১৯৪১-এর গোড়ায়
২৮০০টা রুপার বাট আর ৮৫ জন কর্মী নিয়ে লিভারপুলের উদ্দেশ্যে কলকাতা ছেড়েছিল এসএস গেয়ারসোপ্পা।
সঙ্গে ছিল নৌসেনার পাহারাদার জাহাজও। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে পুরোদমে। যুদ্ধের
খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ব্রিটেন। ধুঁকতে থাকা রাজকোষের হাল ধরতে শেষমেশ ভারত থেকে
লুণ্ঠন করে পাচার করা হয়েছিল এই জাহাজ ভর্তি রুপা।
কিন্তু আয়ারল্যান্ডের
দক্ষিণে পৌঁছনোর পরই নাবিক খেয়াল করে যে, জ্বালানি প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। তাই
কনভয় ভেঙে সে গালওয়ের দিকে মুখবদল করে জাহাজের। উত্তাল ঝড়ের সঙ্গে প্রতিদিন পাল্লা
দেয়া তো আছেই। কিন্তু তার থেকেও ভয়ানক ঘটনা ঘটে এক দিন। হঠাৎই তারা নজরে পড়ে যায় নাৎসি
বাহিনীর। ১৭ ফেব্রুয়ারি জার্মান ডুবোজাহাজের হানায় জাহাজটি তলিয়ে যায়।
প্রাণ বাঁচাতে
লাইফবোট ভাসিয়েছিলো ৩০জন কর্মী। তাদের সঙ্গে না ছিল পানি, না ছিল খাবার-দাবার। তীরের
খোঁজে ১৩ দিন কাটিয়ে শেষমেশ বালির চরে পা রেখেছিলো মোটে এক জনই রিচার্ড এরেস।
১৯৪১ থেকে ২০১১
ঈসায়ী। সত্তর বছর পর মার্কিন সংস্থা ওডিসি’র চোখে পড়ে গেয়ারসোপ্পা। ৪১২ ফুটের বিশাল
জাহাজ ডুবে রয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০ মাইল নিচে। টাইটানিকের গভীরতা থেকেও যা কিনা
বেশ কিছুটা বেশি। চার বছর ধরে ব্রিটেনের টাকশাল আর ওডিসি’র যৌথ উদ্যোগে চলছে উদ্ধার
কাজ।
আটলান্টিক থেকে
২৭৯২টা রুপার বাট তুলে আনতে পেরে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত গোটা কর্মকা-ের অধিনায়ক অ্যান্ড্রু
ক্রেগ। তার কথায়, এমনটাও যে হতে পারে, আগে ভাবাই যেত না। ক্রেগ অবশ্য কৃতিত্ব দিতে
চায় নতুন পদ্ধতিকেই। জানালো, আটলান্টিকের গর্ভে তারা নামিয়েছিলো দূরনিয়ন্ত্রিত সন্ধানী
নৌযান। আর তাতেই সাফল্য। সাড়ে তিন ঘণ্টায় শেষ উদ্ধারকাজ।
তবে উদ্ধার
হওয়া রুপার ৮০ শতাংশই রাখবে মার্কিন সংস্থা ওডিসি উদ্ধারখরচ বাবদ। মোটে ২০% থাকবে ব্রিটেনের
টাকশালে। গ্যারিসনের নাম লেখা রুপার মুদ্রা হয়তো এ মাসের শেষেই নিলামে উঠাবে সাম্রাজ্যবাদী
হানাদাররা।
No comments:
Post a Comment