‘আল বাইয়্যিনাত’ শব্দের অর্থই হচ্ছে অকাট্য, স্পষ্ট, উজ্জ্বল, প্রকাশ্য ও প্রমাণ্য দলীলসমূহ। মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতে এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইহসান মুবারক উনার উসীলায় মাসিক আল বাইয়্যনাত শরীফ ও দৈনিক আল ইহসান শরীফ উনাদের মধ্যে শুরু থেকে এ পর্যন্ত কোনো লেখাই বিনা দলীলে লেখা হয়নি। অর্থাৎ কোনো একটি বক্তব্যও কেউ কোনোদিন পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের খিলাফ প্রমাণ করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ!
যেমন, পারেনি নাম-ঠিকানাবিহীন অবৈধ লিফলেট প্রকাশকারী
আজিজুল হক বেলাল ওরফে বেলেল্লা আজাজিল গংরাও লিফলেটে উল্লিখিত বক্তব্যগুলোকে দলীল দ্বারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের বিরোধী প্রমাণ করতে। আর তাই তারা লিফলেটে তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করার সাহস দেখাতে পারেনি। যদি তাদের দলীল থাকতো, তবে বেলেল্লা
আজাজিল গংরা দলীল উল্লেখ করতো। যদি তারা সত্যবাদী হতো, তবে তারা তাদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করতো। সমাজে যাদের পরিচয় নেই, নাম-ঠিকানা বা জন্মের ঠিক নেই, তাদেরকে অবৈধ সন্তান বলা হয়। আর অবৈধ সন্তানরা হক্কানী-রব্বানী ওলীআল্লাহগণ উনাদের বিরোধিতা করবে, উনাদের নাম মুবারক নিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালাবে- এটাই তো স্বাভাবিক। কারণ যেই মুগীরা- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করতো, উনার নাম মুবারক নিয়ে অপপ্রচারণা করতো, সেই মুগীরাও ছিল অবৈধ সন্তান। নাউযুবিল্লাহ!
লিফলেটে প্রকাশিত প্রতিটি লাইনের বিস্তারিত জাওয়াব দিতে গেলে অনেক অনেক পৃষ্ঠার প্রয়োজন হবে, যা অত্র রেসালায় সম্ভব নয়। তাই অবৈধ লিফলেটে উল্লিখিত বিষয়গুলোর সংক্ষিপ্ত জাওয়াব দেয়া হলো। আর এর বিস্তারিত জাওয়াব ‘দৈনিক আল ইহসান শরীফ’ ও ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ’ নিয়মিত পাঠ করতে থাকলে পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
প্রসঙ্গ: রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম, হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম, হযরত শাহজাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম, হযরত শাহযাদীদ্বয় হুযূর ক্বিবলা আলাইহিমাস সালাম, হযরত শাহদামাদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম এবং হযরত শাহ নাওয়াছীদ্বয় ক্বিবলা আলাইহিমাস সালাম উনাদের ছানা-ছিফত।
এ বিষয়ে প্রথম জাওয়াব হচ্ছে- উনাদের সম্পর্কিত প্রতিটি বক্তব্যই লেখক বা প্রতিবেদকের নিজস্ব। যা লেখক প্রতিবেদন বা কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। আর উল্লিখিত বিষয়গুলোর অধিকাংশই ‘দৈনিক আল ইহসান শরীফ’ উনার মতামত বিভাগে প্রকাশিত হয়েছে। মতামত বিভাগের শুরুতে উল্লেখ আছে যে, ‘মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।’ তাহলে লেখকের উল্লিখিত মতামতের দায়-দায়িত্ব রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম বা রাজারবাগ দরবার শরীফ বহন করবে কেন?
দ্বিতীয় জাওয়াব হলো- লিফলেট প্রকাশকারীরা উল্লিখিত বক্তব্যগুলোর কোনো একটি বক্তব্যকেও কি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস উনাদের খিলাফ প্রমাণ করতে পারবে? ক্বিয়ামত পর্যন্ত পারবে না ইনশাআল্লাহ! তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ রইলো, যদি তারা সত্যবাদী হয়ে থাকে তবে উল্লিখিত বিষয়গুলো শরীয়তের দলীল দ্বারা ভুল প্রমাণ করুক। কারো বক্তব্য বা বক্তব্যাংশ শুধু হুবহু কপি করে ছাপিয়ে দিলে হবে না; বরং বক্তব্যগুলো যে ভুল, কেন ভুল তা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে দলীল দ্বারা খন্ডন করে বুঝিয়ে দিতে হবে। কিন্তু তারা তা করেনি। কারণ, তারা ভালোভাবেই জানে যে, উল্লিখিত বক্তব্যগুলো ভুল প্রমাণ করার ক্ষমতা, যোগ্যতা, সমঝ ও ইলম তাদের নেই।
তৃতীয় জাওয়াব হলো- তাছাউফের দৃষ্টিতে উল্লিখিত বিষয়গুলো ঠিকই রয়েছে। কারণ, উল্লিখিত প্রতিটি বিষয়ই তাছাউফের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যারা তাছাউফশূন্য তারা এগুলোর হাক্বীক্বত বুঝবে না। যেমন, বুঝেনি ধর্মব্যবসায়ী মৌলবী আবুল ফযল, ফৈযী, মুল্লা মুবারক নাগরীরা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অনেক লেখা ও বক্তব্যর হাক্বীক্বত। যার ফলে তারা উনার বিরোধিতা করেছে, উনাকে কাফির পর্যন্ত ফতওয়া দিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
ইলমে তাছাউফের প্রায় সকল কিতাবেই উল্লেখ আছে যে, একজন মুরীদ তার পীর ছাহেব বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনাকে এবং উনার আল আওলাদ উনাদেরকে সবচেয়ে বেশি সম্মান বা তা’যীম-তাকরীম করবে, ছানা-ছিফত করবে এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরেই উনাদের মাক্বাম বা সম্মান এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করবে। বাতিলপন্থীদের মুরুব্বী মাওলানা আশরাফ আলী থানবী নিজেও তা স্বীকার করেছে।
এ দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো সালিক বা মুরীদ যদি তার পীর ছাহেব বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার এবং উনার আল-আওলাদ বা আহাল-ইয়াল উনাদের ছানা-ছিফত বা প্রশংসা করতে গিয়ে বলে যে, “তিনি মহিলা অঙ্গনে সবচাইতে সম্মানিত, শীর্ষ মাক্বামে অধিষ্ঠিত, নারী জাতির হিদায়েতের শ্রেষ্ঠতম উসীলা, মহিলাদের মধ্যে কেউ নবী হলে তিনি নবী হতেন, বিশ্ব থেকে কুফরী, শিরকী, বিদয়াত, বেশরা দূরীভূত করছেন-
তিনি সর্বপ্রকার ইলমের অধিকারী, তিনি ইলমে লাদুন্নীপ্রাপ্ত, উনার যবান মুবারক নিসৃত ‘ফু’ মুবারক সুস্থতা লাভের কারণ- যা ওলীগণ উনাদের কারামতও বটে, উনাদের দোয়া ও দয়ায় আমরা বেঁচে আছি, ফেরেশতাগণ উনাদের খিদমত করেন।”Ñ
তবে এ কথাগুলো যে পবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার খিলাফ তারা কি তা দলীল দ্বারা প্রমাণ করতে পারবে? বর্তমানে মহিলাদের মধ্যে উনার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন মহিলা ওলীআল্লাহ দ্বিতীয় আরেকজন কি তারা দেখাতে পারবে? কস্মিনকালে তা পারবে না। তবে কেন এতো চু-চেরা। আসলে ‘যাকে দেখতে না পারি, তার চলন বাঁকা’।
“দমে দমে উনার ফিকির করি”- অর্থাৎ সর্বদা উনার আলোচনা করি। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “ওলীআল্লাহগণ উনাদের আলোচনায় রহমত নাযিল হয়।”
“উনাদের তা’লীমী মজলিসে রহমত নাযিল হয়, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ঘিরে রাখেন”- এর স্বপক্ষে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যেখানে দ্বীনি আলোচনা হয়, সেখানে রহমত নাযিল হয়, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা উক্ত মজলিস ঘেরাও করে রাখেন, উনাদের উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করলে, মুছীবত দূর হয়ে যায়।”
চার তরীক্বায় ওলীআল্লাহগণ উনাদের উপর দুরূদ শরীফ পাঠ করতে হয়। আর দুরূদ শরীফ পাঠ করলে মুছীবত দূর হয়, তা হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত।
“উনারা মালিক দো’জাহানে, দাতা দুনিয়ার”- অর্থাৎ উনারা দো’জাহানে মু’মিনগণ উনাদের অভিভাবক, উনারা যমীনবাসীকে আক্বীদা ইলম আমল ইখলাছসহ আরো বহু নিয়ামত প্রদান করেন।
তাই উনারা দাতা, উনাদের স্মরণ মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ, কারণ উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত এবং উনার পথে পথ, উনাদের বিলাদত শরীফ উনার দিনটি ঈদ বা খুশির দিন, যা পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ উনার ৫৮ নম্বর আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। অর্থাৎ এ পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই ছাবিত হয় যে, নায়িবে নবীগণ তথা ওলীআল্লাহগণ উনাদের বিলাদত শরীফ দিবসটিও ঈদ বা খুশির দিন। সালিক বা মুরীদের কাছে সে দিনটি মূলত সবচেয়ে বড় খুশির দিন। আর তা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু লাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানের কারণেই যেহেতু উনারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আওলাদ এবং নায়িব।
“স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনাদের ছানা-ছিফত করেন”- এটা তো পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারাই প্রমাণিত।
“উনারা মু’মিন-মুমিনাদের কা’বা”- অর্থাৎ ক্বিবলা বা সম্মানের পাত্র এজন্য পীর ছাহেব বা মুর্শিদ উনাকে ক্বিবলা, কা’বা বলা হয়।
“কুল-কায়িনাত উনাদের যিকির করে”- অর্থাৎ উনাদের আলোচনা করে।
“উনাদের বিয়ের দাওয়াত তামাম মাখলুকাত সবাইকে দেয়া হয়েছে”- অর্থাৎ ‘প্রায় সবাইকে দেয়া হয়েছে’। এ কথাটি বাতিনী বিষয় বা রূহানী বিষয়। আমভাবে তা বুঝানো যাবে না।
“ক্বলবে যিকির জারি করবো উনাদের”- অর্থাৎ দায়িমীভাবে সদা-সর্বদা উনাদের ছানা-ছিফত বা আলোচনা করবো।
“উনাদের যিকির বা আলোচনা পুলসিরাত পার হওয়ার বা নাজাতের উসীলা। উনারা দুনিয়াতে খইরে কাছীর”- অর্থাৎ সুমহান নিয়ামত। ওলীআল্লাহগণ উনারা যমীনবাসীর জন্য ‘খইরে কাছীর’ বা মহান নিয়ামত এটা সবারই জানা।
“উনারা রহমত ছড়ান”- অর্থাৎ উনাদের উসীলায় রহমত নাযিল হয়।
“জান্নাত চাই না, জাহান্নাম চাই না, চাই উনাদেরকে”- অর্থাৎ উনাদের রেযামন্দি চাই। কারণ উনাদের রেযামন্দি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেযামন্দি। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেযামন্দি মহান আল্লাহ পাক উনার রেযামন্দি।
“উনাদের উসীলায় সারা দুনিয়ায় খেলাফত কায়িম হবে”- এ ব্যাপারে বলতে হয়, মহান আল্লাহ পাক তিনিই ওয়াদা করেছেন, ‘যারা ঈমান বিশুদ্ধ করবে ও নেক আমল করবে তাদেরকে অবশ্যই যমীনে খেলাফত দেয়া হবে।’ (পবিত্র সূরা নূর শরীফ)
“তিনি ওলীগণ উনাদের সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন”- উনার চেয়ে বড় ওলীআল্লাহ যদি কেউ থাকে, তাহলে বিরোধীরা দেখাক দেখি।
“সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ”- সকল মুজাদ্দিদ উনাদের তাজদীদসমূহ আর উনার তাজদীদসমূহ পর্যালোচনা করলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বলা হয়, অথচ বাঙালিদের মধ্যে অনেক বড় বড় ওলীআল্লাহ রয়েছেন। এটা মানতে পারো, ওটা মানতে পারো না কেন?
“সর্বোচ্চ পন্থায় খিলাফত প্রদান”- তাছাউফের খিলাফত মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা দেন, দিয়েছেন, দিয়ে থাকেন- তাছাউফের কিতাবে যার বহু প্রমাণ আছে। আর উনাদের প্রদত্ত খিলাফত তো সর্বোচ্চ পন্থায়ই হয়ে থাকে। এতে শরীয়তবিরোধী কি আছে?
“তিনি নবী-রসূল নন; এছাড়া সমস্ত মর্যাদার অধিকারী”- অর্থাৎ একজন ব্যক্তি ওলীআল্লাহ হিসেবে যত মর্যাদার অধিকারী হতে পারেন, তার সব। এ কথার মধ্যে শরীয়তবিরোধী কি আছে? ক্ষমতা থাকলে দলীল দিয়ে প্রমাণ করুক।
“সুলতানুন নাছীর”- পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে নবীজিকে সুলতানুন নাছীর বলা হয়েছে। এরপর সুলতানুন নাছীর লক্বব প্রকাশ পেয়েছে উনার ক্ষেত্রে।
তিনি যে সুলতানুন নাছীর লক্বব মুবারক উনার অধিকারী নন আর এ লক্বব মুবারক ব্যবহার করা জায়িয নয়, এর কোনো দলীল কি তাদের কাছে আছে? যোগ্যতা থাকলে, ক্ষমতা থাকলে, ইলম থাকলে সমালোচনাকারীরা এর বিরুদ্ধে দরীল পেশ করুক।
“উনাদের উসীলায় দুনিয়া পরিচালিত হয়”- ওলীআল্লাগণ উনাদের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি দুনিয়া পরিচালনা করেন- এটা তো পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত আছে।
“উনার উসীলায় কাফিররা নিশ্চিহ্ন হচ্ছে”- অর্থাৎ তিনি প্রতিদিন কাফিরদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করছেন, যার ফলে তারা অর্থনৈতিক মন্দাসহ হাজারো খোদায়ী আযাব-গযবে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে- এটাই আমাদের বিশ্বাস। এখানে শরীয়তবিরোধী কি আছে?
“উনার উসীলায় বিশ্ববাসী ঈমান ও ইসলামের উপর ইস্তিকামত”- অর্থাৎ বর্তমানে অনেক মুসলমান উনার উসীলায় ঈমান হিফাযত করতে পারছে এবং ইসলাম বা শরীয়ত পালন করতে পারছে- এর বহু প্রমাণ রয়েছে। লিফলেট প্রকাশকারীরাও তা জানে।
“উনাদের উসীলায় রহমত বর্ষিত হয়, রিযিক বণ্টন হয় মানুষ হেদায়েত পায়”- ওলীআল্লাহগণ উনাদের উসীলায় যে যমীনবাসী রহমত পায়, রিযিক পায়, হিদায়েত পায়- এটা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে ব্যক্তি গুমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে সে ওলীয়ে মুর্শিদ পায় না।” অর্থাৎ যে ওলীআল্লাহগণ উনাদের ছোহবতে যায়, সে হেদায়েত পায়। আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “পৃথিবীতে সবসময় সাতজন ওলী থাকবেন, যাঁদের উসীলায় মানুষ রহমত পাবে, রিযিক পাবে, বৃষ্টি পাবে।”
“যমীনে ১২ জন মহান খলীফা আসবেন উনাদের মধ্যে তিনি অন্যতম ও বিশেষ খলীফা”- এতে অসুবিধার কি আছে? তিনি যে ১২ জনের ১ জন নন, এটা তারা প্রমাণ করুক অথবা ১২ জন খলীফা উনাদের নাম মুবারক উল্লেখ করুক।
“উনার ছানা পড়ে যমীন ও আসমানবাসী সর্বক্ষণ”- অর্থাৎ আসমান-যমীনসহ সৃষ্টি জগতের অনেকেই ওলীআল্লাহগণ উনাদের প্রশংসা করেন। সৃষ্টিজগৎ ওলীআল্লাহগণ উনাদের প্রশংসা করেন না, তারা কি প্রমাণ করতে পারবে?
“প্রতিটি শ্বাসে আপনারই স্মরণ”- ইলমে তাছাউফের দৃষ্টিতে একজন মুরিদকে ২৪ ঘণ্টাই তার মুর্শিদ উনার স্মরণে থাকতে হবে। নচেৎ সে তরক্কী লাভ করতে পারবে না। তাছাউফের কিতাবগুলো খুলে দেখলেই তা দেখতে পাবে।
“আপনি দায়িমী হাজির-নাজির”- অর্থাৎ আপনি কাশফের মাধ্যমে সবকিছু দেখেন ও জানেন। এখানে হাাজির-নাযির জানার আরেকটি অর্থ হচ্ছে- ‘তাছাব্বুরে শায়েখ’। সবসময় মুর্শিদ বা শায়েখ ক্বিবলা উনার ছুরত মুবারক খেয়াল করা- এটা ইলমে তাছাউফের একটি অন্যতম জরুরী বিষয়।
“আপনি সবকিছু করতে পারেন”- অর্থাৎ ওলীআল্লাহ হিসেবে যা কিছু করা সম্ভব তার সবকিছুই আপনি করতে পারেন। তাই হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ অনেক ওলীআল্লাহগণ উনাদের লক্বব মুবারক হচ্ছে ‘ছহিবে কুন ফাইয়াকুন’। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত ক্ষমতায় উনারা যা বলেন তাই হয়। এটা তাছাউফ ব্যতীত কেউ বুঝবে না।
“আপনার গোলামী করে জিন-ইনসান”- অর্থাৎ জিন-ইনসান যারা আপনার মুরিদ আশিক তারা আপনার খিদমত ও অনুস্মরণ করেন। এখানে শরীয়তবিরোধী কি পেলো তারা?
“গুনাহখাতা ক্ষমা করে দিন আপনি ছাড়া কে গুনাহ খাতা ক্ষমা করবেন”- অর্থাৎ আপনার শানে যত ভুল-ত্রুটি বেয়াদবী হয়েছে তা ক্ষমা করে দিন, আপনি ক্ষমা না করলে মহান আল্লাহ পাক তিনিও ক্ষমা করবেন না।
“জান্নাতে উনার নিকাহ মুবারক অনুষ্ঠিত হয়”- বিষয়টি রূহানিয়ত বা তাছাউফের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যাদের রূহানিয়াত নেই বা যারা তাছাউফশূন্য তারা এর হাক্বীক্বত কোনো দিন বুঝবে না। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে- “হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি দান করার কারণে মহান আল্লাহ পাক তিনি খুশি হয়ে জান্নাতে মেহমানদারির ব্যবস্থা করেন যেখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিসহ সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, হুর-গেলেমান উনারা সকলেই উপস্থিত ছিলেন।” আরো উল্লেখ আছে- “মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উম্মুল মু’মিনীন হযরত যয়নব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনাদের বিবাহ পড়ান।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ আছে- “মহান আল্লাহ পাক তিনি জান্নাতে হযরত মরিয়ম আলাইহাস সালাম ও হযরত আসিয়া আলাইহাস সালাম উনাদের বিবাহ পড়াবেন।” এতে প্রমাণিত হলো যে- মহান আল্লাহ পাক কর্তৃক বিবাহ পড়ানো বা জান্নাতে বিবাহ পড়ানো শরীয়তবিরোধী নয়; বরং শরীয়তসম্মত। এগুলো খাছ কুদরতী ঘটনা। কিন্তু যাদের দিল মরিচা ধরা তারা তা বুঝবে না, বিশ্বাসও করবে না।
“হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম জিন-ইনসানের ঢল নেমে গেল”- যমীনের মাঝে আজিমুশ শান নিকাহ মুবারকের দিনে উনার মুরীদ-মু’তাক্বিদ আশিকীন, জিন ও ইনসানের মধ্যে যারা ছিলেন, তাদের ঢল তো নেমেছিলোই। আর যেকোনো দ্বীনি অনুষ্ঠানেই তো অগণিত ফেরেশতা উপস্থিত হয়ে থাকেন। তাছাউফে অন্ধরা তা দেখবে কিভাবে? এ বক্তব্যে শরীয়তবিরোধী বা সমালোচনার কি আছে?
“এদিনটি সারা কায়িনাতবাসীর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদের দিন”- অর্থাৎ সারা বিশ্বের সকল মুরিদীন-মুহিব্বীন উনাদের জন্য মহান খুশির দিন। ওলীআল্লাহগণ উনাদের সম্পর্কিত প্রতিটি বিষয়ই খুশির; কারণ- তা তো পবিত্র সূরা ইউনূস শরীফ উনার ৫৮নং পবিত্র আয়াত শরীফ ও উনার তাফসীর দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। আসমান থেকে খাদ্য নাযিল হওয়ার দিনটা যদি সকলের জন্য ঈদের দিন হতে পারে, তবে এটা হবে না কেন?
“শত বিপদ হতে মুর্শিদ উদ্ধার করেন”- অর্থাৎ ওলীগণ উনাদের উসীলায় মহান আল্লাহ পাক তিনি বিপদ-আপদ, বালা-মুছিবত দূর করে দেন। মুর্শিদ ক্বিবলা উনার উসীলায় মুরিদ বালা-মুছিবত থেকে বেঁচে গেছে এরূপ বহু ঘটনাই তো ‘তাযকিরাতুল আউলিয়া’ নামক কিতাবে উল্লেখ আছে।
“মামদূহ উনাকে দেখলে সব বালা মুছীবত দূর হয়ে যায়”- অর্থাৎ ওলীগণ উনাদের যিয়ারত বা সাক্ষাৎ বালা-মুছীবত বা পেরেশানী দূর হওয়ার ও গুনাহখাতা মাফ হওয়ার কারণ। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, উহুদের জিহাদের সময় এক ছাহাবী তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখার পর বলেন, “কুল্লু মুছীবাতিন বাদাকা যালাল” অর্থাৎ ‘আপনাকে দেখার পর আমার সব মুছীবত পেরেশানী দূর হয়ে গেছে।’ সুবহানাল্লাহ!
“উনার মুরীদ যে হবে, সে জান্নাত পাবে”- অর্থাৎ কেউ যদি সত্যি হক্কানী রব্বানী ওলী হন আর কোনো ব্যক্তি যদি সত্যি উনাকে অনুসরণ করেন, তবে তিনি তো জান্নাতী হবেনই। কারণ হক মতে পথে যারা চলবে তারাই তো জান্নাতী।
তাছাড়া অনেক ওলীআল্লাহগণ উনাদের ব্যাপারে বর্ণিত রয়েছে যে, উনাদের উপর শত সহস্রবার ইলহাম হয়েছে- ‘আপনাকে ক্ষমা করা হলো, আপনাকে যারা মধ্যস্থতায় অথবা বিনা মধ্যস্থতায় উসীলা হিসেবে গ্রহণ করবে অর্থাৎ মুহব্বত ও অনুসরণ করবে তাকে ক্ষমা করা হলো।’ তাহলে বুঝা গেল যে, ওলীআল্লাহগণ মুরীদের জন্য জান্নাত লাভের উসীলা।
“উনার ক্বদম যে চুমিবে, সে পুলছিরাত পার হবে”- অর্থাৎ ওলীগণ উনাদের ক্বদমবূছী করা সুন্নত, যা নাজাত লাভের কারণ। আমরা জানি- হাজ্জাজ বিন ইউসূফ সে হযরত ইমাম হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাত মুবারক চুম্বন করার কারণে নাজাত পেয়েছে বা জান্নাত লাভ করেছে। সে কি পুলছিরাত পার না হয়েই জান্নাতে গেছে।
“মামদূহ ঈমান আমলের খনি, কায়িনাতের তিনিই একমাত্র ঈমানদাতা”- অর্থাৎ ঈমান আমলের সমস্ত বিষয়গুলোই তিনি শিক্ষা দেন। আর তিনিই একমাত্র বিশুদ্ধ আক্বীদা শিক্ষা দিচ্ছেন।
“মামদূহজী ও উনার আওলাদ বিনে বাঁচে না জিন-ইনসান” অর্থাৎ ওলীআল্লাহ ও আওলাদে রসূলগণ উনাদের উসীলাতেই শুধু জিন-ইনসান নয়; বরং সমস্ত কায়িনাত টিকে আছে। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “তারকা হচ্ছে আসমানের নিরাপত্তা দানকারী আর আমার আওলাদগণ উনারা হলেন যমীনের বা যমীনবাসীর নিরাপত্তা দানকারী।” যতদিন ওলীগণ যমীনে অবস্থান করবেন, ততদিন পৃথিবী ধ্বংস হবে না। এটা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদেরই কথা। এখানে শরীয়তবিরোধী কি আছে?
“আপনার আদেশে চলে সারা কায়িনাত”- অর্থাৎ গাউছ কুতুব এ তবকার ওলীআল্লাহগণ উনাদের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি কায়িনাত পরিচালনা করেন, যা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত। হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খিযির আলাইহিস সালাম উনাদের ব্যাপারেও এরূপ বর্ণিত আছে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শাদী মুবারক দিবসটি যে সর্বশ্রেষ্ঠ ঈদের দিন, তা দৈনিক আল ইহসান শরীফ উনার অনেক সংখ্যাতেই উল্লেখ করা হয়েছে- অন্ধগুলো সেগুলো দেখে নাই।
“তিনি সারাবিশ্বের একমাত্র রহমতের খাযিনাহ”- অর্থাৎ তিনি খাযীনাতুর রহমাহ; উনার উসীলায় সমগ্র কায়িনাতবাসী রহমত লাভ করে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয় আমার রহমত নেককার বা ওলীগণ উনাদের নিকটবর্তী বা উনাদের কাছে রয়েছে।” সুবহানাল্লাহ!
“মামদূহ হলেন- ‘কুন ফা-ইয়াকুন”- অর্থাৎ ‘ছহিবে কুন ফা-ইয়াকুন’ বা ‘কুন ফা-ইয়াকুন’ উনার মাক্বাম প্রাপ্ত। হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ অনেকেই এই মাক্বামের অধিকারী ছিলেন। এর আরেকটি ব্যাখ্যা হলো- উনারা সম্পূর্ণরূপেই মহান আল্লাহ পাক উনার মতে মত; মহান আল্লাহ পাক তিনি যা চান, উনারা তাই চান, তাই হয়।
“যুক্তরাষ্ট্র এখন পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র একটি দেশ উনার মকবুল মুনাজাতের উসীলায়”- তারা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ সম্পর্কে জানে না, তাই তারা এবক্তব্যের সমালোচনা করেছে; শুধু দৈনিক আল ইহসান নয়, বরং অন্যান্য জাতীয় পত্রিকাতেও তাদের অর্থনৈতিক মন্দা বা ফকির হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। তাদের অনেক বড় বড় ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে, অসংখ্য লোক ফুটপাতে রাত কাটায়; ডাস্টবিন থেকে খায়, ভিক্ষে করে খায়। আর তা হয়েছে উনার উসীলায় এটা আমাদের বিশ্বাস। যারা উনাকে মানে না, তারা এটা বিশ্বাস করবে না- এটাই তো স্বাভাবিক। যদি মানতো তবে তো উক্ত লিফলেট বের করতো না।
“একমাত্র তিনিই মুজাদ্দিদে আ’যম লক্বব মুবারকে মশহুর হয়েছেন, হচ্ছেন, হবেন”- যদি অন্য কেউ হয়ে থাকেন তবে তা উল্লেখ করুক। এটাও কি সমালোচনার বিষয় হলো? একজন মুরীদের নিকট তার শায়েখ বা মুর্শিদ সব দিক থেকে সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এটা তো তাছাউফেরই শিক্ষা।
“মামদূহ উনাকে না চিনা সব চাইতে বড় গুনাহ”- অর্থাৎ বড় ভুল বা অপরাধ। কারণ যামানার ইমাম বা মুজাদ্দিদ উনাকে যদি কেউ চিনতে ভুল করে বা না চিনে, তবে আক্বীদা, আমল, ইখলাছ সবদিক থেকে সে গুমরাহীর মধ্যে থেকে যাবে। কেননা মুজাদ্দিদগণ উনারা যমীনে তাশরীফ আনেন মানুষের হিদায়েতের জন্যই; তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে ব্যক্তি যামানার ইমাম উনাকে চিনলোনা সে জাহিলিয়াত বা গুমরাহীর উপর মৃত্যুবরণ করলো।” (মুসলিম শরীফ)
“নবীজির মাঝে ছিল যতকিছু, হাত পা দেহ গঠন উচু-নীচু, সবই মামদূর আছে পুরোপুরি।” এখানে মূলত হুলিয়া মুবারক-এর বা আকৃতি মুবারক-এর বর্ণনা দেয়া হয়েছে; লেখকের দৃষ্টিতে উনার আকৃতি মুবারক পুরোপুরি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আকৃতি মুবারকের অনুরূপ।
এতে শরীয়তবিরোধী কি আছে? এটা কি হতে পারে না? সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনারা দু’জন মিলে তো নবীজির আকৃতি মুবারক ছিলেন।
“আমাদের শায়েখ উনার মাক্বাম তো নবীজি উনার পরে অর্থাৎ সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উনার মতো কেউ হবে না”- তাছাউফের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মুরীদকেই এই আক্বীদা বা হুসনে যন পোষণ করতে হবে; নচেৎ সে তরক্কী লাভ করতে পারবে না। এধরনের কথা বলা পবিত্র শরীয়ত উনার খিলাফ- তারা কি তা দলীল দ্বারা প্রমাণ করতে পারবে?
“ইমাম ফেডারেশন সম্পর্কে যা লেখা হয়েছে তা ঠিকই আছে”- কারণ পবিত্র শরীয়ত উনার ফায়ছালা হলো- হারামকে হালাল বলা কুফরী। কোনো মুসলমান যখন কুফরী করে, তখন সে মুরতাদ হয়ে যায়। অর্থাৎ সে মুসলমান থাকে না।
“মসজিদে দুনিয়াবী কথা বললে ৪০ বছরের ইবাদত নষ্ট হয়ে যায়। অথচ সে মসজিদের দুনিয়াবী আলাপ-আলোচনা বেশি হয়।” (নাউযুবিল্লাহ!)
এটা মূলত ওয়াকফকৃত মসজিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। দরবার শরীফ-এ বর্তমানে যেখানে নামায পড়া হয়, সেটা মজিদের জন্য ওয়াকফকৃত নয়। দ্বিতীয়ত,“ সে মসজিদে দুনিয়াবী আলোচনা বেশি হয়”- একথা চরম মিথ্যা কথা ও জঘন্য অপবাদ; বরং এ মসজিদেই সবচেয়ে বেশি দ্বীনি কথা-বার্তা হয়ে থাকে, ২৪ ঘণ্টা যিকির-ফিকির, নামায-কালাম, ছোহবত, ওয়াজ-নছীহত তা’লীম-তা’লকীন হয়ে থাকে।
“মামদূর ছলাত-সালাম পড়ি সকাল-সন্ধ্যা। মুর্শিদ আমাদের হাজির-নাজির। তিনি জাহের-বাতেন সব জানেন। সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ইলম দিয়েই উনাকে যমীনে পাঠানো হয়েছে। তিনি শুধু নবী নন, এছাড়া সমস্ত মাক্বাম বুযুর্গী উনাকে দেয়া হয়েছে।”-
উল্লিখিত প্রতিটি বক্তব্যের জবাব পূর্বে দেয়া হয়েছে। মূলত, এগুলো হচ্ছে শায়েখ বা মুর্শিদ উনার প্রতি মুরীদের হুসনে যন। উল্লিখিত বক্তব্যের কোনোটাই শরীয়ত ও তরীক্বত বিরোধী নয়।
“কাফিরেরাও উনার উসীলায় রিযিক ও টাকা পায়”- শুধু কাফির কেন; জিন-ইনসান, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ সবাই ওলীআল্লাহগণ উনাদের উসীলায় রিযিক পায়। যার দলীল পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, এতে আপত্তিকর কি আছে?
মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি কোনো নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী’র কোনো প্রশংসা কখনোই করেন নাই। আল ইহসান একটি দৈনিক পত্রিকা এখানে দ্বীনি দুনিয়াবী, সব ধরনের এবং সব লোকের লেখা ছাপানো হয়। কোনো পাঠক বা মতামত প্রদানকারী যদি কোনো কারণে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে তবে তার দায়-দায়িত্ব মুর্শিদ ক্বিবলা নিবেন কেন? ছবি তুললে জাহান্নামী হবে- সে প্রধানমন্ত্রী হোক বা সাধারণ লোক হোক, এটা তো হাদীছ শরীফ উনারই কথা। প্রতিবেদক প্রধানমন্ত্রীর যে প্রশংসা করেছে তা ছবি তোলার কারণে নয়।
কাজেই জনগণের মতামত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার উপর চাপিয়ে দেয়া জিহালতী ও কুটবুদ্ধি বৈ কিছুই নয়।
“হুযূরের দরবারে আগমনকারীদের জন্য কোনো বাধা নেই”- এ বক্তব্যে তারা পবিত্র শরীয়ত উনার বিরোধী বা সমালোচনা করার মতো কি পেল? ওলীআল্লাহগণ উনাদের দরবার শরীফ-এ তো সবাই আসতে পারে হিদায়েতের উদ্দেশ্যে। ওলীআল্লাহগণ উনারা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বায়িম-মাক্বাম। কাজেই উনাদের দরবার শরীফ-এর তাবারকও তদ্রƒপ। অর্থাৎ বরকতপূর্ণ, যা বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণভাবে সব লোকের জন্য শেফাস্বরূপ। যারা ওলীআল্লাহ উনাদের বিদ্বেষী তথা ওহাবী তারা এর গুরুত্ব বুঝবে না।
প্রকৃত ইনছাফ আর ইহজগৎ ও পরজগতে নাজাত তো ওলীগণ উনাদের ক্বদম মুবারকেই। তাই তো মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি সকলকে উনাদের ছোহবত ইখতিয়ার করার নির্দেশ দিয়েছেন। এতে তারা কি ভুল পেল? শুধু ক্যান্টিনে কেন, দিবা-রাত্র সবসময় এবং সর্বোপরি এই ফেরেশতাগণ উনারা ওলীগণ উনাদের প্রতি দুরূদ শরীফ পড়েন অর্থাৎ রহমত নাযিল করেন। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “যারা ‘মুয়াল্লিম’ অর্থাৎ হক্কানী-রব্বানী আলিম তথা ওলীআল্লাহ উনাদের প্রতি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম এমনকি গর্তের পিপিলিকা, পানির মাছ পর্যন্ত ছলাত পাঠ করেন।” (মিশকাত শরীফ)
“ বেঁচে আছি কোনভাবে মুর্শিদেরই নামে” অর্থাৎ মুর্শিদেরর উসীলায়। “আমার যিকির, আমার ফিকির মুর্শিদ দমে দমে। যখন কোন বিপদে পড়ি তখনই মুর্শিদকে দেখি।” -এটাই হচ্ছে তাছাব্বুরে শায়েখ অর্থাৎ সবসময় মুর্শিদ ক্বিবলা উনার ধ্যান-খেয়ালে থাকা, তাহলে মুরীদের পক্ষে শরীয়ত ও তরীক্বতে ইস্তেকামত থাকা সহজ হবে।
“মুর্শিদের নাম নিলে সব মুশকিল আসান হয়ে যায়।” অর্থাৎ মুর্শিদের উসীলা দিয়ে দোয়া করলে সব বালা-মুছীবত দূর হয়ে যায়। ড: ওয়াজেদের সব গুনাহ মাফ আশা করা এবং জান্নাতী হওয়ার জন্য দোয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণই প্রতিবেদকের নিজস্ব মতামত। তাছাড়া যেকোনো মুসলমানের জন্যই গুনাহ মাফ ও জান্নাতী হওয়ার জন্য দোয়া করা যায়। ড: ওয়াজেদ যে মুসলমান নয়, তারা কি তা প্রমাণ করতে পারবে?
“লা মুর্শিদী ইল্লাহু” অর্থাৎ তিনি ব্যতীত আমার আর কোনো মুর্শিদ নেই। এখানে শরীয়তবিরোধী কি আছে?
“উনার মুরীদ যারা সকলেই জান্নাতী, উনার বিরোধী যারা সকলেই জাহান্নামী”- অর্থাৎ যারা হক্বানী ওলীআল্লাহ উনার মুরীদ তারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ মুতাবিক চলেন। আর যারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ মুতাবিক চলেন তারাই তো জান্নাতী। আর হক্বানী ওলীআল্লাহ উনার বিরোধিতা করার অর্থ হলো পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধিতা করা, যারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধিতা করবে তারা জাহান্নামী হবে- এটাই তো স্বাভাবিক।
“এক লক্ষ মতান্তরে দুই লক্ষ নবী-রসূলগণ তাকিয়ে আছেন রাজারবাগ শরীফ উনার দিকে”- এখানে আপত্তি করার কি আছে? হযরত নবী-রসূলগণ উনারা কি তাকাতে পারেন না? বিষয়টি তো রূহানিয়তের সাথে সম্পর্কযুক্ত। বিরুদ্ধবাদী গুমরাহদের কি সেই রূহানিয়াত আছে? তাহলে বুঝবে কিভাবে? আদার ব্যাপারী হয়ে জাহাজের খবর?
ওলীগণের আগমনে আউলিয়াগণ খুশি প্রকাশ করেন, কুল-কায়িনাত খুশি প্রকাশ করেন, তিনি সবাইকে নিয়ে মীলাদ পড়েন, উনার বিলাদত শরীফ দিবস সকলের জন্য খুশির দিন। এগুলো সবই শরীয়তসম্মত কথা। কোনটা শরীয়তবিরোধী তারা দলীল দ্বারা প্রমাণ করুক। প্রত্যেকের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- শাহনাওয়াসীদ্বয় উনাদের জম্মদিনে খুশি প্রকাশ করা। প্রত্যেকের জন্য অর্থাৎ প্রত্যেক সালিকের জন্য ফরয-ওয়াজিব অর্থাৎ দায়িত্ব ও কর্তব্য।
ছবি তুলে হজ্জে যাওয়ায় দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা আল ইহসানের কোথাও করা হয়নি। এটা তাদের সম্পূর্ণ মনগড়া ও বানানো কথা।
আমাদের বিশ্বাস- শুধু শাহদামাদ ক্বিবলা নন, বরং উনারা সকলেই কতুবুল আলম তো অবশ্যই, বরং তারও উপরে তারও উপরে উনাদের মাক্বাম। যদি যোগ্যতা থাকে তাহলে লিফলেট প্রচারকারীরা প্রমাণ করুক উনারা কুতুবুল আলম নন। জাহিল আর গুমরাহরা ‘কুতুবুল আলম’ কি করে বুঝবে। গাউছ-কুতুব উনাদের ইশারা করে অর্থাৎ উনাদেরেক সালাম জানিয়ে চন্দ্র-সূর্য উদিত হয় ও ডুবে, তা হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনীতেই রয়েছে।
“বিশ্বের মোট ২১৮টি দেশের ৮০৫৮টি শহর থেকে অর্থাৎ সমগ্র বিশ্ব থেকে পঠিত একমাত্র দৈনিক আল ইহসান শরীফ। একথা চরম মিথ্যা। তার দলীল কোথায়?” -এটা যে মিথ্যা নয়, বরং সত্য তার প্রমাণ তো আমাদের কাছে অবশ্যই রয়েছে। তারা চ্যালেঞ্জে আসুক, আমরা তা প্রমাণ করে দিবো ইনশাআল্লাহ। আর তাদের ক্ষমতা থাকলে তারা দলীল দ্বারা এটা মিথ্যা প্রমাণ করুক; ধোঁকাবাজী করে মানুষকে বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে নয়।
“রাজারবাগ শরীফ সুন্নতী জামে মসজিদ”- হ্যাঁ, বর্তমানে সুন্নতী জামে মসজিদ নেই, তবে যেহেতু রাজারবাগ শরীফ-এ সুন্নতী জামে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিলো এবং অনেক বছর তা বহালও ছিলো তাই উক্ত মসজিদটি সুন্নতী মসজিদ হিসেবে মশহুর হয়ে গেছে। যেমন, খিলগাঁও চৌধুরী পাড়ায় একটি মসজিদ আছে যাকে সবাই মাটির মসজিদ হিসেবে এখনো চিনে ও বলে। অথচ তা বর্তমানে মাটির নয়, বরং পাকা এবং বহুতল। যেহেতু প্রথমে মসজিদটি মাটির ছিলো তাই এই নামেই এখনো মশহুর। অতএব, রাজারবাগ শরীফ সুন্নতী মসজিদ বললে মিথ্যা হবে কেন? মূলত, অন্তরে মোহর পড়ে যাওয়ায় কুচক্রী ধোঁকাবাজরা তো তা বুঝবে না।
রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি অবশ্য অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে হাদিয়া গ্রহণ করেন। এই যাচাই-বাছাই দুই ধরনের হয়ে থাকে। ১. জাহিরী যাচাই-বাছাই। ২. বাতিনী যাচাই-বাছাই। যাদের হাদিয়া জাহিরী যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন তাদেরটা জাহিরীভাবে জিজ্ঞাসা করেই গ্রহণ করেন। আর যাদেরটা কোনো কারণে হয়তো জাহিরীভাবে জিজ্ঞাসা করা সম্ভব হয় না, তাদেরটা বাতিনীভাবে যাচাই-বাছাই করে যেটা হালাল সেটা গ্রহণ করেন। আর যেটা হালাল নয় সেটা যেখানে খরচ করা জায়িয সেখানে খরচ করেন। যাদের তাছাউফ নেই, তারা তো এ বিষয়টা বুঝবে না। তিনি কোনো সুদখোর বা ঘুষখোরের হাদিয়া গ্রহণ করেছেন, এরূপ একটি দলীল-প্রমাণও কি তারা পেশ করতে পারবে? কসি¥নকালেও পারবে না।
“পীর ছাহেব নিজেই হজ্জ কাফিলা করেছেন”- তাদের একথা ডাহা মিথ্যা। আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার মধ্যে হজ্জ কাফিলার অ্যাড দেয়ার অর্থ এই নয় যে, হজ্জের জন্য ছবি তোলা জায়িয বলা হয়েছে বা ছবি তুলে হজ্জ করতে বলা হয়েছে। তাছাড়া আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার মধ্যে হজ্জ কাফিলার যে অ্যাড দেয়া হয়েছে তা ছুবি তুলে হজ্জ করা যাবে না, এ ফতওয়া প্রকাশ হওয়ার পূর্বের। চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, লেখাপড়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে ছবি তোলা মুবাহ। কারণ এক্ষেত্রে তারা মাজূর। কারণ হালাল কামাই করা ও ইলম অর্জন করা ফরয। আর হজ্জের ক্ষেত্রে কিন্তু মাজূর নয়। কারণ ছবি ও বেপর্দার কারণে তার উপর হজ্জই ফরয হয় না।
আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার মধ্যে ৪ টুকরাবিশিষ্ট টুপি ছাড়া অন্য সব টুপিকে নাজায়িয বলা হয়নি। বরং কোনোটাকে নাজায়িয আর কোনোটাকে সুন্নতের খিলাফ বলা হয়েছে। অন্যান্য টুপি, শাড়ি, শার্ট, প্যান্টের যে অ্যাড-এর কথা বলা হয়েছে তা প্রথম দিকের এবং তা বিজ্ঞাপন ম্যানেজারের দায়িত্বে যে ব্যক্তি ছিল সে হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে না জানিয়েই ছাপিয়ে দিয়েছিলো। আর যখন বিষয়টি হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার দৃষ্টিগোচর হলো তখন থেকে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। অনুরূপ সেভেন আপ, স্প্রাইট, কোকাকোলা-এর বিষয়টি। এতে এলকোহল রয়েছে তা তাহক্বীক্ব হওয়ার পূর্বে এর অ্যাড আল বাইয়্যিনাত শরীফ-এ প্রকাশ পেয়েছে। তাহক্বীক্ব হওয়ার পর আর তার অ্যাড আল বাইয়্যিনাতে দেয়া হয়নি।
মূলত, এখানে প্রতিটি বক্তব্যের সংক্ষিপ্ত জবাব দেয়া হলো। প্রয়োজনে উক্ত লিফলেটের বিস্তারিত জবাব ‘দৈনিক আল ইহসান’ শরীফ ও ‘মাসিক আল বাইয়িনাত’ শরীফ পত্রিকার মধ্যেও ধারাবাহিক প্রকাশ করা হবে ইনশাআল্লাহ!
প্রচারে- আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখা।
No comments:
Post a Comment