সম্প্রতি হানাদার যুক্তরাষ্ট্রে বাজেট ঘাটতিতে সরকারব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ার ঘটনা ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী চাউড় হয়ে গেছে। আর এই ঘাটতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে তার সরকারি ব্যয় বরাদ্দ বন্ধ করতে হচ্ছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর আবারও দেশটিকে এই সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হয়েছে। তবে বরাদ্দ সঙ্কট যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন কিছু না হলেও এবারের সঙ্কটাবস্থা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ভিন্ন ও মারাত্মক।
দেশটির মূল দুই রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটরা নতুন বাজেটের প্রশ্নে ঐক্যমতে না পৌঁছার কারণেই নতুন সরকারি ব্যয় বরাদ্দ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে এই বরাদ্দ বন্ধের ধাক্কা আসে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে। পরবর্তী সময়ে সেই ধাক্কায় সেবা খাতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও মূল ধাক্কাটা আসলে অন্যদিকে।
এই পরিস্থিতিতে কোন কোন খাত কি বিপর্যয়ে পড়েছে তা নিচে তুলে ধরা হল।
প্রয়োজনীয় বাজেটের অভাবে কার্যক্রম ব্যাহত হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সরকারি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউট। এতে বন্ধ হয়ে গেছে ইন্সটিউটের নিয়ন্ত্রণাধীন ১৯ জাদুঘর, গ্যালারি এবং জাতীয় চিড়িয়াখানাগুলো।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিসও বন্ধ হয়ে গেছে। এর আওতাধীন স্ট্যাচু অব লিবার্টি পার্ক, ইয়োসেমাইট ন্যাশনাল পার্ক, আলকাতরাজ রিক্রিয়েশন এরিয়ার কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে।
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪ লাখ কর্মী এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৪০ হাজার ২শ’ জন কর্মী, পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ১৮ হাজার ৫শ’ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের ১২ হাজার ৭শ’ কর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম আলোচিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অল্প সময়ের জন্য তাদের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারবে। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সামরিক অভিযানগুলো অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে।
দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি স্কুলগুলোর জন্য বরাদ্দ ২২ বিলিয়ন ডলার বিতরণ করতে পারবে, কিন্তু এই মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা মারাত্মক পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জ্বালানী মন্ত্রণালয় তাদের ১২ হাজার ৭শ’ কর্মীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হবে, পরবর্তীতে নিউক্লিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে জড়িত আরো ১১শ’ ১৩ জনেরও একই ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও মানবিক সেবা বিভাগের অর্ধেক কর্মীকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরিবেশ প্রতিরক্ষা সংস্থা ইপিএ একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা যার ৯৬ শতাংশ কর্মীকে চাকরিচ্যূত করা হয়েছে ইতোমধ্যেই। সংস্থাটির প্রধান জিনা ম্যাকার্থির ভাষায় এটা ‘প্রয়োজনীয় প্রত্যাহার’।
অপরদিকে তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো এখনও ব্যক্তিমালিকানায় খনন কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে এ ধরনের কার্যক্রম চালানোর জন্য সীমিত সংখ্যক কর্মচারীকেই কাজে লাগানো হবে। বিশেষ নির্দেশে সেখান থেকেও কর্মী সংখ্যা কমানো হচ্ছে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় তার ৬৯ শতাংশ কর্মচারী হারাচ্ছে। সংখ্যার দিক দিয়ে ১২ হাজার ৭০০ কর্মীকে স্রেফ বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে মন্ত্রণালয়।
দ্য ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)। বাজেট বরাদ্দের কারণে নাসার ৯৭ শতাংশ কর্মীকে বাড়িতে বসে থাকতে হবে।
হোয়াইট হাউজের ওয়েবসাইটও বন্ধ:
অর্থ বরাদ্দের অভাবে দেশটির সরকারি ওয়েবসাইটগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে।
গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউজ ও মহাকাশ গবেষণা সংস্থা- নাসার ওয়েবসাইট বন্ধ পাওয়া যায়।
হোয়াইট হাউজের ওয়েবসাইটে কার্যক্রম বন্ধের নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছে, সরকারকে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে কংগ্রেস আইন পাশ করতে ব্যর্থ হওয়ায় এই ওয়েবসাইটে তথ্য হালনাগাদ করা না হতে পারে।
“আমরা আপনার প্রয়োজনের সাড়া দিতে পারছি না।”
আর নাসার ওয়েবসাইটে ঢুকলে যে নোটিশ দেখা যায় তাতে বলা হয়েছে, “কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিলের ঘাটতিতে এই ওয়েবসাইট দেখা যাচ্ছে না। এই অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।”
No comments:
Post a Comment