Sunday, February 16, 2014

জ্ঞান-বিজ্ঞান রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা/উদ্ভাবক মুসলমানঃ মুসলমান উনারাই বিজ্ঞানের মূল বা জনক বা আবিষ্কারক-০৩(তৃতীয় পর্ব)


চিকিৎসাবিজ্ঞানে মুসলমান উনাদের শুধুমাত্র অবদান নয়, উনারাই সৃষ্টিকরক/উদ্ভাবক-০২:
 
প্রথমেই আসা যাক চিকিৎসাবিজ্ঞান। মানবজীবনের অন্য কয়টি নিত্য-নৈমত্তিক ঘটনার মত অসুস্থতাও একটি। সৃষ্টির প্রথম দিক থেকেই রোগ-ব্যাধি মানুষের নিত্যসঙ্গী। আর সেই রোগ হতে মুক্তির উপায়-উপকরণের আবিষ্কার ও ব্যবহার থেকেই চিকিৎসাশাস্ত্রের জন্ম হয়।


মূলতঃ এই পুরো চিকিৎসাশাস্ত্রই মুসলমানদের হাতে এসে শাখায়-প্রশাখায় বিকশিত হয়ে সর্বপ্রথম কায়িনাতে চিকিৎসাবিজ্ঞান হিসেবে রুপ লাভ করে। ফলে ভারত, চীন এবং মিশরীয় নামে মাত্র চিকিৎসা পদ্ধতিও মুসলমানরা আয়ত্ত্বে আনেন। সঙ্গতকারনেই মুসলমানদের বেমেছাল জ্ঞানের উপর যথাযথ গবেষনায় চিকিৎসাশাস্ত্রকে বিজ্ঞানের কাতারে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। নুরে মুজাসসাম হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অবস্থানকাল সময়েই আবু হাফসা ইয়াযিদ(মুসলিম) চিকিৎসকের নাম পাওয়া যায়। এরপরেই আসে ইয়াহ্হিয়া আন নাহ্বীর নাম যিনি মিশরের শাসনকর্তা আমর ইবনুল আ’স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। এছাড়া আল বাত্রিকের(৭৯৬-৮০৬) হাতে একই বিষয়ে বেশ কিছু গ্রীক গ্রন্থ অনূদিত হয়। অবশ্য এর আগে জাবির ইবন হাইয়ানের(جابر بن حيان; ৭২১-৮১৫) হাতে কিছু মৌলিক কাজের সূচনা হয়ে যায়।
মুসলিম বিজ্ঞানী আলী ইবন্‌ রাব্বান(৮৩৮-৮৭০) ৮৫৫ খৃষ্টাব্দে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উপর প্রথম বিশ্বকোষ ‘ফিরদাউসুল হিক্মাহ্’(Paradise of Wisdom) প্রনয়ন করেন, যা এখনো পর্যন্ত বেশ উচ্চমূল্যের অধিকারী। আবু ইউসুফ ইয়াকুব ইবন্‌ ইস্‌হাক আল-কিন্দি(أبو يوسف يعقوب إبن إسحاق الكندي; ৮০১-৮৭৩) দর্শনে অনন্য অবদান রাখলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের তাঁর উল্লেখযোগ্য বেশকিছু আবিষ্কার পাওয়া যায়। তিনি ঔষধ এবং গণিতের সামঞ্জস্য বিধানে এক অমূল্য রুপ দান করেন। উনার লিখিত ২৭০টি মৌলিক গ্রন্থের মাঝে ২৭টি চিকিৎসাসংক্রান্ত, যাতে তিনি কমপক্ষে ২২৬টি বিভিন্ন রোগের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে আলোচনা করেন। আবু বকর মুহম্মাদ ইবন যাকারিয়া আল রাজী(محمد زکریای رازی; ৮৬৫-৯২৫) নবম শতকের চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক বিস্ময়। শুধুমাত্র যে দু’জন ব্যক্তির আবির্ভাব অন্যান্য মুসলমান বা আরবীয় চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের শত শত মৌলিক কাজকেও পেছনের সারিতে ঠেলে দেয়, আল রাজী উনাদের প্রথম জন। সর্বকালের জন্য চিরস্মরণীয় এই ব্যক্তি ৩৫ বছরের চিকিৎসক পেশায় নিয়োজিত থাকাকালে এ বিষয়ের উপর ১১৭টি গ্রন্থ রচনা করেন। অনেকগুলো রোগের ক্ষেত্রে তিনি নতুন মতবাদের প্রয়োগ করেন এবং এক্ষেত্রে পূর্বে অপ্রচলিত নতুনধরনের ঔষধের ব্যবহার শুরু করেন। বিশেষ করে, শিশুরোগ সম্পর্কে উনার মৌলিক আলোচনা উনাকে শিশুরোগের জনক (Father of Pediatrics) হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করায়। ১০ খন্ডের ‘কিতাবুল মান্সুরী’ শরীরবিদ্যায় এক অনন্য সুসংবদ্ধ গ্রন্থ। উনার লিখিত ৩০ খন্ডে সমাপ্ত ‘কিতাবুল হাবী’(The Virtuous Life; الحاوي) সেসময়কার ইতিহাসের সর্ববৃহৎ চিকিৎসার বিশ্বকোষ(Medical Encyclopedia)

এধরনের আরো একটি সংকলন করেন আলী ইবন আব্বাস(?-৯৯৪) ‘কিতাবুল মালিকী’(Royal Book, Latin:Liber Regalis) নামে। গ্রীক চিকিৎসা থেকে শুরু সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের চিকিৎসাসংক্রান্ত মতবাদ এতে স্থান পাওয়ায় একে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাস গ্রন্থও বলা হয়। এছাড়া শৈল্যচিকিৎসায়(Surgery) তিনি ভূমিকা রাখেন। এরপরই যাঁর নাম নিতে হয়, তিনি মুসলিম স্পেনের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিজ্ঞানী আবুল কাসিম খালফ্ ইবন্‌ আব্বাস আল-যাহ্‌রাবী(أبو القاسم بن خلف بن العباس الزهراوي); ৯৩৬-১০১৩)। ইউরোপে শৈল্যচিকিৎসা উনার হাত দিয়েই প্রচলিত হয়। উনার ২ খন্ডে সমাপ্ত আল-তাস্‌রীফ(كتاب التصريف لمن عجز عن التأليف;The Method of Medicine) পরবর্তী পাঁচশত বছর অস্ত্রোপচার সংক্রান্ত বিষয়ে প্রামান্য গ্রন্থ হিসেবে এককভাবে মূল হয়েছে। বিভিন্ন প্রকার অস্ত্রোপচার যন্ত্রের সচিত্র সংকলন এই গ্রন্থের কাছে পূর্বের সবকিছু ম্লান হয়ে পড়ে। কুষ্ঠ রোগ, শিশুরোগ, রকেট, কানের সমস্যা এবং গ্লুকোমার চিকিৎসা নিয়ে তিনি মৌলিক কাজ করেছেন। এত কিছুর পরেও মুসলমানদের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে উনার নাম চাপা পড়ে যাওয়ার কারন দুইটি। এক. তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজে সার্জারির গুরুত্ব না বুঝা এবং দুই. জগতে ইবন্ সীনা নামের এক অকল্পনীয় ব্যাক্তির আবির্ভাব।

আবু আলী আল হুসাইন ইবন্‌ আবদুল্লাহ্‌ ইবন্‌ সীনা(ابوعلی سینا; ৯৮০-১০৩৭) সেই দ্বিতীয় ব্যক্তি যাঁর কথা আল-রাযীর সাথে বলা হয়েছিল।

No comments:

Post a Comment