Sunday, March 30, 2014

ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে পানিশূন্য ৪ নদী

ফারাক্কার একতরফা পানি প্রত্যাহার ও শুষ্ক মৌসুমের শুরুর সঙ্গে সঙ্গে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা, মহানন্দা, পাগলা ও পূনর্ভবা নদী পানিশূন্য এবং বিশাল চর জেগে ওঠায় সেচ সুবিধা এখন হুমকির মুখে।

এক সময়ের খরস্রোতা পদ্মা, মহানন্দা, পাগলা ও পূনর্ভবা নদী গত দু’দশক ধরে ভরাট হয়ে এখন পুরোপুরি নাব্যতা হারিয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে পদ্মার উজানে ভারতের ফারাক্কা বাঁধ। ভারত গঙ্গার পানি চুক্তি অনুযায়ী শুষ্ক মৌসুমে পানি না দেয়ায় এখন নদীগুলোর দু’ধারে বিশাল বিশাল চর জেগে উঠেছে। ভারত ফারাক্কায় শুধু বাঁধ দেয়নি, পাশাপাশি নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে মরা ভাগিরথী নদীকে খনন ও শাসন করে তারা নদীর দু’ধারে সেচ সুবিধা দিয়ে খাদ্য উৎপাদনে সফলও হয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশে পদ্মার দু’ধারে জেগে উঠেছে বালুচর। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ গত ৩ দশক ধরে ফারাক্কায় তাদের ইচ্ছেমতো পানি ধারণ এবং বন্যার সময় ব্যারেজের গেট খুলে দেয়ায় বাংলাদেশে হঠাৎ বন্যা ও তীব্র নদী ভাঙনে বসতভিটা এবং জমি হারিয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে পদ্মা নদী সীমান্ত ছেড়ে ১৬ কি. মি. ভেতরে প্রবেশ করেছে, অন্যদিকে মাইলের পর মাইল বালুচর জেগে উঠেছে।
এদিকে শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা ও মহানন্দায় পানি না থাকায় জেগে উঠা নদীর বুকে অনেকে ধানের আবাদ করছে। তবে পদ্মা ও মহানন্দায় অসংখ্য চর জেগে উঠায় নৌচলাচল একেবারে বন্ধের উপক্রম।
অন্যদিকে মহানন্দা নদীর পানি উত্তোলন করে প্রায় ১৫টি বৃহৎ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমির সেচ হুমকির মুখে পড়ায় ফসলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চিত দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত মহানন্দা নদীতে রাবার-ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, রাবার-ড্যাম নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
ফারাক্কার অশুভ প্রতিক্রিয়া, জলবায়ুর পরিবর্তন ও বার্ষিক বৃষ্টির হার কমে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে জেলার ৪টি নদীতে পানি না থাকায় সবচেয়ে বিরূপ প্রভাব পড়েছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে জেলার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর গড়ে প্রায় ৮০-৮৫ ফুট নীচে নেমে যাচ্ছে। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে গোমস্তাপুর, নাচোল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের কিছু অংশে পানির স্তর নেমে যাওয়া উদ্বেগজনক। পার্বতীপুর ইউনিয়নে ১১৬ ফুটেও পানির স্তর না পাওয়া যাওয়ায় অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠছে না।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জানায়, উদ্বেগজনক হারে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গভীর নলকূপের বিকল্প হিসেবে ইরি-বোরোর পরিবর্তে গম, সরিষা, কলাই, ডাল জাতীয় ফসল চাষে উৎসাহিত করার পাশাপাশি ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার হিসেবে খাঁড়ি, পুকুর, দীঘি-নালা খননের মাধ্যমে পানির আধার সৃষ্টি প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে।
নদীর পানি অস্বাভাবিক হ্রাস পাওয়ায় দেশি প্রজাতির মিঠা পানির মাছ হারিয়ে যেতে বসেছে এবং উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। পাশাপাশি জীব-বৈচিত্রে ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার নদী ড্রেজিং করে মাছের উৎপাদন, সেচ-সুবিধাসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের যুগান্তকারী পরিবর্তনে সচেষ্ট হবে। সর্বোপরি প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে পানিচুক্তির সঠিক বাস্তবায়নে সরকার অগ্রণী ভূমিকা নিবে বলে আশা করছেন ভুক্তভোগীরা।

No comments:

Post a Comment