=========================
মিয়ানমারের
আরাকানে (বর্তমান রাখাইন) রোহিঙ্গা মুসলিমদের মানবেতর জীবন আজকের নয়, শতাব্দীব্যাপী চলছে এই করুণ দশা। আরাকানের মুসলমানদের ইতিহাসে
দেখা যায়,
১৪শ’ শতাব্দীর প্রথম দিক
থেকে মুসলমানরা মিয়ানমারের আরাকান (বর্তমান রাখাইন) প্রদেশে শাসন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা
করে। তবে সেখানে বসবাস শুরু করে আরো বহু আগে। শুধু তাই নয়, বর্তমান রাখাইনে ১৫০০ শতক থেকে ১৮০০ শতক পর্যন্ত আরাকান মুসলিম
শাসিত রাজ্য ছিল। সেই হিসেবে প্রায় হাজার বছর ধরে রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারে বাস
করছে।
প্রারম্ভে ঠিক কতজন রোহিঙ্গা মুসলিম সেখানে বাস করতে শুরু করেন তার সঠিক তথ্য
জানা নেই। তবে ২০১২ সালের সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে বসবাস
করছে। তবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের সংখ্যা কোটিরও বেশি ছিল একসময়। কিন্তু যালিম বর্বর অসভ্য
মগ দস্যু ও হানাদার সরকারের গণহত্যার কারণে রোহিঙ্গা মুলিমদের সংখ্যা কমে গেছে।
অপ্রিয় হলেও
সত্য যে- রোহিঙ্গাদের দমিয়ে রাখার অন্যসব আইনের মতো জন্ম নিয়ন্ত্রণেও আইন করা আছে মিয়ানমারে।
সেখানে রোহিঙ্গাদের বিয়ে করতেও যালিম হানাদার হিংস্রতাবাদী বৌদ্ধ প্রশাসনের অনুমতি
নিতে হয়। আর দুটি সন্তানের বেশি নেয়া যায় না। কেবল দুটি সন্তানের বেশি জন্ম দিয়ে প্রায়
চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার পরিবার যালিম বর্মী সরকারের রোষানলে পড়ে অমানবিক জীবনযাপন
করছে।
মিয়ানমারের
বাইরে ঠিক কতজন রোহিঙ্গা বাস করছে তা বলা মুশকিল। তবে প্রাথমিক তথ্যে যতটুকু জানা যায়, তা হলো ২০১২ সালের পর বাংলাদেশে প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে।
এছাড়া সউদী আরবেও ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডেও
কিছু রোহিঙ্গা মুসলিম আশ্রয় নিয়েছে। তবে বাংলাদেশে বাস করা রোহিঙ্গার সংখ্যা আরো বেশি
হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ মিয়ানমার সরকার প্রতিনিয়তই তাদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে।
তাই তারা দেশ ছেড়ে পালানোর পথ খুঁজছে সবসময়। বাংলাদেশের সীমান্ত যেহেতু কাছে সুতরাং
তারা এদেশে প্রবেশের চেষ্টা যে সবসময় করে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
জাতিসংঘের
তথ্য মতে,
বতর্মান বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী হলো রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গারা
এত বছর একটি দেশে বসবাস করেও দেশটির নাগরিকত্ব পায়নি। ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু
জাতি হিসেবে মিয়ানমার স্বীকৃতি দিলেও রোহিঙ্গারা পায়নি সে স্বীকৃতি। নাগরিক সুবিধা
না পাওয়ায় তারা সর্বপ্রকার রাষ্ট্রীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত। মিয়ানমারের হানাদার বর্বর
কর্তৃপক্ষ সবসময় মিথ্যাচার করে আসছে- রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী। মিয়ানমারের হানাদার বর্বর
কর্তৃপক্ষের দাবি, রোহিঙ্গারা হলো ভারতীয়, বাঙালি ও চাঁটগাইয়া সেটেলার। যাদের ব্রিটিশরা আরাকানে এনেছে।
অথচ ঐতিহাসিকভাবে
এটা প্রমাণিত যে, ব্রিটিশরা বার্মা
শাসনে আসার আগ থেকেই রোহিঙ্গারা আরাকানে (বর্তমান রাখাইন) স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে বিকশিত
হয়েছিল। কিন্তু মিয়ানমারের বর্বর হানাদার বৌদ্ধ সরকার বরাবরই ওই ঐতিহাসিক সত্যকে অস্বীকার
করে আসছে। হানাদার সামরিকজান্তা সরকার কিংবা শান্তিতে কথিত নোবেল পাওয়া গণতন্ত্রকামী
দাবিদার অন সাং সুচির সরকার- সবাই কট্টর ইসলামবিদ্বেষী এবং সবাই রোহিঙ্গাদের অস্বীকার
করেছে। মানবিক দিকের চেয়ে বড় দিক হলো রোহিঙ্গাদের আসল পরিচয় শনাক্ত করা। প্রকৃতপক্ষেই
তারা কোন্ দেশের নাগরিক? অথবা তারা কোন্ দেশের
জাতিগোষ্ঠী? ব্যাপারটি নিয়ে ভাবা দরকার। রোহিঙ্গাদের
মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার ফলাফল কখনো
ভালো ছিল না। বাংলাদেশ সরকার নিশ্চয় এই ব্যাপারটা ভুলে যায়নি। কারণ মিয়ানমার আশ্রিত
রোহিঙ্গাদের পরে আর ফেরত নিতে চায় না। আর যালিম বৌদ্ধদের যুলুমের কারণে আশ্রিতরাও বাংলাদেশ
থেকে ফেরত যেতে চায় না।
সর্বশেষ তথ্য
হলো চীন তাদের সীমান্ত রোহিঙ্গাদের জন্য খুলে দিয়েছে। এই আশ্রয়ে সাময়িক সমাধান হলেও
কিন্তু স্থায়ী সমাধানের জন্য রোহিঙ্গাদের প্রকৃত পরিচয় জানার ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
সেখানে বাংলাদেশও ভূমিকা রাখতে পারে। যেহেতু বাংলাদেশ মিয়ানমারের পার্শ্ববর্তী দেশ
এবং মিয়ানমারের দাবি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের। প্রয়োজনে দুটি দেশ জাতিসংঘের শরণাপন্ন
হতে পারে।
এর আগে জাতিসংঘ
বাংলাদেশকে চাপ দেয় সীমান্ত খুলে দেয়ার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের যেকোনো
আদেশে সবসময় ‘ইয়েস স্যার’ বললেও এবার বিপরীত কাজটি করে চলেছে।
তবে সবচেয়ে
বড় কথা,
রহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তো রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়
না। তাই মানুষগুলোর কয়েক শতাব্দীর অশান্তি, নির্যাতন, নিপীড়নের ইতিহাস কি করে চূড়ান্তভাবে
সমাপ্ত করা যায় তা ভাবা দরকার। কীভাবে তাদের স্থায়ী পরিচয় দেয়া যায় সেদিকে আন্তর্জাতিক
মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। তবেই কেবল বিপন্ন একটি জাতিগোষ্ঠীর জন্য কিছু করা হয়েছে
বলে ধরা যাবে।
No comments:
Post a Comment