প্রতি বছর গরম
পোশাক রপ্তানি করে দুইশ
কোটি মার্কিন ডলার আয় করে থাকে
ভারত। তামিলনাড়ু রাজ্যের তিরুপুর শহরে গড়ে
উঠেছে তৈরী
পোশাক রপ্তানির প্রধান কেন্দ্র। এজন্য এ শহরটিকে ‘ডলার
সিটি’ বলে
ডাকা হয়। বাংলাদেশ এ ব্যবসায় পা রাখার আগে
সস্তা শ্রম
মূল্যের কারণে
এটি ছিল
পশ্চিমা খুচরা
ব্যবসায়ীদের প্রথম
পছন্দ। কিন্তু
সস্তা শ্রমের
ও গুণগত
মানের কারণে
বাংলাদেশের কাছে
হার মানে
ভারত। আন্তর্জাতিক ক্রেতারা ঝুঁকে
পড়ে বাংলাদেশের দিকে। আর তাই হিংসাবশত বাংলাদেশের পোশাক
শিল্পের বদনাম
ছড়াতে ভারত
তার এজেন্ট
নিয়োগ করেছে,
যারা চক্রান্তে লিপ্ত আছে।
বোদ্ধা মহলের অভিমত,
বাংলাদেশের পাট
শিল্পকে ভারত
যেভাবে ষড়যন্ত্র করে ধ্বংস
করেছে; একইভাবে পোশাক শিল্পকে ধ্বংস করে
বাজার তাদের
কব্জায় নেয়ার
অপতৎপরতায় লিপ্ত
আছে। এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে ভারত
বাংলাদেশে পোশাক
শিল্পে বিনিয়োগ করছে। তারা
বাংলাদেশে সস্তায়
উন্নতমানের পোশাক
বানিয়ে নিজেদের নামে সরবরাহ
করছে। আর তাদের দেশের
নিম্নমানের পোশাক
বাংলাদেশে তৈরি
বলে চালিয়ে
দিচ্ছে। যাতে
বাংলাদেশের পোশাক
সম্পর্কে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা বিভ্রান্ত হয়ে বাংলাদেশ থেকে পোশাক
কেনা বন্ধ
করে ভারত
থেকে পোশাক
কিনে। ঘটনা
হচ্ছেও তা-ই। ভারতীয়রা বিভিন্ন দেশ
থেকে অর্ডার
নিয়ে বাংলাদেশ থেকে তা বানিয়ে সরবরাহ
করছে নিজেদের নামে।
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর রাজধানীর অদূরে আশুলিয়া তুবা গ্রুপের তাজরীন ফ্যাশনস গার্মেন্টসে ভয়াবহ
অগ্নিকা- ঘটে। আর ২০১৩
সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার সাভারের ‘রানা প্লাজা’
নামে ভবন-
যেখানে পাঁচটি
পোশাক কারখানা ছিল, সেটি
ধসের ঘটনায়
সহস্রাধিক শ্রমিক
প্রাণ হারায়। এসব ঘটনার
পর ভারত
এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার
দেশগুলো মনে
করেছিল এবার
তাদের কাছে
বানের পানির
মতো পোশাক
তৈরির অর্ডার
আসবে। কিন্তু
বাস্তবে তা হয়নি। বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প
ধ্বংসের চক্রান্তকারীদের কোনো ষড়যন্ত্র ও কুটকৌশলই সফল
হচ্ছে না।
এসব ঘটনার পর সুইডেনের বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হেনস
অ্যান্ড মুরিৎজের (এইচ অ্যান্ড এম) মতো
কয়েকটি আন্তর্জাতিক কোম্পানি পোশাক
তৈরির জন্য
বাংলাদেশ ছেড়ে
যাওয়ার বিষয়টি
বিবেচনা করছে
বলে জানা
গেছে। কিন্তু
চীনের বাইরে
এশিয়ার শীর্ষ
পোশাক প্রস্তুতকারক দেশ যেমন: ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের কারখানা ও শিল্প
সমিতির সঙ্গে
যোগাযোগ করে
জানা গেছে,
আন্তর্জাতিক খুচরা
বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনই বাংলাদেশ থেকে
তৈরী পোশাক
আমদানি বন্ধ
করছে না। কেননা সস্তা
শ্রমে ও উন্নত মানের
ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের মধ্যে
বাংলাদেশই সেরা।
ভারতভিত্তিক
খুচরা ব্যবসার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টেকনোপাক অ্যাডভাইসর্সয়ের চেয়ারম্যান
অরবিন্দ সিংঘাল
সাংবাদিকদেরকে বলেছে,
‘এই একটি
মাত্র কারণে
পোশাক ব্যবসায় বাংলাদেশ জিরো
থেকে হিরো
বনে গেছে। সস্তা শ্রমের
দিক দিয়ে
তাদের টেক্কা
দেয়ার মতো
কোনো দেশ
এখন নেই।’
এখনই কোনো ক্রেতা
বাংলাদেশ ছেড়ে
যাওয়ার ক্ষেত্রে হুড়োহুড়ি করছে
না। কারণটা
হলো, এতে
তাদের ক্রেতাদের কাছে পণ্যের
দাম বাড়বে
এবং খুচরা
ব্যবসায় চাপ
পড়বে। কারখানার নিরাপত্তাজনিত সমস্যার কারণে সেখানে
(বাংলাদেশ) পোশাক
তৈরি করাটা
ঝুঁকিপূর্ণ হলেও
এখনো বিশ্বে
বাংলাদেশের স্থান
দখল করার
মতো কোনো
প্রতিযোগী তৈরি
হয়নি- বলেছে
অরবিন্দ।
মার্কিন খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্টের মতো প্রতিষ্ঠানও বাংলাদেশের পোশাক
কারখানা থেকে
পোশাক নেয়া
অব্যাহত রেখেছে। ওয়ালমার্ট বলছে,
দক্ষিণ এশিয়ার
এই দেশটি
(বাংলাদেশ) সোর্সিং মার্কেটের (উৎপাদক বাজার) জন্য
গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেছে।
অন্যদিকে এইচ অ্যান্ড এম কোম্পানি জানিয়েছে, তারা
পোশাক তৈরির
জন্য বিকল্প
খুঁজলেও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি
খরচ পড়ে
এমন কোনো
দেশে তারা
যাবে না। এইচ অ্যান্ড এমের মুখপাত্র এলিন হলারবে
সাংবাদিকদেরকে বলেছে,
‘আমরা বাংলাদেশ থেকে আমাদের
ব্যবসা কমাবো
না। এখানকার সরবরাহকারীদের সঙ্গে
আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক গড়ে
উঠেছে।’
এ কারণেই জুন
মাসে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ২৬ ভাগ
বেড়ে গেছে
এবং এ খাত থেকে
২০১২ সালের
চেয়ে ২২০
কোটি ডলার
বেশি আয় হয়েছে। এ পরিসংখ্যান পাওয়া
গেছে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ব্যুরোর প্রতিবেদন থেকে।
প্রসঙ্গ যখন সস্তা
শ্রম:
বাংলাদেশের
পোশাক কারখানাগুলোতে ৪০ লাখেরও বেশি
মানুষ কাজ
করে থাকে। চীনের পর বিশ্বে পোশাক
রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বিশ্বের নামিদামি ফ্যাশন ব্র্যান্ড যেমন: ইনডিটেক্স এসএ, এইচ
অ্যান্ড এম,
ওয়ালমার্ট, গ্যাপ
এবং জেসি
পেনি কোম্পানি এখানে কাজ
করাচ্ছে। সস্তা
শ্রমের কারণেই
বাংলাদেশে পোশাক
শিল্পের এতো
বিশাল বাজার
গড়ে উঠেছে। বছরে এ খাত থেকে
২১ হাজার
কোটি ডলার
আয় হয়ে
থাকে।
বাংলাদেশে পোশাক তৈরিতে
খরচ কম পড়ায় বড় বড় কোম্পানির মালিকরা বাংলাদেশের সঙ্গেই কাজ
করতে আগ্রহী। তুলনা করলে
দেখা যায়,
এখানে পোশাক
তৈরির খরচ
ভিয়েতনামের চেয়ে
দুই থেকে
তিন গুণ
কম পড়ে। খরচ সংক্রান্ত সমস্যাটি শ্রীলঙ্কার তৈরী পোশাক
ব্যাবসাতেও প্রভাব
ফেলেছে। দেশটি
এ খাত
থেকে বছরে
৪শ কোটি
ডলার আয় করে থাকে। এজন্য গার্মেন্টস মালিকরা মনে
করছেন, বাংলাদেশ থেকে এখন
যারা ব্যাবসা গুটিয়ে নিবে
বলছে তারা
কিছুদিন পর আবার চুপে
যাবে।
No comments:
Post a Comment