মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা আলাইহিস সালাম উনাকে যেরূপ পূর্বেই
মনোনীত করে রেখেছেন, তদ্রূপ সাইয়্যিদাতুনা
হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও মনোনীত করেই দুনিয়াতে প্রেরণ
করেছেন। সঙ্গতকারণেই উনাদের শাদী মুবারক ছিলো মহান বারী তায়ালা কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত।
তাই তো অন্যান্য মহিলাদের প্রস্তাবনা বাতিল করে উনাদের শাদী মুবারক সম্পন্ন হয়।
বিশ্ব
বিখ্যাত ‘আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আ’লাম’ কিতাবে উল্লেখ আছে-
قال حسن بن احـمد البكرى رحمة الله
عليه لـما اراد الجليل جل جلاله ان ينقل نور سيدنا محمد صلى الله عليه وسلم حرك فى
قلب عبد الله بن عبد الـمطلب عليه السلام ان يتزوج فقال عبد الله عليه السلام لامه
عليها السلام اريد منك ان تـخطبى لى امراة ذات حسن وجمال وقد اعتدال وبـهاء وكمال وحسب
ونسب عال، قالت حبا وكرامة يا ولدى ثـم انـها دارت احياء قريش وبنات العرب، فلم يعجبها
الا امنة بنت وهب عليها السلام، فقال يا اماه انظريها مرة ثانية، فمضب ونظرتـها فاذا
هى تضىء كانـها كوكب درى،
অর্থ: হযরত হাসান বিন আহমদ বাকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি
তিনি বলেন, যখন মহান আল্লাহ জাল্লা জালালুহু
তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর
মুবারককে উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার খিদমতে স্থানান্তরিত করার
ইচ্ছা মুবারক করলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত
যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক অন্তরে পবিত্র নিকাহ করার আগ্রহ সৃষ্টি করে
দিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম তিনি উনার মুহতারামা আম্মাজান উনাকে
বললেন, আমি চাচ্ছি আপনি আমার সাথে
একজন আহলিয়াকে নিকাহের মাধ্যমে সম্পর্ক করে দেন; যিনি হবেন উত্তম চরিত্রের অধিকারিনী, সুদশর্না, ন্যায়-নিষ্ঠাবান,
জ্যোতির্ময়, পূর্ণতাপ্রাপ্তা ও সুউচ্চ বংশ ও গোত্রের ব্যক্তিত্বা।
উনার মাতা তিনি উত্তরে বললেন, হে আমার স্নেহের সম্মানিত
আওলাদ! আপনার জন্যই সমস্ত মুহব্বত ও সম্মান-ইজ্জত। অতপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ
আলাইহিস্ সালাম তিনি উনার মুহতারামা আম্মাজান তিনি কুরাইশ বংশের ও আরবের সকল কুমারী
মেয়েগণের ব্যাপারে প্রতিটি বাড়ি থেকে সংবাদ নিলেন। উনার কাছে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন
হযরত আমিনা বিনতে ওয়াহাব আলাইহাস সালাম তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে উপযুক্ত মনে হলো না।
বলা হলো, হে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ
আলাইহিস সালাম উনার মাতা! আপনি দ্বিতীয়বারের মতো আবারো উনাকে দেখুন। অতএব, তিনি আবারো দেখলেন এমতাবস্থায় যে, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম তিনি নূরানী
আলোকময়, যেন মুক্তা সাদৃশ্য তারকা।
সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক শানে ‘মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া’ কিতাবে উল্লেখ আছে-
وهى يومئذ افضل امراة فى قريش نسبا وموضعا
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন কুরাইশ তথা কায়িনাতের সমস্ত মহিলা হতে মুবারক বংশ ও
সামগ্রিকভাবে সর্বশ্রেষ্ঠা।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যেহেতু নূরে হাবীবী মুবারক ধারণের জন্য মনোনীত হয়েই দুনিয়ার
যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন, সেহেতু সর্ব বিষয়ে
তিনি একক ও স্বতন্ত্র খুছুছিয়ত মুবারক উনার অধিকারী। উনার হুলিয়া মুবারক, হুসনিয়াত মুবারক, ইলম মুবারক, খুলক্ব মুবারক,
উসওয়াতুন
হাসানাহ মুবারকসহ সামগ্রিকভাবে সারা কায়িনাতে তিনি ছিলেন অনন্যা। তাছাড়া পূর্ববর্তি
আসমানী কিতাবসমূহেও রয়েছে উনার ছিফত মুবারকের বর্ণনা। সঙ্গতকারণেই আরবের বিত্তশালী
অনেক পরিবার হতেই উনার ব্যাপারে প্রস্তাবনা এসেছে। এমনকি তৎকালীন তথাকথিত পরাশক্তি
রোম ও পারস্য সম্রাটদের পক্ষ হতেও অনেকবার প্রস্তাবনা এসেছে। যা বলার অপেক্ষা রাখে
না।
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম
উনার ব্যাপারে বিভিন্ন জনের পক্ষ হতে বারবার প্রস্তাবনা আসায়, উনার মুহতারাম পিতা হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম
তিনি কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়েন। আর এহেন পরিস্থিতিতে আসে খোদায়ী মুবারক ফায়সালা।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি একদা স্বপ্ন মুবারক
দেখেন। কেউ একজন উনাকে লক্ষ্য করে বলেন,
আপনি
আপনার মহা সম্মানিতা লখতে জিগার উনাকে নিয়ে চিন্তিত হবেন না। স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক
তিনি উনার হিফাযতকারী এবং সম্মানিত তত্ত্বাবধায়ক। আপনি এমন সৎ ও উত্তম পাত্রে উনাকে
পাত্রস্থ করুন, যিনি হচ্ছেন যাবীহুল্লাহিল
মুকাররাম আলাইহিস সালাম।
এই মুবারক স্বপ্ন দ্বারা এ কথা দিবালোকের ন্যায়
সুস্পষ্ট হয় যে, হযরত ওয়াহাব আলাইহিস
সালাম উনার মহাসম্মানিতা লখতে জিগার তিনি কেবল হযরত যবীহুল্লাহিল মুকাররাম আলাইহিস
সালাম উনার জন্য নির্ধারিত। হযরত ওয়াহাব আলাইহিস সালাম তিনি অন্যান্য সমস্ত প্রস্তাবনাই
বাতিল করে দেন।
বিশ্ব বিখ্যাত ‘আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আ’লাম’ কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,
فانقدوها اوقية من فضة واوقية من
ذهب، ومائة من الابل ومثلها من البقر والغنم وذبح واصلح طعام كثير،
অর্থ: এই মুবারক বিবাহে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু
রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নগদ এক আউকিয়া স্বর্ণ ও এক আউকিয়া রৌপ্য
মুবারক মোহর হিসেবে প্রদান করা হয়েছিলো। সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম
উনার নিকাহ মুবারক উনার ওলীমায় একশতটি উট,
একশত
গরু, একশত বকরী (অনুরূপভাবে খাসি, মেষ,
ভেড়া, দুম্বা,
ছাগল)
জবাই করা হয়েছিলো এবং প্রচুর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, আরবের মশহুর ওয়ালিমা অনুষ্ঠানের মধ্যে সাইয়্যিদুনা
হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ওয়ালিমা অনুষ্ঠান উল্লেখযোগ্য। সে সময় পবিত্র মক্কা শরীফ
এবং আশে-পাশের সকলকে মেহমানদারী করা হয়।
বিশ্ব বিখ্যাত ‘আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আ’লাম’ কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,
لاجل عرس عبد الله بن عبد الـمطلب
عليه السلام و زفت له ثـم اختلا بـها عبد الله عليه السلام فى خلوة الـطاعة عشبة، وكانت
ليلة الـجمعة روى انه لـما اراد الله ان يـخلق مـحمدا صلى الله عليه وسلم فى بطن امه
امنة عليها السلام ليلة الـجمعة من شهر رجب الاصم،
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত আমিনা আলাইহাস সালাম
উনাকে সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ফুল সজ্জিত ঘর মুবারকে পাঠানো
হলো। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার আহলিয়া উনার সঙ্গে
বিশেষ সাক্ষাৎ মুবারক লাভ করলেন। সেই মুবারক রাতখানা ছিলো লাইলাতুল জুমুয়াহ বা জুমুয়াহ
শরীফ উনার রাত। বর্ণিত রয়েছে যে, “যখন মহান আল্লাহ পাক
তিনি ইচ্ছা মুবারক করলেন যে, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত
উম্মু রসূলিনা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় খিদমত মুবারকে তাশরীফ মুবারক
নেন, সে সময়টি ছিলো রজবুল আছম্ম
মাস উনার ১লা লাইলাতুল জুমুয়াহ বা জুমুয়াবার রাত (লক্ষণীয় যে, সেই বছর রজব মাসের ১ম জুমুয়াবার ছিলো ১লা তারিখেই)।
সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ হযরত ওয়ালিদাইনিশ শরীফাইনে রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পবিত্র শাদী মুবারক পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ
উনার পহেলা তারিখে সংঘটিত হয়। সেই মুবারক রাত্রে উনাদের পবিত্র উরুস মুবারক সংঘটিত
হয়। এই সম্মানিত রাত্রি মুবারক পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ নামে অত্যধিক মশহুর। হাম্বলী
মাজহাবের সম্মানিত ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ পবিত্র
রাতকে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর ও পবিত্র লাইলাতুল বরাত উনাদের উপর প্রাধাণ্য দিয়েছেন।
তাছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফে ঘোষিত দোয়া কবুলের বিশেষ পাঁচ রাত্রি উনাদের মধ্যে রজব মাসের
প্রথম রাত অন্যতম। বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি
বলেন, পবিত্র ১২ই রবীউল আউওয়াল শরীফে
যেরুপ অসংখ্য মু’জিযা শরীফ জাহির হয়েছিল, ঠিক তদ্রƒপ পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফেও
অসংখ্য কুদরত ও মুজিযা শরীফ জাহির হয়েছিল।
No comments:
Post a Comment