""""""""""" আমার লিখা কতটুকু পশুসূলভ আচরণের বোধ ভাঙ্গতে পারবে? """"""""""""
লিখা
আমার অভ্যাস নয়। লিখতেও খুব একটা ভাল পারিনা। তারপরও চারপাশের পশুসূলভ
আচরন দেখে কিছু একটা না করে থাকতে পারি না। তাইতো বসলাম লিখতে। জানিনা আমার
লিখা কতটুকু পশুসূলভ আচরণের বোধ ভাঙ্গতে পারবে? কারণ পশুচরিত্র পশুর মতই
যদিও আবরনে মানুষের আকৃতি সোভা পায়।
রবিবার।ফযরের ইবাদত পালনের
কোশেশ করলাম।তারপর বের হলাম। এক সহপাঠীর কাছে যাব বলে।সকালটা প্রতিদিনের
ন্যায় আলো ছড়িয়েছে ।চারদিক সবুজের আভায় আলোকিত শিহরন জাগাতে ভূলে
নাই।সত্যিই খুব চমৎকার সকাল। রিক্সা ব্যাতিত হেঁটে যেতেই প্রকৃতি জজবা
দিলো।গেলাম হেঁটেই।পৌছলাম আমার গন্তব্যস্থলে।
সালাম জানিয়ে প্রবেশ
করলাম। বন্ধু তখনও ঘুমায়।আর ঘুমাবেনা কেন? আমরা তো আজ মডান মুসলমান।নামটা
ইসলাম অনুযায়ী হলেই যেন সব ইসলামিক দায়িত্ব শেষ। আর চব্বিশট ঘন্টা শয়তানের
গোলামী করলেই পাশ্চাত্য পশুসূলভ সভ্য জাতি হিসেবে কথিত খ্যাতি পাওয়া সহজ
হয়।
যাইহোক তাকে ঘুম থেকে জাগালাম।ফ্রেশ হয়ে আসলো সে।পড়ালেখার
বিষয়গুলো শিয়ার করলাম।চলে যাব এমন মুহূর্তে সে আমাকে বললো দোস্ত একটা করুণ
ঘটনা তোকে না বলে পারছিনা। হয়তো আমাদের চলার পথে কাজে লাগবে। দুনিয়াটা খুবই
খারাপ।কিছুটা জেনে থাকা দরকার। যদিও আমরা ছেলে মানুষ। তারপরও শোন।বললাম
ঠিক আছে বল।শুরু করলো সে...
আমাদের সামনে ওইযে সুন্দর বাসাটা
দেখতে পাচ্ছিস। ওটা শরাফত আলী এর বাসা। ওরা খুব ভালো লোক। একসময়
নামাজ-কালাম সময়মত আদায় করতো। শবে-বরাতে আমাদের এলাকার সবাইকে খাওয়াতো।এমন
লোক সমাজে কই জন থাকে বল?
আমি বললাম অবশ্যই অনেক ভালো কিন্তু এটাই
কি তোর করুণ কাহিনী? থাক আমি চললাম। আমার আজ একটু তাড়া আছে। সে বলল , আরে
না। মুল ঘটনাতো শুরুই করলাম না। একটু শোনে যা। আমি বললাম আচ্ছা বল। সে বলতে
আরম্ভ করলো…
শরাফত আলী এর এক ছেলে, আর এক মেয়ে। ছেলেটা বড়।
বিদেশে গেছে ১০ বছর হলো।ছেলেটাও যথেষ্ঠ নম্র-ভদ্র। তার যাওয়ার ঠিক ৭ বছরের
মাথায় তার বোনকে বিদেশে পড়াবে বলে পিতামাতা সহ সবাই বিদেশ তথা আমেরিকা যাবে
বলে ছেলেকে জানানো হয়। ছেলে এটাতে সহমত পোষন করেনা। কিছুটা বিরোধীতাও
করে।ছেলের ভাষায় আমেরিকা মানুষের জায়গা নয়। নিশ্চিত আমাদের বোনটা খারাপ হয়ে
যাবে। কারণ পরিবেশটাই নোংরামী। চরিত্রহীনদের জন্য আমেরিকা। কিন্তু
পিতামাতার উচ্চভিলাস চিন্তায় ছেলের কথা গুলো অসার হয়।
আট বছরের
মাথায় সবাই আমেরিকা যায়। সুখের সংসার সুন্দর চলছিলো। ঠিক যেন তারা সোনার
বাংলাদেশেই আছে।বোনও একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অদম্য পড়ালেখা করছে।
ঠিক যাওয়ার ৬ মাসের মধ্যেই মেয়েটার মন হু হু করে কাঁদতে থাকে। সেখানকার
সংস্কৃতি তাকে কুড়ে কুড়ে মারছে। সবাই নিজ নিজ সঙ্গী নিয়ে কতো মজা করছে।
আড্ডা দিচ্ছে,মনের কথাগুলো শিয়ার করছে। পার্টিতে আনন্দ করছে।কতই চমৎকার
ছেলে-মেয়েদের একসঙ্গে চলা। কিন্তু সেতো বাঙ্গালী। বাঙ্গালী মুসলিম সমাজে
এগুলো বড়ই অনৈতিক। আর ইসলামে তো কথা বলাই নিষিদ্ব। অবাধ মিলামেশা তো
অকল্পনীয় বিষয়।
তার এ নিশব্দ কান্নার কথাগুলো এক বাঙ্গালী
বান্ধবীকে জানায়। পৃথিবীতে সে সব চাইতে যেন অসহায় এক নারী। তার আনন্দ করার
কি অধিকার নাই? বান্ধবীর কাছে অশ্রুসিক্ত নয়নে জানতে চাইলো। আমরা মুসলমান
হয়ে জন্মেছি। তাই বলে কি আমার চলার অধিকার সীমাবদ্ব? এ নিষ্টুরতা কেন?
প্লিজ বল আমাকে।
বান্ধবীর বেশি সময় নাই। স্রেফ বলে দেয়-”
বাংলাদেশে বাঙ্গালী সংস্কৃতি। আমেরিকাই এগুলোই সংস্কৃতি”। যদিও বাঙ্গালী
সমাজে এগুলো পশুতূল্য বলে থুথূ নিক্ষেপ করে। তোর যেটা ভাল লাগে করতে পারিস।
এখানে নিষেধ করার কউ নাই।আমিও একসময় এগুলো চিন্তা করেছি। লাভ হয়নি। বাধ্য
করেছে এখানকার চাকচিক্য মনোলোভা সংস্কৃতি আমাকে ইনজয় করাতে। এখন ইনজয় করছি
প্রায় ১ বছর থেকে। তুই থাক আমার বয়ফ্রেন্ড ফোন দিচ্ছে।বাই।
নারীমন। শয়তানী ছলনার এক রহস্যময় অস্ত্র। সে অসহায়। বড়ই একা। চলে যায়
বাসাতে। বেলকুনিতে বসে হারিয়ে যায় আমেরিকার কালচারে। তাকে শিক্ত হাতে ডাকছে
সেই পশু নামক সংম্কৃতি।নিজেকে হাজারো বুঝানোর চেষ্টা একদম বিফলে গেলো।
নিজেকে বাঙ্গালী সংস্কৃতিতে আবদ্ব রাখতে দিচ্ছে না সেই কথিত বাহ্যিক
চাকচিক্য নামক পশুত্ব কালচার। সিদ্বান্ত হয় বয়ফ্রেন্ড করবে। তবে অবাধ মিশবে
না। শুধু মনের কথাগুলো শিয়ার করবে। একসাথে বসে কিছু গল্প করবে এতোটুকু।
ঠিক ১০ দিনের মাঝে একছেলের সাথে পরিচয় হয়। কথা হলো কিছু। কফিও খেলো
একসাথে। কারণ ছেলেটি তার বান্ধবীর বড় ভাই। তার বান্ধবীর কাছেই এছেছিলো
ছেলেটি।একটি সফটওয়ার কোম্পানিতে জব করে।দেখতে খারাপ না। লম্বাও যথেষ্ঠ।
সবাই লাইক করবে এমন ছেলে।বাহ্যিকভাবে ভদ্রও মনে হচ্ছে। ছেলেটি তার ফোন
নম্বর চাইতে কষ্টে হলো না দিতে। সেদিনের মতো শেষ হয় এভাবেই।
রাত
১০টা। হঠাৎ মেয়েটার ফোন বেজে উঠলো। কল রিসিভ করলো মেয়েটি। অপরপ্রান্তে একটি
মায়াবী কন্ঠ। তার বুঝতে দেরি হলো না। ওইতো আমার বান্ধবীর ভাই রেহান। কথা
হলো প্রায় ৩০ মিনিট। হারিয়ে গিয়েছিলো মেয়েটি এই ৩০ মিনিট। ভাবলো কথা হয়েছে
হয়তো ১০মিনিট। কিন্তু এমন হলো কেন?নিজেকে নিরবে শুধু জানতে চাইলো। উত্তর
আসলো না। ওইদিন ঘুমিয়ে যায়।পার করে এভাবে অনেক রাত্রি। হারিয়ে যায় কথার
ছলনায়। সাময়িক ইনজয়ে।
একমাস পর। কথা হলো দেখা করবে দুজনে। এভাবে
শুরু হলো দেখা ও আড্ডা। পরিবার আর যেন ভালো লাগেনা। যখন ইচ্ছা তখনি দেখা।
অবাধে মিশে গেলো পাশ্চাত্ব পশুত্ব কালচারে। গড়িয়ে গেছে এভাবেই অন্ধত্বে ৬টি
মাস। ফ্যামিলিও কিছুটা বুঝতে পারলো। কিন্তু হায় সে চলে গেছে তখন অনেক
দূরে।
ফ্যামিলি ঠিক করলো ।তার বিয়ে দিবে।পাত্র আমেরিকান নয়।
ঢাকার। বুয়েটের স্টুডেন্ট। এখন সদ্য একটা জব পেয়েছে। খুব ভালো এবং নরম
মনের। মেয়েকে বিষয়টি জানাবে আজ রাতেই। তারও মতামত নেয়া দরকার বলে।
রাত ১০টা। সবাই আজ ডিনার করবে একসাথে। বিষয়টি ফাইনাল করাই উদ্দেশ্য। বসলো
সবাই। খাওয় সমানে চলছে। এরই মাঝে পিতা শরাফত আলী বললো-” মা তোমার আমরা বিয়ে
দিতে চাই। পাত্রের বর্ননা দেয়া হলো।এখন তুমি কি বলো মা?” মেয়ের মাথায় বাজ
পড়লো যেন। আস্তে করে বলল ড্যাড পরে জানাই।
বয়ফ্রেন্ড রেহানকে
জানালো বিষয়টি। কিন্তু কোনও মাথা ব্যাথা নাই। কাল আস তখন দেখা যাবে বলে
ফোনটি রেখে দেয়। পরেরদিন একটি মিউজিক পাটিতে যাওয়ার কথা ছিলো। সেখানে গেলো।
মেয়েটি বিয়ের জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু গুরুত্ব নাই। বিভিন্ন চমৎকার কথা
বলে মনটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়। জয় করে নেয় মেয়েটির মন। একসাথে লিভটুগেদারও
করে। লিভটুগেদার এটা ওদের প্রথম না। পশুত্ব কালচার আমেরিকায় এটাই
প্রেম-ভালোবাসা। চলে যায় ওইদিনের মতো মেয়েটি বাসাতে।
ঠিক দুই তিন
দিন পর। রুমে পড়ছিলো মেয়েটি। তার আম্মা হঠাৎ রুমে যায়। মেয়েকে বিয়ের বিষয়টি
বুঝিয়ে বলে। কিন্তু মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ডর কথা বললো। মা বললো আমেরিকার
ছেলেরা ভালো না। তার সাথে তোমার আব্বা বিয়ে দিবে না। আমাকে গতকাল ক্লিয়ার
বলে দিয়েছে। তোমার বাংলাদেশে কোনও পছন্দ ছেলে থাকলে বলো। আমি ম্যানেজ করার
ট্রাই করবো। কিন্তু পশুত্বে যে ডুবে যাই সে নিজ জাত ভূলে যায়। ঠিক মেয়েটিও
তার মায়ের সাথে নোংরা আচরণ করে।
পড়ন্ত বিকাল। ফোন বেজে উঠলো।
ডাকলো বয়ফ্রেন্ড। চলে গেলো বাসা থেকে।যোগদিলো একটি অনুষ্টানে। মদ খাচ্ছে
মেয়েটি। আর ছেলেটি টানছে গাজা। ইনজয়ে হারিয়ে গেলো দুজনে। ঠিক একটু পর।
ছেলেটির ফোন বেজে উঠে। রিসিভ করে ডাকলো কাকে যেন। আসলো একটি নোংরা কথিত
স্মাট মেয়ে। এসেই ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরলো। পাশেই দাড়িয়ে থাকা মেয়েটি কে জানতে
চাইলো সে? ছেলেটি বললো আমার এক্স গালফ্রেন্ড। কিছুক্ষণ ইনজয় করে মেয়েটি বাই
বলে চলে গেলো।
পশুত্বের বোধ ভেঙ্গে যায় মেয়েটির। জানতে চাই
আমা্কে এক্স গালফ্রেন্ড বলে পরিচয় দিলা কেন? ছেলেটি আবার চাকচিক্য বুলি
আওড়াতে শুরু করে। কিন্তু কাজ হয়না। মেয়েটি ছেলেটিকে বলে আজকেই কোট-ম্যারেজ
করতে। পাত্তা দেয়না ছেলেটি। ডিরেক্টলি বলে দেয় আমি ইনজয়ে বিশ্বাসী। বিয়েতে
নয়। তুমি আজ আছো, কাল যদি ভালো না লাগে তাহলে তোমাকে ফেলে অন্যকে নিয়ে ইনজয়
করবো। এটাই সংস্কৃতি। তুমি থাকলে থাকো নইলে যেতে পারো। চলে আসে মেয়েটি
বাসাতে।
সিদ্বান্ত নেয় আজ রাতেই আত্মহত্যা করবে। তার আগেই
পশুত্বের কালচারকে ধিক্কার জানিয়ে মেইল করে বাংলাদেশী তার অনেক বান্ধবীকে।
তারপর চলে যায় দুনিয়া থেকে মেয়েটি।
একটি মেইল এসে পড়ে আমার
সহপাঠীর বড় বোনের কাছে। কিন্তু এ ঘটনা কি শুধু একটা? না। হাজার-হাজার,
লাখ-লাখ, কোটি-কোটি। নিজের নিষ্টুর পরিণাম নিজেই ডেকে আনে পশুত্ব নামক কথিত
অবাধ সংস্কৃতিতে।
তাই একটি কথাই বলবো যে, ‘ পশুত্বের কালচারে
যারা মত্ত হতে চাই তাদের শাস্তি এমনি অথবা আরও ভয়াবহ হয়”। আমরা মুসলমান।
আমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি।নিজের কালচারেই আজীবন শান্তি। কিন্তু যারা মুসলমান হয়ে
মুসলমান কালচার দেখে নাক ছিটকা দেয় তারাই মানুষ আবরণে পশু। এদের থেকে
সবাইকে দুরে থাকতে হবে নিজের তাগিদে নিজের ভালোর জন্য।