এক নজরে ছফর মাস

মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন উনার পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি গণনার সুবিধার্থে দান করা ১২টি মাসের মধ্যে পবিত্র ছফর মাস গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসটি অবারিত রহমত, বরকত, সাকীনা ও মাগফিরাত দ্বারা বেষ্টিত। সুবহানাল্লাহ!
এক নজরে ছফর মাসের মূল বিষয়গুলো
উল্লেখ করা হলো:
  •  ছফর মাসে অকল্যাণ বা অশুভ বলতে কিছু নেই।
  •  ছোঁয়াচে বলতে কোনো রোগ নেই।
  •  পেঁচার মধ্যে অকল্যাণের কিছু নেই।
  • এ মাসের শেষ বুধবার তথা আখিরী চাহার শোম্বাহ’র দিন সকাল বেলা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরোগ্য লাভ করেছিলেন এবং হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম, হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে খুশি প্রকাশ করেছিলেন।
  •  ২৮শে ছফর (সোমবার) ১০৩৪ হিজরীতে হযরত ইমাম, মুজাদ্দিদ, শায়েখ আহমদ ফারুকী মুজাদ্দিদে আলফে ছানী সিরহিন্দী হানাফী মাতুরীদী নকশবন্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন।
  •  ২৮শে ছফর আওলাদে রসূল, ৫ম খলীফা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনাকে বিষপানে শহীদ করা হয়।
এ মাস হযরত  আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বেশি বেশি মুহব্বত করার মাস।
‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ এ মাসের শ্রেষ্ঠ দিন


মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দিনগুলো তাদেরকে অর্থাৎ ঈমানদার বান্দাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন। নিশ্চয়ই এতে ধৈর্য্যশীল, শোকরগোযার বান্দাদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।
এ বছরের জন্য ২০শে ছামিন, শামসি সন বা ১৮ই জানুয়ারি, ঈসায়ী সন ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’। যা পালন করা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ পালন উপলক্ষে সাধ্যমতো হাদিয়া পেশ করা এবং দান-ছদক্বা করা, গোসল করা, ভালো খাওয়া, অধিক পরিমাণে মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ করা সকলের জন্য আবশ্যক।
পাশাপাশি বাংলাদেশসহ সকল মুসলিম ও অমুসলিম সরকারের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- এ মুবারক দিনটি পালনের সর্বপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণসহ সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।

মুসলমান হিসেবে সমস্ত মুসলমানসহ সরকারকে- যিনি ঈমানের মূল এবং সমস্ত মাখলুক্বাতের জন্য রহমত ও নাজাতের মূল আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অকল্পনীয় ও বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা এবং ফাযায়িল-ফযীলতই শুধু নয় বরং উনার সাথে সম্পৃক্ত বিশেষ দিন ও ঘটনা সম্পর্কেও বিশেষভাবে অবগত হতে হবে এবং অত্যন্ত আদব ও মুহব্বতের সাথে উনার হক্বও বিশেষভাবে আদায়ের কোশেশ করতে হবে।
সমস্ত ইমাম-মুজতাহিদ ও আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের ইজমা হয়েছে যে, “যে মাটি মুবারক আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বদম মুবারক স্পর্শ করেছে তার মর্যাদা আরশে আযীমের চেয়েও লক্ষ-কোটি গুন বেশি।” সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, তায়াল্লুক-নিসবত থাকার কারণে মাটি মুবারক যদি এত মর্যাদা-মর্তবার অধিকারী হয়ে থাকে; তাহলে যে তারিখে, যে দিবসে, যে মাসে আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে তার মর্যাদা-মর্তবা কত বেশি হতে পারে সেটা খুব সহজেই অনুধাবনীয়।
তাহলে আখিরী চাহার শোম্বাহ-এর কত ফযীলত তা ফিকির করতে হবে। অতএব, সকল মুসলমানেরই উচিত- এদিনকে যথাযথ তা’যীম-তাকরীম করা এবং এ দিনের ফযীলত হাছিল লক্ষ্যে আমল করা।
আল্লাহ পাক উনার মা’রিফাত-মুহব্বতে দগ্ধিভূত ব্যক্তি তথা মুসলমানগণ উনারা সে দিনটিকে মা’রিফাত-মুহব্বত লাভের উসীলা সাব্যস্ত করে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে যুগ যুগ ধরে ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ হিসেবে পালন করে আসছেন। কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম উনাদেরকে যারা উত্তমভাবে অনুসরণ করে আল্লাহ পাক উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট।” (সূরা তওবা : আয়াত শরীফ-১০০) আর হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের জন্য আমার সুন্নত এবং খুলাফায়ে রাশিদীন তথা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম উনাদের সুন্নত অবশ্য পালনীয়।”
এ বছর পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ আগামী ২০শে ছামিন, শামসি সন বা ১৮ই জানুয়ারি, ঈসায়ী সন। অনেকে ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ উদযাপন করাকে নাজায়িয ও বিদয়াত বলে আখ্যায়িত করে থাকে। যা সম্পূর্ণ অশুদ্ধ ও ভুল। বরং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনুসরণে ‘আখিরী চাহার শোম্বাহ’ উপলক্ষে সাধ্য মত হাদিয়া করা এবং দান-ছদক্বা করা, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অধিক পরিমাণে ছলাত-সালাম, মীলাদ শরীফ, ক্বিয়াম শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ করা সকলের জন্য আবশ্যক। অতএব, বাংলাদেশসহ ও সমস্ত মুসলিম ও অমুসলিম সরকারের উচিত আখিরী চাহার শোম্বাহর দিনের ভাবগাম্ভীর্যতা রক্ষা করা এবং যথাযথ মর্যাদার সাথে এ দিন পালনের ব্যবস্থা গ্রহণসহ সরকারি ছুটি নির্ধারণ করা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকেই পবিত্র আখিরী চাহার শোম্বাহ-এর ফযীলত ও গুরুত্ব হাক্বীক্বীভাবে উপলব্ধি করার এবং এর আমলগুলো করার তাওফিক দান করুন। আমীন!

অশুভ বা কুলক্ষণ ও  ছোঁয়াচে রোগ বলতে কোনো কিছু নেই
মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘সূরা লুকমান’-এর ১৩ নম্বর আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহ পাক উনার সাথে কোনো কিছুকে শরীক করো না।নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, অশুভ বা কুলক্ষণ বলতে কিছু রয়েছে, ছোঁয়াচে রোগ বলতে কোনো রোগ রয়েছে, পেঁচা ও ছফর মাসের মধ্যে অশুভ ও খারাবী রয়েছে- বিশ্বাস করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
যে কোনো বিষয়ে অশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা ঈমান নষ্ট হওয়ার কারণ। যেমন, অশুভ বা কুলক্ষণ বলতে কিছু রয়েছে, ছোঁয়াচে রোগ বলতে কোনো রোগ রয়েছে, পেঁচার মধ্যে ও ছফর মাসের মধ্যে অশুভ ও খারাবী রয়েছে বলে বিশ্বাস করা ঈমান নষ্ট হওয়ার কারণ।
আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এরূপ ভ্রান্ত আক্বীদা-বিশ্বাসের মূলোৎপাটন করেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই। পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণের কিছুই নেই। তারকার (উদয় বা অস্ত যাওয়ার) কারণে বৃষ্টি হওয়াও ভিত্তিহীন এবং ছফর মাসে অশুভ বলতে কিছু নেই।”
ছফর মাস সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে- খাছ করে ছফর মাসের মধ্যে কোনো প্রকার অশুভ ও খারাবী নেই। আর আমভাবে কোনো মাস ও দিনের মধ্যেই খারাবী বা অশুভ বলতে কিছু নেই।
মাস-দিন-সময়কে খারাপ বলার অর্থ হলো, মহান আল্লাহ পাক উনাকে খারাপ বলা। কেননা, মাস-দিন-সময় এগুলো আল্লাহ পাক তিনিই সৃষ্টি করেছেন ও নিয়ন্ত্রণ করেন।
হাদীছ-এ কুদসী শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “আদম সন্তান মাস-দিন-সময়কে গালি দিয়ে, সমালোচনা করে, খারাপ বলে আমাকে কষ্ট দেয়। অথচ আমিই এর সৃষ্টিকর্তা এবং আমার নির্দেশেই এরা পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ আমিই এগুলো নিয়ন্ত্রণ করি।” তাই ছফর মাসসহ কোনো মাস-দিন-সময়কেই খারাপ ও অশুভ বলা বা মনে করা যাবে না। যদি কেউ তা বলে বা মনে করে তবে সে কুফরী-শিরকী করার গুনাহে গুনাহগার হবে।
‘বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহুত ত্বীবী শরহুস সুন্নাহ ইত্যাদি কিতাবের  হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “কোনো বিষয়কে অশুভ কুলক্ষণে মনে করো না, তবে শুভ লক্ষণ আছে। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম (রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) উনারা আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শুভ লক্ষণ কি? তখন তিনি বললেন, উত্তম কথা, যা তোমাদের মধ্য হতে কেউ শুনতে পায়।”
‘তিরমিযী শরীফ, মাওয়ারিদ, মিশকাত শরীফ এ বর্ণিত আছে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যে কোনো বিষয়কেই অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। তিনি এ বাক্যটি তিনবার উল্লেখ করেন।”
রোগ-ব্যাধি সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা হলো -কোনো রোগই সংক্রামক নয়। কাজেই রোগ-ব্যাধিকে সংক্রামক বা ছোঁয়াচে মনে করা কুফরী-শিরকীর অন্তর্ভুক্ত। হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত আছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “কোনো রোগই সংক্রামক নয়। পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণের কিছুই নেই এবং ছফর মাসের মধ্যেও অশুভ কিছু নেই। তখন এক ব্যক্তি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে উটের এ অবস্থা হলো কেনো? যে উটগুলো ছিলো জংলী হরিণের মত তরু-তজা, যেগুলো ময়দানে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতো। এমতাবস্থায় কোথা হতে এক চর্মরোগাক্রান্ত উট এসে সে উটের পালে মিলিত হলো এবং উটগুলোকে চর্মরোগী বানিয়ে দিলো। অর্থাৎ এ উটগুলোও খুজলীযুক্ত হয়ে গেল। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আচ্ছা তাহলে প্রথম উটটির চর্মরোগ কোথা থেকে হলো? অর্থাৎ প্রথম উটটি যেভাবে খুজলীযুক্ত হয়েছিল ঠিক পরবর্তী উটগুলোও সেভাবে খুজলীযুক্ত হয়েছে।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহুস সুন্নাহ) এ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, ইসলামে ছোঁয়াচে রোগ বলতে কোন রোগ নেই। তাই ছোঁয়াচে বিশ্বাস করা কুফরী-শিরকীর অন্তর্ভুক্ত।
মূলকথা হলো- অশুভ বা কুলক্ষণ বলতে কিছু রয়েছে, ছোঁয়াচে রোগ বলতে কোন রোগ রয়েছে, পেঁচা ও ছফর মাসের মধ্যে অশুভ ও খারাবী রয়েছে- বিশ্বাস করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। মূলত মুসলমানদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী আক্বীদা সংক্রান্ত ইলম অন্তর্ভুক্ত না থাকার কারণে অনেকেই এরূপ কুফরী আক্বীদা পোষণ করে থাকে। এরূপ কুফরী, শিরকী আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব। তাই ৯৭ ভাগ মুসলমান দেশের সরকারের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- মাদরাসা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিলেবাসে ইসলামী আক্বীদা সংক্রান্ত ইলম অন্তর্ভুক্ত করা।