Monday, February 1, 2016

মা’রিফাত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি, কুরবত-নৈকট্য, তালাশকারিনী মহিলাগণ উনাদের উদ্দেশ্যে .


সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
لوكنت امرا لاحد ن يسجد لاحد لامرت المراة ان تسجد لزوجها
অর্থ: “আমি যদি কাউকে সেজদা করার আদেশ দিতাম তাহলে মহিলাদেরকে আদেশ দিতাম, তারা যেন তাদের স্বামীদেরকে সেজদা করে।” (সুনানুল কুবরা শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফাত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি, কুবরত-নৈকট্য তালাশকারিনী মহিলাগণ উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফখানার আলোকে আমল করে থাকেন। উনারা উনার স্বামীর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টিকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি মনে করে থাকেন। 

মহিলাগণ উনারা যদি নিম্ন লিখিত বিষয়গুলোর প্রতি সর্বদা গভীর দৃষ্টি রাখেন তাহলে মা’রিফাত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি-রেযামন্দি, তায়াল্লুক-নিসবতপ্রাপ্তির বিষয়টি অতীব সহজ হবে-
১) স্বামী বাইরে থেকে এলে উনাকে আহলান-সাহলান (স্বাগতম) জানানোর জন্য আহলিয়া (স্ত্রী)কে দরজায় এগিয়ে আসা। স্বামীর হাতে কোনো জিনিসপত্র থাকলে তা নিজের হাতে নেয়ার চেষ্টা করা।
২) স্বামী বাইরে থেকে আসলে বাতাসের ব্যবস্থা করা। সাথে সাথে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা।
৩) সময় ও মেজাজ বুঝে স্বামীর সাথে মুহব্বত-ভালোবাসা মিশ্রিত কথা-বার্তা বলা। স্বামীর সামনে উনার ভালো গুণাবলীর কথাগুলো উল্লেখ করে উনার প্রশংসা করা। উনার সম্মান-মর্যাদা বজায় রাখা।
৪) বিশেষ বিশেষ দিন বা উপলক্ষে স্বামীর হাতে, কপালে বুছা দেয়া।
৫) স্বামীর পোশাক-পরিচ্ছদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা। (মনে রাখতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পুরুষ মানেই তার আহলিয়া (স্ত্রী) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন)
৬) রান্না-বান্নার ক্ষেত্রে স্বামী যা পছন্দ করেন, যেভাবে পছন্দ করেন, তা নিজ হাতে প্রস্তুত করতে সচেষ্ট থাকা।
৭) স্বামীর সামনে সব সময় হাস্যজ্জ্বল বদনে থাকা।
৮) স্বামীর সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে সুসজ্জিত রাখা। শরীরে দুর্গন্ধ থাকলে কিংবা রান্না-বান্নার পোশাকে উনার সামনে না যাওয়া।
৯) স্বামীর সামনে কখনোই নিজের কণ্ঠস্বরকে উচু না করা। স্মরণ রাখতে হবে, মহিলাগণ উনাদের সৌন্দর্য উনাদের নম্র কন্ঠে।
১০) সন্তানগণের সামনে স্বামীর প্রশংসা ও ছানা-ছিফত করা।
১১) নিজের এবং স্বামীর পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও আত্মীয় স্বজনদের সামনে স্বামীর প্রশংসা করা এবং শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরা। কখনোই স্বামীর বিরুদ্ধে উনাদের নিকট কোনো অভিযোগ না করা।
১২) সুযোগ-সুবিধা বুঝে স্বামীকে নিজহাতে লোকমা তুলে খাওয়ানো।
১৩) কখনো স্বামীর আভ্যন্তরীণ গোপন বিষয় অনুসন্ধান না করা। তাতে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
১৪) স্বামী কখনো রাগাম্বিত হলে চুপ থাকা। সম্ভব হলে স্বামীর রাগ থামানোর ব্যবস্থা করা। যদি তিনি অন্যায়ভাবে রেগে থাকেন, তাহলে অন্য সময়ে উনার মেজাজ-মর্জি বুঝে সমঝোতার ব্যবস্থা করা।
১৫) কখনোই মুখে মুখে তর্ক-বিতর্ক করা যাবে না। কেননা, তাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিচ্ছন্নতা তথা বিচ্ছেদ দেখা দেয়।
১৬) স্বামীর মাতা-পিতাকে নিজের পক্ষ থেকে মাঝে মাঝে সাধ্যানুযায়ী কিছু কিছু হাদিয়া দেয়া।
১৭) সম্পদশালী হয়ে থাকলে স্বামীর অভাব-অনটনের সময় উনাকে সহযোগিতা করা।
উম্মুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “একদিন আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আরজ করলাম- ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!! (আমার পূর্ব স্বামী) আবু সালামার সন্তানদের জন্য যদি আমি অর্থ ব্যয় করি তবে কি তাতে আমি প্রতিদান পাবো? তাদেরকে তো আমি এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না। তারা তো আমারই সন্তান। তিনি বললেন- হ্যাঁ; তাদের জন্য আপনি যে পরিমাণ সম্পদ খরচ করবেন তার প্রতিদান আপনাকে দেয়া হবে।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
১৮) স্বামীর আদেশ-নিষেধ পালন এবং উনার সংসারে খিদমত ইত্যাদির মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি, নৈকট্য, কুরবত মুবারক কামনা করা।
১৯) ধন-সম্পদ, মান-সম্মান, প্রভাব-প্রতিপত্তি হাদিয়া উপঢৌকন ইত্যাদি যা প্রাপ্তি ঘটে তা স্বামীর উসীলায় হয়েছে বলে মনে করা।

No comments:

Post a Comment