Monday, July 22, 2013

পবিত্র রমাদ্বান শরীফ সম্পর্কিত জরুরী মাসয়ালা-মাসায়েলগুলো সংক্ষেপে জানুন



ভূমিকা:
পবিত্র  রমাদ্বান শরীফ এক মহান মাস! রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মহান খাজিনায় ভরপুর এ মাস। কিন্তু রমাদ্বান শরীফ-এর মাসায়ালা মাসায়েলসমূহ স্মরণ আছে কি? যেহেতু এ মাস একটি পবিত্র মাস, আত্ম সংযমের মাস, সুতরাং অতি প্রয়োজনীয় কিছু মাসায়ালা মাসায়েল এখানে দেয়া হলো-


রোযা ফরয হওয়ার শর্তাবলী:
রোযা ফরয হওয়ার জন্য নিম্ন বর্ণিত শর্তগুলো থাকা আবশ্যক-
১.  মুসলমান হওয়া।
২.  বালিগ হওয়া।
৩.  জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া।
৪.  সুস্থ হওয়া।
৫. মুক্বীম হওয়া।
অর্থাৎ মুসাফির না হওয়া, কেননা মুসাফিরের জন্য বাধ্যবাধকতা থাকেনা। তবে মুক্বীম হওয়ার পর অবশ্যই ক্বাযা আদায় করতে হবে।

যার উপর রোযা আদায় করা ফরয নয়:
১.  মুসাফির এর জন্য রোযা আদায় করা ফরয নয়। তবে আদায় করাই উত্তম। মুক্বীম হওয়ার পর অবশ্যই ক্বাযা আদায় করতে হবে।
২.  অসুস্থ ব্যাক্তির উপর রোযা আদায় করা ফরয নয়। তবে সস্থ হলে ক্বাযা আদায় করতে হবে।
৩.  মহিলাদের মাসিক স্বভাবিক মাজরতা, সন্তান হওয়ার কারণে মাজরতার সময় তাদের উপর রোযা ফরয নয় । তবে উভয় মাজরতা থেকে পবিত্র হলে ক্বাযা আদায় করতে হবে।  বিঃ দ্রঃ বালিগ না হলেও ছোট ছেলে-মেয়ে যারা রোযা রাখতে পারবে তাদেরকে রোযা রাখিয়ে অভ্যাস করানো পিতা-মাতার দায়িত্ব-কর্তব্য।

যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না:
নিম্নোক্ত কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না-
১.  ভুল ক্রমে কোন কিছু পানাহার করলে। অতঃপর শেষ সময় পর্যন্ত পানাহার না করলে।
২.  ভুল ক্রমে নির্জনবাস করলে।
৩.  রোযার মধ্যে দিনে ঘুমালে এবং ঘুমের মধ্যে গোসল ফরয হলে।
৪.  আহলিয়ার প্রতি দৃষ্টিপাত করার কারণে মনি নির্গত হলে।
৫.  তেল মালিশ করলে।
৬.  শিঙ্গা লাগালে।
৭.  চোখে সুরমা বা ওষুধ দিলে। উল্লেখ্য, ওষুধের স্বাদ গলায় অনুভুত হলে বা সুরমার রঙ থুথুর সাথে দেখা গেলেও রোযা ভঙ্গ হবে না।
৮.  আহলিয়াকে বুছা দিলে।
৯.  আপনা আপনি বমি করলে।
১০.  রোযাদারের গলায় অনিচ্ছাকতভাবে ধোঁয়া গেলে।
১১. মুখে থুথু এলে বারবার না ফেলে গিলে ফেললে।
১২. রোযা অবস্থায় নখ ও চুল কাটলে।
১৩. রোযাদার ব্যক্তি স্বপ্নে কিছু খেলে বা পান করলে।
১৪. রাস্তায় চলাচলের সময় গাড়ির ধোঁয়া, রান্না করার সময় রান্নার ধোঁয়া নাকে প্রবেশ করলে মাজুর বা অক্ষমতার কারণে রোযা ভঙ্গ হবে না।
১৫.  রোযা অবস্থায় সন্তানকে দুধ খাওয়ালে মায়ের রোযা ভঙ্গ হবে না। এমনকি ওযু ভঙ্গ হবে না।

যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় এবং শুধু ক্বাযা ওয়াজিব হয় :
নিম্ন লিখিত কারণসমূহে রোযা ভঙ্গ হয় এবং তার জন্য শুধু ক্বাযা আদায় করতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না। সেগুলো হচ্ছে-
১.  ইচ্ছাকত মুখ ভরে বমি করলে।
২.  আহলিয়াকে বুছা বা স্পর্শ করার কারণে মনি নির্গত হলে।
৩.  কোন অখাদ্য বস্তু তথা পাথর, লোহার টকরো, ফলের আটি ইত্যাদি গিলে ফেললে।
৪.  স্বাভাবিক স্থান ব্যতীত অন্যস্থানে মেলামেশায় মনি নির্গত হলে।
৫.  জোরপূর্বক রোযাদারকে কিছু খাওয়ানো হলে।
৬.  ভুল ক্রমে কিছু খেতে আরম্ভ করে রোযা ভঙ্গ হয়েছে মনে করে পুনরায় আহার করলে।
৭.  কুলি করার সময় পেটে পানি চলে গেলে।
৮.  প্রস্রাব -পায়খানার রাস্তায় ওষধ বা অন্য কিছু প্রবেশ করালে।
৯.  রাত মনে করে ছুবহি ছাদিক্বের পর পানাহার করলে।
১০. সন্ধ্যা মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বেই ইফতার করলে।
১১. মুখে বমি এনে পনরায় তা পেটে প্রবেশ করালে।
১২. দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্য কণা বের করে খেয়ে ফেললে।
১৩. শরীরের কোন ক্ষতস্থানে ওষুধ লাগানোর ফলে তা ভেতরে প্রবেশ করলে।
১৪.  রোযা অবস্থায় ইনজেকশন, ইনহেলার, স্যালাইন, ইনসুলিন ইত্যাদি ব্যবহার করলে।
১৫. নাকে বা কানে তেল বা তরল ওষধ প্রবেশ করালে।
১৬. আগরবাতির ধোঁয়া নাকে প্রবেশ করলে।
১৭.  রোযা রেখে টুথপেস্ট, কয়লা, পাউডার, ছাই ইত্যাদি যে কোন প্রকার মাজন দ্বারা দাত মাজা মাকরূহ। এগুলোর সামান্য অংশও যদি গলায় প্রবেশ করে তাহলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এছাড়া সর্বাবস্থায় গুল ব্যবহার করা হারাম। কারণ গুল মাদকদ্রব্যের অন্তর্ভক্ত।
১৮. রাত্রি বাকি আছে মনে করে ছুবহি ছাদিক্বের পর পানাহার করলে বা নির্জনবাস করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

যেসব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় এবং ক্বাযা ও কাফফারা উভয়ই ওয়াজিব হয়:
নিম্ন লিখিত কাজসমূহ দ্বারা রোযা ভঙ্গ হয়ে যায় এবং ক্বাযা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করা ওয়াজিব হয়। যথা-
১.  ইচ্ছাকৃত নির্জনবাস করলে।
২.  স্বেচ্ছায় পানাহার করলে।
৩.  স্বেচ্ছায় ওষুধ পান করলে।
৪.  শিঙ্গা লাগানোর পর রোযা নষ্ট হয়েছে মনে করে পানাহার করলে।
৫.  ধূমপান করলে।

রোজার ক্বাযা ও কাফফারা আদায় করার নিয়ম:
কাফফারা হচ্ছে দুমাস ধারাবাহিক রোযা রাখা অথবা ষাটজন মিসকীনকে দবেলা তৃপ্তিসহকারে খাদ্য খাওয়ানো অথবা কোন গোলাম আযাদ করা। সন্তানসম্ভবা ও দুগ্ধদায়িনীর রোযা রাখার হুকুম গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিণী যদি আশঙ্কাবোধ করে যে, রোযা রাখলে যথাক্রমে তাদের গর্ভস্থ ভ্রুণ ও দুগ্ধপানকারী সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাহলে তাদের জন্য রোযা না রাখা জায়িয হবে। পরে এর ক্বাযা আদায় করে নিবে। কাফফারা বা ফিদিয়া প্রদান করতে হবে না।

রমাদ্বান শরীফ-উনার মাসয়ালা মাসায়েলগুলো জানার জন্য তথ্যপূর্ণ এই ওয়েব সাইটটি ভিজিট করুন --->

আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে রমযান শরীফ-এর যথাযথ হুকুম-আহকাম পালন করে পবিত্রতা রক্ষা করে চলার তওফিক দান করুন। (আমীন)

No comments:

Post a Comment