Friday, December 9, 2016

ঈদে মীলাদে হাবীবী পালনের মাধ্যম দিয়ে মানুষ এসকল নেক কাজ করার সুযোগ ও বিশাল নিয়ামত লাভ করতে পারে।

পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক আমল যে
আমলে অগনিত নিয়ামতের সম্ভার রয়েছে।
ঈদে মীলাদে হাবীবী পালনের মাধ্যম দিয়ে
মানুষ এসকল নেক কাজ করার সুযোগ ও বিশাল
নিয়ামত লাভ করতে পারে।
হাদীস শরীফে
বর্ণিত আছে ,
ﻣَﻦْ ﺳَﻦَّ ﻓِﻲ ﺍﻹِﺳْﻼَﻡِ ﺳُﻨَّﺔً ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮُﻫَﺎ ﻭَﺃَﺟْﺮُ ﻣَﻦْ
ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﺑَﻌْﺪَﻩُ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ ﺃُﺟُﻮﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻰْﺀٌ
হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীন
ইসলামে কোন উত্তম বিষয় বা আমলের প্রচলন
করলো, তার জন্য প্রতিদান বা ছওয়াব রয়েছে
এবং তার পরে যারা এই আমল করবে তাদের
জন্য ছওয়াব বা প্রতিদান রয়েছে, অথচ এতে
তাদের ছওয়াবের কোন কমতি করা হবে
না।’ (মুসলিম শরীফ - কিতাবুজ যাকাত :
হাদীস ১০১৭, সুনানে নাসাঈ ২৫৫৪, জামে
তিরমিযী - কিতাবুল ইলিম : হাদীস শরীফ
২৬৭৫ )
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে যে কাজ
করা হয় তা সবই উত্তম। আসুন দেখা যাক কি
করা হয়,
১) কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা হয়:
'ইবাদতসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম ইবাদত হচ্ছে
কোরআন শরীফ পাঠ করা। তিনি আরো বলেন,
তোমরা কুরআন শরীফ পড়। কারণ কিয়ামতের
দিন এই কোরআন স্বীয় পাঠকের জন্য সুপারিশ
করবে।' (মুসলিম শরীফ)
২) ছলাত পাঠ করা: পবিত্র ছলাত শরীফ পাঠ
করার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে আরো ইরশাদ হয়েছে-
ﻋﻦ ﺣﻀﺮﺕ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ
ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻭﻟﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ
ﺑﻰ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﺍﻛﺜﺮﻫﻢ ﻋﻠﻰ ﺻﻠﻮﺓ
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেন, “ওই ব্যক্তিই ক্বিয়ামতের দিন আমার
সবচেয়ে নিকটে থাকবে, যে আমার প্রতি
অধিক মাত্রায় পবিত্র ছলাত শরীফ (পবিত্র
দুরূদ শরীফ) পাঠ করবে।” সুবহানাল্লাহ!
(তিরমিযী শরীফ- আবওয়াবুল বিতর: হাদীস
৪৮৪)
৩) সালাম পাঠ করা: পবিত্র কালামুল্লাহ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ﻳﺎﻳﻬﺎ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﻣﻨﻮﺍ ﺻﻠﻮﺍ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻤﻮﺍ ﺗﺴﻠﻴﻤﺎ .
অর্থ: “তোমরাও হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পবিত্র
ছলাত শরীফ পাঠ করো এবং পবিত্র সালাম
শরীফ প্রেরণ করার মতো প্রেরণ
করো।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র
আয়াত শরীফ ৫৬)
৪) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার ছানা সিফত করা:
ﺍِﻧَّﺎ ﺍَﺭْﺳَﻠْﻨٰﻚَ ﺷَﺎﻫِﺪًﺍ ﻭَّﻣُﺒَﺸِّﺮًﺍ ﻭَّﻧَﺬِﻳﺮًﺍ . ﻟِّﺘُﺆْﻣِﻨُﻮْﺍ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪ
ﻭَﺗُﻌَﺰِّﺭُﻭْﻩُ ﻭَﺗُﻮَﻗِّﺮُﻭْﻩُ ﻭَﺗُﺴَﺒِّﺤُﻮْﻩُ ﺑُﻜْﺮَﺓً ﻭّ َﺍَﺻِﻴﻼ .
অর্থ : (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে
সাক্ষীদাতা, সুসংবাদদাতা এবং
সতর্ককারীস্বরূপ পাঠিয়েছি; যেন (হে মানুষ!)
তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার উপর
এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার উপর ঈমান আনো এবং তোমরা
উনার খিদমত করো ও উনার তা’যীম-তাকরীম
করো এবং উনার ছানা-ছিফত করো সকাল-
সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়িমীভাবে সদা সর্বদা।
(সূরা ফাত্্হ : আয়াত শরীফ ৮, ৯)
৫) হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার মীলাদ শরীফ বিষয়ে
আলোচনা করা: “মেশকাতুল মাছাবীহ-এর ৫১৩
পৃষ্ঠায় “ফাযায়েলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন”
নামক অধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
ﻋﻦ ﺍﻟﻌﺮﺑﺎﺽ ﺑﻦ ﺳﺎﺭﻳﺔ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭﺳﻠﻢ- ﺍﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﻧﻰ ﻋﻨﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻜﺘﻮﺏ ﺧﺎﺗﻢ ﺍﻟﻨﺒﻴﻴﻦ ﻭﺍﻥ
ﺍﺩﻡ ﻟﻤﻨﺠﺪﻝ ﻓﻰ ﻃﻴﻨﺔ ﻭﺳﺎﺧﺒﺮﻛﻢ ﺑﺎﻭﻝ ﺍﻣﺮﻯ ﺩﻋﻮﺓ
ﺍﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﻭﺑﺸﺎﺭﺓ ﻋﻴﺴﻰ ﻭﺭﺅﻳﺎ ﺍﻣﻰ ﺍﻟﺘﻰ ﺭﺃﺕ ﺣﻴﻦ
ﻭﺿﻌﺘﻨﻰ ﻭﻗﺪ ﺧﺮﺝ ﻟﻬﺎ ﻧﻮﺭ ﺍﺿﺎﺀ ﻟﻬﺎ ﻣﻨﻪ ﻗﺼﻮﺭ ﺍﻟﺸﺎﻡ -
অর্থঃ- “হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন, হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর
খামীর যখন প্রস্তুত হচ্ছিল তখনও আমি মহান
আল্লাহ পাক উনার নিকট “খতামুন্নাবিয়্যীন”
অর্থাৎ “শেষ নবী” হিসেবে লিখিত ছিলাম।
এখন আমি তোমাদেরকে আমার পূর্বের কিছু
কথা জানাব। তা হলো, আমি হযরত ইব্রাহীম
আলাইহিস সালাম উনার দোয়া, আমি হযরত
ঈসা আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ ও
আমি আমার মাতার সুস্বপ। আমার বেলাদতের
সময় আমার মাতা দেখতে পান যে, একখানা
“নূর মুবারক” বের হয়ে শাম দেশের
রাজপ্রাসাদ বা দালান-কোঠা সমূহ
আলোকিত করে ফেলেছে।” (সহীহ ইবনে
হিব্বান: হাদীস ৬৪০৪, মুসতাদরেকে হাকীম:
হাদীস ৩৬২৩, সিয়ারু আলামীন আননুবুলা পৃষ্ঠা
৪৬, মুসনাদে তয়লাসী: হাদীস ১২৩৬, মুসনাদে
বাযযার ৪১৯৯, দালায়েলুন নুবুওওয়াত-১ম
খন্ডের ৮৩ পৃষ্ঠা ,শোয়াবুল ঈমান-২য় জিঃ,
১৩৪ পৃষ্ঠা, শরহুসসুন্নাহ ও মসনদে আহমাদ)
৬) মানুষকে খাবার খাওেয়ানো: হাদীস
শরীফে বর্ণিত আছে,
ﻋﻦ ﺣﻀﺮﺕ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﺳﻼﻡ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ
ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﺎﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺍﻓﺸﻮﺍ
ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﺍﻃﻌﻤﻮﺍ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ ﻭﺻﻠﻮﺍ ﺍﻻﺭﺣﺎﻡ ﻭﺻﻠﻮﺍ ﺑﺎﻟﻴﺎﻝ
ﻭﺍﻟﻨﺎﺱ ﻧﻴﺎﻡ ﺗﺪﺧﻠﻮﺍ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺑﺴﻼﻡ
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার রসূল
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ইরশাদ করেন, হে লোক সকল! তোমরা
সালামের প্রচলন কর, মানুষকে খাদ্য
খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা কর এবং
রাতের বেলায় মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন
নামায পড় তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে
প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী ১৮৫৫, ইবনে
মাযাহ্ ১৩৯৫, আদাবুল মুফাররাদ ৯৮১, আবদ
ইবনে হুমাইদ ৩৫৫, দারিমী)
৭) আগমন দিবস স্মরন করা: আর এমন বিশেষ
দিন সমূহ স্মরন সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,
ﻭَﺫَﻛِّﺮْﻫُﻢ ﺑِﺄَﻳَّﺎﻡِ ﺍﻟﻠَّـﻪِ ۚ ﺇِﻥَّ ﻓِﻲ ﺫَٰﻟِﻚَ ﻟَﺂﻳَﺎﺕٍ ﻟِّﻜُﻞِّ ﺻَﺒَّﺎﺭٍ ﺷَﻜُﻮﺭٍ
অর্থ: তাদেরকে আল্লাহর দিনসমূহ স্মরণ
করান। নিশ্চয় এতে প্রত্যেক ধৈর্যশীল
কৃতজ্ঞের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (সূরা
ইব্রাহিম ৫) ফিকিরের বিষয় হচ্ছে , নবীজীর
আগমনের দিবস কতটা তাৎপর্যপূর্ণ ও
ফযিলতপূর্ণ। এই দিন হচ্ছে অন্য সকল দিনের
চাইতেও শ্রেষ্ঠ। আর এমন দিনের স্মরন
করানোর আদেশ আল্লাহ পাক নিজেই
দিয়েছেন। আল্লাহ পাকের আদেশ অনুযায়ী
এই বিশেষ দিন স্মরন করা, সে দিনের বিশেষ
ঘটনাবলী আলোচনা করা, সে দিন যার কারনে
শ্রেষ্ঠ হলো উনার ছানা সিফত করা, শুকরিয়া
আদায় করা এটা আল্লাহ পাকের নির্দেশের
অন্তর্ভুক্ত।
উপরোক্ত বিষয় থেকে আমরা দেখতে পেলাম,
পবিত্র ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে আমারা যে
আমল করি সেগুলো প্রতিটি কুরআন শরীফ,
হাদীস শরীফ সম্মত।এবং সবই উত্তম ও নিয়ামত
সমৃদ্ধ, এবং আল্লাহ পাকের আদেশের
অর্ন্তভূক্ত। তাই এই সুমহান আমলের
বিরোধীতা করা কোন মুসলমানের পক্ষে
সম্ভব না। সূতরাং প্রমাণ হলো, আমরা পবিত্র
ঈদে মীলাদে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে যে আমল করি সবই
কুরআন শরীফ সম্মত।
(বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন https://
noorejulfikar12.blogspot.com/ )

No comments:

Post a Comment