খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি রহমান ও রহীম। তিনি
অতি দয়ালু, পরম মেহেরবান। উনার দয়া ও রহমত মুবারকের কোনো শেষ নেই; সীমা-পরিসীমা নেই।
বান্দা-বান্দীর কোনো কোনো ছোট আমলেও মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট হয়ে যান। এমনকি
উনার রহমতের সাগরে জোয়ার আসে। তিনি তখন বান্দা-বান্দীকে দিয়ে দেন অনেক অফুন্ত পুরস্কার
এবং উন্মুক্ত করে দেন উনার নিয়ামতের ভান্ডার। তাই কোনো নেক আমল বাহ্যিকভাবে ছোট ও সহজ
বলেই সে সম্পর্কে অবহেলা করা উচিত নয়।
আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কোনো সৎ কাজকেই কখনো তুচ্ছ জ্ঞান করবে
না। যদিও তা হয় তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ।” (মুসলিম শরীফ)
কারণ এই ধরনের সহজ আমলের মধ্যেও অনেক সময় নিহিত থাকে অনেক
প্রাপ্তি ও পুরস্কার। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এমন অনেক আমল ও শিক্ষার বর্ণনা
পাওয়া যায়, যা করতে সহজ, কিন্তু এর বিশাল প্রাপ্তি ও পুরস্কারের কথা আখিরী রসূল, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘোষণা করেছেন।
প্রেরণা যুগিয়েছেন, জযবা দিয়েছেন, তাগিদ দিয়েছেন এসব আমলের প্রতি যত্নবান হতে। আর এমনই একটি বিষয় হলো-
বিশুদ্ধ নিয়ত। অর্থাৎ যে কোনো কাজের আগে সঠিকভাবে নিয়ত করে নিতে হবে।
নিয়ত অর্থ সংকল্প। এটি মনের বা অন্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি
বিষয়। এতে নেই কোনো কষ্ট-ক্লেশ, নেই কোনো মেহনত-মুজাহাদা। প্রত্যেক কাজে, তা দ্বীনী
কাজ হোক কিংবা দুনিয়াবী, শুরুতেই নিয়তকে শুদ্ধ করা কর্তব্য। সমস্ত কাজ মহান মাওলা উনার
সন্তুষ্টি মুবারকের জন্য করার দৃঢ় সংকল্পই হচ্ছে বিশুদ্ধ নিয়ত। এই নিয়ত মু’মিন বান্দা-বান্দী
উনাদের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রায় সমস্ত কাজকেই
নেকীর কাজে পরিণত করতে পারে। যেমন হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “নিশ্চয়ই
সমস্ত আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।” অর্থাৎ প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান বিশুদ্ধ নিয়তের
উপর নির্ভরশীল। (বুখারী শরীফ)
উত্তম নিয়তের কারণে মানুষ আমলের সওয়াব পাবে; পক্ষান্তরে
নিয়তের ভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতার কারণে সে হবে প্রশ্নের মুখোমুখি। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে
ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে একনিষ্ঠ মনে শাহাদাত গ্রহণের প্রার্থনা করবে মহান
আল্লাহ পাক তিনি তাকে শহীদের মর্যাদা দান করবেন; যদিও সে স্বীয় বিছানায় মৃত্যুবরণ করে।”
(মুসলিম শরীফ)
আরেক পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে তাবুক জিহাদের ময়দানে
উপস্থিত হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে আখিরী রসূল,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন, “নিশ্চয়ই মদীনা শরীফ শহরে এমন কিছু মানুষ রয়েছে, (তাবুক পর্যন্ত) প্রতিটি পথে
প্রান্তরে; প্রতিটি টিলা-টক্করে উনারা আপনাদের সাথেই ছিল। উনারাও আপনাদের মতো জিহাদের
ফযীলত হাছিল করবে। কারণ পূর্ণ নিয়ত থাকা সত্ত্বেও অসুস্থতা বা অন্য কোনো ওযর উনাদের
জিহাদে অংশগ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।” (মুসলিম শরীফ)
এই উভয় পবিত্র হাদীছ দ্বারা বোঝা যায় যে, শুধু নিয়তের আমলটির
কারণে যে কোনো মহৎ ও ফযীলতপূর্ণ আমলের ফযীলত তাঁদের মতোই পাওয়া যাবে যাঁরা কষ্ট-সাধনার
মাধ্যমে নিজেরা এই আমলগুলি সম্পাদন করেছে। অথচ সে ব্যক্তি পূর্ণ ইখলাসের সাথে ঐ আমলের
শুধু নিয়তই করেছিল। আর কিছুই করতে পারেনি। অতএব, যে কোনো উত্তম ও কল্যাণমূলক কাজের
জন্য ইখলাছের সাথে বেশি বেশি নিয়ত করা উচিত। সাথে সাথে বেঁচে থাকা উচিত ভ্রষ্ট নিয়ত
এবং ভ্রান্ত লক্ষ্য মনে পোষণ করা থেকে।
হযরত উরস বিন উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা
করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন, “যখন পৃথিবীতে কোথাও কোনো পাপ কাজ সংঘটিত হয়, তখন যে ব্যক্তি উক্ত স্থানে
উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও উহাকে ঘৃণা করে সে ব্যক্তি যেন উহা হতে দূরে ছিলো। আর যে ব্যক্তি
দূরে থেকেও উক্ত পাপ কাজের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সে এরূপ যেন তথায় উপস্থিত ছিলো।”
(আবূ দাউদ, মিশকাত শরীফ)
মূলত, সমস্ত কাজে নিয়ত বিশুদ্ধ রাখা জরুরী। ইখলাছের সাথে
কোনো সৎ কাজের জন্য পরিশুদ্ধ নিয়ত করলে কোনো কারণে এ কাজটি করতে না পারলেও শুধু নিয়তের
কারণে ঐ কাজের উপর আমল করার সওয়াব পাওয়া যাবে। আবার ভ্রষ্ট নিয়তের কারণে বড় ধরনের উত্তম
ও নেক আমলেরও সামান্য মূল্য থাকবে না।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে সমস্ত নেক
আমলের জন্য ইখলাছপূর্ণ ও বিশুদ্ধ নিয়তের তাওফীক দান করুন। (আমীন)
No comments:
Post a Comment