যদিও সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতু
নিসায়ি আহলিল জান্নাহ,
উম্মুল মু’মিনীন, উম্মুল কায়িনাত আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম
তিনি নিম্নোক্ত বিষয়গুলো থেকে ছিলেন সম্পূর্ণরূপে পবিত্র থেকে পবিত্রতম। এরপরও বর্ণনায়
যা এসেছে তা হচ্ছে- বয়স মুবারক বৃদ্ধি পাওয়ায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আনজামে ব্যঘাত হচ্ছে কিনা এ আশঙ্কায়
বারবার দুঃখ প্রকাশ করতেন এবং মহান আল্লাহ তায়ালা উনার দরবারে ক্রন্দন করে ফরিয়াদ মুবারক
করতেন, ওগো পরম করুণাময় মহান আল্লাহ পাক! আমি আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আপনার প্রিয়তম
রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
খিদমত মুবারক যেন করে যেতে পারি। এইজন্য তাওফীক চাই।
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি নিজের মারীদ্বী শান অবস্থা অনুভব করে নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সারা জীবনের খিদমত
মুবারক সম্পর্কে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। যদিও তিনি তা থেকে ছিলেন সম্পূর্ণরূপে পবিত্র
থেকে পবিত্রতম। সুবহানাল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে সান্তনা মুবারক প্রদান করে উনার জীবনের সর্বশক্তি মুবারক
দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি
ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি অতুলনীয় খিদমত মুবারক, সীমাহীন দান-বদান্যতা
মুবারক ও সীমাহীন আত্মত্যাগ মুবারক সম্পর্কীয় কথা উল্লেখ করে পরকালে উনার সৌভাগ্যের
সুসংবাদ শুনিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এমনি মুহূর্তে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি অন্তিম শয্যাবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আরজ মুবারক করেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম! আমার বিদায় বা পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পর আপনি দয়া
করে আমার গোসল মুবারক দিবেন এবং আপনার কাপড় মুবারক দ্বারা আমার কাফনের কাপড় প্রস্তুত
করবেন বলে আমি আবেদন মুবারক করছি। আর আমার রওযা মুবারক-এ হযরত মুনকার ও নকীর ফেরেশতা
আলাইহিমাস সালাম উনাদের সুওয়ালের জাওয়াব মুবারকও দিয়ে দিবেন, এ মর্মে আরজু
মুবারকও পেশ করছি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি বলেন, আপনার সমস্ত আরজু মুবারকই আমি অবশ্য অবশ্যই পূরণ করবো।
কিছুক্ষণ পরেই নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম কোল মুবারক-এ
ও হাত মুবারক উনার তালু মুবারক-এ মাথা মুবারক রেখে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্রতম ইতমিনানের সাথে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ
পাক উনার পবিত্রতম দীদার মুবারক-এ প্রস্থান করেন।
অতঃপর উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পর পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার
বিধান অনুযায়ী গোসল মুবারক করিয়ে বরকতময় কাফন মুবারক পড়িয়ে দাফন মুবারক সম্পন্ন করা
হলো তখন অবশ্য জানাযা মুবারক পড়ার বিধান নাযিল হয়নি। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস
সালাম উনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উনার গোসল মুবারক সম্পন্ন করে উনার কাপড় দ্বারা উনাকে
কাফন মুবারক পড়ালেন এবং নিজ হাত মুবারকে রওজা মুবারক উনার মধ্যে নামালেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা
অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
যখন উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার দাফন মুবারক সম্পন্ন করলেন, এর কিছুক্ষণের
মধ্যে সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা চলে গেলেন, তখন তিনি
উনার রওজা মুবারক উনার পাশে অনেকক্ষণ অবস্থান করলেন, এরপর উনার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা
উনার দরবারে দুয়া মুবারক করে চলে আসলেন। হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ দৃশ্য
দেখে জিজ্ঞাসা করলেন,
ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে তো ইতঃপূর্বে
কোনো মৃত ব্যক্তির কবরের পাশে অবস্থান করতে দেখিনি। জাওয়াবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন আমার জীবনের সবচেয়ে বেশি মুহব্বতের চির সঙ্গিনী।
উনার উপর আমার অনেক হক্ব রয়েছে।
মৃত ব্যক্তিকে কবরস্থ করার পর উভয় দিক হতে মাটি এসে মৃত ব্যক্তিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে
ফেলে। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি কবরের আযাবের প্রতি অত্যন্ত
ভয় করতেন। অবশ্যই তিনি তা থেকে পবিত্র থেকে পবিত্রতম। পবিত্র বিছাল শরীফ উনার পূর্বে
তিনি আমার থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন। আমি সেই ওয়াদা পালন করার জন্যই ঐরূপ করেছি।
উনার দাফন মুবারক সুসম্পন্ন করার পর আমি হযরত মুনকার-নাকীর ফেরেশতাদ্বয় আলাইহিমাস সালাম
উনাদের সুওয়ালের জাওয়াব মুবারক দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার
পর হযরত জিবরীল আলাইহিস্ সালাম তিনি এসে আমাকে জানালেন, ইয়া রসূলাল্লাহ
ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কি জন্য এখানে অপেক্ষা করছেন? আপনি যে কারণে
এখানে অপেক্ষা করছেন তা তো ফায়ছালা হয়ে গেছে। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন
তিনি হযরত মুনকার-নাকীর ফেরেশতাদ্বয় আলাইহিমাস সালাম উনাদের ডেকে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার তরফ থেকে সুওয়ালের জাওয়াব মুবারক দিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
আপনাকে এ সংবাদ জানানোর জন্যই আমাকে পাঠানো হয়েছে। এখান থেকে মৃত ব্যক্তিকে তালক্বীন
দেয়ার সূত্রপাত ঘটে। যা করাটা খাছ সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।
পবিত্রতম বিছালী শান মুবারক
প্রকাশ করার তারিখ: আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের পর দশম বর্ষে পবিত্র ১৭ই
রমাদ্বান শরীফে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি প্রায় পঁয়ষট্টি বছর বয়স মুবারকে
ইহজগত থেকে বিদায় নেন। তিনি ৪০ বছর দুনিয়াবী বয়স মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম হুজরা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ
মুবারক গ্রহণ করেন। তিনি প্রায় সুদীর্ঘ ২৫ বৎসর পর্যন্ত দুনিয়াবী জিন্দেগী মুবারক-এ
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম
খিদমত মুবারক-এ নিজের জীবন মুবারক অতিবাহিত করেন। সুবহানাল্লাহ! পনের বৎসর আনুষ্ঠানিক
নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের পূর্বে এবং দশ বৎসর আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের
পর। উনাকে ‘হুযূন’ নামক স্থানে সমাহিত করা হয়। যা বর্তমানে ‘জান্নাতুল মুয়াল্লাহ’ নামে পরিচিত।
উনার পবিত্র বিছাল শরীফ উনার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক জীবনের অন্যতম একটি অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটে।
তিনি হচ্ছেন পবিত্রতম আহলে
বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যমণি। আর পবিত্রতম আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম
উনাদের সীমাহীন শান-মান,
বুযুর্গী, মর্যাদা, খুছুছিয়ত ও পবিত্রতা মুবারক- সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ
উনার অনেক পবিত্র আয়াত শরীফে এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অসংখ্য হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত
রয়েছে। যা মানুষের বর্ণনা,
কল্পনা ও চিন্তাশক্তির সীমাহীন ঊর্ধ্বে। সুবহানাল্লাহ! পবিত্র
দ্বীন ইসলাম উনার প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি ক্ষেত্রে উনার অবদান মুবারক
অপরিসীম, উনাকে ব্যতীত পবিত্র দ্বীন ইসলাম, পবিত্র ঈমান ও মুসলমান উনাদের অস্তিত্ব
কল্পনা করা যায় না।
আয় আল্লাহ পাক! আপনি উনার প্রতি
সর্বোচ্চ হুসনে-যন,
মুহব্বত, তায়াল্লুক, নিসবত, ইতায়াত, রেযামন্দি-সন্তুষ্টি ও হাক্বীক্বীভাবে অনুসরণের জন্য বর্তমান
যামানার যিনি খাছ লক্ষ্যস্থল, ইমামুল আইম্মাহ, মুহইস সুন্নাহ, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, রাহবারে আ’যম, হাবীবে, নূরে মুকাররম, জামিউল আলক্বাব, আওলাদুর রসূল, সাইয়্যিদে
মুজাদ্দিদে আ’যম, আস্ সাফ্ফাহ,
সাইয়্যিদুনা হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার- ছাহিবাতুল
মুকাররমাহ, উম্মুল খায়ের,
আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আ’লাম, সাইয়্যিদাতু
নিসায়িল আলামীন, মহিলাজাতির মুক্তির দিশারী, ত্বাহিরা, ত্বইয়িবা, নূরে মুকাররম, নূরে মুয়াযযাম, আখাছ্ছুল
খাছ আওলাদুর রসূল,
ক্বায়িম-মাক্বামে হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম, উম্মুল উমাম, সাইয়্যিদাতুনা
হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মুবারক ছোহবত, মুহব্বত, তায়াল্লুক, নিসবত ও হাক্বীক্বীভাবে
অনুসরণ-অনুকরণ করার আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন। আমীন
No comments:
Post a Comment