Thursday, March 24, 2016

ভয়াল ২৫ মার্চ: অপারেশন সার্চ লাইটের নামে গণহত্যা

ভয়াল ২৫ মার্চ। ১৯৭১ সালের এইদিনে বাঙালি মুসলিম জাতির জীবনে এক বিভীষিকাময় রাত নেমে আসে। মধ্যরাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের পূর্বপরিকল্পিত অপারেশন সার্চলাইটের নীলনকশা অনুযায়ী আন্দোলনরত বাঙালি মুসলমানদের কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার ঘৃণ্য লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরস্ত্র বাঙালি মুসলমানদের উপর অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছে, ওই রাতে সাত হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার করা হয় আরো তিন হাজার লোককে। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব-পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট লুট আর ধ্বংস তাদের নেশায় পরিণত হলো যেন। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হলো। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুন তাড়িত বৈধ্যভূমি।
পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব-পাকিস্তানের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তানি সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়: ১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল। ১৯৭০ ঈসায়ী সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানী সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের উপর গণহত্যা শুরু করে।
তবে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নিরীহ বাঙালি মুসলমানদের উপর পাকিস্তানী যালিম শাসকগোষ্ঠীকে ক্ষেপিয়ে তোলার ও ভয়াল ২৫ মার্চের অপারেশনের মাধ্যমে গণহত্যার পেছনে একটি বড় কারণ ছিলো ভারতীয় মদদে এদেশে হিন্দুপন্থী কবি-সাহিত্যিকদের আগ্রাসী কার্যক্রম। রবীন্দ্রপন্থী ও পরবর্তীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে রিটকারী খান সারওয়ার মুর্শিদ ও ছায়ানট সংশ্লিষ্টরা ১৯৬১ সালে ধুমধাম করে পালন করে রবীন্দ্রের জন্মবার্ষিকী, যা পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর নিকট এদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী সম্পর্কে ভুল বার্তা দিয়েছিলো। ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকদের হিন্দুয়ানী লেখালেখি ও কার্যক্রমের ফলশ্রুতিতেই পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী ও সেনাবাহিনী ধরে নিয়েছিলো- এদেশের সব মানুষ হিন্দু হয়ে গিয়েছে। ফলশ্রুতিতে ১৯৭০ ঈসায়ী সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানী সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা করে। সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক অচলাবস্থা। ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলে যায় অস্ত্র দাগানোর পর্যায়ে। পাকিস্তানিরা শান্তিপূর্ণ পথ পরিহার করে। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের উপর গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে নির্বিচারে হত্যা করা। 

No comments:

Post a Comment