Thursday, April 18, 2013

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি ষড়যন্ত্র : বাংলাদেশী হিন্দুদের জন্য আলাদা ভূখন্ডের দাবি ‘যুগশঙ্খ’র



কাশ্মীরে প্রায় শতভাগ মুসলমান থাকা সত্ত্বেও তাদের স্বাধীনতা দিচ্ছে না ভারতীয় হিন্দুরা, অথচ বাংলাদেশে মাত্র ২ শতাংশের কম হিন্দুর জন্য স্বাধীন ভূখ- দাবি করে বসেছে ভারতীয় হিন্দুরাদেশটির আসাম রাজ্যের প্রভাবশালী বাংলা পত্রিকা দৈনিক যুগশঙ্খর সম্পাদকীয় পাতায় এমনই মামার বাড়ির আবদারকরা হয়েছেগতকাল ইয়াওমুল খামীসি বা বৃহস্পতিবার পত্রিকাটির সম্পাদকীয় পাতায় তা হলে হিন্দু বাঙালিদের জন্য একটা আলাদা ভূখন্ড হোক নাশিরোনামে একটি বিতর্কিত নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়বিতর্কিত নিবন্ধটি লিখেছে গোঁড়া সাম্প্রদায়িক হিন্দু দীপঙ্কর ঘোষ


আর এ দাবি তুলেছে- কথিত হিন্দু নির্যাতনেরকিন্তু গোটা ভারতে মুসলমান ৪০ শতাংশ, যাদেরকে প্রতিনিয়িত যুলুম করা হচ্ছেদেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেবে অনুযায়ী, দেশবিভাগের পর ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ৩৯ বছরে মুসলিমবিরোধী বড় ধরনের দাঙ্গা সংখ্যা প্রায় ১৩,৩৫৬টি২০০১-২০০৯ পর্যন্ত ৬,৫৫৪টিসর্বশেষ ২০১২ সালে দাঙ্গার সংখ্যা ৫৬০টিসেই হিসেবে সম্মিলিত হিসেব পাওয়া না গেলেও মোট ৪৮ (৩৯+৮+১) বছরে দাঙ্গার সংখ্যা দাঁড়ায় ২০,৪৭০টিঅর্থা গড়ে প্রতিদিন একটিরও বেশিআর এসব দাঙ্গায় লক্ষ-লক্ষ মুসলমানকে শহীদ করা হয়েছেসে তুলনায় বাংলাদেশে কয়টা দাঙ্গা হয়েছে, আর কয়টা হিন্দু মারা পড়েছে- তার উল্লেখযোগ্য কেনো হিসাব কি মালাউনরা দিতে পারবে?
বিতর্কিত নিবন্ধের শেষ দিকে গোঁড়া সাম্প্রদায়িকতাবাদী দীপঙ্কর ঘোষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহাস করে ও মুসলমানদেরকে মৌলবাদী বলে গালি দিয়ে লিখেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত-বাংলা সম্পর্ক নিয়ে বলতেন- আমাদের সম্পর্ক ভৌগলিক নয়, ঐতিহাসিকতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ওয়াজেদও কিছুকাল সে কথাটা উপলবদ্ধি করেছেনকিন্তু মৌলবাদের ক্রমবর্ধমান দাপটে আর হিন্দু ভোট আর নির্ণায়ক শক্তি না থাকায় তারও আজ নতুন রাজনৈতিক আত্মপরিচয় নির্মাণের প্রয়োজন এসে দাঁড়িয়েছেধর্মান্ধআর বিশ্বাসীর মধ্যে ফারাক দ্রুত কমতে থাকায় শেখ হাসিনাকেও আজ মৌলবাদীদের নিশি ডাককে উপেক্ষা করার সাহস হারাতে হয়েছেখোদ শেখ হাসিনার অবস্থাই যখন এমন, তখন বাংলাদেশের রাজশক্তি আগামী দিনে হিন্দুদের সুরক্ষা দেবে- এমন আশা আর রাখা যায় না
গোঁড়া সাম্প্রদায়িকতাবাদী দীপঙ্কর ঘোষ নাম না উল্লেখ করলেও বিএনপির চেয়ারপার্সনের গায়ে হুল ফুটিয়ে বলেছে, আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে এবং নির্বাচন পরবর্তীতে যদি সে দেশে পালাবদল হয়ে আরেক বিবিক্ষমতায় আসেন, তাহলে যে হিন্দুদের উপর চরম বিপর্যয় নেমে আসবে তার পদধ্বনি এখনই শোনা যাচ্ছেতাহলে সেই সব বিপন্ন হিন্দু যাদের কথা বাংলাদেশের রাজশক্তিও ভাবে না আর এ দেশের নেতৃত্বও ভাবে না, তারা কি শুধুই ছোরা খাবে, ধর্ষিতা হবে আর মৃত্যুর অপেক্ষায় তিলে তিলে নিঃশেষ হবে?
গোঁড়া সাম্প্রদায়িকতাবাদী দীপঙ্কর ঘোষ তার নিবন্ধে সন্ত্রাসবাদী হিন্দুদের উস্কে দিয়ে বলেছে, কেউ যখন তাদের কথা ভাবে না তখন এভাবে একবার অন্তত তাদের রুখে দাঁড়াতে হবেবিশ্ব-দরবারে তাদের কথা তাদেরই তুলে ধরতে হবেপ্রয়োজনে তাদের নিজের জন্য আলাদা ভূখ- দাবি করতে হবেগোঁড়া সাম্প্রদায়িকতাবাদী দীপঙ্কর ঘোষ ঐতিহাসিক মায়াটানেরঅজুহাত দেখিয়ে বলেছে, আর আমরা যারা সেই ঐতিহাসিক সম্পর্কের মায়াটানে তাদের জন্য হৃদয়ের বেদনা অনুভব করি, আমরা আমাদের ফেলে আসা ভূমির সমপরিমাণ ভূখ- তাদের দেবার দাবি রাখতে পারিওই নিবন্ধে গোঁড়া সাম্প্রদায়িকতাবাদী লেখক বলেছে, আমাদের ফেলে আসা ভূখ- যদি তাদের শত্রুসম্পত্তি হয়, তবে তাই আজ উন্মত্তদেরচোখে যারা শত্রু তাদের দেয়া হোক না
পবিত্র ইসলাম অবমাননাকারী, ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগারদের ইসলামবিদ্বেষী আন্দোলনের আগুনে তেল দিয়ে সে বলেছে, সেই সঙ্গে যারা শাহবাগী তরুণ প্রজন্ম, যারা মৌলবাদীদের চোখে নাস্তিক ব্লগার, তাদের আন্দোলন দীর্ঘজীবী হোক, এ কামনাও করিঅন্তত সে আন্দোলন সফল হলে কবি বিষ্ণু দের ভাষায় বলতে পারবো- অমত্য শহর এই আমাদের, অমর বাংলাদেশ/ মরেও মরেনি আজওযুগশঙ্খের নিবন্ধে গোঁড়া সাম্প্রদায়িকতাবাদী লেখক দীপঙ্কর ঘোষ বলেছে, বহুস্তরে বিস্তৃত বাংলাদেশের এ সংকটকালে মৌলবাদের বিষবৃক্ষের এ ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে শাহবাগ স্কয়ার যে পথটা আবিষ্কার করেছে, কোনো এক আলো ঝলমলে প্রশস্ত রাজপথে মিশে তার যাত্রা পূর্ণতা লাভ করুক, এ প্রার্থনাও এ মাটির এক বাঙালি হিসেবে রইল
ওই বিতর্কিত নিবন্ধে বলা হয়, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে বাংলাদেশের শাহবাগ চত্বরে যে শক্তিশালী গণআন্দোলন গড়ে উঠেছিল তার সংজ্ঞা যে অনেক বড়, তা সেদেশের মৌলবাদীরা (মুসলমানরা) সহজেই আঁচ করতে পেরেছেনএ আন্দোলন শুধু ফাঁসির দাবিতে নয়, এ আন্দোলন তরুণ প্রজন্মের অভিব্যক্তির অধিকারের আন্দোলনএ আন্দোলন ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে বিজাতীয় আগ্রাসন থেকে বাঁচাবার আন্দোলন
ওই বিতর্কিত নিবন্ধে বলা হয়, মৌলবাদীদের (মুসলমানদের) বিরুদ্ধে একাংশ তরুণের মনে ক্ষোভের পারদ চড়তে থাকাকে অঙ্কুরেই যদি ব্যর্থ করে দেয়া না যায়, তা হলে মৌলবাদীদের (মুসলমানদের) ডিঙি নৌকো যে উজান বইবে না সেটা উপলব্ধি করেই শুরু হয়েছে ধর্মান্ধদের (মুসলমানদের) একজোট হওয়াআর জোট দেখতে দেখতে মহাজোটে পরিণত হতেও খুব সময় লাগেনিকারণ ধর্ম এখানে স্টীমুলাস (উত্তেজক) আর ইসলাম বিপন্নতারদোহাই এখানে মুসলিম সৌভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তোলার ঘটক উপাদানএক্ষেত্রে যাদের উপর অত্যাচার করলে মৌলবাদীদের রসনা তৃপ্ত হয়, মৌলবাদীরা গতরে বাড়ে তারা হলো বিধর্মী (হিন্দু)আর দুর্ভাগ্যবশত এ বিধর্মীরা জয় বাংলারভূমিপুত্র-বিড়ম্বিত নিপীড়িত অসহায় বাঙালি (হিন্দু)
এই দেশ শুধুমাত্র হিন্দুদের ইঙ্গিত করে বিতর্কিত নিবন্ধটিতে বলা হয়, কালিমালিপ্ত ইতিহাস সাক্ষী যে দেশ ভাগ ও স্বাধীনতার পর কিছু (ব্যতিক্রম ছাড়া) কুপম-ুক জমের অরুচিব্যক্তিকে হিন্দু বাঙালিরা নেতৃত্ব প্রদান করায় গোটা উপমহাদেশটায় হিন্দু বাঙালিদের বিরামহীন অপমান আর লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছেভোটসর্বস্ব রাজনীতি, সাহসের অভাব এবং নিজের জাতির কথা সদর্পে বলার মতো দৃঢ়তা না থাকার ফলে হিন্দু বাঙালিরা চরম মেধা ও বুদ্ধির থাকার পরও কোনোদিনই ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনিদাবি আদায় তো অনেক দূরের কথানেতৃত্বের দুর্বলতার জন্যই হিন্দু বাঙালিরা লড়াই করে টিকে থাকার বদলে কখনো নিজ দেশেই পরবাসী হয়েছে, তো কখনো পিতৃপুরুষের ভিটে ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দেশান্তরিত হয়েছে
ওই নিবন্ধে বলা হয়, স্থানীয় স্তরে সংগঠন এবং ভোটারদের সেন্টিমেন্টের দিকে নজর রেখে কিছু রুটিন কার্যসূচি হাতে নেয়া হবেতাই যেহেতু ভোটের অঙ্কে বাঙালি হিন্দু একশয় শূন্য, তাই বাংলাদেশের ঘটনাকে জাতীয় ইস্যু বানিয়ে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করার প্রয়োজন ও তাগিদ বিজেপি অনুভব করে না

No comments:

Post a Comment