Friday, March 7, 2014

রুশ আগ্রাসনে শঙ্কিত ক্রিমিয়ার তাতারী মুসলিমরা


ইউক্রেনের স্বায়ত্তশাসিত এবং কার্যত রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের দিকে এখন বিশ্ববাসীর দৃষ্টি অনেকের মনেই আশঙ্কা- ক্রিমিয়া কী বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর একটি যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হবে? এসব জল্পনা-কল্পনা শঙ্কার মাঝেই আবার আলোচনায় উঠে এসেছে ক্রিমিয়ার মুসলমানদের দুর্দশার ইতিবৃত্ত বস্তুত রাশিয়ার জবরদখলে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে এখন কঠিন সময় পার করছেন ক্রিমিয়ার মুসলমানরা
ক্রিমিয়ায় লাখ ৬৬ হাজার তাতার মুসলমানের বাস এটা অঞ্চলটির ২০ লাখ জনসংখ্যার ১৩ শতাংশ তাঁরা ঐতিহ্যগতভাবে সুন্নী মুসলমান তাঁরা স্থানীয় ইউক্রেনীয়দের চেয়ে বেশ সংগঠিতও রাশিয়ার শাসন নিয়ে ক্রিমিয়ার মুসলমানদের মধ্যে তীব্র ভীতি রয়েছে ১৯৪৪ সালে কাট্টা যালিম স্টালিন তাতারী মুসলমানদেরকে যুলুম-নির্যাতন করে ক্রিমিয়া থেকে গণহারে বিতাড়ন করে তাঁদের মধ্য এশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয় যাত্রা পথেই তাঁদের অর্ধেক নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন
১৯৮৯ সালে তারা নিজভূমে ফেরত আসার সুযোগ পান কিন্তু ততদিনে তাঁদের ঘরবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, মুছে গেছে তাদের তাতারীয় মুসলিম সংস্কৃতি অর্থনৈতিকভাবে ক্রিমিয়ার তাতার মুসলমানরা এখনো অবহেলিত কোণঠাসা তাদের জায়গা জমি জবরদখল করে নেয়া হয় তবে ক্রিমিয়াই তাদের মাতৃভূমি তুরস্কেও বসবাস করছেন তাঁদের অনেকে ১৪৪১ সাল থেকে তাঁরা এখানে বসবাস করলেও ১৮৫৩-৫৬ সালের ক্রিমিয়া যুদ্ধের সময় মুসলমানদের মসজিদগুলোকে গির্জায় রূপান্তর করে যালিম রুশ খ্রিস্টান বাহিনী গত ফেব্রুয়ারি (২০১৪) মাসে ইউক্রেনের মস্কপন্থী সরকারের বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন ক্রিমিয়ার তাতার মুসলমানরা তখন তাঁরা রাশিয়ার আধিপত্যেরও বিরোধিতা করেন প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের পতনের পর তাঁদের বীরের মর্যাদা দেয়া হয় কিন্তু সেই সময়টা ছিল খুবই স্বল্পস্থায়ী
রাশিয়া কার্যত ক্রিমিয়া দখল করে নেয়ায় এখন নিপীড়নের আশঙ্কায় আছেন তাতার মুসলিমরা ২০১০ সালে ইয়ানুকোভিচ জয়ী হওয়ার পর থেকে নানাভাবে নিগৃহীত হচ্ছিলেন তাঁরা স্থানীয় তাতরী মুসলিম ইউসেন সারানো (৫৭) বলেন, ‘যদি সংঘাত বাঁধে তবে আমরা সংখ্যালঘু মুসলমানরাই প্রথম দুর্ভোগের শিকার হবো আমরা মুসলমানরা আমাদের পরিবার নিয়ে, আমাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে শঙ্কিত এটা আরেক যুগোসøাভিয়া হতে পারে
রাশিয়ার সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে তাঁরা এখানে নিরাপদ বোধ করছে না ইজমিরিলি নামের একজন বলেন, ‘পশ্চিমা সূত্রগুলো যদিও বলছে যে ক্রিমিয়ায় ,০০০ রাশিয়ান সৈন্য অবস্থান করছে কিন্তু আমার আত্মীয়রা জানিয়েছেন এখানে রাশিয়ার সৈন্য সংখ্যা ১৫,০০০ ইসলামী বিশেষজ্ঞরা তাতার মুসলমানদের রক্ষায় তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাতার মুসলমানরা যদি বিক্ষোভে ফেটে পড়ে তা রাশিয়ার জন্যও সুখকর হবে না রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক এখন ভালো যাচ্ছে না

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রাশিয়ার যে একটা ভালো অবস্থান ছিল তাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাছাড়া রাশিয়ায় এখন লাখ লাখ সুন্নী মুসলিম বসবাস করেন, বিশেষ করে ককেশাস অঞ্চলে ক্রিমিয়ার মুসলমানদের সঙ্গে তাদের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট øাদিমির পুতিন চায় না এসব মুসলমানদের বিরাগভাজন হতে নিজ দেশে সুন্নী মুসলমানদের বিক্ষোভের আশঙ্কা আছে তার (সূত্র: গার্ডিয়ান রয়টার্স)

No comments:

Post a Comment