দেখতে দেখতে
পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার প্রথম দশক রহমত ও দ্বিতীয় দশক মাগফিরাত পর্ব আমাদের
কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে। আমরা পুণ্যময় পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ উনার বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে
উপনীত হতে চলেছি। এ জন্যই এ মাসের সর্বোচ্চ সৌভাগ্যের কিছু না কিছু হিস্যা অর্জনে
আমাদের প্রত্যেককে আরো সক্রিয় ও মনোযোগী হতে হবে।
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার সব পুণ্যেরই
একটি ঐশ্বর্যময় সুযোগ। অন্যসব ইবাদতের পাশাপাশি শেষ ১০ দিনে পবিত্র ই’তিকাফ
পালনও একটি ফযীলতপূর্ণ ইবাদত। মুসলিম দেশের প্রায় সব মসজিদে ১০ দিনের জন্য জন্য পবিত্র
ই’তিকাফ উনার নিয়তে ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল হয়েছেন ধর্মপ্রাণ
মুসলমানগণ। কেননা, পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার তৃতীয় দশ দিনে পবিত্র ই’তিকাফ
পালন করা আবশ্যক।
পবিত্র ই’তিকাফ
আরবী শব্দ, এর আভিধানিক অর্থ এক কর্ণারে অবস্থান করা। সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার পরিভাষায়,
জামায়াতের সঙ্গে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় হয় এমন মসজিদে মহান আল্লাহ পাক উনার
ইবাদতের নিয়তে অবস্থান করাকে পবিত্র ই’তিকাফ বলে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে পবিত্র ই’তিকাফ
করেছেন এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরও পবিত্র ই’তিকাফ
করার জন্য উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যক্তি ইবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করবে,
মহান আল্লাহ পাক তার প্রতি শান্তি ও রহমত নাযিল করবেন এবং পুলসিরাত পার করে বেহেশতে
পৌঁছার জিম্মাদার হবেন।”
পবিত্র ই’তিকাফ
উনার নিয়ম হলো, পাক-পবিত্র হয়ে নির্দিষ্ট সময়ে নিয়ত করে মসজিদে বা নামাযের নির্ধারিত
স্থানে অবস্থান গ্রহণ করা। নিয়ত ছাড়া পবিত্র ই’তিকাফ
গ্রহণযোগ্য নয়। পুরুষের পবিত্র ই’তিকাফ উনার জন্য এমন মসজিদ হওয়া চাই,
যেখানে অন্তত নিয়মিত আযান ও ইকামতের সঙ্গে জামাতে নামায আদায় করা হয়। পবিত্র ই’তিকাফ
উনার জন্য সর্বোত্তম স্থান হলো বায়তুল্লাহ শরীফ তথা পবিত্র কা’বা
শরীফ ও পবিত্র মসজিদে নববী শরীফ, অতঃপর পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফ, তারপর এমন জামে
মসজিদ যাতে মুসল্লীর সংখ্যা বেশি।
মহিলাদের পবিত্র
ই’তিকাফ উনার জন্য সর্বোত্তম স্থান হলো নিজ নিজ ঘরের নামাযের
নির্ধারিত স্থান। এ স্থানটা এমন হওয়া জরুরী যেখানে পর্দা ও সার্বিক নিরাপত্তার যাবতীয়
শর্ত বিরাজমান। মহিলাদের পবিত্র ই’তিকাফ উনার জন্য একটি বিশেষ শর্ত হলো
স্বামীর অনুমতি নেয়া। অর্থাৎ স্বামীর অনুমতি
ছাড়া পবিত্র ই’তিকাফ করা অনুচিত। এক্ষেত্রে স্বামীর কর্তব্য হচ্ছে স্ত্রীকে
পবিত্র ই’তিকাফ করতে বেশি বেশি উৎসাহ
দেয়া। পবিত্র ই’তিকাফ যে কোনো সময় করা যায়। যেমন, কেউ যদি মাগরিব থেকে ইশা
পর্যন্ত পবিত্র ই’তিকাফ উনার যাবতীয় শর্ত মেনে কেবল ইবাদত-বন্দেগীতেই সময় কাটান
তবে সেও নফল ই’তিকাফ উনার ছাওয়াব পাবে। হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি
আলাইহিম উনাদের সর্বসম্মতিক্রমে ‘সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া’
ই’তিকাফ হচ্ছে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশ দিনের ই’তিকাফ।
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রতি পবিত্র রমাদ্বান
শরীফ মাসে দশ দিন করে পবিত্র ই’তিকাফ করতেন, কিন্তু পবিত্র বিছাল শরীফ
গ্রহণের বছর তিনি বিশ দিন পবিত্র ই’তিকাফ করেন। এ পবিত্র ই’তিকাফ
ছিলো পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ বিশ দিন।
পবিত্র রমাদ্বান
শরীফ উনার শেষ দশ দিনের পবিত্র ই’তিকাফ
উনার একটি অন্তর্নিহিত মর্ম রয়েছে। আর তা হচ্ছে উম্মাতে হাবীবী উনার উপর অর্পিত মহান
আল্লাহ তা’আলা উনার শ্রেষ্ঠ নিয়ামত পবিত্র লায়লাতুল ক্বদর প্রাপ্তি।
হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একবার পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার প্রথম
দশদিন পবিত্র ই’তিকাফ করলেন। তারপর দ্বিতীয় দশ দিনেও পবিত্র ই’তিকাফ
করলেন। তারপর তিনি তুর্কি তাঁবুর নিচে অবস্থান করছিলেন। তা থেকে মাথা বের করে বললেন,
আমি এই রাতটি অর্থাৎ পবিত্র লাইলাতুল
ক্বদর উনার সন্ধানে প্রথম দশ দিনে পবিত্র ই’তিকাফ
করলাম, তারপর মাঝের দশ দিনও ই’তিকাফ করলাম, তারপর জনৈক আগন্তুক (ফেরেশতা)
মারফত আমাকে বলা হলো, রাতটি শেষ দশ দিনেই নিহিত রয়েছে; সুতরাং আমার সঙ্গে যারা পবিত্র
ই’তিকাফ করেছে, তাদের শেষ দশ দিনও ই’তিকাফ
করা উচিত।
No comments:
Post a Comment