Monday, June 30, 2014

খোশ আমদেদ মাহে রমাদ্বান শরীফ ॥ রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে শুরু হলো মাহে রমাদ্বান শরীফ

খোশ আমদেদ মাহে রমাদ্বান শরীফ। ২৯ জুন (২০১৪) রোববার ছিল ৩০ মাহে শা’বান শরীফ। কাজেই আজ ৩০ জুন (২০১৪) সোমবার শরীফ পবিত্র মাহে রমাদ্বান শরীফ। সে হিসেবে রোববার দিবাগত রাতে সাহরি খেয়ে আজ ৩০ জুন (২০১৪) সোমবার শরীফ হতে রোযা পালন করেছেন বাঙালি মুসলিম উম্মাহ। অর্থাৎ আজ পহেলা রমাদ্বান শরীফ।



হিজরী সনের নবম মাস রমাদ্বান শরীফ। এ রমাদ্বান শরীফ মাসই রোযা তথা সিয়াম পালনের নির্ধারিত সময়। তাই বিশ্বের মুসলমানগণ উনারা এ মাসে একই নিয়ম-পদ্ধতিতে এবং একই নীতি অনুসারে টানা একমাস রোযাব্রত পালনে সচেষ্ট হন। সুবহে সাদিক অর্থাৎ সূর্যোদয়ের আগ থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব ধরনের পানাহার, ইন্দ্রিয় তৃপ্তিমূলক কাজ এবং যাবতীয় অনাচার থেকে বিরত থাকার নামই রোযা।
সিয়াম বা রোযা পালন ইসলামী জগতের আমীর-বাদশাহ, রাজা-প্রজা, ধনী-দরিদ্র, ফকির-মিসকিন সবশ্রেণীর বয়ঃপ্রাপ্ত নর-নারীর উপরই ফরয (বাধতামূলক)। টানা একমাস সিয়াম পালন মানবকুলকে ত্যাগ, সংযম, তিতিক্ষা, সাম্য, মৈত্রী, পরস্পর ভ্রাতৃত্ববন্ধন ও সহনশীলতার শিক্ষা দেয়। বিশেষত ইসলামী দুনিয়ার বিত্তবান ধনী সম্প্রদায় এ ব্রত পালনের মাধ্যমে সমাজের নিঃস্ব, গরিব-দুঃখীর ক্ষুধা-তৃষ্ণার জঠর জ্বালা-যন্ত্রণা কেমন তা আপন অভিজ্ঞতায় হৃদয়ঙ্গম করতে সমর্থ হন। যেহেতু তারা চিরদিন সুখের অঙ্কে লালিত-পালিত, অভাব-অনটন এবং অনশনের দহনে কখনও পোড়েনি, তারা ক্ষুধাতের্র অন্তরের দুঃখ এবং অনশনক্লিষ্ট মানুষের দুঃখ-বেদনা কেমন তা বুঝতে পারেনি। তাই এই রমযানে সিয়াম পালনের মাধ্যমেই তা অবগত হন।
এটা এমন মাস প্রথম ১০ দিন রহমত, মধ্যম ১০ দিন মাগফিরাত আর শেষ ১০ দিন হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি বা নাজাতের। আর যে এ মাসে নিজ গোলাম-বাঁদীদের (অধীনদের) প্রতি কার্যভার কমাবে; মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি তাকে মাফ করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন। (মিশকাত শরীফ)
পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনাকে স্বাগত জানাতে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে বিশেষ আয়োজন করতেন তা হলো- সাধারণত মুসলিম উম্মাহকে এ বরকতময় মাস আগমনের বিষয়ে সতর্ক করতেন।
পবিত্র রমযানে একটি বিষয় সতর্কতার সঙ্গে বিশেষভাবে সবাইকে বিবেচনায় রাখতে হবে, অতি মুনাফার লোভে নিত্যপণ্যের দাম যেন না বাড়ায় কেউ। রহমত মাগফিরাত ও নাজাতের এই মাসকে যথার্থ বিবেচনায় সকল মানুষের সুখই প্রত্যেকের সুখ- এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে সবার আগে।
এই মহান মাসের প্রতিটি দিন-ক্ষণ অতীব ফযীলতপূর্ণ। তবে আরো অধিক বরকতময় ও ফযীলতপূর্ণ কতকগুলো দিবস রয়েছে এ মাসে। যেমন- সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা হযরত যাহরা আলাইহিস সালাম উনার মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত বিছাল শরীফ উনার দিবস হচ্ছে পবিত্র ৩রা রমাদ্বান শরীফ।
 আর উম্মুল মু’মিনীন হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম, উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম; আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, ইমামুল আউওয়াল, বাবুল ইলম, দামাদে রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাদের পবিত্র বিছাল শরীফ উনার দিবস হচ্ছে পবিত্র ১৭ই রমাদ্বান শরীফ এবং উক্ত দিবসেই পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রথম জিহাদ- ‘বদর জিহাদ’ সংঘটিত হয় এবং পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় সংঘটিত হয়।
সুমহান মহাপবিত্র ১৮ রমাদ্বান শরীফ সাইয়্যিদাতুনা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ দিবস।
মহামহিমান্বিত আযীমুশ শান ৯ই রমাদ্বান শরীফ- খলীফাতুল উমাম, লখতে জিগারে মুজাদ্দিদে আ’যম, মুজাদ্দিদে আ’যমে ছানী, কুতুবুল আলম, ওলীয়ে মাদারযাদ, ছাহিবুল খাইর, মুত্বহিরুল আ’যীম, নূরে মুকাররম, শামসে ইলাহী, মাহবুবে ইলাহী, নূরে রহমানী, ছাহিবে জামিউল মাক্বামত, জামিউল আলক্বাব, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত শাহযাদা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল সম্মানিত বিলাদত শরীফ। যা আমাদের জন্য তথা কুল-কায়িনাতের জন্য সব ঈদের সেরা ঈদ।
এদিকে পহেলা রমাদ্বান শরীফ হচ্ছে- সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিলাদত শরীফ উনার সুমহান দিন। তিনি ইলমে তাছাওউফের বিশ্ববিখ্যাত এবং মশহুর তরীক্বা ক্বাদিরিয়া তরীক্বা উনার সম্মানিত ইমাম এবং বুযুর্গ পিতা-মাতা রহমতুল্লাহি আলাইহিমা উনাদের উভয় দিক থেকে তিনি আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার পবিত্র বিলাদত শরীফ উপলক্ষে তাই সকল মুসলমানদের উচিত- উনার পবিত্র জীবনী মুবারক আলোচনা করা, মীলাদ শরীফ ও দোয়ার মাহফিলের আয়োজন করা।
বিশেষভাবে আরো উল্লেখ্য যে, ২৬ ছানী ১৩৮২ শামসী, ২৫ জুলাই ২০১৪ ঈসায়ী, ইয়াওমুল জুমুয়াহ বা জুমুয়াবার শরীফ দিবাগত রাত হচ্ছে ‘পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর’।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার হাক্বীক্বী হক্ব আদায় করার এবং তাক্বওয়া হাছিল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

No comments:

Post a Comment