পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী বিজয়পুর এলাকায় টিলা এবং পাহাড় কেটে উজার করা হচ্ছে মূল্যবান খনিজ সম্পদ সাদা মাটি।
এতে সরকার যেমন নিয়মিত রাজস্ব পাচ্ছে না, তেমনি নষ্ট হচ্ছে সেখানকার পরিবেশ ও পর্যটন সম্ভাবনা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাটি উত্তোলনের কাজে কোম্পানিগুলো সুনির্দিষ্ট মাইনিং নীতিমালা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার সুষ্ঠু তদারকির অভাবে অবাধে দেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ ও সিরামিক সামগ্রী তৈরির প্রধান উপকরণ ‘সাদা মাটি’ বা ‘হোয়াইট ক্লে’ লুট হয়ে যাচ্ছে।
শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো অনুমতির চেয়ে বেশি মাটি তুলছে বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয় প্রশাসন ও এলাকাবাসী।
এখানকার দৃষ্টিনন্দন সাদা মাটির পাহাড় ও টিলাগুলো দেখতে অনেক পর্যটক আসেন। কিন্তু এগুলোতে এখন ‘লুট’ চলছে। মন্ত্রণালয় থেকে কেউ যদি একশ’ টনের অনুমতি আনে বাস্তবে সেখানে এক হাজার টন নিয়ে যায়।
সম্প্রতি ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের ফারংপাড়া, থাউশালপাড়া, বরইকান্দি, গোপালপুর, মাইজপাড়া, বহেরাতলী, পাঁচকাহনিয়া, মাধুপাড়া, ভেদিকুড়া এবং উত্তর মাইজপাড়ার বিভিন্ন ছোট বড় টিলা থেকে মাটি সংগ্রহ করছে দেশি-বিদেশি সিরামিক কোম্পানিগুলো। যা স্থানীয় জনগণের কাছে ‘সাদা মাটির অফিস’ নামে পরিচিত।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, ১৯৫৭ সালে পাকিস্তান সরকারের করা জরিপে বিজয়পুর এলাকায় ২৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন চীনামাটি মজুদ আছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এই খনিজ দেশের তিনশ’ বছরের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। এরপর ওই এলাকায় প্রথমে কোহিনুর অ্যালুমিনিয়াম ওয়ার্কস নামে একটি প্রতিষ্ঠান ‘সাদা মাটি’ উত্তোলনের কাজ শুরু করে। ১৯৭৩’র মাঝামাঝিতে জারিয়া সাদা মাটি প্রকল্পের আওতায় খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) বিজয়পুরে সাদা মাটি উত্তোলনের দায়িত্ব পায়। ওই সময় এ প্রকল্পের জন্য এখানে প্রায় ১ হাজার ৬০৩ একর জমি মাইনিং লিজ দেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
পরবর্তীতে ১৯৮০ সনে এ প্রকল্পটিকে ব্যক্তি মালিকানায় রূপান্তরিত করা হয়। এরপর ১৯৮৫-তে বাংলাদেশ ইনস্যুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারিওয়্যার ফ্যাক্টরি লিমিটেডকে প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়াও এলাকার প্রভাবশালী মহল অনুমতি ছাড়া কিংবা অনুমোদনের বেশি মাটি কেটে বিক্রি করছেন। এমনকি নেত্রকোনা জেলা তথ্য বাতায়নেও এর কোনো হিসেব নেই।
দুর্গাপুর উপজেলার এক নম্বর কুল্লাগড়া ইউনিয়ন এলাকায় ছোট বড় নয়টি খনি থেকে মাটি তোলা হচ্ছে। পুরো খনি এলাকাটি অতীব দর্শনীয়ও বটে।
No comments:
Post a Comment