(বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারী যেসব জাহেল গোষ্ঠী জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-সভ্যতা সব কিছুতেই পশ্চিমা কাফিরদেরকে গুরু মানে তাদের বোধোদয়ের জন্য)
============
============
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে HP (Hewlett-Packard Company)-এর তৎকালীন CEO কার্লি ফিওরিনা (Carly Fiorina) মোটিভেশনাল স্পীচ দিয়েছিল। ২০০৫ সাল পর্যন্ত ফিওরিনা ছিলো Fortune 500 কোম্পানির সর্বময় কর্তৃত্বে আসা সাকুল্যে তিনজন নারীর একজন।
Fortune ম্যাগাজিনের 50 most powerful women in business in the United States লিস্টে ছয়বার ফিওরিনার নাম আসে এক নম্বরে। ম্যানেজমেন্ট এবং বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ডিগ্রিধারী ফিওরিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Stanford University থেকে Medieval History ও Philosophy-তে গ্র্যাজুয়েশন করে। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে ফিওরিনার “Technology, Business, and our way of life: What’s next” শীর্ষক বক্তব্যের অংশবিশেষ এখানে তুলে ধরা হচ্ছে।
Fortune ম্যাগাজিনের 50 most powerful women in business in the United States লিস্টে ছয়বার ফিওরিনার নাম আসে এক নম্বরে। ম্যানেজমেন্ট এবং বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ডিগ্রিধারী ফিওরিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Stanford University থেকে Medieval History ও Philosophy-তে গ্র্যাজুয়েশন করে। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে ফিওরিনার “Technology, Business, and our way of life: What’s next” শীর্ষক বক্তব্যের অংশবিশেষ এখানে তুলে ধরা হচ্ছে।
ইতিহাস, ঐতিহ্য, এবং বাস্তবতার খেই হারিয়ে ফেলা উগ্র নাস্তিক ও পথভ্রষ্ট ইসলামবিদ্বেষী এবং বিভ্রান্ত ধর্মব্যবসায়ী ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ ডিগ্রিধারী জাহেল গোষ্ঠীর লাগামহীন অপপ্রচারণা ও কুমন্ত্রণায় দিশেহারা দেশের সাধারণ মানুষদের বর্তমান অবস্থায় এ আলোচনা প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়। একই সাথে এতে রয়েছে ভবিষ্যতের কাঙ্ক্ষিত নেতৃত্ব ব্যবস্থার উপরেও কিছু দিক-নির্দেশনা।
কার্লি ফিওরিনার বক্তব্যের চুম্বক অংশবিশেষ:-
“একসময় পৃথিবীতে এমন এক সভ্যতা ছিল, যাকে সর্বশ্রেষ্ঠ গণ্য করা হতো। এই সভ্যতা একটি আন্তঃমহাদেশীয় সুপার-স্টেট তৈরি করতে সমর্থ হয়, যার বিস্তৃতি ছিল এক মহাসাগর থেকে অন্য মহাসাগর পর্যন্ত– উত্তরের হিমাঞ্চল, ক্রান্তীয় অঞ্চল, মরুভূমিসহ বিভিন্ন আবহাওয়ার ভূখন্ড এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী এবং ধ্যান-ধারণা লক্ষ কোটি মানুষের সমন্বয়ে এই সভ্যতা গড়ে উঠেছিল।
পৃথিবীর বিশাল একটি অংশের জন্য এর ভাষা হয়ে উঠেছিল সার্বজনীন, যা শত শত ভূখণ্ডের অধিবাসীদের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনা করেছিল। এর সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন জাতির সৈন্য সমাবেশ ঘটেছিল। রাষ্ট্রের শান্তি এবং সমৃদ্ধির সুরক্ষায় এ সেনাবাহিনী এমন পারদর্শী ছিল, যার জুড়ি মেলা ভার। এই সভ্যতার বাণিজ্যের প্রসার লাতিন আমেরিকা এবং চীনের মধ্যকার সমগ্র অঞ্চলে সুবিস্তৃত ছিল।
আর সবকিছু ছাপিয়ে এই সভ্যতার চলৎশক্তি হয়ে উঠেছিল এর উদ্ভাবনী ক্ষমতা। এর স্থপতিরা অভিকর্ষের বিপরীতে নির্মাণ করেছিলেন বিস্ময়কর স্থাপত্য নিদর্শন। এর গণিতবিদরা আবিষ্কার করেছিলেন আলজেব্রা (Algebra- বীজগণিত) আর অ্যালগরিদম (Algorithms), যা আধুনিককালে কম্পিউটার থেকে এনক্রিপশন পদ্ধতি আবিষ্কারের দ্বার উন্মুক্ত করেছে। এর চিকিৎসকরা মানবদেহ বৈজ্ঞানিকভাবে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, সেই সাথে আবিষ্কার করেছিলেন বিভিন্ন রোগের প্রতিকার। এর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা (মহাকাশ বিজ্ঞানী) গভীরভাবে মহাকাশ পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন নক্ষত্রের নামকরণ করেছিলেন, পরবর্তীকালের জন্য উন্মুক্ত করেছিলেন মহাকাশভ্রমণ ও অনুসন্ধানের দ্বার। এর সাহিত্যিকরা রচনা করেছিলেন বীরত্ব, প্রেম, মোহ, সমাজ, পরিবার নিয়ে হাজারো শিক্ষনীয় (Instructiv), নীতিমূলক (Ethical) নৈতিক (Mora) উপাখ্যান। এর কবিরা অকুণ্ঠে লিখেছেন পরমাত্মার সাথে মিলনে প্রেমের কবিতা, সাম্যের কবিতা তাঁদের আগে অন্যরা (অন্য কোনো ধর্মের লোকেরা) যা নিয়ে লিখতে সাহস পেত না।
ভিন্ন চিন্তা ও দর্শনের চর্চা – যা নিয়ে সমসাময়িক অন্যান্য জাতির চূড়ান্ত ভীতি ছিল – তা এই সভ্যতার ছায়াতলে ব্যাপক প্রসার ও সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। অতীত সভ্যতার জ্ঞান যখন (পাদ্রিদের) দমন-পীড়নের কারণে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছিল, তখন এই সভ্যতার ধারক-বাহকরাই সে জ্ঞানকে বাঁচিয়ে রেখেছিল এবং তা পৌঁছে দিয়েছিল পরবর্তী প্রজন্মের কাছে।
আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতায় এর অনেকগুলো বিষয়ই আজ আমাদের পরিচিত, কিন্তু আমি যে সভ্যতার কথা বলছি, তা হলো ৮০০ হতে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দের মুসলিম সভ্যতা, যার অধীনে ছিল অটোম্যান সাম্রাজ্য, বাগদাদ, দামেস্ক, কায়রোর মতো শহর এবং ‘সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট’-এর মতো জ্ঞানবান শাসক।
যদিও এই (মুসলিম) সভ্যতার কাছে আমরা (খৃস্টানরা) ঠিক কতখানি ঋণী, সে ব্যাপারে আমরা (খৃস্টানরা) অনেকেই বিন্দুমাত্র ধারণা রাখি না, তবে সত্য এই যে, আমাদের (খৃস্টানদের) ঐতিহ্যের অনেক কিছুই তাঁদের (মুসলমানদের) অবদান। আরব (মুসলিম) গণিতবিদদের অবদান ছাড়া আজকের প্রযুক্তি শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব হতো না। হযরত মাওলানা রুমির মতো সুফি, কবি, দার্শনিক মহান সত্তা ও সত্য নিয়ে আমাদের (দুনিয়ার মানুষদের) প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন। তুরস্কের সুলেমানের মতো মহান (মুসলিম) শাসক সহনশীলতা ও নাগরিক নেতৃত্ব বিষয়ক ধারণায় সমূহ অবদান রেখেছেন। তাঁর নেতৃত্ব থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে – এ নেতৃত্ব ছিল যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত – উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে নয়। এ ছিল এমনই এক নেতৃত্ব ব্যবস্থা যা বিভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতির ভিন্নি জাতি ও জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ও সামর্থ্যের পরিপূর্ণ বিকাশে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠেছিল।
শিল্প-সংস্কৃতি, সহনশীলতা, বৈচিত্র্য, বীরত্বগাথায় পূর্ণ এমন একটি আলোকিত (মুসলিম) নেতৃত্ব সুদীর্ঘ ৮০০ বছরের উদ্ভাবন ও সমৃদ্ধির প্রসার নিশ্চিত করেছে।
আজকের (গণতান্ত্রিক যুদ্ধবাজ পশ্চিমা) অন্ধকারাচ্ছন্ন এবং গুরুতর (নৈতিক অধঃপতনের) সময়ে (তৎকালীন মুসলিম সভ্যতার) অনুরূপ মহান একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য আমাদের (পশ্চিমা খৃস্টানদের) অঙ্গীকার করা প্রয়োজন। এখন অনুরূপ সাহসী এবং ব্যক্তিগত আচরণে দায়িত্বশীল একটি নেতৃত্বের উপর গুরুত্ব দেয়া দরকার। সম্মিলিতভাবে আমাদের জন্য নেতৃত্বের ভূমিকা ঠিক কি হওয়া উচিত, সে প্রশ্ন দিয়ে আমি আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করতে চাই …”
(সংকলিত)
No comments:
Post a Comment