খলীফায়ে ছানী, আমিরুল মুমিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম
আলাইহিস সালাম তিনি শুধুমাত্র বিশ্বের চারজন শ্রেষ্ঠ বিজেতা উনাদের অন্যতমই
ছিলেন না; সামরিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক এবং আইন বিভাগের অত্যাধুনিক
কাঠামোর সৃষ্টিকারী হিসেবেও তিনি বিশ্ব ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
তিনি একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি এসব বিষয়ে একক প্রতিভূ হিসেবে স্থান দখল করে
আছেন।
বিলাদত শরীফ:
খলীফায়ে ছানী, ফারূক্বে আ’যম, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ, ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার পবিত্র বিছাল শরীফ বা পবিত্র শাহাদাত শরীফ গ্রহণ করেন। উনার মূল নাম মুবারক হচ্ছে হযরত উমর আলাইহিস সালাম। উপনাম মুবারক আবূ হাফ্স্। বিশেষ উপাধি ফারূক্ব। সম্মানিত পিতা উনার নাম মুবারক খত্তাব। সম্মানিত মাতা উনার নাম মুবারক খাতনা মতান্তরে হানতামা বিনতে হাশিম ইবনে মুগিরা। উনার ৮ম পুরুষের ক্রমধারা এসে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে মিলে যায়। তিনি কুরাইশ বংশের দ্বিতীয় শাখা বনু আদী গোত্রভুক্ত ছিলেন। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফায়ে ছানী হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র হিজরত উনার প্রায় ৪০ বছর পূর্বে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণের প্রায় ১৩ বছর পর ৫৮৩ ঈসায়ী সনে যমীনে পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন অর্থাৎ আগমন করেন। তিনি গৌরবর্ণ, দীর্ঘকায় এবং স্থূলদেহী ছিলেন। বাম হাত মুবারক দ্বারা তিনি ডান হাত মুবারক উনার ন্যায়ই কাজ করতে পারতেন। তিনি ধাবমান ঘোড়ার পিঠে লাফ দিয়ে আরোহণ করতে পারতেন। তিনি জাহেলী যুগে ‘উকাজ’ মেলায় মল্লভূমিতে কুস্তিও লড়তেন। সুবহানাল্লাহ!
ইসলাম গ্রহন:
খলীফায়ে ছানী, ফারূক্বে আ’যম, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ, ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার পবিত্র বিছাল শরীফ বা পবিত্র শাহাদাত শরীফ গ্রহণ করেন। উনার মূল নাম মুবারক হচ্ছে হযরত উমর আলাইহিস সালাম। উপনাম মুবারক আবূ হাফ্স্। বিশেষ উপাধি ফারূক্ব। সম্মানিত পিতা উনার নাম মুবারক খত্তাব। সম্মানিত মাতা উনার নাম মুবারক খাতনা মতান্তরে হানতামা বিনতে হাশিম ইবনে মুগিরা। উনার ৮ম পুরুষের ক্রমধারা এসে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে মিলে যায়। তিনি কুরাইশ বংশের দ্বিতীয় শাখা বনু আদী গোত্রভুক্ত ছিলেন। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফায়ে ছানী হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র হিজরত উনার প্রায় ৪০ বছর পূর্বে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণের প্রায় ১৩ বছর পর ৫৮৩ ঈসায়ী সনে যমীনে পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন অর্থাৎ আগমন করেন। তিনি গৌরবর্ণ, দীর্ঘকায় এবং স্থূলদেহী ছিলেন। বাম হাত মুবারক দ্বারা তিনি ডান হাত মুবারক উনার ন্যায়ই কাজ করতে পারতেন। তিনি ধাবমান ঘোড়ার পিঠে লাফ দিয়ে আরোহণ করতে পারতেন। তিনি জাহেলী যুগে ‘উকাজ’ মেলায় মল্লভূমিতে কুস্তিও লড়তেন। সুবহানাল্লাহ!
খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন:
খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণের পর হিজরী ১৩ সালের ২৩শে পবিত্র জুমাদাল উখ্রা শরীফ সম্মানিত খিলাফত উনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। উনার খিলাফতকাল সর্বমোট ১০ বছর ৬ মাস স্থায়ী হয়। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সামরিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক এবং আইন বিভাগসহ দেশ পরিচালনার সমস্ত নিয়ম-পদ্ধতি অনুসরণ করে বিশ্বের কাফিরেরা তাদেরটা সাজিয়েছে কিন্তু মুসলমান দেশগুলো হীনমন্যতায় ভুগছে।
ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার রূপকার হিসেবে সামান্যকিছু মুবারক অবদান আলোচনা:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার শাসনব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল ইসলামী হুকুমত ব্যবস্থাপনা। সম্প্রসারিত এক বিশাল মুসলিম খিলাফতী শাসনব্যবস্থাকে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনাদের নির্দেশ অনুসারে পরিচালনা করার জন্য তিনি সামরিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক এবং আইন বিভাগের কাঠামেতে পূর্ণাঙ্গ রূপ করেন; এমন কিছু বিষয় প্রবর্তন করেন যা মানুষ কল্পনা করতে পারে না। তিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক এবং উনার সম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সমস্ত সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস হিসবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেখিয়ে দিয়েছেন।
তিনি রক্তচোষা গণতন্ত্র, রাজতন্ত্রের পরিবর্তে ইসলামী সর্বোচ্চ আদর্শের ভিত্তিতে খলীফা নিযুক্তি, পরামর্শ সভা (মুজলিসে শূরা)’র মতানুসারে প্রশাসনিক কাঠামো ও কার্যক্রম গ্রহণ, সাক্ষ্য, একতা, মুসলিম ভ্রাতৃত্বের আদর্শে জনকল্যাণমূলক ব্যবস্থা প্রবর্তন, খলীফা উনার কার্যে জনগণের গঠনমূলক পরামর্শ দেয়ার অধিকার, খলীফা উনার জবাবদিহিতা ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য। নিচে উনার খিলাফতী কার্যক্রমের প্রধান কিছু দিক উপস্থাপনা করা হলো:
মজলিসে সূরা বিভাগ:
আমিরুল মুমিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি শাসনব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সর্বোচ্চ ইসলামী আদর্শের ব্যক্তিদ্বারা মজলিসে শূরা বা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন। এই উপদেষ্টা পরিষদ আবার দু’ভাগে বিভক্ত করেছিলেন। যথা- মজলিসে খাছ (উচ্চপরিষদ) ও মজলিসে আম (সাধারণ পরিষদ) মজলিসে খাছ উনার নিকট থেকে দৈনন্দিন কার্যকলাপের পরামর্শ গ্রহণ করতেন। কিছুসংখ্যক বিশিষ্ট মুহাজিরীন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে মজলিসে খাছ বা উচ্চপরিষদ গঠন করেছিলেন। এ পরিষদের সদস্য ছিলেন হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম প্রমুখ সম্মানিত বয়োজ্যেষ্ঠ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। আর আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বাধিক সম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের দ্বারা মজলিসে আম বা সাধারণ পরিষদ গঠন করেছিলেন।
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ঘোষণা করেন, “পরামর্শ ব্যতীত কোনো শাসনব্যবস্থা চলতে পারে না।”
মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে মজলিসে শূরার সভা বসাতেন এবং সাধারণ পরিষদ, সৈন্য ও কর্মচারী, শাসনকর্তা, বিচারক নিয়োগ ও বদলী এবং ব্যবসাসংক্রান্ত ব্যাপারে খলীফা সর্বদা মজলিসে শূরার পরামর্শ গ্রহণ করতেন। বিশেষ করে আদমশুমারীর প্রতিবেদন অনুযায়ী সমস্ত এলাকাতে কখন কি কি বিষয় চাহিদা বা প্রয়োজন বা সমস্যা এবং কি পরিমাণ দেয়া যায়, কিভাবে তা মেটানো যায়, কিভাবে সমস্যা সমাধান করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতেন এবং বাস্তবায়ন করতেন।
প্রদেশে বিভক্তীকরণ ও শাসনকর্তা নিয়োগ:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি শাসনব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্যকে ১৪টি প্রদেশে বিভক্ত করেন। যথা: মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ, সিরিয়া, আলজেরিয়া, বসরা, কূফা, মিসর, প্যালেস্টাইন, ফারস, কিরমান, মাকরান, খোরাসান, সিজিস্তান ও আজরবাইজান। শাসনব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের ফলে দূরবর্তী অঞ্চলেও সুষ্ঠুভাবে ইসলামী শাসনব্যবস্থার নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিটি প্রদেশকে জেলা ও মহকুমায় বিভক্ত করা হয়। প্রদেশের শাসনকর্তাকে ওয়ালী বা আমীরে শো’বা এবং জেলার শাসনকর্তাকে আমীন বলা হতো।
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মজলিসে শূরা বা উপদেষ্টা পরিষদের সাথে পরামর্শ করে সর্বোচ্চ ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রদেশের শাসনকর্তা ও জেলার শাসনকর্তা নিয়োগ করতেন। উনারা তাদের কার্যের জন্য আমিরুল মুমিনীন উনার নিকট দায়ী থাকতেন। প্রতি বছর হজ্জ পালনের সময় শাসনকর্তাগণ পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ আগমন করে উনাদের কার্যকলাপের বিবরণ এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রদান করতেন। তাছাড়া প্রাদেশিক সরকারের কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন কর্মচারী নিযুক্ত করতেন। যেমন কাজী (বিচারক), কাতিব (প্রধান উপদেষ্টা), কাতিব উল দিওয়ান (প্রধান সামরিক উপদেষ্টা), ছাহিব উল খারাজ (রাজস^ উপদেষ্টা), ছাহিব উল আহদাত (পুলিশ উপদেষ্টা), ছাহিব উল বাইতুল মাল (কোষাধ্যক্ষ) ইত্যাদি।
বেতন- ভাতা বিভাগ:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করেই ক্ষান্ত ছিলেন না। বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, মেধা এবং তাক্বওয়া-পরহেজগারী ও সম্মানিত বিশেষ ব্যক্তি অনুসারে বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে দেন। তিনি বয়স্ক ভাতারও প্রচলন করেন। এজন্য আলাদ একটা বায়তুলমাল বিভাগ করেছিলেন, যেখান থেকে সবাইকে বেতন-ভাত দেয়া হত। তাছাড়া দুর্নীতি এবং অনিয়ম প্রতিরোধের জন্যও তিনি কার্যকর পদক্ষেপ নেন। প্রাদেশিক শাসনকর্তাকে সর্বোচ্চ ৫০০০ দিরহাম পর্যন্ত বেতন-ভাতা দিতেন। এমন বেতন-ভাতা দিতেন যে সবাই সবার বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট ছিলেন।
সামরিক বিভাগ:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী ও সুসংহত করার জন্য ৯টি সামরিক বিভাগ বা জুনদ বা ক্যান্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। যথা- মদীনা শরীফ, কূফা, বসরা, ফুসতাত, মিসর দামেস্ক, হিমস, প্যালেস্টাইন ও মসুল। এই ৯টি সামরিক ঘাঁটিতে সর্বদা ৪০০০ অশ্ব এবং ৩৬০০০ অশ্বারোহী সৈন্য প্রস্তুত রাখা হতো। মুসলিম সৈন্যবাহিনী পদাতিক, অশ্বারোহী, তিরন্দাজ, বাহক ও সেবক প্রভৃতি বিভিন্ন শ্রেণী নিয়ে গঠন করেছিলেন। সৈন্যবাহিনীকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একজন বিশেষ বিচক্ষণ ব্যক্তি নিযুক্ত হতেন। তিনি আমীর নামে পরিচিত ছিলেন এবং তিনি উনার কার্যাবলীর জন্য সম্মানিত খলীফা উনার নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকতেন। দুটি বাহিনী একত্রে যুদ্ধযাত্রা করলে উনার দায়িত্ব পালন করতেন একজন সিপাহসালার। একটি সৈন্যবাহিনী কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করেছিলেন এবং এক একটি ‘কায়দ’-এর বা ব্রিগ্রেড-এর অধীনে যুদ্ধ করতেন। এভাবে এক একটি সৈন্যবাহিনীতে দশটি কায়েদের বাহিনী রাখাতেন। প্রতিটি কায়েদের বাহিনীতে একশত সৈন্য কর্মরত রেখেছিলেন। প্রতিটি কায়েদ আবার কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপদলে বিভক্ত করেছিলেন। দশজন সৈন্য নিয়ে গঠিত এ উপদলটির নেতৃত্ব দিতেন এক একজন আমীর উল আশ-রাহ। সৈন্যরা লৌহ নির্মিত তরবারি, বর্শা, বল্লম, তীর-ধনুক, শিরস্ত্রাণ ব্যবহার করতেন। সৈন্যদের নিয়মানুবর্তিতা, আনুগত্য, যুদ্ধস্পৃহা, সুন্নতী পেশাকসহ বিশেষভাবে ইসলামী আদর্শ মানার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখাতেন। রণক্ষেত্রে উনারা অগ্র, মধ্য, পশ্চাৎ ও দুই পার্শ্ব এভাবে বিভক্ত হয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতেন। সৈন্যদের প্রারম্ভিক বেতন ছিল প্রথম বৎসরে ২০০ এবং পরে ৩০০ দিরহাম। খোরাক ও সুন্নতী জিহাদীপোশাক উনারা বিনামূল্যে পেতেন এবং উনাদের পরিবারও কোষাগার থেকে ভাতা লাভ করতেন। সৈন্যদের ফ্রি চিকিৎসা ও স^াস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের জন্য সর্বপ্রকার সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখতেন।
বিচার বিভাগ ও ক্বাযী নিয়োগ:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বিচার বিভাগের গঠন এবং উন্নতি বহুলাংশে প্রশাসনিক মেধার জন্য সম্ভবপর করেছিলেন। বিচারব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তিনি প্রত্যেক প্রদেশে একজন প্রধান ক্বাযী (ক্বাযী-উল কুযাত বা প্রধান বিচারক) এবং প্রত্যেক জেলায় একজন ক্বাযী নিযুক্ত করেন। পূর্বে প্রাদেশিক গভর্নর (ওয়ালী) বিচার বিভাগের কার্যাবলীর পরিচালনা করতেন। ইসলামী আদর্শে আদর্শবান, নিষ্কলুষ চরিত্র, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নৈতিক শক্তিকে বলীয়ান, সুস্থ, শিক্ষিত ও শরীয়ত উনার সম্যক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের খলীফা মজলিসে শূরার সাথে পরামর্শ করে বিচারক বা ক্বাযী নিযুক্ত করতেন। ক্বাযী বা বিচারকদের দুর্নীতি ও প্রলোভন থেকে দূরে রাখার জন্য যোগ্যতানুসারে উচ্চাহারে বেতন দিতেন এবং নির্ভয়ে ও নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য পরিচালনার জন্য খলীফা সর্বপ্রকার আশ্বাস প্রদান করতেন। বিচারের জন্য কোনো প্রকার ফি প্রদান করতে হতো না এবং মসজিদে সাধারণত মজলিশের সভা অনুষ্ঠিত হতো। পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস অনুসারে ইসলামী বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যাক্তিদের মতামত মোতাবেক বিচার পরিচালিত হতো।
কুফা, বসরা, দামেস্ক ও হিমসের জন্য বিশেষ বিচারক নিযুক্ত করেছিলেন। খলীফা বিচার বিভাগের সর্বময় ব্যক্তি ছিলেন এবং প্রয়োজনে নিম্ন আদালতের রায় পুনর্বিবেচনা করতেন। বিধর্মীদের বিচারকার্য তাদের নিজস্ব অনুশাসনে পরিচালিত করার ব্যবস্থা রেখেছিলেন।
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কাছে ধনী-দরিদ্র, উচু”-নীচু সকলেই সমান ছিলেন। কোনো নিকটাত্মীয় কোনো অন্যায় করলে উনাকেওে কঠোর শাস্তি দিতে দ্বিধা করেননি। তিনি স^ীয় পুত্র হযরত আবু সামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেও ৮০টি বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ বিভাগ:
খুলাফায়ে রাশিদীন উনাদের প্রথম দিকে কোনো স^তন্ত্র পুলিশ বিভাগ রাখেননি। অপরাধমূলক কার্যকলাপ রোধ করে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সর্বপ্রথম একটি সুগঠিত পুলিশ বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। এই বাহিনীর কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দিওয়ান আল আহদাত নামে একটি পুলিশ বিভাগের সূচনা করেন। চুরি, ডাকাতি বন্ধ করা, ওজন পরীক্ষা, মাদকদ্রব্য বিক্রয় বন্ধ ও অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা পুলিশ বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব ছিল। পুলিশ প্রধানের নাম রেখেছিলেন ছাহেব উল আহদাত।
কারাগার প্রতিষ্ঠা:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার শাসনের অন্যতম প্রধান কৃতিত্ব ছিল কারাগার প্রতিষ্ঠা। গাফওয়ান বিন উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাসস্থান ৪০০ দিরহামে ক্রয় করে তিনি একে প্রথম জেলখানায় রূপান্তরিত করেন। মদীনা শরীফে কেন্দ্রীয় কারাগার বা জেলখানা ব্যতীত প্রত্যেক প্রাদেশিক রাজধানী ও জেলায় একটি করে কারাগার নির্মাণ করেন। সেখানে পর্যাপ্ত প্রহরী, খাবার, ইবাদতের জায়গাসহ দরকারী সব জিনিস মজুদ রাখতেন। কোনোও অপরাধী প্রাপ্যের অতিরিক্ত কষ্ট যাতে পেতে না হয়ে তার সব ব্যবস্থা রেখেছিলেন। উনার খিলাফতকালে তিনি সর্বপ্রথম নির্বাসন দ- প্রবর্তিত হয়।
গোয়েন্দা বিভাগ:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার শাসন ব্যবস্থাকে ইসলামী আদর্শযুক্ত, শত্রুমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, সঠিক বিচার-ব্যবস্থার জন্য তিনি গোয়েন্দা বিভাগ প্রবর্তন করেন। প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান লাভ করার জন্য গোয়েন্দা নিযুক্ত করেন এবং উনাদের মাধ্যমে খলীফা খিলাফতী কর্মচারীদের উপর কঠোর দৃষ্টি রাখতে সক্ষম হন। কোথাও কোনো অনিয়ম বা অসুবিধা সৃষ্টি হলে সাথে সাথে খলীফা উনাকে অভিহত করতেন গোয়েন্দারা।
রাজস^ আদায় ও হিসাব বিভাগ:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ইসলামী খিলাফতের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজস্ব ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। সুষ্ঠু কর প্রদানের মাধ্যমে খিলাফতের অর্থনৈতিক অচলাবস্থা দূর করে স্থিতিশীল ও বলিষ্ঠ প্রাশাসনিক কাঠামো গঠনের জন্য তিনিই প্রথম দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। খিলাফতের আয়-ব্যয়ের হিসেব ঠিক রাখার জন্য তিনি ‘দিওয়ান’ নামে একটি রাজস্ব বিভাগ প্রবর্তন করেন। খিলাফতের রাজস^ উৎস ছিল যাকাত, খারাজ, জিজিয়া, ফসলের উশর, আলফে, গনিমাহ, আল উশর ও হিমা।
কৃষিকাজ: খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কৃষির উন্নতির জন্য অগ্রিম ঋণ দেয়ার প্রথা প্রবর্তন করেন। তিনি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য অগ্রিম খিলাফতী ঋণ দেয়ার প্রথা প্রবর্তন করেন। তিনি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির উন্নতিকল্পে আইন বিন্যাস্ত করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার ব্যাপক প্রয়াস চালান। কৃষির উন্নতির জন্য তিনি খাল খনন ও বাঁধ নির্মাণ করেন। তিনি কৃষিকাজ, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য আরব ও মিসরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেন এবং বাণিজ্য শুল্ক লাঘব করেন। পারসিক ও রোমান শাসনামলে যারা জমিজমা হতে বঞ্চিত হয়েছিল খলীফা তাদের সেসব জমিজমা ফিরিয়ে দিয়ে তাদের কৃষিকাজ করার সুযোগ দান করেন। যেখানে ফসল উৎপদন কম হতো সেখানে বেশি উৎপদিত এলাকা থেকে দ্রত খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতেন। যার জন্য কোথাও খাদ্য সঙ্কট হতো না।
আদমশুমারি ও জরিপ:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি জাতীয় অর্থের সুষ্ঠু বণ্টনের জন্য সর্বপ্রথম লোকগণনা বা আদমশুমারি ও জরিপের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মূলত সব বিষয়ে সুষম বণ্টনকার্য সম্পন্ন করার জন্য একটি আদমশুমারির প্রয়োজন হয় এবং পৃথিবীর ইতিহাসে দেশীয় রাজস^ বণ্টনের ক্ষেত্রে এটাই সর্বপ্রথম লিপিবদ্ধ আদমশুমারি। আদমশুমারির মূল উদ্দেশ্য ছিলো:
১. কোথায় কি পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হয়, কোথায় খাদ্য কম বা বেশি আছে, কি পরিমাণ খাদ্য দরকার প্রভৃতি নির্ণয় করা।
২. মোট চাষাবাদের জমির পরিমাণ কতটুকু, বর্তমানে চাষবাদ কতটুকু করা হচ্ছে, বাকিগুলো জমিতে চাষাবাদ না হওয়ার কারণ, কি পরিমাণ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব এবং এখন কি পরিমাণ দরকার প্রভৃতি নির্ণয় করা।
৩. মোট জনসংখ্যা কত, কোন কোন প্রদেশে, জেলায়, মহকুমায় কি পরিমাণ মানুষ বেশি/কম আছে বা জন বসতি বেশি/কম আছে, কেন বেশি/কম, সুষম বণ্টন করতে কি কি দরকার প্রভৃতি নির্ণয় করা।
৪. কোন প্রদেশে, জেলায়, মহকুমায় মসজিদ-মাদরাসা-মক্তব কি পরিমাণ বা বেশি বা কম আছে, কতগুলো কোথায় লাগবে, ইমাম-মুয়াজ্জিন-মুয়াল্লিম বেশি, না কম আছে প্রভৃতি নির্ণয় করা।
৫. রাস্তা-ঘাট-পুল-খাল বা নদী-নালা কোথায় কি পরিমাণ বেশি/কম আছে প্রভৃতি নির্ণয় করা।
৬. শিক্ষা ও চিকিৎসাকেন্দ্র, প্রশাসনিক ভবন, বিভিন্ন মজলিসে সূরার ভবন, ক্বাযীর ভবন প্রভৃতি কি পরিমাণ বেশি বা কম আছে তা নির্ণয় করা।
৭. খিলাফতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ কোথায় কি পরিমাণ বা বেশি/কম আছে তা নির্ণয় করা।
৮. খিলাফতের আওতায় কি পরিমাণ বিধর্মী আছে, কোন কোন ধর্ম কি পরিমাণ লোক পালন করে তা নির্নয় করা।
৯. যাকাত-উশর, কর বা জিযিয়া কর কোথায় কি পরিমাণ আদায় হয় বা হয় না তা নির্ণয় করা।
১০. কোন প্রদেশে, জেলায়, মহকুমায় শিক্ষার হার তথা আলিম, ত্বলিবে ইলম, মূর্খ বা অশিক্ষিত কি পরিমাণ আছে তা নির্নয় করা।
এরকম শত শত বিষয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম আদমশুমারি ও জরিপ করেন খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি। খিলাফতের রাজধানী বা প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রশাসনিক কাজে পবিত্র মদীনা শরীফ ব্যবহার করতেন। অন্যান্য বিষয় প্রদেশ, জেলা, মহকুমায় প্রায় সমহারে রাখতেন। এক প্রদেশ, জেলায়, মহকুমায় সবাই ভিড় লাগাতে পারতেন না। প্রয়োজনও হতো না। কেননা সব জায়গায় সমান হারে সব কিছু রেখেছিলেন তিনি। যা সত্যি পৃথিবীর ইতিহাসে একক এবং অদ্বিতীয়।
জনহিতকর কাজ:
জনহিতকর কার্যাবলী ছিল খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার শাসনব্যবস্থার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। উনার শাসনামলে অসংখ্য মসজিদ, জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র তথা মাদরাসা-মক্তব, লঙ্গরখানা, হাম্মামখানা, খাল, রাস্তা, সেতু, দুর্গ, হাসপাতাল প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক ও প্রশাসনিক ভবন বিভিন্ন জেলায় জেলায় এমনকি মহল্লায় মহল্লায় গড়ে উঠে। সব জায়গায় প্রায় সমহারে সব বিষয়গুলি রাখতেন। কিছু দূর দূর রাস্তার পথচারীর জন্য পানি এবং বিশ্রাম নেয়ার মতো ব্যবস্থা রেখেছিলেন পুরো খিলাফতী এলাকা জুড়ে। জনগণের পানির অসুবিধা দূর করার জন্য তিনি টাইগ্রীস নদী হতে বসরা পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ মাইল খাল খনন করেন। এছাড়া সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য খাল ছিল আমিরুল মুমেনীন খাল। লোহিত সাগর থেকে নীলনদের সংযোগ রক্ষাকারী এ খাল ব্যবসা-বাণিজ্যের পথকে সুগম করেছিলেন। তিনি কুফা, বসরা ও ফুসতাত নামে তিনটি নতুন শহরের ভিত্তি স্থাপন করেন। এই তিনটি শহর পরবর্তীকালে বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ কেন্দ্রে পরিণত হয়।
উদাহরণস্বরূপ: সেসময় ফুসতাত শহরে ৩৬টি মসজিদ, ৮০০ সড়ক এবং ১১৭০টি গোসলখানা (হাম্মামখানা) করেছিলেন। তিনি প্রতিটি শহরে চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য হাসপতাল গড়ে তুলেছিলেন।
জনসাধারণের খোঁজে রাতের আঁধারে উষর মরু পথে:
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সম্মানিত জনগণের কল্যাণে তিনি সর্বদাই নিয়োজিত থাকতেন। জনসাধারণের অবস্থা চাক্ষুস দেখার জন্য তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অলিতে গলিতে রাতের আঁধারে ঘুরে বেড়াতেন এবং অসহায় মানুষের কাছে নিজ হাতে সাহায্য পৌঁছে দিতেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এর কোনোও নজির নেই। পারবে না কোনোও রাজা-বাদশাহ এই কাজের উদাহরণ হতে।
হিজরী সন গণনা শুরু:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সর্বপ্রথম হিজরী সনের প্রবর্তন করেন। হিসাব-নিকাশ ও অন্যন্য কাজের জন্য যা অত্যন্ত দরকারী বিষয়। আজকে একটি সন ছাড়া চলেই না। আর এটা তিনিই প্রথম উপহার দিয়েছিলেন।
সংরক্ষিত আরবভূমি:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার শাসনব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল সম্মানিত আরব ভুমিকে অক্ষুণœ রাখা। সম্মানিত আরব জাতির বৈশিষ্ট্য ইসলামী আদর্শের প্রতি দৃঢ়তা বজায় রাখার জন্য তিনি প্রধানত দুটি নীতি অনুসরণ করেন। প্রথমত, সম্মানিত আরব উপদ্বীপকে সম্পূর্ণরূপে আরব মুসলমানগণ উনাদের বাসভূমিতে পরিণত করার জন্য শত্রুভাবাপন্ন ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে সম্মানিত আরব দেশের বাইরে বসবাসের নির্দেশ দেন। দ্বিতীয়ত, সম্মানিত খলীফা উনার মুবারক নির্দেশ ছাড়া আরবদেশের বাইরে মুসলিম সৈন্যদের জমি ক্রয় এবং চাষাবাদ নিষিদ্ধ করেছিলেন।
সৈন্যদের সেনানিবাসে অবস্থান করতে হতো যাতে উনাদের যুদ্ধস্পৃহা এবং মুসলিম জাতিগত বিশুদ্ধতা, সামরিক প্রাধান্য ও আভিজাত্যতা অক্ষুণœ থাকে। এভাবে খলীফা মুসলিম বাহিনীকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জিহাদপ্রিয় জাতিতে পরিণত করতে এবং সম্মানিত ইসলাম উনাকে আরবভূখ-ে এক শক্তিশালী দ্বীন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং সম্মানিত আরব ভূমিকে এককভাবে ইসলামী ব্যবস্থার আদর্শে পরিণত করতে সমর্থ হন।
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মসজিদে নববী শরীফ উনার সম্প্রসারণ ও সংস্কার করেন। উনার সময়ে পবিত্র কা’বা গৃহের পুনঃনির্মাণ করা হয়। মজলিসে শূরা কর্তৃক নির্ধারিত ভাতাতেই সমস্ত সংস্কারমূলক কাজ করতেন।
বিলাদত শরীফ:
খলীফায়ে ছানী, ফারূক্বে আ’যম, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ, ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার পবিত্র বিছাল শরীফ বা পবিত্র শাহাদাত শরীফ গ্রহণ করেন। উনার মূল নাম মুবারক হচ্ছে হযরত উমর আলাইহিস সালাম। উপনাম মুবারক আবূ হাফ্স্। বিশেষ উপাধি ফারূক্ব। সম্মানিত পিতা উনার নাম মুবারক খত্তাব। সম্মানিত মাতা উনার নাম মুবারক খাতনা মতান্তরে হানতামা বিনতে হাশিম ইবনে মুগিরা। উনার ৮ম পুরুষের ক্রমধারা এসে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে মিলে যায়। তিনি কুরাইশ বংশের দ্বিতীয় শাখা বনু আদী গোত্রভুক্ত ছিলেন। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফায়ে ছানী হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র হিজরত উনার প্রায় ৪০ বছর পূর্বে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণের প্রায় ১৩ বছর পর ৫৮৩ ঈসায়ী সনে যমীনে পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন অর্থাৎ আগমন করেন। তিনি গৌরবর্ণ, দীর্ঘকায় এবং স্থূলদেহী ছিলেন। বাম হাত মুবারক দ্বারা তিনি ডান হাত মুবারক উনার ন্যায়ই কাজ করতে পারতেন। তিনি ধাবমান ঘোড়ার পিঠে লাফ দিয়ে আরোহণ করতে পারতেন। তিনি জাহেলী যুগে ‘উকাজ’ মেলায় মল্লভূমিতে কুস্তিও লড়তেন। সুবহানাল্লাহ!
ইসলাম গ্রহন:
খলীফায়ে ছানী, ফারূক্বে আ’যম, আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাস উনার ২৭ তারিখ, ইয়াওমুস সাবতি বা শনিবার পবিত্র বিছাল শরীফ বা পবিত্র শাহাদাত শরীফ গ্রহণ করেন। উনার মূল নাম মুবারক হচ্ছে হযরত উমর আলাইহিস সালাম। উপনাম মুবারক আবূ হাফ্স্। বিশেষ উপাধি ফারূক্ব। সম্মানিত পিতা উনার নাম মুবারক খত্তাব। সম্মানিত মাতা উনার নাম মুবারক খাতনা মতান্তরে হানতামা বিনতে হাশিম ইবনে মুগিরা। উনার ৮ম পুরুষের ক্রমধারা এসে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে মিলে যায়। তিনি কুরাইশ বংশের দ্বিতীয় শাখা বনু আদী গোত্রভুক্ত ছিলেন। আমীরুল মু’মিনীন, খলীফায়ে ছানী হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র হিজরত উনার প্রায় ৪০ বছর পূর্বে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণের প্রায় ১৩ বছর পর ৫৮৩ ঈসায়ী সনে যমীনে পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন অর্থাৎ আগমন করেন। তিনি গৌরবর্ণ, দীর্ঘকায় এবং স্থূলদেহী ছিলেন। বাম হাত মুবারক দ্বারা তিনি ডান হাত মুবারক উনার ন্যায়ই কাজ করতে পারতেন। তিনি ধাবমান ঘোড়ার পিঠে লাফ দিয়ে আরোহণ করতে পারতেন। তিনি জাহেলী যুগে ‘উকাজ’ মেলায় মল্লভূমিতে কুস্তিও লড়তেন। সুবহানাল্লাহ!
খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন:
খলীফাতু রসূলিল্লাহ হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণের পর হিজরী ১৩ সালের ২৩শে পবিত্র জুমাদাল উখ্রা শরীফ সম্মানিত খিলাফত উনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। উনার খিলাফতকাল সর্বমোট ১০ বছর ৬ মাস স্থায়ী হয়। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সামরিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক এবং আইন বিভাগসহ দেশ পরিচালনার সমস্ত নিয়ম-পদ্ধতি অনুসরণ করে বিশ্বের কাফিরেরা তাদেরটা সাজিয়েছে কিন্তু মুসলমান দেশগুলো হীনমন্যতায় ভুগছে।
ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার রূপকার হিসেবে সামান্যকিছু মুবারক অবদান আলোচনা:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার শাসনব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল ইসলামী হুকুমত ব্যবস্থাপনা। সম্প্রসারিত এক বিশাল মুসলিম খিলাফতী শাসনব্যবস্থাকে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ উনাদের নির্দেশ অনুসারে পরিচালনা করার জন্য তিনি সামরিক, প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক এবং আইন বিভাগের কাঠামেতে পূর্ণাঙ্গ রূপ করেন; এমন কিছু বিষয় প্রবর্তন করেন যা মানুষ কল্পনা করতে পারে না। তিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক এবং উনার সম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে সমস্ত সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস হিসবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দেখিয়ে দিয়েছেন।
তিনি রক্তচোষা গণতন্ত্র, রাজতন্ত্রের পরিবর্তে ইসলামী সর্বোচ্চ আদর্শের ভিত্তিতে খলীফা নিযুক্তি, পরামর্শ সভা (মুজলিসে শূরা)’র মতানুসারে প্রশাসনিক কাঠামো ও কার্যক্রম গ্রহণ, সাক্ষ্য, একতা, মুসলিম ভ্রাতৃত্বের আদর্শে জনকল্যাণমূলক ব্যবস্থা প্রবর্তন, খলীফা উনার কার্যে জনগণের গঠনমূলক পরামর্শ দেয়ার অধিকার, খলীফা উনার জবাবদিহিতা ইসলামী খিলাফত ব্যবস্থার প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য। নিচে উনার খিলাফতী কার্যক্রমের প্রধান কিছু দিক উপস্থাপনা করা হলো:
মজলিসে সূরা বিভাগ:
আমিরুল মুমিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি শাসনব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সর্বোচ্চ ইসলামী আদর্শের ব্যক্তিদ্বারা মজলিসে শূরা বা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেন। এই উপদেষ্টা পরিষদ আবার দু’ভাগে বিভক্ত করেছিলেন। যথা- মজলিসে খাছ (উচ্চপরিষদ) ও মজলিসে আম (সাধারণ পরিষদ) মজলিসে খাছ উনার নিকট থেকে দৈনন্দিন কার্যকলাপের পরামর্শ গ্রহণ করতেন। কিছুসংখ্যক বিশিষ্ট মুহাজিরীন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে মজলিসে খাছ বা উচ্চপরিষদ গঠন করেছিলেন। এ পরিষদের সদস্য ছিলেন হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, হযরত তালহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম প্রমুখ সম্মানিত বয়োজ্যেষ্ঠ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা। আর আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্বাধিক সম্মানিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের দ্বারা মজলিসে আম বা সাধারণ পরিষদ গঠন করেছিলেন।
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ঘোষণা করেন, “পরামর্শ ব্যতীত কোনো শাসনব্যবস্থা চলতে পারে না।”
মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে মজলিসে শূরার সভা বসাতেন এবং সাধারণ পরিষদ, সৈন্য ও কর্মচারী, শাসনকর্তা, বিচারক নিয়োগ ও বদলী এবং ব্যবসাসংক্রান্ত ব্যাপারে খলীফা সর্বদা মজলিসে শূরার পরামর্শ গ্রহণ করতেন। বিশেষ করে আদমশুমারীর প্রতিবেদন অনুযায়ী সমস্ত এলাকাতে কখন কি কি বিষয় চাহিদা বা প্রয়োজন বা সমস্যা এবং কি পরিমাণ দেয়া যায়, কিভাবে তা মেটানো যায়, কিভাবে সমস্যা সমাধান করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করতেন এবং বাস্তবায়ন করতেন।
প্রদেশে বিভক্তীকরণ ও শাসনকর্তা নিয়োগ:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি শাসনব্যবস্থাকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিশাল মুসলিম সাম্রাজ্যকে ১৪টি প্রদেশে বিভক্ত করেন। যথা: মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ, সিরিয়া, আলজেরিয়া, বসরা, কূফা, মিসর, প্যালেস্টাইন, ফারস, কিরমান, মাকরান, খোরাসান, সিজিস্তান ও আজরবাইজান। শাসনব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের ফলে দূরবর্তী অঞ্চলেও সুষ্ঠুভাবে ইসলামী শাসনব্যবস্থার নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিটি প্রদেশকে জেলা ও মহকুমায় বিভক্ত করা হয়। প্রদেশের শাসনকর্তাকে ওয়ালী বা আমীরে শো’বা এবং জেলার শাসনকর্তাকে আমীন বলা হতো।
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মজলিসে শূরা বা উপদেষ্টা পরিষদের সাথে পরামর্শ করে সর্বোচ্চ ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রদেশের শাসনকর্তা ও জেলার শাসনকর্তা নিয়োগ করতেন। উনারা তাদের কার্যের জন্য আমিরুল মুমিনীন উনার নিকট দায়ী থাকতেন। প্রতি বছর হজ্জ পালনের সময় শাসনকর্তাগণ পবিত্র মক্কা শরীফ ও পবিত্র মদীনা শরীফ আগমন করে উনাদের কার্যকলাপের বিবরণ এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রদান করতেন। তাছাড়া প্রাদেশিক সরকারের কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন কর্মচারী নিযুক্ত করতেন। যেমন কাজী (বিচারক), কাতিব (প্রধান উপদেষ্টা), কাতিব উল দিওয়ান (প্রধান সামরিক উপদেষ্টা), ছাহিব উল খারাজ (রাজস^ উপদেষ্টা), ছাহিব উল আহদাত (পুলিশ উপদেষ্টা), ছাহিব উল বাইতুল মাল (কোষাধ্যক্ষ) ইত্যাদি।
বেতন- ভাতা বিভাগ:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি প্রশাসনিক কাঠামো গঠন করেই ক্ষান্ত ছিলেন না। বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, মেধা এবং তাক্বওয়া-পরহেজগারী ও সম্মানিত বিশেষ ব্যক্তি অনুসারে বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে দেন। তিনি বয়স্ক ভাতারও প্রচলন করেন। এজন্য আলাদ একটা বায়তুলমাল বিভাগ করেছিলেন, যেখান থেকে সবাইকে বেতন-ভাত দেয়া হত। তাছাড়া দুর্নীতি এবং অনিয়ম প্রতিরোধের জন্যও তিনি কার্যকর পদক্ষেপ নেন। প্রাদেশিক শাসনকর্তাকে সর্বোচ্চ ৫০০০ দিরহাম পর্যন্ত বেতন-ভাতা দিতেন। এমন বেতন-ভাতা দিতেন যে সবাই সবার বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট ছিলেন।
সামরিক বিভাগ:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী ও সুসংহত করার জন্য ৯টি সামরিক বিভাগ বা জুনদ বা ক্যান্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন। যথা- মদীনা শরীফ, কূফা, বসরা, ফুসতাত, মিসর দামেস্ক, হিমস, প্যালেস্টাইন ও মসুল। এই ৯টি সামরিক ঘাঁটিতে সর্বদা ৪০০০ অশ্ব এবং ৩৬০০০ অশ্বারোহী সৈন্য প্রস্তুত রাখা হতো। মুসলিম সৈন্যবাহিনী পদাতিক, অশ্বারোহী, তিরন্দাজ, বাহক ও সেবক প্রভৃতি বিভিন্ন শ্রেণী নিয়ে গঠন করেছিলেন। সৈন্যবাহিনীকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য একজন বিশেষ বিচক্ষণ ব্যক্তি নিযুক্ত হতেন। তিনি আমীর নামে পরিচিত ছিলেন এবং তিনি উনার কার্যাবলীর জন্য সম্মানিত খলীফা উনার নিকট জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকতেন। দুটি বাহিনী একত্রে যুদ্ধযাত্রা করলে উনার দায়িত্ব পালন করতেন একজন সিপাহসালার। একটি সৈন্যবাহিনী কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করেছিলেন এবং এক একটি ‘কায়দ’-এর বা ব্রিগ্রেড-এর অধীনে যুদ্ধ করতেন। এভাবে এক একটি সৈন্যবাহিনীতে দশটি কায়েদের বাহিনী রাখাতেন। প্রতিটি কায়েদের বাহিনীতে একশত সৈন্য কর্মরত রেখেছিলেন। প্রতিটি কায়েদ আবার কয়েকটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপদলে বিভক্ত করেছিলেন। দশজন সৈন্য নিয়ে গঠিত এ উপদলটির নেতৃত্ব দিতেন এক একজন আমীর উল আশ-রাহ। সৈন্যরা লৌহ নির্মিত তরবারি, বর্শা, বল্লম, তীর-ধনুক, শিরস্ত্রাণ ব্যবহার করতেন। সৈন্যদের নিয়মানুবর্তিতা, আনুগত্য, যুদ্ধস্পৃহা, সুন্নতী পেশাকসহ বিশেষভাবে ইসলামী আদর্শ মানার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখাতেন। রণক্ষেত্রে উনারা অগ্র, মধ্য, পশ্চাৎ ও দুই পার্শ্ব এভাবে বিভক্ত হয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতেন। সৈন্যদের প্রারম্ভিক বেতন ছিল প্রথম বৎসরে ২০০ এবং পরে ৩০০ দিরহাম। খোরাক ও সুন্নতী জিহাদীপোশাক উনারা বিনামূল্যে পেতেন এবং উনাদের পরিবারও কোষাগার থেকে ভাতা লাভ করতেন। সৈন্যদের ফ্রি চিকিৎসা ও স^াস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের জন্য সর্বপ্রকার সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রাখতেন।
বিচার বিভাগ ও ক্বাযী নিয়োগ:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বিচার বিভাগের গঠন এবং উন্নতি বহুলাংশে প্রশাসনিক মেধার জন্য সম্ভবপর করেছিলেন। বিচারব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য তিনি প্রত্যেক প্রদেশে একজন প্রধান ক্বাযী (ক্বাযী-উল কুযাত বা প্রধান বিচারক) এবং প্রত্যেক জেলায় একজন ক্বাযী নিযুক্ত করেন। পূর্বে প্রাদেশিক গভর্নর (ওয়ালী) বিচার বিভাগের কার্যাবলীর পরিচালনা করতেন। ইসলামী আদর্শে আদর্শবান, নিষ্কলুষ চরিত্র, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নৈতিক শক্তিকে বলীয়ান, সুস্থ, শিক্ষিত ও শরীয়ত উনার সম্যক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিদের খলীফা মজলিসে শূরার সাথে পরামর্শ করে বিচারক বা ক্বাযী নিযুক্ত করতেন। ক্বাযী বা বিচারকদের দুর্নীতি ও প্রলোভন থেকে দূরে রাখার জন্য যোগ্যতানুসারে উচ্চাহারে বেতন দিতেন এবং নির্ভয়ে ও নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য পরিচালনার জন্য খলীফা সর্বপ্রকার আশ্বাস প্রদান করতেন। বিচারের জন্য কোনো প্রকার ফি প্রদান করতে হতো না এবং মসজিদে সাধারণত মজলিশের সভা অনুষ্ঠিত হতো। পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও ক্বিয়াস অনুসারে ইসলামী বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যাক্তিদের মতামত মোতাবেক বিচার পরিচালিত হতো।
কুফা, বসরা, দামেস্ক ও হিমসের জন্য বিশেষ বিচারক নিযুক্ত করেছিলেন। খলীফা বিচার বিভাগের সর্বময় ব্যক্তি ছিলেন এবং প্রয়োজনে নিম্ন আদালতের রায় পুনর্বিবেচনা করতেন। বিধর্মীদের বিচারকার্য তাদের নিজস্ব অনুশাসনে পরিচালিত করার ব্যবস্থা রেখেছিলেন।
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কাছে ধনী-দরিদ্র, উচু”-নীচু সকলেই সমান ছিলেন। কোনো নিকটাত্মীয় কোনো অন্যায় করলে উনাকেওে কঠোর শাস্তি দিতে দ্বিধা করেননি। তিনি স^ীয় পুত্র হযরত আবু সামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকেও ৮০টি বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেন।
পুলিশ বিভাগ:
খুলাফায়ে রাশিদীন উনাদের প্রথম দিকে কোনো স^তন্ত্র পুলিশ বিভাগ রাখেননি। অপরাধমূলক কার্যকলাপ রোধ করে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সর্বপ্রথম একটি সুগঠিত পুলিশ বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। এই বাহিনীর কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দিওয়ান আল আহদাত নামে একটি পুলিশ বিভাগের সূচনা করেন। চুরি, ডাকাতি বন্ধ করা, ওজন পরীক্ষা, মাদকদ্রব্য বিক্রয় বন্ধ ও অবৈধ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা পুলিশ বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব ছিল। পুলিশ প্রধানের নাম রেখেছিলেন ছাহেব উল আহদাত।
কারাগার প্রতিষ্ঠা:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার শাসনের অন্যতম প্রধান কৃতিত্ব ছিল কারাগার প্রতিষ্ঠা। গাফওয়ান বিন উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বাসস্থান ৪০০ দিরহামে ক্রয় করে তিনি একে প্রথম জেলখানায় রূপান্তরিত করেন। মদীনা শরীফে কেন্দ্রীয় কারাগার বা জেলখানা ব্যতীত প্রত্যেক প্রাদেশিক রাজধানী ও জেলায় একটি করে কারাগার নির্মাণ করেন। সেখানে পর্যাপ্ত প্রহরী, খাবার, ইবাদতের জায়গাসহ দরকারী সব জিনিস মজুদ রাখতেন। কোনোও অপরাধী প্রাপ্যের অতিরিক্ত কষ্ট যাতে পেতে না হয়ে তার সব ব্যবস্থা রেখেছিলেন। উনার খিলাফতকালে তিনি সর্বপ্রথম নির্বাসন দ- প্রবর্তিত হয়।
গোয়েন্দা বিভাগ:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার শাসন ব্যবস্থাকে ইসলামী আদর্শযুক্ত, শত্রুমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, সঠিক বিচার-ব্যবস্থার জন্য তিনি গোয়েন্দা বিভাগ প্রবর্তন করেন। প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান লাভ করার জন্য গোয়েন্দা নিযুক্ত করেন এবং উনাদের মাধ্যমে খলীফা খিলাফতী কর্মচারীদের উপর কঠোর দৃষ্টি রাখতে সক্ষম হন। কোথাও কোনো অনিয়ম বা অসুবিধা সৃষ্টি হলে সাথে সাথে খলীফা উনাকে অভিহত করতেন গোয়েন্দারা।
রাজস^ আদায় ও হিসাব বিভাগ:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ইসলামী খিলাফতের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও মজবুত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাজস্ব ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। সুষ্ঠু কর প্রদানের মাধ্যমে খিলাফতের অর্থনৈতিক অচলাবস্থা দূর করে স্থিতিশীল ও বলিষ্ঠ প্রাশাসনিক কাঠামো গঠনের জন্য তিনিই প্রথম দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। খিলাফতের আয়-ব্যয়ের হিসেব ঠিক রাখার জন্য তিনি ‘দিওয়ান’ নামে একটি রাজস্ব বিভাগ প্রবর্তন করেন। খিলাফতের রাজস^ উৎস ছিল যাকাত, খারাজ, জিজিয়া, ফসলের উশর, আলফে, গনিমাহ, আল উশর ও হিমা।
কৃষিকাজ: খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কৃষির উন্নতির জন্য অগ্রিম ঋণ দেয়ার প্রথা প্রবর্তন করেন। তিনি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য অগ্রিম খিলাফতী ঋণ দেয়ার প্রথা প্রবর্তন করেন। তিনি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির উন্নতিকল্পে আইন বিন্যাস্ত করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করার ব্যাপক প্রয়াস চালান। কৃষির উন্নতির জন্য তিনি খাল খনন ও বাঁধ নির্মাণ করেন। তিনি কৃষিকাজ, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য আরব ও মিসরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেন এবং বাণিজ্য শুল্ক লাঘব করেন। পারসিক ও রোমান শাসনামলে যারা জমিজমা হতে বঞ্চিত হয়েছিল খলীফা তাদের সেসব জমিজমা ফিরিয়ে দিয়ে তাদের কৃষিকাজ করার সুযোগ দান করেন। যেখানে ফসল উৎপদন কম হতো সেখানে বেশি উৎপদিত এলাকা থেকে দ্রত খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা রাখতেন। যার জন্য কোথাও খাদ্য সঙ্কট হতো না।
আদমশুমারি ও জরিপ:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি জাতীয় অর্থের সুষ্ঠু বণ্টনের জন্য সর্বপ্রথম লোকগণনা বা আদমশুমারি ও জরিপের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মূলত সব বিষয়ে সুষম বণ্টনকার্য সম্পন্ন করার জন্য একটি আদমশুমারির প্রয়োজন হয় এবং পৃথিবীর ইতিহাসে দেশীয় রাজস^ বণ্টনের ক্ষেত্রে এটাই সর্বপ্রথম লিপিবদ্ধ আদমশুমারি। আদমশুমারির মূল উদ্দেশ্য ছিলো:
১. কোথায় কি পরিমাণ খাদ্য উৎপাদন হয়, কোথায় খাদ্য কম বা বেশি আছে, কি পরিমাণ খাদ্য দরকার প্রভৃতি নির্ণয় করা।
২. মোট চাষাবাদের জমির পরিমাণ কতটুকু, বর্তমানে চাষবাদ কতটুকু করা হচ্ছে, বাকিগুলো জমিতে চাষাবাদ না হওয়ার কারণ, কি পরিমাণ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব এবং এখন কি পরিমাণ দরকার প্রভৃতি নির্ণয় করা।
৩. মোট জনসংখ্যা কত, কোন কোন প্রদেশে, জেলায়, মহকুমায় কি পরিমাণ মানুষ বেশি/কম আছে বা জন বসতি বেশি/কম আছে, কেন বেশি/কম, সুষম বণ্টন করতে কি কি দরকার প্রভৃতি নির্ণয় করা।
৪. কোন প্রদেশে, জেলায়, মহকুমায় মসজিদ-মাদরাসা-মক্তব কি পরিমাণ বা বেশি বা কম আছে, কতগুলো কোথায় লাগবে, ইমাম-মুয়াজ্জিন-মুয়াল্লিম বেশি, না কম আছে প্রভৃতি নির্ণয় করা।
৫. রাস্তা-ঘাট-পুল-খাল বা নদী-নালা কোথায় কি পরিমাণ বেশি/কম আছে প্রভৃতি নির্ণয় করা।
৬. শিক্ষা ও চিকিৎসাকেন্দ্র, প্রশাসনিক ভবন, বিভিন্ন মজলিসে সূরার ভবন, ক্বাযীর ভবন প্রভৃতি কি পরিমাণ বেশি বা কম আছে তা নির্ণয় করা।
৭. খিলাফতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ কোথায় কি পরিমাণ বা বেশি/কম আছে তা নির্ণয় করা।
৮. খিলাফতের আওতায় কি পরিমাণ বিধর্মী আছে, কোন কোন ধর্ম কি পরিমাণ লোক পালন করে তা নির্নয় করা।
৯. যাকাত-উশর, কর বা জিযিয়া কর কোথায় কি পরিমাণ আদায় হয় বা হয় না তা নির্ণয় করা।
১০. কোন প্রদেশে, জেলায়, মহকুমায় শিক্ষার হার তথা আলিম, ত্বলিবে ইলম, মূর্খ বা অশিক্ষিত কি পরিমাণ আছে তা নির্নয় করা।
এরকম শত শত বিষয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম আদমশুমারি ও জরিপ করেন খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি। খিলাফতের রাজধানী বা প্রাণকেন্দ্র হিসেবে প্রশাসনিক কাজে পবিত্র মদীনা শরীফ ব্যবহার করতেন। অন্যান্য বিষয় প্রদেশ, জেলা, মহকুমায় প্রায় সমহারে রাখতেন। এক প্রদেশ, জেলায়, মহকুমায় সবাই ভিড় লাগাতে পারতেন না। প্রয়োজনও হতো না। কেননা সব জায়গায় সমান হারে সব কিছু রেখেছিলেন তিনি। যা সত্যি পৃথিবীর ইতিহাসে একক এবং অদ্বিতীয়।
জনহিতকর কাজ:
জনহিতকর কার্যাবলী ছিল খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার শাসনব্যবস্থার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। উনার শাসনামলে অসংখ্য মসজিদ, জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র তথা মাদরাসা-মক্তব, লঙ্গরখানা, হাম্মামখানা, খাল, রাস্তা, সেতু, দুর্গ, হাসপাতাল প্রভৃতি জনকল্যাণমূলক ও প্রশাসনিক ভবন বিভিন্ন জেলায় জেলায় এমনকি মহল্লায় মহল্লায় গড়ে উঠে। সব জায়গায় প্রায় সমহারে সব বিষয়গুলি রাখতেন। কিছু দূর দূর রাস্তার পথচারীর জন্য পানি এবং বিশ্রাম নেয়ার মতো ব্যবস্থা রেখেছিলেন পুরো খিলাফতী এলাকা জুড়ে। জনগণের পানির অসুবিধা দূর করার জন্য তিনি টাইগ্রীস নদী হতে বসরা পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ মাইল খাল খনন করেন। এছাড়া সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য খাল ছিল আমিরুল মুমেনীন খাল। লোহিত সাগর থেকে নীলনদের সংযোগ রক্ষাকারী এ খাল ব্যবসা-বাণিজ্যের পথকে সুগম করেছিলেন। তিনি কুফা, বসরা ও ফুসতাত নামে তিনটি নতুন শহরের ভিত্তি স্থাপন করেন। এই তিনটি শহর পরবর্তীকালে বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ কেন্দ্রে পরিণত হয়।
উদাহরণস্বরূপ: সেসময় ফুসতাত শহরে ৩৬টি মসজিদ, ৮০০ সড়ক এবং ১১৭০টি গোসলখানা (হাম্মামখানা) করেছিলেন। তিনি প্রতিটি শহরে চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য হাসপতাল গড়ে তুলেছিলেন।
জনসাধারণের খোঁজে রাতের আঁধারে উষর মরু পথে:
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার সম্মানিত জনগণের কল্যাণে তিনি সর্বদাই নিয়োজিত থাকতেন। জনসাধারণের অবস্থা চাক্ষুস দেখার জন্য তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অলিতে গলিতে রাতের আঁধারে ঘুরে বেড়াতেন এবং অসহায় মানুষের কাছে নিজ হাতে সাহায্য পৌঁছে দিতেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এর কোনোও নজির নেই। পারবে না কোনোও রাজা-বাদশাহ এই কাজের উদাহরণ হতে।
হিজরী সন গণনা শুরু:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি সর্বপ্রথম হিজরী সনের প্রবর্তন করেন। হিসাব-নিকাশ ও অন্যন্য কাজের জন্য যা অত্যন্ত দরকারী বিষয়। আজকে একটি সন ছাড়া চলেই না। আর এটা তিনিই প্রথম উপহার দিয়েছিলেন।
সংরক্ষিত আরবভূমি:
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার শাসনব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল সম্মানিত আরব ভুমিকে অক্ষুণœ রাখা। সম্মানিত আরব জাতির বৈশিষ্ট্য ইসলামী আদর্শের প্রতি দৃঢ়তা বজায় রাখার জন্য তিনি প্রধানত দুটি নীতি অনুসরণ করেন। প্রথমত, সম্মানিত আরব উপদ্বীপকে সম্পূর্ণরূপে আরব মুসলমানগণ উনাদের বাসভূমিতে পরিণত করার জন্য শত্রুভাবাপন্ন ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে সম্মানিত আরব দেশের বাইরে বসবাসের নির্দেশ দেন। দ্বিতীয়ত, সম্মানিত খলীফা উনার মুবারক নির্দেশ ছাড়া আরবদেশের বাইরে মুসলিম সৈন্যদের জমি ক্রয় এবং চাষাবাদ নিষিদ্ধ করেছিলেন।
সৈন্যদের সেনানিবাসে অবস্থান করতে হতো যাতে উনাদের যুদ্ধস্পৃহা এবং মুসলিম জাতিগত বিশুদ্ধতা, সামরিক প্রাধান্য ও আভিজাত্যতা অক্ষুণœ থাকে। এভাবে খলীফা মুসলিম বাহিনীকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ জিহাদপ্রিয় জাতিতে পরিণত করতে এবং সম্মানিত ইসলাম উনাকে আরবভূখ-ে এক শক্তিশালী দ্বীন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং সম্মানিত আরব ভূমিকে এককভাবে ইসলামী ব্যবস্থার আদর্শে পরিণত করতে সমর্থ হন।
খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি মসজিদে নববী শরীফ উনার সম্প্রসারণ ও সংস্কার করেন। উনার সময়ে পবিত্র কা’বা গৃহের পুনঃনির্মাণ করা হয়। মজলিসে শূরা কর্তৃক নির্ধারিত ভাতাতেই সমস্ত সংস্কারমূলক কাজ করতেন।
No comments:
Post a Comment