Saturday, July 5, 2014

সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ আছ ছালিছা সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে কুলসুম আলাইহাস সালাম উনার সুমহান শান মুবারক প্রসঙ্গে


মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাচ্ছি না। আর চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও; তাহলে তোমাদের জন্য ফরয হচ্ছে আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়া।” (পবিত্র সূরা শূরা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে, “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুনা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছি, তিনি পবিত্র (বিদায়) হজ্জে পবিত্র আরাফা শরীফ উনার দিন উনার ‘কাছওয়া’ নামক উষ্ট্রীর উপর সওয়ার অবস্থায় খুতবা দান করছেন। আমি শুনেছি, তিনি মুবারক খুতবায় বলেছেন, হে লোক সকল! আমি তোমাদের মাঝে এমন নিয়ামত রেখে যাচ্ছি, তোমরা যদি শক্তভাবে ধরে রাখো, তবে কখনো গুমরাহ হবে না। তাহলো মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব ও আমার ইতরাত তথা হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা।” (পবিত্র তিরমিযী শরীফ, পবিত্র মিশকাত শরীফ)
মশহূর ও ছহীহ্ মতে, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ৪ জন সম্মানিত আবনা ও ৪ জন সম্মানিতা বানাত আলাইহিমুস সালাম উনারা দুনিয়াতে তাশরীফ নিয়েছিলেন। নিচে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিনতু সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত উম্মে কুলসুম আলাইহাস সালাম উনার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
* সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত উম্মে কুলসুম আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে তৃতীয়া এবং মহাসম্মানিতা আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে ষষ্ঠ।
* তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদীজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র রেহেম শরীফ উনার মধ্যে মুবারক তাশরীফ নেন।
* তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নবুওয়াত প্রকাশের ৫ বছর পূর্বে ৬০৬ ঈসায়ী সনে পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন।
 * উনার প্রথম শাদী অল্প বয়স মুবারক-এ আবু লাহাবের পুত্র উতায়বা’র সাথে হয়েছিল, যা ছিল ইজাব কবুলের ন্যায় অর্থাৎ উনাকে স্বামীর গৃহে যেতে হয়নি। পরবর্তীতে যখন পবিত্র ‘সূরা লাহাব’ শরীফ নাযিল হলো, তখন উতায়বা থেকে তিনি পৃথক হয়ে যান।
* পরবর্তীতে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত রুকাইয়া আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণের পরে তৃতীয় হিজরী সনের পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে (৬২৪ ঈসায়ী সনে) আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে শাদী মুবারক সম্পন্ন হয়। সেই বছরের পবিত্র জুমাদাল উখরা মাসে প্রায় ২১ বছর বয়স মুবারক-এ উনার স্বামীগৃহে তাশরীফ মুবারক নেন। (পবিত্র তাবাকাত শরীফ)
* আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সাথে শাদী মুবারক হওয়ার ৬ বছর পর হিজরী নবম সালে ৬৩০ ঈসায়ী সনে ৬ রমাদ্বান শরীফ প্রায় ২৭ বছর বয়স মুবারক-এ সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত উম্মে কুলসুম আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং উনার জানাযা নামায পড়ান। হযরত আসমা বিনতে উমায়স রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং হযরত ছাফিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনারা উনাকে গোছল মুবারক দেন।
মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।” অর্থাৎ আপনাদেরকে পূত-পবিত্র হিসেবেই সৃষ্টি করা হয়েছে। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, তোমরা আল্লাহ পাক উনাকে মুহব্বত করো। কেননা, তিনি তোমাদের প্রতি খাদ্যসামগ্রীর মাধ্যমে অনুগ্রহ করে থাকেন। আর আমাকে মুহব্বত করো আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে, যেহেতু আমি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব। আর আমার হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার মুহব্বতে।” (পবিত্র তিরমিযী শরীফ)
তাই উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মাধ্যমে সহজে উপলব্ধি করা যায়- হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে জানা ও উনাদেরকে মুহব্বত করা হচ্ছে ঈমান।
অতএব, পবিত্র ঈমান উনার প্রকৃত স্বাদ অনুধাবন করতে হলে আমাদেরকে অবশ্য অবশ্যই সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ আছ ছালিছা, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে কুলসূম আলাইহাস সালাম উনার শান মুবারক জানতে হবে এবং জানার জন্য সর্বাত্মক কোশেষ করতে হবে।

No comments:

Post a Comment