১৩/৩১৫ জন বদরী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারাই নন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বারা সরাসরি পরিচালিত ৯টি জিহাদসহ
উনার যামানায় সংঘটিত ২৭টি জিহাদ তার প্রমাণ বহন করে। এছাড়াও হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ
রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার ১৫ বছরের কর্মময় সেনাপতি জীবনে ৪১টি জিহাদ করেছেন। কিন্তু
১টি জিহাদেও তিনি পরাজিত হননি। উনার জীবনী মুবারকও প্রমাণ করে যে, মহাপবিত্র দ্বীন
ইসলাম কখনো পরাজিত হওয়ার নয়। তাছাড়াও তাবিয়ীন ও তাবি তাবিয়ীন উনাদের যুগে, এমনকি তার
পরবর্তী যুগেও যে সমস্ত জিহাদ হয়েছে মুসলমানগণের সাথে ইহুদী-নাছারা কিংবা মুশরিকদের
সে সমস্ত জিহাদেও মুসলমানগণ কখনোই পরাজিত হননি।
মহান
আল্লাহ পাক উনার শত্রুরা উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে, যতদিন মুসলমান সঠিক পবিত্র দ্বীন
ইসলাম উনার উপর থাকবে ততদিন উনাদেরকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। তাই তারা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে
মুসলমানগণের আক্বীদা নষ্ট করতে শুরু করে এবং ফলশ্রুতিতে জন্ম নেয় আজকের বাতিল ৭২ ফিরক্বা।
কেউ ঘটিবাটি নিয়ে ফকিরের মতো রাস্তায় রাস্তায় দিন কাটিয়ে, কেউ নিরীহ মানুষসহ নিজেকে
বোমা মেরে উড়িয়ে দিয়ে কিংবা কেউ গণতন্ত্রের মাধ্যমে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সেবা করার
অজুহাতে মাঠে রয়েছে। ৭২ ফিরক্বার সকলেই মনে করছে তারা সঠিক আক্বীদাতে অবস্থান করছে।
নাউযুবিল্লাহ!
সময়
এসেছে উপলব্ধি করার যে, আক্বীদা শুদ্ধ ব্যতীত মহান আল্লাহ পাক উনার সাহায্য আশা করা
চরম নির্বুদ্ধিতা।
সম্মানিত বদর জিহাদ দিবস:
জিহাদের ময়দানে প্রকাশিত একটি বেমেছাল মু’জিযা শরীফ:
খন্ড
খন্ড জিহাদ শেষে একযোগে তুমুল জিহাদ শুরু হওয়ার সময় স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক মুঠো বালু হাতে নিয়ে ‘শাহাতুল ওজুহ’ (চেহারা
আচ্ছন্ন হয়ে যাক) বলে কাফিরদের দিকে ছুঁড়ে দেন। সাথে সাথে কাফির মুশরিকগুলির কোনোটা
অন্ধ, কোনোটা বোবা-বধির হয়ে উজবুকের মতো চিৎকার করতে লাগলো। শুরুতেই মুবারক এই মুজিযা
দেখে একদিকে মুসলিমদের জযবা আরো বহুগুণে বাড়তে থাকলো; বিপরীতে কাফিরদের মনোবল গেলো
ভেঙে।
মুবারক এ মুজিযা শরীফ সম্পর্কে মহান আল্লাহ
পাক তিনি বলেন, “আপনি যে বালু নিক্ষেপ করেছেন, তা তো আপনি নিক্ষেপ করেননি; বরং তা মহান
আল্লাহ পাক তিনি নিক্ষেপ করেছেন অর্থাৎ আপনার নিক্ষেপ মহান আল্লাহ পাক উনার নিক্ষেপের
অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনারই নির্দেশেই আপনি নিক্ষেপ করেছেন।” (পবিত্র
সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৮)
প্রকৃতপক্ষে
সমস্ত জিহাদগুলোই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার বেমেছাল মুজিযা শরীফ উনারই বহিঃপ্রকাশ।
No comments:
Post a Comment