সমস্ত ছানা-ছিফত এবং অবারিত প্রশংসার একচ্ছত্র অধিকারী খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি। আর অফুরন্ত দুরূদ ও সালাম মুবারক বর্ষিত হোক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি।
আমাদের এবারের আলোচনার বিষয় ইলমে গইব। প্রকৃতপক্ষে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু ইলমে গইবের অধিকারী নন, গইবের ইলিম বণ্টনকারীও। কিন্তু বদ-মাযহাব,
বদ-ফিরকার লোকেরা তা অস্বীকার করে থাকে।
বদ-মাযহাব, বদ-ফিরকার লোকেরা বলে থাকে- ‘একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ গইব জানে না’। মূলত, তাদের এ কথা মোটেও সঠিক নয়। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি গইব জানেন খালিক্ব মালিক রব হিসেবে এবং কারো মধ্যস্থতা
ব্যতিরেকে। আর মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম
এবং উনার মনোনীত হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার
তরফ থেকে প্রদত্ত ইলিমের মাধ্যমে গইবের সংবাদ রাখেন।
মূলত, মহান আল্লাহ পাক তিনি যেহেতু আলিমুল গইবি ওয়াশ্ শাহাদাহ অর্থাৎ দৃশ্য-অদৃশ্য উভয়
ইলিমের অধিকারী সেহেতু মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে যাঁরা ইলিম প্রাপ্ত হন উনারাও
উভয় প্রকার ইলিমেরই অধিকারী হয়ে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার গইবের ইলিম তো অনেক উর্ধ্বের বিষয় বরং যাঁরা কোন নবী আলাইহিমুস সালাম
কিংবা কোন রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত নন; যাঁরা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের উম্মতের অন্তর্ভুক্ত মহান আল্লাহ পাক
উনার ওলী উনাদেরকেও মহান আল্লাহ পাক তিনি ইলমে গইব বা অদৃশ্যের জ্ঞান দান করেন। যেমন এ প্রসঙ্গে হযরত খিযির আলাইহিস সালাম সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন-
وعلمنه من لدنا علما
অর্থ: ‘আমি উনাকে ইলমে লাদুন্নী অর্থাৎ আমার তরফ থেকে ইলিম হাদিয়া করেছি।’ (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের মতে, হযরত খিযির আলাইহিস সালাম তিনি একজন ওলীআল্লাহ। উনাকে মহান আল্লাহ পাক ইলমে লাদুন্নী তথা ইলমে গইব ও ইলমে হাদ্বির হাদিয়া করেছেন। এর প্রমাণস্বরূপ হযরত খিযির আলাইহিস সালাম উনার তিন তিনটি গইবের বিষয় পবিত্র কালামুল্লাহ
শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেসব গইবের সংবাদ জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল হযরত
মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা সত্যায়ন করা হয়েছে। প্রথমতঃ হযরত খিযির আলাইহিস সালাম যে নৌকাতে চড়ে নদী পার হয়েছিলেন তা তিনি ছিদ্র
করে দিলেন। দ্বিতীয়তঃ একটি বালককে হত্যা করে ফেললেন। তৃতীয়তঃ একটি জনপদের অধিবাসীদের কাছে পৌঁছে তাদেরকে মেহমানদারী করাতে বললেন। তারা মেহমানদারী করতে অস্বীকার করা সত্ত্বেও তিনি তাদের একটি ভগ্ন প্রাচীর ঠিকঠাক
করে দিলেন।
এসব ঘটনার কারণসমূহ বর্ণনা প্রসঙ্গে তিনি
বলেন-
এক.
নৌকাটি যেদিকে যাচ্ছিলো সেখানে একজন যালিম বাদশাহ এই পথে চলাচলকারী সব নৌকা ছিনিয়ে
নিত। এ কারণে তিনি নৌকাটি
ছিদ্র করে দেন যাতে যালিম বাদশাহ্র লোকেরা ছিদ্র বা ভাঙ্গা দেখে নৌকাটি ছেড়ে দেয় এবং
দরিদ্ররা বিপদের হাত থেকে বেঁচে যায়।
দুই. বালকটির হত্যার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন,
ছেলেটি বড় হয়ে তার সৎকর্মপরায়ণ পিতা-মাতাকে বিব্রত করবে ও কষ্ট দিবে। সে কুফরীতে লিপ্ত হয়ে পিতা-মাতার জন্য ফিৎনা হয়ে দাঁড়াবে এবং
তার ভালবাসায় পিতা-মাতার ঈমানও বিপন্ন হয়ে পড়বে। তাই তিনি ছেলেটিকে
হত্যা করে ইচ্ছা পোষণ করলেন যে, মহান আল্লাহ পাক এই সৎকর্মপরায়ণ পিতা-মাতাকে
এ ছেলের পরিবর্তে তার চাইতে উত্তম সন্তান দান করবেন, যার কাজকর্ম ও চরিত্র হবে পবিত্র এবং সে পিতা-মাতার হক্বও পূর্ণ করবে।
এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, নিহত ছেলের পিতা-মাতাকে মহান আল্লাহ পাক তার পরিবর্তে একটি কন্যা
সন্তান দান করেন। পরবর্তীকালে যার রেহেম শরীফ-এ দুজন নবী আগমন করেন। আরেক রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, উক্ত কন্যার রেহেম
শরীফ থেকে আগমনকারী নবী আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক একটি বিরাট উম্মতকে
হিদায়েত দান করেন। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে,
নিহত ছেলের পরিবর্তে মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত ছেলের মাতার
ঘরে সাত জন ছেলে দান করেন যাঁরা প্রত্যেকেই নবী হন। সুবহানাল্লাহ!
তিন. প্রাচীরের নিচে ইয়াতীম বালকদের জন্য
রক্ষিত গুপ্তধন স্বর্ণ-রৌপ্যের ভা-ার ছিলো। তা হিফাযতের জন্য তিনি
প্রাচীর ঠিক করে দিয়েছিলেন এজন্য যে, উক্ত ইয়াতীম
বালকদের পিতা একজন মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী ছিলেন। তাই উনার সন্তান-সন্ততির
উপকারের লক্ষ্যে এ ব্যবস্থা করেন।
স্মরণীয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে
ইলমে গইবসহ সর্বপ্রকার ইলিম ও নিয়ামত হাদিয়া করার পদ্ধতির নাম হচ্ছে ‘ইলমে লাদুন্নী, ইলহাম ও ইলক্বা। আর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে ইলমে গইবসহ সর্বপ্রকার ইলিম ও নিয়ামত
হাদিয়া করার পদ্ধতির নাম হচ্ছে ওহী। বলার অপেক্ষা রাখে
না, সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ওহী মুবারক দ্বারা
নিয়ন্ত্রিত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
আরো উল্লেখ্য, ‘শরহে মাওয়াহিব’ কিতাবে উল্লেখ আছে, ‘লাতায়িফুল মিনান’ কিতাবে উল্লেখ
আছে যে, কোন কামিল বান্দা বা হক্কানী ওলীআল্লাহগণ
উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে কোন অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান বা ইলমে গইব লাভ করা
আশ্চর্যের বিষয় নয়। এটা হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত। হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে-
اتقوا فراسة الـمؤمن فانه ينظر بنور
الله
অর্থ: ‘মু’মিনের অর্থাৎ প্রকৃত মু’মিন তথা ওলীআল্লাহ উনার অন্তরদৃষ্টিকে ভয় করো। কেননা তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নূর মুবারক দ্বারা অবলোকন করেন।’ (মিশকাত শরীফ)
হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক
হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত-মা’রিফাত অর্জনকারী ওলীআল্লাহ উনার শান মুবারক সম্পর্কে মহান আল্লাহ
পাক তিনি বলেন-
كنت سـمعه الذى يسمع به كنت بصره
الذى يبصربه كنت لسانه الذى ينطق به كنت يده التى يبطش بها كنت رجله التى يـمشى
بـها
অর্থ: আমি উনার কান হই, তিনি আমার কুদরতী কান মুবারক-এ শ্রবণ করেন। আমি উনার চক্ষু হই, তিনি আমার কুদরতী চোখ
মুবারক-এ দেখেন। আমি উনার যবান হই, তিনি আমার কুদরতী
যবান মুবারক-এ কথা বলেন। আমি উনার হাত হই,
তিনি আমার কুদরতী হাত মুবারক-এ ধরেন। আমি উনার পা হই, তিনি আমার কুদরতী পা মুবারক-এ চলেন। (বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী শরীফ, উমদাতুল ক্বারী
শরীফ)
অর্থাৎ যাঁরা প্রকৃত ওলীআল্লাহ
উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নিয়ন্ত্রিত। কাজেই উনাদের সবকিছুই
মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত বা ক্ষমতা বলেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই উনার গইব সম্পর্কে অবগত হওয়াটা বিস্ময়কর কোন ব্যাপার নয়।
অতএব, হযরত ওলী-আওলিয়ায়ে রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ক্ষেত্রে যদি ইলমে গইব থাকাটা বাস্তবসম্মত
হয় তাহলে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ইলমে গইব থাকাটা আরো বেশি বাস্তসম্মত। এ বিষয়ে কেবল কাফিররাই চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল
করে থাকে।
বদ-মাযহাব, বদ-ফিরকার লোকেরা দ্বারা পরিচালিত প্রকাশানার বই ও অখ্যাত পত্রিকায় বলা হয়ে থাকে,
“যে ব্যক্তি এ ধরণের দাবি করবে সে কুরআন ও হাদীছ অস্বীকার এবং
আল্লাহ পাক উনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো এবং এ দাবির মাধ্যমে মুসলিম মিল্লাতের গন্ডি থেকে বের হয়ে গেল”- তাদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও মনগড়া। কারণ এরূপ বক্তব্য
ইসলামী শরীয়াহ উনার উছূল বা দলীল- পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস
উনাদের কোথাও উল্লেখ নেই যে, গইবের ইলিমের অধিকারী
হলে বা দাবি করলে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনাদেরকে অস্বীকার করা হয় এবং মহান আল্লাহ
পাক উনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা হয় এবং মুসলিম মিল্লাতের গ-ি থেকে বের হতে হয়।
বদ-মাযহাব, বদ-ফিরকার লোকেরা দ্বারা পরিচালিত প্রকাশানার বই ও অখ্যাত পত্রিকায় আরো বলা হয়ে
থাকে, “এমনকি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহান রসূলুল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও গইব জানেন না।” নাউযুবিল্লাহ!
বদ-মাযহাব, বদ-ফিরকার লোকদের এ বক্তব্যও পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের চরম
বিরোধী ও কুফরী হয়েছে। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি গইব সম্পর্কে জানেন না এরূপ কথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা
ও ক্বিয়াস উনাদের কোথাও নেই। বরং তিনি গইব সম্পর্কে
জানেন এবং জানিয়েছেন এ বর্ণনাই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস
উনাদের মধ্যে রয়েছে।
বদ-মাযহাব, বদ-ফিরকার লোকেরা দ্বারা পরিচালিত প্রকাশানার অখ্যাত বই ও পত্রিকায় আরো বলা হয়ে
থাকে, “সুতরাং যে এরূপ দাবি করবে সে মুসলিম থাকে
না।”
অর্থাৎ যে গইব সম্পর্কে জানে
বলে দাবি করবে সে মুসলিম থাকে না। বদ-মাযহাব,
বদ-ফিরকার লোকদের এ বক্তব্যও পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা
ও ক্বিয়াস উনাদের কোথাও নেই।এ বক্তব্যও সম্পূর্ণ
মনগড়া, মিথ্যা, দলীলবিহীন ও কুফরীর শামিল। কেননা পবিত্র কুরআন
শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বর্ণনা মুবারক অনুযায়ী প্রতিভাত যে, গইব সম্পর্কে যেমন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই
অবহিত ছিলেন তেমনি হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলইহিম উনাদের মধ্য থেকে মহান আল্লাহ
পাক তিনি যাকে ইচ্ছা উনাকে গইব সম্পর্কে ইলিম দিয়ে থাকেন।
বদ-মাযহাব, বদ-ফিরকার লোকেরা দ্বারা পরিচালিত প্রকাশানার বই ও অখ্যাত পত্রিকায় তাদের বক্তব্যের
স্বপক্ষে পবিত্র সূরা নমল: আয়াত শরীফ ৬৫ এবং পবিত্র সূরা আনআম: আয়াত শরীফ ৫০ দুখানা
আংশিক আয়াত শরীফ উনার অর্থ উল্লেখ করেছে। পবিত্র সূরা নমলে উল্লেখিত
আয়াত শরীফখানা হচ্ছে-
قل لا يعلم من فى السموت والارض
الغيب الا الله وما يشعرون ايان يبعثون.
অর্থ: হে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মতকে বলে দিন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত আসমান-যমীনে যারা রয়েছে, কেউই গইব সম্পর্কে অবহিত নয় এবং তারা (ইনতিকালের পর) কখন উত্থিত হবে সে সম্পর্কেও
জানে না।
এ আয়াত শরীফ উনার মধ্যে من (মান) শব্দ দ্বারা
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতকে
বুঝানো হয়েছে। আর আসমান যমীনে যত সৃষ্টি রয়েছে সকলেই উনার
উম্মতের অন্তর্ভুক্ত। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قل يايها الناس انـى رسول الله اليكم
جميعا
অর্থ: হে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলেন দিন, হে মানুষেরা! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলের জন্যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হিসেবে
প্রেরিত হয়েছি। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৮)
একইভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
ارسلت الى الخلق كافة
অর্থ: আমি সমস্ত সৃষ্টির জন্যে রসূল হিসেবে
প্রেরিত হয়েছি। (মুসলিম শরীফ)
কাজেই, আসমান ও যমীনে যারা রয়েছে মানুষ হোক, জিন হোক,
ফেরেশতা হোক কিংবা অন্য প্রাণী হোক সকলেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত।
এরপর সূরা আনআম শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখিত
আয়াত শরীফখানা হচ্ছে-
قل لا اقول لكم عندى خزائن الله ولا
اعلم الغيب.
অর্থ: হে আমার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি (উম্মতকে) বলে দিন, আমি তোমাদেরকে বলিনা যে, আমার কাছে মহান আল্লাহ পাক উনার ভা-ার রয়েছে। আর আমি গইব সম্পর্কেও
অবহিত নই।
এ আয়াত শরীফখানা হচ্ছে অর্ধেক, আয়াত শরীফখানা শেষ হয়নি, আয়াত শরীফখানা উনার পরবর্তী অংশে রয়েছে-
ان اتبع الا ما يوحى الى
অর্থাৎ: আমি তো কেবল ঐ ওহী
মুবারক উনার অনুসরণ করি, যা আমার নিকট অবতীর্ণ
হয়।
এখন তাহলে কি অর্থ দাঁড়ালো? অর্থ এই দাঁড়ালো যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার সবকিছুই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে নাযিলকৃত
পবিত্র ওহী মুবারক উনার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত, সেহেতু উনার আলাদা কোনো অবস্থা নেই। মহান আল্লাহ পাক তিনি
যা বলতে বলেন তিনি তাই বলেন, যা করতে বলেন,
তাই করেন, উনার ইচ্ছা মুবারকই
উনার ইচ্ছা মুবারক, উনার চাওয়া মুবারকই উনার চাওয়া মুবারক,
উনার ভান্ডর মুবারকই উনার ভান্ডর মুবারক, উনার প্রদত্ত ইলিম
মুবারকই উনার ইলিম মুবারক; তা গইব হোক কিংবা হাদ্বির
হোক, বাতিন হোক কিংবা যাহির হোক। অর্থাৎ আউওয়াল ও আখিরের সর্বপ্রকার
ইলিম এবং সর্বপ্রকার নিয়ামত উনার কাছে জমা করা হয়েছে বা উনাকে হাদিয়া করা হয়েছে।
যেমন এ প্রসঙ্গে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই ইরশাদ মুবারক করেন-
اعطيت بحوامع الكلم
অর্থাৎ- “আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইলিম মুবারক হাদিয়া
করা হয়েছে।”
(মুসলিম শরীফ)
এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
انـما انا قاسم والله يعطى
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি হাদিয়া করেন আর নিশ্চয়ই আমি হলাম (উক্ত হাদিয়া) বণ্টনকারী।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি
উনার সর্বপ্রকার নিয়ামত উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাদিয়া করেছেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুল মাখলুক্বাতের যাকে যতটুকু বা যে
পরিমাণ ইচ্ছা তাকে সে পরিমাণ বণ্টন করে দিয়ে থাকেন। দেখা যাচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার ভা-ার মুবারক রয়েছে এবং তিনি সে
ভা-ার মুবারক থেকে যাকে যতটুকু প্রয়োজন তাকে ততটুকু দিয়ে থাকেন।
এখন যিনি কুল-মাখলুক্বাতের জন্য বণ্টনকারী
তিনি মূলত সৃষ্টির শুরু হতে সৃষ্টির শেষ পর্যন্ত বণ্টনকারী। আর বণ্টনকারী যাদের মাঝে বণ্টন করবেন তাদেরকে অবশ্যই চিনেন ও জানেন। অন্যথায় না চিনলে ও না জানলে কাকে কতটুকু বা কি পরিমাণ দিবেন? কাজেই বলার অপেক্ষা রাখেনা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইলমে
বাতিন বা ইলমে গইবসহ সমস্ত ইলিমের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, লওহে মাহফূয সম্পর্কে বলা হয়, সৃষ্টির শুরু হতে যা
কিছু হয়েছে, হচ্ছে ও হবে সবকিছুই সেখানে লিপিবদ্ধ রয়েছে। এখানে বলতে হয়, লওহে মাহফূয সৃষ্টি হয়েছে নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
ওজুদ পাক নূর মুবারক উনার অংশ হতে। আর লওহে মাহফূয যেহেতু
সৃষ্টিরাজির মধ্যে একটি সৃষ্টি সেহেতু তারমধ্যে সংরক্ষিত নিয়ামত তথা ইলিমেরও বণ্টনকারী
হলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ
ওয়া তায়ালা উনার ইলিমের একটা অংশ রাখা হয়েছে লওহে মাহফূযে যেই ইলিম মাখলুক্বাত সম্পর্কিত
এবং মাখলুক্বাতের জন্য বণ্টিত। আর নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
যেহেতু মাখলুক্বাতের সর্বপ্রকার নিয়ামতের বণ্টনকারী সেহেতু তিনি মাখলুক্বাতের অবস্থা
সম্পর্কিত ও তাদের জন্য বণ্টিত লওহে মাহফূযে সংরক্ষিত সমস্ত ইলিম উনাদেরও অধিকারী এবং
তার বণ্টনকারীও।
মূলকথা হলো, লওহে মাহফূযে সংরক্ষিত ইলিম মুবারক যেরূপ মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা
উনার ইলিম মুবারক উনার একটা অংশ একইভাবে উক্ত ইলিম নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারও ইলিম মুবারক উনার অংশ বিশেষ। সুবহানাল্লাহ!
মনে রাখতে হবে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরিপূর্ণরূপে
গইবের ইলিম বণ্টনকারী। উনার মধ্যেমেই বান্দা ও উম্মত গইবের ইলিম জেনেছে, বুঝেছে ও লাভ করেছে। সুবহানাল্লাহ!
কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক
হয়েছে-
عالـم الغيب فلا يظهر على غيبه احدا
الا من ارتضى من رسول
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি আলিমুল গইব। তিনি উনার গইবের ইলিম উনার মনোনীত রসূল আলাইহিমুস সালাম ব্যতীত কারো নিকট প্রকাশ
করেন না।”
(পবিত্র সূরা জিন শরীফ
: আয়াত শরীফ-২৬, ২৭)
প্রতিভাত হলো, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই ইলমে গইবের অধিকারী। আর উনারা এই নিয়ামতের অধিকারী হয়েছেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক বণ্টনের ওসীলায়।
অতএব, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে যেখানে হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম
রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ইলমে গইব সম্পর্কে অবহিত হওয়াটাই প্রমাণিত সেখানে যিনি
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, যিনি ইমামুল মুরসালীন, যিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার ক্ষেত্রে ইলমে গইব সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করা যে কত চরম জিহালতি, গুমরাহী ও কুফরী; তা বলার অপেক্ষা
রাখে না। মূলত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যারা চিরশত্রু, চির লা’নতগ্রস্ত ও চিরজাহান্নামী কেবল তারাই উক্ত বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন
করতে পারে। জানা আবশ্যক যে, নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র শান বা মর্যাদা
সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে ফায়ছালা দিতে হলে শুধু দু’ বা একখানা আয়াত শরীফ উনার আংশিক ও শাব্দিক অর্থের উপর ভিত্তি করে ফায়ছালা দেয়াটা
আদৌ শুদ্ধ নয়; বরং উনার সীমাহীন পবিত্র মর্যাদা বা শান মুবারক
সম্পর্কে ফায়ছালা দিতে হলে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ ও সম্পূর্ণ হাদীছ শরীফ উনার ইলিম থাকতে
হবে; অন্যথায় প্রদত্ত ফায়ছালা অশুদ্ধ ও কুফরী হবে এবং পরিণামে চিরস্থায়ীভাবে
জাহান্নাম ওয়াজিব হবে। নাউযুবিল্লাহ!
(এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ
১২৯তম সংখ্যা পাঠ করুন।)
সঙ্কলনে- গোলাম মুহম্মদ যুফার, ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ,
বাংলাদেশ।
No comments:
Post a Comment