Tuesday, February 11, 2014

গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত বড়পীর ছাহেব শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহে উমরী মুবারক



পবিত্র বিলাদত শরীফ :
সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, আওলাদে রসূল হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৪৭১ হিজরী সনে তৎকালীন ইরানের পবিত্র জিলান নগরে পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। উনার পিতা উনার নাম মুবারক আওলাদে রসূল হযরত সাইয়্যিদ আবু ছালেহ মুসা জঙ্গী দোস্ত রহমতুল্লাহি আলাইহি (যেহেতু তিনি জিহাদ প্রিয় ছিলেন সেহেতু উনাকে জঙ্গী দোস্ত বলা হয়)। খায়ের আমাতুল জাব্বার ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা। তিনি সম্মানিত পিতা উনার দিক থেকে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম এবং সম্মানিতা মাতা উনার দিক থেকে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছালীছ আলাইহিস সালাম উনাদের মুবারক বংশধর। সুবহানাল্লাহ!


সাওয়ানেহে উমরী মুবারক :
আওলাদে রসূল বড়পীর ছাহেব হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ থেকে পবিত্র বিছাল শরীফ পর্যন্ত আমরা যে ওয়াকিয়া বা ইতিহাস দেখতে পাই; তার মধ্যে হাজারো নছীহত বা ইবরত মুবারক রয়ে গেছে।
মূলত, আওলাদে রসূল বড়পীর ছাহেব  হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে পূর্ববর্তী আউলিয়ায়ে কিরামগণ ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন। আওলাদে রসূল এবং হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হযরত ইমাম জাফর ছাদিক আলাইহিস সালাম (যিনি আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ষষ্ঠ ইমাম এবং হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম ছিলেন) তিনি উনার ‘কাশফুল গুয়ূব’ নামক কিতাবে বড়পীর আওলাদে রসূল হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্পর্কে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন।
তিনি বলেন, ১৪৮ হিজরী সনের ১১ই রজব জুমুয়ার রাত্রে আমি যথারীতি পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও যিকির-আযকার করে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখতে পাই, আমি আলমে নাসুত থেকে (পৃথিবী হতে) ঊর্ধ্বারোহণ করে আলমে মালাকুত এবং আলমে মালাকুত থেকে জাবারুতে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখানে এক বিশাল ময়দান দেখতে পেলাম। সেই ময়দানের এক পার্শ্বে মারোয়ারীদ পাথরের একটা তাঁবু টাঙানো। সেখান থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশিষ্ট ছাহাবী ও খাদেম হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমার কাছে এসে বললেন, “হে হযরত ইমাম জাফর ছাদিক আলাইহিস সালাম! মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনাকে ডেকেছেন। আমি সাথে সাথে হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গেলাম। দেখলাম সমস্ত হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের পবিত্র রূহ মুবারক সেখানে উপস্থিত আছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা কাতারবন্দি হয়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। একটা খুব সুন্দর আসনের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বসা অবস্থায় আছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে দেখামাত্র উনার নিকট বসার জন্য ইশারা করলেন। আমি বসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পার্শ্বে এসে বসলেন। ইত্যাবসরে দেখা গেল দুটি রূহ মুবারক এসে হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ডান জানু মুবারক ও বাম জানু মুবারক-এ বসলেন। বসার পর সারওয়ারে কায়িনাত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন: “হে হযরত ইমাম জা’ফর ছাদিক আলাইহিস সালাম! আজ থেকে তিনদিন পর আপনি আমার কাছে চলে আসবেন। আমি চাই আপনি জাবারুতের অবস্থা দর্শন করে তা আলমে নাসুতের মধ্যে লিপিবদ্ধ করে আসেন। একথা বলার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন: আপনি কি জানেন এ রূহ মুবারক দুটি কার? আমার ডান জানু মুবারক-এ যাঁর রূহ মুবারক দেখতে পেলেন তিনি আমার থেকে পাঁচশত বৎসর পর পৃথিবীতে আগমন করবেন। তিনি হলেন গাউছুল আ’যম হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং আমার বাম জানু মুবারক-এ যে রূহটি আছেন তিনি হলেন- হযরত আলী আহমদ ছাবের কালিয়ারী রহমতুল্লাহি আলাইহি। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার এ দুই খাছ মকবুল বান্দা দ্বারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অনেক খিদমত নিবেন। তারপর পার্শ্বে বসে থাকা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনাকে এবং হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে বললেন: আপনাদের শাহাদাত মুবারক উনার পর আমি আমার উম্মতের কথা ভাবি। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার এই দুই মাহবুব বান্দা উনাদের দ্বারা আমাকে সুসংবাদ দান করেন। হযরত ইমাম জা’ফর সাদিক আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি উক্ত স্বপ্ন দেখার পর ঘুম থেকে জেগে উঠলাম এবং সকালে উঠে ‘কাশফুল গুয়ূব’ নামক কিতাবে তা লিপিবদ্ধ করলাম। এই ‘কাশফুল গুয়ূব’ কিতাব তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ লাভের পূর্বেই লিখেছিলেন এবং সত্যিই তিনি তিনদিন পরেই পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)
একবার এক লোক বড়পীর ছাহেব গাউছুল আ’যম হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞেস করলো, হুযূর! আপনি কি মুজাদ্দিদে যামান? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর বলা হলো, আপনি কি সুলত্বানুল আরিফীন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবার বলা হলো, আপনি কি কুতুবুল আলম? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আবার বলা হলো আপনি কি গাউছুল আ’যম? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন সে নিশ্চুপ হয়ে গেল। তিনি বললেন, তোমার কি আর কোনো লক্বব জানা নেই? লোকটি বললো: জ্বি-না, আমার আর কিছু জানা নেই। তখন তিনি বললেন- আমার মর্যাদা তারও উপরে, তারও উপরে, তারও উপরে। সুবহানাল্লাহ!
মোটকথা নবী রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের পর একজন মানুষের পক্ষে যত মাক্বাম অর্জন করা সম্ভব মহান আল্লাহ পাক তিনি গাউছুল আ’যম হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে তা দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! এটা সত্যিই উনার জন্য এক বিশেষ মর্যাদা। (বলা হয়ে থাকে মহান আল্লাহ পাক উনার এমন ওলী কমই অতিবাহিত হয়েছেন, যাঁরা গাউছুল আ’যম হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রূহানী তাওয়াজ্জুহ বা নিছবত হাছিল করেননি)
গাউছুল আ’যম হযরত শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বয়স মুবারক যখন প্রায় সতেরো পার হয়ে আঠার বছর এর কাছাকাছি তখন একবার তিনি আরাফার দিবসে গরু নিয়ে নিজের জমি চাষ করতে যাচ্ছিলেন। এমন সময় সেই গরুটি উনার দিকে ফিরে বলল, হে হযরত আব্দুল ক্বাদির রহমতুল্লাহি আলাইহি! এই কাজের জন্য আপনাকে সৃষ্টি করা হয়নি এবং এই কাজের জন্য আপনাকে আদেশও করা হয়নি।
এই ঘটনায় তিনি চিন্তিত হয়ে বাড়িতে ফিরে গেলেন। এতদিন পর্যন্ত স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যা কিছু শিখেছিলেন তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু শিক্ষার জন্য তিনি বাগদাদ যেতে মনস্থ করলেন। উল্লেখ্য, তিনি মাতৃরেহেম শরীফ থেকে মুখতালিফ বর্ণনা ১৫ থেকে ১৯ পারার হাফিয হয়েই পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। অতঃপর অতি শৈশবেই পূর্ণ পবিত্র কুরআন শরীফ হিফয করেন। সুবহানাল্লাহ!
আওলাদে রসূল হযরত গাউছুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাগদাদে পৌঁছেই তৎকালীন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মাদরাসা নিযামিয়াতে ভর্তি হন। দুনিয়ার বিশিষ্ট উলামায়ে কিরামগণ উনারা এই মাদরাসায় তা’লীম দান করতেন। শ্রেষ্ঠ হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নিকটেই হযরত গাউছুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তাফসীর, হাদীছ, ফিক্বাহ, দর্শন, সাহিত্য, ইতিহাস, তর্কবিদ্যা, ইলমে কালাম, ইলমে উরূজ ইত্যাদি প্রত্যেকটি বিষয়ে খোদা প্রদত্ত তীক্ষè মেধাশক্তি বলে মাত্র প্রায় সাড়ে ৯ বৎসরের মধ্যেই ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। তিনি বাগদাদে শুধু কিতাবী ইলমই অর্জন করেননি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তৎকালীন বাগদাদের শ্রেষ্ঠ ও বিখ্যাত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ছোহবতও ইখতিয়ার করেন। তবে খাছভাবে হযরত আবূ সাঈদ মাখদুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাত মুবারক-এ বাইয়াত গ্রহণ করে, ছোহবত ইখতিয়ার করত: সবক আদায় করে তাছাউফ বা কামালিয়াতের উচ্চ স্তরে পৌঁছেন।
আওলাদে রসূল হযরত গাউছুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ক্রমান্বয়ে চারটি বিবাহ করেছিলেন। উনাকে বিবাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারকে বিবাহ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! উনার মোট ৪৯ জন সন্তান-সন্ততি ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! উনাদের মধ্যে ২৭ জন পুত্র সন্তান এবং ২২ জন মেয়ে সন্তান ছিলেন। উনারা সকলেই অতি উঁচু দরজার ওলীআল্লাহ ছিলেন। উনাদের অনেক বড় বড় সম্মানিত উপাধি বা লক্বব মুবারক ছিল। সুবহানাল্লাহ!
হযরত গাউছুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রায় সারা বৎসরই রোযা থাকতেন। সাধারণ রুটি খেতেন। অনেক সময় খুব মূল্যবান কাপড় পরতেন। অনেক সময় অল্প দামের কাপড়ও পরতেন। অর্থাৎ হযরত গাউছুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ মহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার উঠা-বসা, চলা-ফিরা, কথা-বার্তা, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-সংসার ইত্যাদি প্রতিটি কাজই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণে করতেন। কেননা তিনি ছিলেন খাছ নায়েবে নবী-ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া। সুবহানাল্লাহ!
মূলত, মহান আল্লাহ পাক তিনি আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে, ইচ্ছে করলে উনারা নিক্ষিপ্ত তীরকে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছার পূর্বেই আবার তা ফিরিয়ে আনতে পারেন। সুবহানাল্লাহ!
সেই কারণেই আমরা প্রত্যেক আল্লাহওয়ালা উনাদের জীবনী মুবারক-এ কমবেশি কারামত দেখতে পাই। তদ্রƒপ হযরত গাউছুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনী মুবারকেও আমরা উনার অসংখ্য আশ্চর্য ধরনের কারামত দেখতে পাই। উনার দোয়ার বরকতে অনেক নেক সন্তান জন্মগ্রহণ করেছেন। যাঁরা নাকি পরবর্তীতে অনেক উঁচু পর্যায়ের ওলীআল্লাহ হয়েছেন। উনাদের মধ্যে হযরত শায়েখ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের নাম মুবারক উল্লেখযোগ্য।
ফুরফুরা শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে একবার কিছু লোক আওলাদে রসূল হযরত গাউছুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল ক্বাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে দীর্ঘ ১২ বৎসর পর ডুবে যাওয়া একটি বর যাত্রীদলকে জিন্দা করেন সে কারামতের সত্যতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই আওলাদে রসূল হযরত গাউছুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এই কারামত আমি বিশ্বাস করি। কেননা ‘মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনাদের কারামত সত্য।’ এবং তা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দলীল দ্বারাই প্রমাণিত।
প্রত্যেক চন্দ্রমাসে একজন আরব মেহমানের ছুরতে হযরত গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া শায়েখ সাইয়্যিদ বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট দেখা করতো এবং মাসের মধ্যে ভালো-মন্দ কি ঘটনা ঘটবে তা উনাকে জানাতো। হিজরী ৫৬০ সনের রমযান মাস এসে উনাকে বিদায় সম্ভাষণ জানিয়ে গেল। অর্থাৎ পরবর্তী রমযান মাস পর্যন্ত তিনি এই নশ্বর দুনিয়ায় থাকবেন না।

বিছাল শরীফ :
‘বাহজাতুল আসরার’ নামক কিতাবে হযরত শায়েখ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আওলাদে রসূল হযরত গাউছুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৫৬১ হিজরী সনের রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস হতে কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। ‘তাওয়ারিখে আউলিয়া’ নামক কিতাবে হযরত শায়েখ আব্দুল ফতেহ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইয়াওমুল আহাদ বা রোববার দিবাগত রাত্রে অর্থাৎ লায়লাতুল ইছনাইন বা সোমবার শরীফ রাত্রে আওলাদে রসূল হযরত গাউছুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি গোসল করেন। গোসলান্তে পবিত্র ইশা উনার নামায পড়ে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতগণের গুনাহখতা মাফের জন্য ও তাদের উপর খাছ রহমত নাযিলের জন্য দোয়া করলেন। এরপর গায়েব হতে আওয়াজ আসল, “হে প্রশান্ত নফ্স! আপনি প্রসন্ন ও সন্তুষ্ট চিত্তে নিজ প্রতিপালক উনার দিকে প্রত্যাবর্তন করুন। আপনি আমার নেককার বান্দা উনাদের মধ্যে শামিল হয়ে যান এবং সম্মানিত বেহেশতে প্রবেশ করুন।” এরপর তিনি পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করে তাআজ্জাজা (অর্থ বিজয়ী হওয়া) উচ্চারণ করতে লাগলেন এবং তিনি আল্লাহ আল্লাহ আল্লাহ বললেন। এরপর জিহ্বা মুবারক তালুর সাথে লেগে গেল। এইভাবে ৫৬১ হিজরী সনের (১১১৬ ঈসায়ী) পবিত্র রবীউছ ছানী মাসের ১১ তারিখে মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, আওলাদে রসূল হযরত গাউছুল আ’যম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহান দরবার শরীফে প্রত্যাবর্তন করলেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন)।

No comments:

Post a Comment